.
সেলসম্যানশিপ
যারা দোকানে বসে বা ঘুরে ফিরে জিনিসপত্র বিক্রি করে সাধারণত তাদেরকেই সেলসম্যান বলা হয়। কিছু বিক্রি করতে হলে, যুক্তি দিয়ে জিনিসটির গুণাগুণ বোঝাতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে প্রতিপক্ষ বা বিরুদ্ধপক্ষ মনে না করে, তারা আপনার সাথে কি রকম প্রতিকূল ব্যবহার করবে তা ভেবে ভেবে কাহিল না হয়ে অটো-সাজেশনের উপর নির্ভর করুন, অটো-সাজেশনের নিয়ম কানুন মেনে চলুন। দৃঢ় মনোবল গ্রহণ করুন, বুক চিতিয়ে দাঁড়ান, ঘোষণা করুন। নিজের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো: ‘আমি একজন অভিজ্ঞ সেলসম্যান। যখন কোনো নির্দিষ্ট বস্তু কারো কাছে বিক্রি করতে চাই তখন বস্তুটির ভালো দিকগুলো সম্পর্কে জানা থাকে আমার, কিভাবে কথা বললে সুফল ফলবে বুঝতে পারি আমি।’
.
ভীরুতা বা সঙ্কোচবোধ থেকে নিষ্কৃতি
ভীরুতা বা সঙ্কোচবোধ নামক রোগ থেকে মুক্তি পাবার সহজতম উপায় হলো এই রোগটাকে হালকাভাবে গ্রহণ করা। বক্তব্যটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে নাও হতে পারে; কারণ, ভয় বা সঙ্কোচবোধ বহু মানুষকে সারা জীবন ধরে অকথ্য কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা দিয়ে ভোগায়। কিন্তু, সত্য হলো, এই রোগের কবল থেকে নিষ্কৃতি লাভের সহজ উপায় সত্যি আছে।
মনকে বদলাবার উপর নির্ভর করছে সবকিছু। নিজেকে ভীরু বলে মনে না করে আত্মবিশ্বাসী, সাহসী বলে মনে করুন, সুফল পাবেনই।
নিজেকে ভীরু করে রেখেছেন, নিজেকে ভাবছেন ভীরু,-ফলে আরো খারাপ হচ্ছে আপনার অবস্থা, আপনি অধিকতর ভীরু হয়ে উঠছেন।
ভীরুতা কাটিয়ে উঠতে চাইলে একটা কাজই করতে হবে আপনাকে, বিপরীতধর্মী চিন্তা-ভাবনার আশ্রয় নিন।
ভীরুতা আপনাকে দমন করে রেখেছে। ভীরুতার জন্যেই আপনি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না। ভীরুতা আপনার জীবনকে করে তুলেছে অভিশপ্ত। এই রোগ থেকে মুক্তি চান আপনি।
উপায়, নিজেকে ভীরু বলে মনে না করা। এই রোগের এই একটাই চিকিৎসা, নিজেকে কোনোক্রমেই সঙ্কুচিত হতে দেবেন না, ভয় পাবেন না কাউকে কিছু বলতে, কারো সামনে কিংবা কোথাও যেতে, কোনো কিছু পেতে বা পাবার আশা
সকালে এবং রাতে ঘুমাবার আগে নিজেকে এই সাজেশন দিন: ভালবাসি এই পৃথিবীকে। এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আর সকলের যেমন আছে, আমারও তেমনি আছে। মানুষের মধ্যে বেঁচে আছি আমি। একজন সচেতন এবং আত্মবিশ্বাসী মানুষের মতো আর সব মানুষের মতো। অন্যকে সুখী করা মানুষের কর্তব্য, আমারও কর্তব্য অন্যকে সুখী করা। অন্যকে সুখী করে আমিও সুখী হবে। আগ্রহ এবং উৎসাহ সৃষ্টি করার মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমি, সুতরাং যে বিষয়েই বলতে চাই না কেন, সবাই আমার কথা শুনবে এবং বিশ্বাস করবে এবং আমার সাথে একমত হয়ে একটা চুক্তিতে উপনীত হবেই।’
.
আত্মশাসক
এই বই লেখাই হয়েছে আপনার মতো একজন পাঠককে আত্মশাসক হওয়া শেখাবার জন্যে। আপনি আত্মশাসক, তার মানে এই নয় যে আপনি আপনার দেহের শাসক। আত্মশাসক বলতে আমি বোঝাচ্ছি, মনের শাসক। মনকে যে সৎ পথে, সুপথে, অনুকূল পথে চালাতে পারে সেই প্রকৃতপক্ষে আত্মশাসক। কারণ, মন ছাড়া যে দেহ তাকে মাংসপিণ্ড ছাড়া আর কিছু বলা যায় না-মানুষ সেই যার দেহের ভিতর একটা সজীব মন আছে।
ইতিমধ্যে আমরা শিখেছি যে সাফল্য এবং সুখ ব্যাপার দুটো সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা ছাড়া আর কিছু নয়। সাফল্য লাভ করার আগে নিজেকে সফল বলে মনে করতে হবে-এটা অন্যরকম জরুরী শর্ত।
এ থেকে প্রমাণ হয় নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদেরকে আগে পরিবর্তন করতে হবে মনোভঙ্গি।
নিজের শিক্ষক বা আত্মশাসক হতে চাইলে নিজেকে এই সাজেশন দিন, কাজ হবে: আমার অস্তিত্বের বাহক আমার মন। আমার মনের অভিভাবক আমি নিজে। আমার মন যা চিন্তা করে সেই চিন্তার নিয়ন্ত্রক আমি, স্রষ্টা আমি। যা চিন্তা করি এবং যে কাজ করবো বলে ভাবি এবং করি তা আমার দ্বারা নির্ধারিত, অনুমতিপ্রাপ্ত এবং প্রশংসিত হয়। নিজেকে শাসন করে, নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে আমি প্রতিদিন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’
.
দুশ্চিন্তা মুক্তি
যে অবস্থায় পড়তে চান না সেই অবস্থায় পড়ে গেছেন–এই বিশ্বাসই দুশ্চিন্তার মূল কারণ, বলছেন বেন সুইটল্যাণ্ড।
এই বইয়ের সর্বত্র আপনাকে জানানো হয়েছে, আপনি যে অবস্থায় পড়তে চান, যে অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে চান সেই অবস্থায় পৌঁছে গেছেন এই বিশ্বাস নিজের মধ্যে কিভাবে গড়ে তুলবেন।
কোনো একটা সমস্যায় পড়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন-এইরকম অবস্থায় আপনাকে বলা উচিত হবে না সমস্যাটার কথা ভুলে যান। আমার পরামর্শ হলো, সমস্যাটাকে নয়, দুশ্চিন্তাটাকে বিদায় করুন। দুশ্চিন্তাকে গলাধাক্কা দিয়ে মন থেকে বের করে দেবার সবেত্তম উপায় হলো, সমস্যাটাকে সমাধানের যযাগ্য বলে মনে করা।
যে-কেউ জানে, সকল সমস্যারই সমাধান আছেই আছে। সমাধানটা বের করার জন্যে চিন্তা করুন, বেরিয়ে যাবে সমাধান। মিটে যাবে সমস্যা।
সমস্যা যতো বড়ই হোক, সে যেন আপনাকে দিশেহারা করে না তুলতে পারে। সমস্যায় পড়ে যে লোক ঘাবড়ে যায় তার আসলে নিজের উপর বিশ্বাস এবং আস্থা নেই। সে নিজের যোগ্যতার উপর সন্ধিহান-প্রমাণ হয় এ থেকে।
কিন্তু আপনি তো অযোগ্য নন। আপনার মধ্যে নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস এবং আস্থার কোনো অভাব নেই। আপনি কেন কোনো সমস্যাকে সমাধানযোগ্য বলে মনে করবেন না?