আপনার সুবিধার্থে আপনার সম্ভাব্য অবজেকটিভের জন্যে কিছু সাজেশনের নমুনা দিচ্ছি আমি। আপনি এগুলো সচেতন অবস্থায় ব্যবহার করতে পারবেন। কাঠামোটা মোটামুটি এই রকম রেখে নিজের ইচ্ছেমতো শব্দ যোগ বা বিয়োগ করতে পারেন।
আপনার সম্ভাব্য অবজেকটিভ:
গাড়ি
গাড়ির মালিক হতে চান আপনি। কিন্তু হাতে যথেষ্ট টাকা নেই, ইচ্ছা থাকলেও আজই শো-রূমে গিয়ে একটা গাড়ি কেনা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। টাকা নেই, তাই বলে কি গাড়ি কেনা হবে না?
হবে না নয়, হবে।
প্রথমে ঠিক করুন, কি ধরনের গাড়ি চান আপনি। শো-রূমে যান, দেখে শুনে একটা গাড়ি পছন্দ করুন। গাড়ি পছন্দ করার সময় ভাববেন না যেন ওই গাড়িটা আমার হলে ভালো হতো, ভাববেন ওই গাড়িটা আমার হবে, ওটার মালিক হবো আমি। যে-জিনিস আপনি জানেন আপনার হবে, আপনি সংগ্রহ করতে পারেন সে। জিনিসের জন্যে আপনি আশা করেন না, কেউ তা করে না। আশা করার মধ্যে সন্দেহের বীজ রয়েছে।
গাড়িটা পছন্দ করা হয়ে গেলে আপনি আপনার বিশ্বস্ত, সাহায্যকারী অবচেতন মনকে কাজে নামিয়ে দেবেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত যতোবার সময়। এবং সুযোগ পান, মনে মনে নিচের কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করুন:
‘একটা…গাড়ি কিনবো আমি-আমার অবচেতন মনের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমি এমন একটা পথ খুঁজে পাবো যে পথ ধরে এগোলে গাড়িটি পাবো আমি, কোনো ধরনের আর্থিক চাপের সম্মুখীন না হয়েও।’
.
নিজের একটি ব্যবসা
নিজস্ব একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া আপনার বহু দিনের মনের ইচ্ছা। এই ইচ্ছাকে ইচ্ছা মনে করবেন না এখন থেকে। ওটা আপনার একটা বৃহত্তর অবজেকটিভ।
সাজেশনগুলোর একমাত্র কাজ, আপনার অবচেতন মনকে আপনার অবজেকটিভের প্রতি সদয়, সহানুভূতিশীল হতে বাধ্য করা, তাকে আপনার অবজেকটিভের প্রেমে পড়তে বাধ্য করা। অবচেতন মন যদি আপনার। অবজেকটিভের প্রেমে পড়ে, পথ দেখাবে সে, উপায় বাতলে দেবে আপনাকে। কিভাবে কি করলে সেটি অর্জনে সফল হতে পারেন। যাবতীয় করণীয় করতে হবে আপনাকেই, অবচেতন মনের কাছ থেকে আপনি শুধু পথের হদিস পাবেন। কিভাবে কি করলে ফল ফলবে, তাও আপনি জানেন, কিন্তু ভুলে যান, তাই অবচেতন মন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবার দায়িত্ব নেবে।
নিম্নোক্ত সাজেশন দিন আপনার অবচেতন মনকে, আপনার অবজেকটিভের ধরন বা একৃতি অনুযায়ী এই সাজেশন একটু এদিক-ওদিক বা যোগ-বিয়োগ করতে পারেন আপনি।
‘আমার চিন্তা-ভাবনা এবং কাজের দ্বারা আমি পরিচালিত হচ্ছি নিজস্ব একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবার দিকে। নিজস্ব একটি ব্যবসা দেখাশোনা করার মতো যোগ্যতা এবং উপযুক্ততা আমার মধ্যে আছে। আমার সাফল্য আমাকে সুযোগ দেবে মানুষকে সুখী করতে।’
.
উত্তম স্বাস্থ্য
আগেই সাবধান করে দিচ্ছি, নিজেই নিজের ডাক্তার হতে যাবেন না। নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেকেরই উচিত শরীরটাকে চেক-আপ করানো। কোনো রকম ত্রুটি বা গোলযোগ যদি ধরা পড়ে, চিকিৎসার ভার দেয়া উচিত তাঁকেই যিনি তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন অপরের জীবন বাঁচাবার কাজে-অর্থাৎ আদর্শ একজন ডাক্তারকে।
অধিকাংশ অসুস্থতা মনের ব্যাপার। অসুস্থ হয়ে পড়বো, এই ভয় থেকেই। বেশিরভাগ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
নিজের সাজেশনটা ব্যবহার করবেন আপনি স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যে:
‘আমার স্বাস্থ্য দিনে দিনে ভালো হচ্ছে। ভালো খাচ্ছি, ব্যায়াম করছি, কাজ করছি, যথাসময়ে বিশ্রাম নিচ্ছি, খেলাধুলা করছি, ভালো আছি, সুস্থ আছি–থাকবোও।’
.
পারিবারিক শান্তি
বাড়িতে যদি শান্তি না থাকে কারো, পৃথিবীর কোথাও শান্তি নেই তার জন্যে।
পারিবারিক অশান্তির অনেক কারণের মধ্যে প্রধান হচ্ছে একঘেয়েমি। স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় থাকতে ব্যর্থ হয়, আকর্ষণ না থাকায় কেউ কারো মধ্যে বৈচিত্র্য খুঁজে পায় না এবং বৈচিত্র্যহীনতাই একঘেয়েমির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরস্পরকে নিয়ে করার কিছু পায় না তারা, তাই ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’-এর মতো তারা ঝগড়া করে, একজন আর একজনকে ব্যঙ্গ করে, স্বামী ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, স্ত্রী বেছে নেয় ডাইনীর ভূমিকা।
স্বামীর উচিত, উচিত নয়, কর্তব্য, তার চিন্তায়, কাজে, সাফল্যে, আনন্দে স্ত্রীকে সাথী করে নেয়া। গঠনমূলক কাজে দু’জন মিলিতভাবে মন দিলে সবরকম ঝগড়াফ্যাসাদ পালাতে দিশে পাবে না।
স্বামী বা স্ত্রী, একজন অপরজনকে ভুলের জন্যে দোষারোপ করবেন না। দোষ দিন নিজেকে। নিজেকে বলুন আমাদের বিবাহিত জীবনটাকে সুখের করার জন্যে আরো অনেক কিছু করবো আমি।
সাজেশন নিন:
‘ওকে ভালবাসতে কার্পণ্য করবো না। মুখের ভালবাসা নয়, কাজে প্রমাণ করবো আমি, ওকে অন্তর দিয়ে ভালবাসি।
আমি সুখ চাই, তাই ওকে সুখী করা সবচেয়ে আগে দরকার আমার। ওর সুখই আমার সুখ।
.
অভ্যাস পরিত্যাগ
নিজেকে জানবার চেষ্টা করুন। জানুন আপনার মধ্যে ভালো গুণ কি আছে, খারাপ। গুণ কি কি আছে। নিজেকে আপনি ভাবুন দেহসহ একটি মন নয়, মনসহ একটি দেহ। মনই সব। মনই আপনি। আপনার মনের বাসগৃহ দেহ। সুতরাং দেহকে অবাধ স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ দেবেন না। দেহ যেন আপনাকে শাসন না করে বা নির্দেশ না দেয়, এটা করো ওটা করো।
এমন কোনো অভ্যাস যদি আপনার থাকে যা অত্যন্ত ব্যয়-সাপেক্ষ ব্যয়সাপেক্ষ শুধু অর্থনৈতিক অর্থে নয়, মানসিক এবং দৈহিক ক্ষতিসাধনের অর্থে-সে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে আপনাকে। আপনি নিজেই নিজের কর্তা, আর কেউ নয়-এই সত্য জানুন, তাহলেই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন। নিজেই নিজের কর্তা মানে আপনার পরিচালক আপনিই, কিভাবে জীবন যাপন করবেন তা শুধুমাত্র আপনিই ঠিক করবেন। আপনার বদভ্যাসগুলোকে সে অধিকার কেন দেবেন? দেবেন না।