প্রথম ডান পা থেকে শুরু করা যাক। ডান পায়ের সমস্ত পেশী শক্ত করে ফেললো। খুব শক্ত। এইবার হঠাৎ ঢিল দাও। হ্যাঁ, পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত সমস্ত পেশী শিথিল হয়ে গেল। ডান পাটা ঢিল হয়ে গেল কোমর পর্যন্ত।
এবার বাম পা শক্ত করে ফেলল। আরো শক্ত। হঠাৎ ঢিল দাও। হ্যাঁ। শরীরের নিচের অংশ সম্পূর্ণ শিথিল হয়ে গেল। এবার তোমার তলপেটের পেশীগুলোও শিথিল করো। তারপর বুক। আবার একবার বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলো। এর ফলে সারা শরীর আরো শিথিল হয়ে আসবে। ভেরিগুড। এবার পিঠের পেশীগুলো ঢিল দাও। কাঁধ আর ঘাড়ে কি একটু আড়ষ্টতা রয়ে গেছে? মাথা ও পায়ে ভর দিয়ে শরীরটা সামান্য ওপরে তোলো-হাঁটু সোজা। রেখে। এবার টিল দাও, শিথিল করে দাও। এবার হাত দুটো। ডান হাতের সমস্ত পেশী শক্ত করো, হঠাৎ ঢিল দাও। এবার বাম হাত। শক্ত করে ঢিল দাও। দুই কাঁধ সামান্য একটু ওপরে তোলো, দুই সেকেণ্ড ধরে রাখো, এবার ঢিল করে দাও। কাঁধ থেকে নিয়ে আঙুলের ডগা পর্যন্ত শিথিল হয়ে গেছে হাত দুটো। আহ! আরাম! চমৎকার লাগছে।
সারা মুখে অসংখ্য ছোটো ছোটো পেশী আছে, সেগুলোও ঢিল করে দাও এবার। এতে দাঁত চেপে ধ্রুকুটি করো, আরো জোরে, এবার ঢিল দাও। গাল, চোয়াল, চোখ, কপাল–সব ঢিল হয়ে গেল। পরিপূর্ণ বিশ্রাম। সারা শরীর ঢিল হয়ে গেছে। উদ্বেগহীন, স্বপ্নিল বিশ্রামের রাজ্যে চলে গেছো তুমি। ঝিরঝির ঝিরঝির শান্তির পরশ লাগছে তোমার গায়ে। আরো গভীর আরামের মধ্যে চলে যাচ্ছো তুমি ক্রমে। দিবা স্বপ্নে বহুবার যেমন কল্পনায় ভর করে অন্য এক জগতে চলে গেছে, ইচ্ছে করলেই তেমনি এক জগতে চলে যাওয়া শিখছো তুমি এখন। শিখে একে অনেক কাজে ব্যবহার করবে তুমি, উপকৃত হবে।
শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হয়েছো তুমি।
সন্মোহন আর কিছুই নয়, তুমি এখন যে অবস্থায় আছো একেই বলে সম্মোহন! এবার খানিকটা কল্পনার সাহায্য নিতে হবে তোমাকে। কল্পনা করে নাও, এক লম্বা সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছো তুমি। সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছো সি র ধাপগুলো–নেমে গেছে নিচে। রেলিংটা দেখতে পাচ্ছো স্পষ্ট। আমি দশ থেকে শূন্য পর্যন্ত গুণবো এখন। আমি গুণতে শুরু করলেই তুমি কল্পনায় ধাপের পর ধপ নামতে শুরু করবে সিঁড়ি বেয়ে। আমি যখন শূন্য গুণবো তখন তুমি নেমে গেছো নিচে নেমে যাওয়ার ছবিটা স্পষ্ট ফুটিয়ে তুলবে তুমি কল্পনায়। আমার প্রত্যেকটি গণনা তোমাকে আরো গভীর স্তরে নিয়ে যাবে। প্রত্যেকটা সংখ্যা উচ্চারণের সাথে সাথে গভীর থেকে গভীরতর স্তরে চলে যাবে তুমি। প্রতিটি ধাপ নামার সাথে সাথে আরো..আরো গভীরে তলিয়ে যাবে।
দশ।
নামতে শুরু করেছো তুমি। প্রত্যেকটি সংখ্যা উচ্চারণের সাথে সাথে আরো গভীরে চলে যাবে। নয়…আট…সাত…ছয়। অনেক গভীরে চলে যাচ্ছো তুমি। আরো…আরো গভীরে। পাঁচ…চার…তিন…দুই। আরো গভীরে। এক…শূন্য। নিচে নেমে গেছো তুমি, পৌঁছে গেছে অনেক গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে চলে যাচ্ছো আরো গভীরে।
শ্বাস-প্রশ্বাসটা হয়তো লক্ষ্য করেছে। বেশ অনেক ধীরে ধীরে বইছে এখন। আগের চেয়ে বেশ অনেক গভীরভাবে বইছে শ্বাস-অনেকটা ঘুমন্ত মানুষের মতো। শান্ত একটা আরাম, একটা আয়েসের ভাব এসে গেছে তোমার মধ্যে। দেহমনের। সব বাঁধন আরো আলগা করে দাও-ডুবে যাও আরো গভীরে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে গভীর থেকে আরো গভীরে।
তুমি এখন সম্মোহিত বিশ্রাম উপভোগ করছে। শিথিল আরামে আচ্ছন্ন হয়েছে মোহন্দ্রায়।
তোমার হাত দুটোর প্রতি লক্ষ্য দাও। খুব সম্ভব বেশ ভারি ঠেকছে ওগুলো তোমার কাছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়ে যাবে তোমার ডান হাতটা। পুরোটা হাত হালকা হতে শুরু করবে। অনুভব করতে পারবে ওজন চলে যাচ্ছে ওটার। কল্পনায় নিজের ডান হাতটা দেখো। আঙুলের নখ দিয়ে যেন বেরিয়ে যাচ্ছে সব ওজন। অনুভব করতে পারছো, ক্রমে হালকা হয়ে আসছে। হাতটা। একটু পরেই পুরোটা হাত ওজন শূন্য হয়ে যাবে। পালকের মতো হালকা হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে শূন্যে ভেসে উঠতে শুরু করবে হাতটা। হাওয়ায় ভেসে। উপরে উঠতে থাকবে তোমার ডান হাত। এগিয়ে আসবে মুখের দিকে। আরো হাল্কা হয়ে আসছে হাতটা। উপরে উঠতে চাইছে। গ্যাস বেলুনের মতো হালকা হয়ে গেছে ডান হাতট। এক্ষুণি অনুভব করতে পারবে শূন্যে ভেসে উঠছে হাতটা। হয়তো ইতোমধ্যেই ভেসে উঠতে শুরু করেছে। আরো…আরো উপরে উঠবে। হাতটা, আরো। কল্পনার চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছো, ভেসে উঠছে, ক্রমে এগিয়ে। আসছে হাতটা তোমার মুখের কাছে। স্পর্শ না করা পর্যন্ত চলতে থাকবে হাতটা মুখের দিকে।
কনুইয়ের কাছে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে হাতটা। আরো উপরে উঠছে। যদি এখনও হাতটা শূন্যে ভেসে উঠতে আরম্ভ না করে থাকে, কয়েক ইঞ্চি শূন্যে ভোলা ওটাকে, সামান্য একটু ভাজ করো কনুই। বাধা না দিয়ে ওটাকে মুখের কাছে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছেড়ে দাও তোমার অবচেতন মনের উপর। আপনিই উঠে আসবে হাতটা। তোমার মুখের কোনো অংশ স্পর্শ করে ফিরে যাবে নিজের জায়গায়। প্রথম দিকে একটু ঝাঁকি অনুভব করবে, তারপর সহজ ভঙ্গিতে উঠে এসে স্পর্শ করবে মুখের কোথাও আরো একটু উঠুক হাতটা।
হাওয়ায় ভেসে উপরে উঠে আসছে তোমার হাত। উপরে উঠছে। আরো উপরে। এইভাবে উঠতে উঠতে মুখের কোনো একটা জায়গায় স্পর্শ করবে হাতটা। আরো উঠে আসছে হাত। আরো। আরো, আরো। এবার আগের চেয়ে