.
আত্মসম্মোহন
প্রথমে আর কারো দ্বারা সম্মোহিত হওয়া আত্মসম্মোহন শেখার সবচেয়ে সহজ নিয়ম। সাধারণত এই নিয়ম এক বৈঠকেই শিখে নেয়া যায়।
এ সম্মোহনকারী আপনাকে সম্মোহিত করে পোস্ট-হিপনোটিক সাজেশন দিয়ে দেবেন। বাতলে দেবেন সংক্ষিপ্ত একটি নিয়ম। কি করে সম্মাহিত হতে হবে এবং গভীরতর স্তরে কিভাবে পৌঁছুতে হবে সে ব্যাপারে দু’চার কথা তিনি বলে দেবেন, হয়তো দুটো একটা শব্দ গেঁথে দেবেন আপনার মনে-ব্যস, শেখা হয়ে গেল।
যখনই সম্মোহিত হতে চাইবেন, প্রাথমিক নিয়মগুলো পালন করবার পর (যেমন, ঢিলে জামাকাপড় পরে নরম বিছানায় শোয়া, বা ইজি চেয়ারে আরাম করে বসা ইত্যাদি) আপনি বারকয়েক শুধু সেই বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করলেই আত্মসম্মোহিত হয়ে পড়বেন। নিজে নিজে কয়েক দিন প্র্যাকটিস করলেই গভীর স্তরে পৌঁছে যেতে পারবেন।
আর একটি উপায় হচ্ছে কোনো বন্ধু বা টেপ রেকর্ডারের সাহায্য গ্রহণ করা। আমরা এই উপায়টি যোগ করছি এই পরিচ্ছেদে। কোনো কিছুর সাহায্য না নিয়ে একা একাও আত্মসম্মাহন শেখা যায়–সেই পদ্ধতি জানা যাবে ‘আত্মসম্মোহন শীর্ষক গ্রন্থে (শিগগিরই সেটি পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে প্রজাপতি প্রকাশন থেকে)।
.
আত্মসম্মোহন শিক্ষা
আত্মসম্মোহন শিক্ষার জন্যে যে কথাগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলো রেকর্ড করবার আগে স্পষ্ট উচ্চারণে অন্তত বারতিনেক জোরে জোরে পড়ুন। এর ফলে রেকর্ডিংটা ভালো হবে। কণ্ঠস্বরটা যেন বেশি ওঠানামা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন-মোটামুটি একঘেয়ে একটানা একটা ভাব বজায় রাখলে সম্মোহনের জন্যে সুবিধা হবে। ধীর একটা ছন্দ পেয়ে যাবেন বার দুয়েক অভ্যাসের পরই। ছন্দটা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। নিজে যদি রেকর্ড করতে খুব অসুবিধে বোধ করেন, কোনো বন্ধুকে ডেকে পড়িয়ে নিন ওকে দিয়ে।
রেকর্ড প্লেয়ার থাকলে কথাগুলোর সাথে সাথে ধীর লয়ের কোনো ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিকও ব্যবহার করতে পারেন, তবে লক্ষ্য রাখবেন বাজনাটা যেন খুব আস্তে বাজে, মুখ্য কথাগুলোই, বাজনাটা গৌণ।
রেকর্ডটা শোনবার জন্যে এমন একটা স্থান ও কাল বাছাই করুন যে সময়ে বা যেখানে কোনো ধরনের বাধা পড় না। আরাম করে আরাম কেদারায় বসুন বা শুয়ে পড়ুন বিছানায়। জামা কাপড় ঢিল করে দিন। এবার স্থির দৃষ্টিতে তাকান। কোনো নির্বাচিত বিন্দুর দিকে। স্বাভাবিকভাবে চাইলে চোখটা যেখানে পড়ে তার চেয়ে খানিক উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত। এইবার টেপ রেকর্ড চালু করে দিন, কিংবা আঙুলের ইশারায় বন্ধুকে বলুন পড়া শুরু করতে। আপনার সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন পাঠরত কণ্ঠস্বরের উপর। যা যা করতে বলা হচ্ছে করুন নির্দ্বিধায়।
.
রেকর্ডের বিষয়বস্তু
কিছুক্ষণের মধ্যেই আশ্চর্য শিথিল এক আরামের আবেশ আসবে তোমার মধ্যে। জীবনে এত আরামের বিশ্রাম উপলব্ধি খুব কমই হয়েছে তোমার। শরীর মন যতোই চিল করে দেবে, যতোই শিথিল করে দেবে, ততোই বেশি হবে আরাম। যেখানটায় তাকিয়ে আছে আরো কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে সেদিকেই, লম্বা করে দম। নাও একটা। তারপর ধীরে ধীরে বাতাস বের করে দাও ফুসফুস থেকে। সব বাতাস বের করে দাও। এবার আরেকটা লম্বা শ্বাস টানো। আবার খালি করো ফুসফুস। হ্যাঁ, এই রকম। সব বাতাস বের করে দিয়ে আবার একটা দম নাও আগের মতো। এবার স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকুক শ্বাস-প্রশ্বাস। প্রতিশ্বাসের সাথে সাথে আরো শিথিল হচ্ছে তোমার শরীরের সমস্ত পেশী। যা বলা হচ্ছে মন দিয়ে শোনো, অন্য কোনো দিকে চিত্তবিক্ষেপ না করে একমনে শুনে যাও কথাগুলো। শরীর মন শিথিল করে দাও আরো, আর শোনো। তোমার ভালোর জন্যেই বলা হচ্ছে কথাগুলো।
চোখের পাতা দুটো একটু কাঁপছে হয়তো তোমার। চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে করলে ফেলতে পারো, তবে দৃষ্টিটা যেদিকে স্থির হয়ে আছে সেই দিকেই থাকুক আরো কিছুক্ষণ। হয়তো লক্ষ্য করছো, চোখের পাতাগুলো একটু ভারি হয়ে আসতে শুরু করেছে। ক্রমে আরো ভারি মনে হবে ওগুলো, খুলে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠবে ক্রমে। বেশ ভারি লাগছে এখন। খানিক বাদেই বুজে আসতে চাইবে পাতা দুটো। বুজে আসতে চাইলে যে-কোনো সময় চোখ বুজতে পারো। একটু পর। ওগুলো এতোই ভারি মনে হবে যে খুলে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে, এবং আপনিই। বুজে যাবে। এবার বুক ভরে আর একটা লম্বা দম নিয়ে ছেড়ে দাও, ঢিল করে দাও শরীর-মন।
আরামের আবেশ আসবে তোমার মধ্যে একটু পরেই। চমৎকার একটা ঘুমঘুম মোহের আবেশ। হয়তো ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছো, আসতে শুরু করেছে স্বপ্নিল একটা আচ্ছন্ন ভাব। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা সব দূর হ স যাচ্ছে তোমার মন। থেকে। কোনো কিছুরই তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না, এমনি একটা ভাব আসছে তোমার মধ্যে। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব। চোখের পাতা দুটো হয়তো আরো বেশি কাঁপছে তোমার। যদি এখনও বুজে গিয়ে না। থাকে, বুজে যাক ও-দুটো। চোখ বন্ধ করো। পাতাগুলো খুব ভারি লাগছে, খু-উ-ব। ভারি। চোখ বুজে মন দিয়ে শোনো কথাগুলো। খানিক পরেই আমার কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কোনো শব্দই ঢুকবে না তোমার কানে।
হয়তো অনুভব করতে পারছো হাত-পাগুলোও ভারি হয়ে এসেছে তোমার। স্বপ্নিল আচ্ছন্ন ভাবটা বাড়ছে আরো। অদ্ভুত আরামের আবেশ আসছে। শরীরের সমস্ত পেশীগুলোকে আরো ঢিল করে দিতে হবে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রতিটি পেশী শিথিল করে দিতে হবে। একে একে ঢিল করে দাও সব।