ধরুন, একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আপনি বহুদূর কোথাও যাচ্ছেন (প্রাইভেট কার আমাদের দেশে খুব কম লোকেরই আছে, হয়তো আপনারও নেই। তবু, উদাহরণের মধ্যে প্রাইভেট কার আমদানী করছি এই জন্যে যে এই বই পড়ে যা শিখবেন তা কাজে লাগিয়ে আপনি ভবিষ্যতে একটা নিজস্ব গাড়ির মালিক হতে পারবেন অনায়াসে, এই বিশ্বাস আমি রাখি)। যাত্রাটাকে সফল করার স্বার্থে আপনি প্রথমেই চেক করে নেবেন গাড়িটা ত্রুটিমুক্ত কিনা। ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট, হর্ন-এক এক করে সব পরীক্ষা করে দেখবেন। গাড়ি চালাবার সময় আপনি খুবই সতর্কতার সাথে, মনোযোগ দিয়ে চালাবেন, যাতে কোনোরকম দুর্ঘটনা না ঘটে। কি ধরনের পোশাক পরবেন আপনি, সাথে কি পরিমাণ টাকা নেবেন–এইসব। খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে আপনাকে। পথিমধ্যে অপ্রত্যাশিত কোনো বিপদ ঘটতে পারে, তেমন কিছু ঘটলে সামলে নেবার মতো উপস্থিত বুদ্ধি এবং মানসিক প্রস্তুতি থাকবে আপনার মধ্যে। গাড়ি চালিয়ে কখন ক’টার সময় ঠিক কোন জায়গায় আপনি পৌঁছুবেন, কোথায় দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেবেন, ফেরীঘাটে ঠিক কখন পৌঁছুলে সময়ের অপব্যয় থেকে বাঁচবেন- এই ধরনের অনেক ব্যাপারে আপনি আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। অর্থাৎ আপনি সুপরিকল্পিত ভাবে রওনা হবেন। তবেই না আপনার যাত্রা সফল হবে। তা নইলে হাজারো অসুবিধে চেপে ধরবে আপনাকে চারদিক থেকে। কি দাঁড়ালো তাহলে মোদ্দা ব্যাপারটা? ভ্রমণে বেরুবার আগে আপনার মধ্যে আমি পারবো এবং আমি করবো’ এই দৃঢ় সংকল্প থাকলেই চলছে না, যাত্রাটাকে সফল করার জন্যে একান্তভাবেই দরকার হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির। আপনাকে এক এক করে সবগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রত্যেকটি ব্যর্থতার পিছনে কারণ থাকে। সাফল্যলাভ ভাগ্যের ব্যাপার নয়। প্রয়োজনীয় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের নাম সাফল্য। কেউ যদি ব্যর্থ হয় তাহলে চোখ বুজে বলে দেয়া যায় সাফল্য অর্জনের জন্যে যা যা করা একান্তভাবে জরুরী ছিলো সেগুলো সে করেনি।
আমরা তাহলে শিখলাম:
(ক) আমি পারবো-এই বিশ্বাস আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। এই বিশ্বাস যদি আপনার মধ্যে না থাকে আপনার দশা হবে সুলতান আহমেদের মতো, কোনো কাজে হাত দিলেও তা কক্ষনো শেষ করতে পারবেন না।
(খ) আমি করবো-এই দৃঢ় সংকল্প আপনার মধ্যে না থাকলে চলবে না। যে কোনো কাজ করার জন্যে যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ না করেন, কাজটায় কোনোদিনই হাত দিতে পারবেন না। রফিক চৌধুরীর মতো ‘পারবো’ বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আপনাকে, পারা আর আপনার দ্বারা সম্ভব হবে না।
(গ) আমি পারবো, আমি করবো-এই বিশ্বাস এবং সংকল্প আপনার মধ্যে আছে, কিন্তু এ দুটোই যথেষ্ট নয়। কোনো কাজ সম্পন্ন করতে হলে দরকার হচ্ছে কাজটায় হাত দেয়ার। বিশ্বাসও রয়েছে আপনার মধ্যে, কাজটা করবেন, সে প্রতিজ্ঞাও করেছেন–কিন্তু এ দুটোর সাথে কাজটার হাত দেয়ার সম্পর্ক কি? বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই, যতোক্ষণ আপনি কাজটা করার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে একটা সক্রিয় তৎপরতামূলক কর্মসূচী রচনা করে কাজে না নামছেন।
ধরুন, আপনি একজন ছাত্র। ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র তিনমাস বাকি। স্থির করলেন পরীক্ষায় আপনাকে ইংরেজি, ইকনমি এবং জিয়োগ্রাফীতে স্টার মার্ক পেতে হবে। সারা বছর ধরে পড়াশোনা যা করেছেন তা যথেষ্ট নয়। স্টার। মার্ক পেতে হলে আপনাকে প্রত্যেকদিন অতিরিক্ত আরো চারঘণ্টা করে পড়াশোনা। করতে হবে। সময়ের অভাব নেই আপনার, যদি বা থাকে, অন্যান্য কাজ থেকে সময় আদায় করে এই চারঘণ্টা বের করে নিতে পারবেন আপনি। আপনার দৃঢ় বিশ্বাস-স্টার মার্ক পাবেন আপনি অর্থাৎ নিজেকে আপনি বললেন-আমি পারবো।
এরপর দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলেন আপনি-আমি করবো।
এতেই কি স্টার মার্ক পাবেন বলে আশা করেন? না, তা আপনি আশা করতে পারেন না। বিশ্বাস এবং সংকল্প দ্বারা আপনি শুধুমাত্র মনকে সম্মত ও প্রস্তুত করলেন। এবার আসল কাজ।
আপনার বর্তমান পড়াশোনা এবং আবশ্যক পড়াশোনা অর্থাৎ আপনার বর্তমান অবস্থান এবং লক্ষ্যবস্তুর মধ্যবর্তী দূরত্ব মেপে নিতে হবে আপনাকে, মধ্যবর্তী বাধাবিঘ্নগুলোকে এক এক করে চিনে নিতে হবে, তারপর সক্রিয় তৎপরতামূলক একটা কর্মসূচী তৈরি করে বাধাগুলোকে এক এক করে টপকাবার। কাজে হাত দিতে হবে।
সময়ের অভাব-এটা একটা বাধা হতে পারে। আগেই উল্লেখ করেছি এ-বাধা টপকাবার জন্যে কি করতে হবে আপনাকে।
বইয়ের অভাব-এটা হতে পারে আপনার দু’নম্বর বাধা। এই বাধাকে দূর করার জন্যে লাইব্রেরীতে যাবেন আপনি, সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নেবেন বা নোট সংগ্রহ করবেন।
শারীরিক দুর্বলতা- এটা হতে পারে আপনার তিন নম্বর বাধা। রাত জেগে পড়াশোনা করতে হবে হয়তো আপনাকে, তাই শরীরটাকে সুস্থ রাখতে হবে। শরীর সুস্থ রাখার জন্যে ভালো খাওয়া-দাওয়া, উপযুক্ত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয়। বিশ্রাম দরকার হবে আপনার। বিশ্রামের জন্যে সময় ধার করতে হবে আপনার অন্যান্য কাজ থেকে। সময়ের একটা বাজেট করে নিন, বিশ্রামের সময় পেয়ে যাবেন।
এইভাবে একটি একটি করে বাধাগুলোকে ধরুন, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলোকে টপকান। আসলে বাধাগুলোকে টপকাবার মধ্যেই নিহিত রয়েছে পরীক্ষায় আপনার স্টার মার্ক পাবার মূল রহস্য। আপনি যদি বাধাগুলোকে টপকাতে পারেন, সত্যিই স্টার মার্ক পাবেন।