তোমার পক্ষে যতোটা সম্ভব ততোটা গভীর স্তরে পৌঁছুতে হলে নিজেকে। বলো–’আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি!’ এই কথাটি ধীরে ধীরে তিনবার বলো, সেই সাথে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার কাল্পনিক ছবি দেখো। এবার আর সংখ্যা গণনার দরকার নেই। খুব ধীরে ধীরে তিনবার নিজেকে বলো: ‘আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি,’ সেই সাথে ধাপের পর ধাপ নেমে গভীর স্তরে চলে যাও। মনের চোখে দেখো ঘটনাটা, সিঁড়িটা দেখো, রেলিং দেখো। সিঁড়িটা কাঠের না কংক্রিটের, মোজাইক করা না সাধারণ সিমেন্ট, কয়েক ধাপ নামার পর বাক আছে। কিনা, উপরের ল্যান্ডিং থেকে কি একটা বালব ঝুলছে?-এইসব খুঁটিনাটি আগেই ভেবে নাও, সিঁড়িটা স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলো মনের পর্দায়। প্রত্যেকটা ধাপ নামার সাথে সাথেই সম্মোহনের আরো গভীরে চলে যাবে তুমি। প্রথম দিকে অভ্যাসের সময় অন্তত বারতিনেক এই সিঁড়ি বেয়ে নামা ভানে। সেক্ষেত্রে কল্পনা করে নিতে পারো চারতলা থেকে নামছো তুমি, একেকবার একেক তলা। প্রত্যেক তলা নামার সাথে সাথে ক্রমে গভীরতর স্তরে চলে যাবে তুমি। বারদশেক অভ্যাসের পর একবার নামলেই যথেষ্ট হবে–একবারেই তোমার গভীরতম স্তরে পৌঁছে যাবে। তুমি। সেখানে পৌঁছে একমনে পুনরাবৃত্তি করতে থাকো তোমার সাজেশনের সারসংক্ষেপ।
মনে রাখবে শরীরটাকে যতো শিথিল করে দেবে, ততোই আরামবোধ করবে, ততোই চলে যাবে গভীরে। যতো গভীরে যাবে, ততোই শিথিল হবে শরীর-মন, ততোই আরামবোধ করবে। মাঝে মাঝে গভীর শ্বাস নেবে, এর ফলে আরো গভীরে চলে যাবে। এখন একবার গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারো, এর ফলে আরো গভীরে চলে যাবে তুমি।
যখন আত্মসম্মাহিত অবস্থায় রয়েছে, তখন যদি এমন কিছু ঘটে যেজন্যে তোমার জেগে ওঠা দরকার-ফোন বাজছে, কেউ দরজার কড়া নাড়ছে, কিংবা আগুন ধরে যাওয়া বা ঐ জাতীয় কোনো বিপদ উপস্থিত হয়েছে-তৎক্ষণাৎ জেগে উঠবে তুমি। পূর্ণ সজাগ, পূর্ণ সচেতন অবস্থায় ফিরে আসবে তুমি মুহূর্তে।
কিন্তু সেরকম কোনো জরুরী অবস্থার সৃষ্টি না হলে যখন জেগে উঠতে চাও তখন শুধু নিজেকে একবার বলবে, এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণলেই জেগে উঠবে। তুমি’। তারপর এক, দুই, তিন করে পাঁচ পর্যন্ত গুণে যাও। পাঁচ বলবার সাথে সাথেই চোখ দুটো খুলে যাবে তোমার। জেগে উঠে খুব ভালো লাগবে তোমার কাছে, মনে হবে গভীর বিশ্রাম নিয়ে উঠলে। সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়ে মনে হবে সজীব, প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
আত্মসম্মোহনকে অনেক কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হবে তুমি। তুমি যখন যে কাজের জন্যেই সাজেশন দাও না কেন, তোমার অবচেতন মন গ্রহণ করবে সে সাজেশন এবং সেই মতো কাজ করবে।
সম্মোহিত অবস্থায় অনেক সময় সময়ের হিসাব রাখা যায় না, কখনো চট্ট করে অনেক সময় পার হয়ে যায়। কখনো আবার খুব বেশি ক্লান্ত থাকলে সম্মোহিত অবস্থা থেকেই স্বাভাবিক ঘুমে ঢলে পড়ে কেউ কেউ। এটা বন্ধ করতে হলে প্রথমেই একটা সময়সীমা স্থির করে নেয়া উচিত। ঠিক সময় মতো তোমাকে জাগিয়ে দেবার ভার অবচেতন মনের উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারো। সময় হলেই সম্মোহনের যতো গভীর স্তরেই থাক না কেন তোমার অবচেতন মন জাগিয়ে দেবে তোমাকে।
আত্মসম্মোহন একবার শেখা হয়ে গেলে চিরকাল রয়ে যাবে ক্ষমতাটা তোমার। মধ্যে। নিয়মগুলো ভুলবে না তুমি কিছুতেই, যখনই প্রয়োজন তখনই সম্মোহিত করতে পারবে তুমি নিজেকে। তবে চর্চা একেবারে ছেড়ে না দিয়ে মাঝে মাঝে আত্মসম্মোহনের অভ্যাস রাখবে তুমি সারা জীবন। বিদ্যাটার চর্চা রাখলে শরীর-মন ভালো থাকবে তোমার।
এবার জেগে উঠবে তুমি। আমি যখন পাঁচ পর্যন্ত গুণবো তখন জেগে উঠবে সম্মোহন থেকে। জেগে উঠে চমৎকার লাগবে তোমার কাছে। সজীব বোধ করবে, পরিপূর্ণ বিশ্রামের পর যে তাজা একটা খুশি খুশি ভাব হয় সেটা অনুভব করবে তুমি। পাঁচ বলবার সাথে সাথেই সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় চোখ মেলবে তুমি। এক সম্মোহনের গভীর থেকে উঠে আসছো তুমি। দুই-জেগে উঠছে ক্রমে। তিন আচ্ছন্ন ভাবটা কেটে গিয়ে সজাগ হয়ে উঠছে। চার-চোখের পাতা খুলবার আগের মুহূর্তে চলে এসেছো তুমি। এরপর পূর্ণ বিশ্রামের ভাব নিয়ে পর্ণ সজাগ হয়ে চোখ মেলবে তুমি। পাঁচ।
.
যখন খুশি
সম্মোহিত অবস্থায় নিজেকে সাজেশন দেবেন আপনি, সাজেশনগুলো হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। শুধু সম্মোহিত অবস্থায় নয়, দৈনন্দিন জীবনে আপনি নিজেকে সাজেশন দিতে পারেন যখন খুশি, তাতেও ফল পাবেন।
যে অবজেকটিভের উপর বর্তমানে কাজ করছেন আপনি তার সারমর্ম লিখুন কাগজে, তারপর সারমর্মটাকে সংক্ষিপ্ত করুন দুটো কি একটি লাইনে। আপনার সারমর্মের সংক্ষিপ্ত লাইনটি প্রতিজ্ঞা-সূচক হলে ভালো হয়।
লাইনটি যখনই সময় পাবেন, উচ্চারণ করুন মনে মনে। সারাদিন যখন ইচ্ছা, যখনই মনে পড়বে, আওড়ান। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক নম্বর কাজ হোক লাইনটি বারবার আওড়ানো। সারাদিন কাজের ফাঁকেও পুনরাবৃত্তি করুন। ঘুমুতে যাবার আগে বিশেষ করে বেশিবার আওড়ান, পুনরাবৃত্তি করুন। পঞ্চাশ কিংবা একশোবার মুখস্থ বলুন লাইনটা। তোতাপাখির মতো।
নির্দিষ্ট অবজেকটিভের জন্যে নির্দিষ্ট প্রতিজ্ঞা-সূচক লাইন বেছে নেবেন আপনি। একই ধরনের প্রতীকধর্মী বুলি সব অবজেকটিভের বেলায় ব্যবহার করবেন না।