একটু দ্রুত উঠছে। এগিয়ে আসছে। কল্পনায় দেখতে পাচ্ছো তুমি, এগিয়ে আসছে। হাতটা আরো। যতোক্ষণ না মখ স্পর্শ করছে ততোক্ষণ উঠতেই থাকবে? হাতটা যতো উপরে উঠছে, ততোই গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি। যতোই গভীরে চলে যাচ্ছো ততোই উপরে উঠছে হাত। মুখ স্পর্শ করবার সাথে সাথে আরো অনেক গভীরে চলে যাবে তুমি। গভীর আরামের আবেশে আচ্ছন্ন হবে।
মুখ স্পর্শ না করা পর্যন্ত হাতটা উপরে উঠবে। স্পর্শ করার পর ফিরে যাবে নিজের জায়গায়। আরো গভীর স্তরে চলে যাচ্ছো তুমি। যেতে থাকো। এই আরামের বিশ্রাম উপভোগ করছো তুমি। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে চলে যাচ্ছো গভীর থেকে গভীরতর স্তরে। এক্ষুণি হাতের স্পর্শ পাবে তুমি তোমার মুখের। কোনো অংশে। তখন ডান হাতটা নামিয়ে ফেলতে পারো।
প্রত্যেকটা কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি। সব কিছু সম্পর্কেই সজাগ আছে। আরো খানিকটা ঢিল দাও, আরো খানিক গভীরে চলে যাও। যতোই গভীরে যাবে। ততোই বেশি আরাম লাগবে। কেমন একটা ঘুম ঘুম আচ্ছন্নভাব অনুভব করছো। তুমি এখন নিজের ভিতর। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না। সমস্ত ভাবনা, চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সরে গেছে বহুদূরে। কোনো কিছুতেই কিছুই এসে যায় না এখন তোমার। পরিপূর্ণ বিশ্রামের আরাম ঘিরে রেখেছে তোমাকে।
এই কথাগুলো যখনই শুনবে তখনই এমনি চমৎকার আরামের গভীরে চলে। যাবে তুমি। কিন্তু তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেউ তোমাকে সম্মোহিত করতে পারবে না। যতোই অভিজ্ঞতা বাড়বে ততোই দ্রুত গভীরে চলে যেতে পারবে তুমি। তোমার মধ্যে থেকে সমস্ত মানসিক চাপ দূর হয়ে গেছে, পরিপূর্ণ বিশ্রামের কোলে নিজেকে ঢেলে দিয়েছো তুমি। আরো ডুবে যাও, আরো গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে আরো গভীরতর স্তরে। ক্রমে আরো গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি।
সব ধরনের সম্মোহনই আসলে আত্মসম্মোহন। এতোক্ষণ পর্যন্ত যা যা বলা হয়েছে সেই সাজেশনকে মেনে নিয়ে তুমি নিজেকে সম্মোহিত করেছে। অন্যের সাজেশনে তুমি যেভাবে সাড়া দিয়েছে, নিজের সাজেশনেও ঠিক তেমনি ভাবেই সাড়া দেবে। নিজের উপকারের জন্যে তুমি নিজেকে যে সাজেশন দেবে সেটাই
মেনে নিয়ে তাতে সাড়া দেবে তোমার অবচেতন মন।
যখন খুশি নিজেকে সম্মোহিত করবার বিদ্যা শিখছো তুমি এখন। আত্মসম্মোহনে কোনোরকম বিপদের সম্ভাবনা নেই–শুধু একটি ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কোনো গাড়ি বা যন্ত্র চালাতে গিয়ে যেন আত্ম-সম্মোহিত হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নইলে বিপদ ঘটতে পারে। কারণ সম্মোহিত অবস্থায় সচেতন অবস্থার মতো অতটা সাবধান সপ্রতিভ থাকা অসম্ভব। তাই এখানে তোমাকে সাজেশন দিয়ে রাখছিঃ গাড়ি বা কোনো যন্ত্র চালনার সময়
ময়ে পড়া বা সম্মোহিত হয়ে পড়া তোমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। যখন। গাড়ি বা যন্ত্র চালাচ্ছো তখন শুধু যে সম্মোহিত হয়ে পড়বে না তা নয়, যতোক্ষণ ঐ কাজে আছো পরিপূর্ণ সজাগ, সচেতন ও সতর্ক থাকবে তুমি।
এখন যা যা করেছে প্রায় সেই সবই করতে হবে তোমাকে আত্মসম্মোহন করবার সময়। এখন যে অভিজ্ঞতা হলো, এই রকমই অভিজ্ঞতা হবে। তোমাকে সহজ একটা নিয়ম বলে দেবো, সেটা মনে রাখবে, ঠিক যা যা বলছি তাই করবে তাহলে খুব সহজেই সম্মোহিত করতে পারবে নিজেকে।
এখন যেমন আরাম করে শুয়ে বা বসে আছে, তেমনি আরামে বসবে বা শোবে। দৃষ্টিটা কোনোকিছুর উপর দু’তিন মিনিট স্থির রেখে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব তোমার সাজেশনের উপর। কতোক্ষণ সম্মোহিত থাকতে চাও সে সময় নিং রণ করে নিয়ে তোতাপাখির মতো বারবার উচ্চারণ করবে তোমার সাজেশন। চোর পাতা দুটো ভারি হয়ে এলেই তিনবার বলবে: চোখ বুজে আসছে। চোখ বুজে আসছে। চোখ বুজে গেল। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যাবে আপনিই।
সাজেশনগুলো জোরে বলবার হয়তো তোমার দরকার পড়বে না, নিজেকে যা বলতে চাও সেগুলো মনে মনে ভাবলেই চলবে। কিন্তু কেউ কেউ আবার মুখে উচ্চারণ করলে বেশি ভালো ফল পায়। ইচ্ছে করলে জোরে বলে দেখতে পারো। হোন্নতি হলো কিনা। চোখ বুজে যাওয়ার পর শরীরটাকে আরো ঢিল, আরো শিথিল করে নেবে তুমি আজ যেভাবে করেছে, ঠিক সেই ভাবে। প্রথমে পা থেকে শুরু করবে, একে একে শরীরের সমস্ত পেশী ঢিল করে দেবে। শরীরটাকে যতো শিথিল করবে, ততোই আরাম বোধ করবে, ততোই চলে যাবে গভীরে। শরীরটা ঢিল হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তিনবার বলবে: ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’। এই কথাটা তিনবার বলবার সাথে সাথেই সম্মোহিত হয়ে পড়বে তুমি। যখন নিজের ইচ্ছেয় আত্মসম্মোহিত হতে যাচ্ছো, কেবলমাত্র তখনই এই কথাটা তোমাকে সম্মোহিত করবে। অন্য সময় এই কথাটার কোনো প্রভাব পড়বে না। তোমার উপর। ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’–কথাটা হাজারবার বললে বা শুনলেও প্রভাবিত হবে না তুমি, যদি না নিজের ইচ্ছায় আত্মসম্মোহিত হওয়ার উদ্দেশ্যে কথাটা বলো।
ধীরে ধীরে তিনবার নিজেকে বলবে: ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’। কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সম্মোহিত হয়ে পড়বে তুমি। এবার ডান হাতটা শূন্যে ভেসে উঠে আপনাআপনি স্পর্শ করুক তোমার মুখ। সাজেশন দাও, কল্পনায় দেখো হাতটাকে উপরে উঠে আসতে, স্পর্শ করুক মুখের কোথাও। তারপর হাতটা নামিয়ে রাখো। ‘শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হও’ বলবার পর ডান হাতটা উপরে উঠে তোমার মুখ স্পর্শ করা হয়ে গেলেই তলিয়ে যেতে শুরু করবে তুমি সম্মোহনের আরো গভীরে।