সন্দেহপ্রবণ, মিনমিনে স্বভাবের লোক যারা তাদেরকে সম্মোহিত করা সত্যিই কঠিন।
সুস্থ, সবল মনের অধিকারী সমোহিত হয় সহজে। বুদ্ধিমানেরাও সম্মোহিত হয় তাড়াতাড়ি। বোকা এবং পলায়নী মনোবৃত্তির লোকেরা সম্মোহিত হয় না, হলেও বড্ড দেরিতে হয়। তবে ব্যতিক্রম আছে। সম্মোহিত হওয়া না হওয়া আরো বহু কিছুর উপর নির্ভর করে।
.
কি কি কাজে লাগে
শারীরিক ব্যথা-বেদনা দূর করা যায় সম্মোহনের সাহায্যে। আজকাল সম্মোহনের সাহায্যে অচৈতন্য বা শরীরের অংশবিশেষকে অসাড় করে দিয়ে কঠিন কঠিন সার্জিক্যাল অপারেশন হচ্ছে। বুক চিরে হৃৎপিণ্ডের উপর অস্ত্রোপচার হচ্ছে, একটা ফুসফুস অপারেশন করে বের করে আনা হচ্ছে–এতোটুকু ব্যথা পাচ্ছে না রোগী।
মানুষ তার অতীতে ফিরে যেতে পারে সম্মাহনের সাহায্যে। আপনার জীবনে। আজ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে যা কিছু দেখেছেন, শুনেছেন বা অনুভব করেছেন সব জমা আছে আপনার স্মৃতিতে। সচেতনভাবে মনে করবার চেষ্টা করলে সব মনে আসে না। সামান্য কিছু মনে আসে। কিন্তু সম্মোহিত অবস্থায় প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি শুধু স্মরণ করতে পারা নয়, সেই অতীতের ঘটনায় ফিরে যেতে পারেন আপনি।
সম্মোহনকে ব্যবহার করে মনো-বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় বিস্ময়কর সব ফল পাওয়া গেছে। চারিত্রিক দুর্বলতা, বদভ্যাস, এবং হালকা স্নায়বিক বৈকল্য সারিয়ে তোলা সম্ভব আত্মসমর্মাহনের সাহায্যে।
শিক্ষার ব্যাপারেও আশ্চর্য অবদান রাখছে সম্মোহন। অনেকে অভিযোগ করেন, ‘কাজে মন বসাতে পারি না, গভীর আগ্রহবোধের অভাব রয়েছে আমার মধ্যে,’ কিংবা, ‘স্মরণশক্তি নই আমার।’–আত্মসম্মোহন এদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করবে, এরা গভীর আগ্রহবোধের অধিকারী হবেন, স্মরণশক্তি প্রচুর বেড়ে যাবে।
.
অটোসাজেশন
ইংরেজি সাজেশন শব্দটির উপযুক্ত প্রতিশব্দ না পাওয়ায় আমরা সাজেশন শব্দটিকেই ব্যবহার করছি।
সাজেশনের সাহায্যে অবচেতন মনকে প্রভাবিত করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই কম বেশি সাজেশনের দ্বারা প্রভাবিত হই-এ আপনি আগেই জেনেছেন। এই সাজেশন জিনিসটাই ব্যবহার করবেন আপনি নেতিবাচক মনোভাবের বদলে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হবার জন্যে।
অটো-সাজেশনের চেয়ে হিটারো-সাজেশন অনেক বেশি শক্তিশালী। সম্মোহিত অবস্থায় আপনি নিজেকে যা বলবেন অবচেতন মন সেটাকে যতো তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে তার চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে যদি সেই একই কথা আর কেউ বলে।
সাজেশন জিনিসটা অনেক রকম করে বলা যায়। আদেশের সুরে বলতে পারেন, সাদামাঠা বক্তব্য পেশের কায়দাতেও বলতে পারেন। সরাসরি কিংবা ঘুরিয়েও বলা যেতে পারে। তবে না-সূচক বাক্য ব্যবহার করবেন না। ‘নিজেকে আমি অযোগ্য মনে করবো না।’-এই না-সূচক বাক্যটিকে হ্যাঁ-সূচক করা যায় এইভাবে, ‘নিজেকে আমি যোগ্য মনে করবো।’
আদেশ কেউ পছন্দ করে না, আপনার অবচেতন মনও না। সাদামাঠা ভাবে বক্তব্য রাখলে সাধারণত ফল বেশি পাওয়া যায়।
যে-কোনো সাজেশন মনের মধ্যে গেঁথে দেবার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেকটি সাজেশন দশবার, বিশবার, কিংবা আরো বেশিবার পুনরাবৃত্তি করা দরকার।
কোনো একটি সাজেশনের পিছনে যদি অন্তরের তাগিদ বা অনুপ্রেরণা থাকে তাহলে অবচেতন মন সেটা চট করে মেনে নেয়। সাফল্য লাভ করার ইচ্ছাটা আপনার যতো জোরালো হবে ততোই সহজ হবে লাভ করা।
যে-কোনো সাজেশন কার্যকরী করার ব্যাপারে কাল্পনিক ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাজেশনের কথাগুলোর সাথে যদি কল্পনা যুক্ত হয়। তাহলে দুয়ে মিলে গভীর ছাপ ফেলতে পারে আপনার অবচেতন মনের উপর। ঘনঘন কোনো ছবি মানসচক্ষে দেখলে অবচেতন মন সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে সচেষ্ট হয়। কেন হয় জানা যায়নি, কিন্তু হয়। মানসপটে চাহিদার ছবিটি যে যতো পরিষ্কার, স্পষ্ট দেখতে পাবে, তার চাহিদাটা ঠিক ততোই তাড়াতাড়ি পূরণ হবে। এই-ই নিয়ম।
একসাথে অনেক বেশি সাজেশন দিয়ে আপনার অবচেতন মনকে দিশেহারা করে তুলবেন না। যে-কোনো একটি ব্যাপারে সাজেশন দেয়া ভালো। বদভ্যাস ছাড়তে চান, নিজের প্রতি আস্থা আনতে চান, সুখী হতে চান, কাজে গভীর আগ্রহ আনতে চান–সব যদি একসাথে এক সিটিংয়ে চান তাহলে সব গুলিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না। প্রতিদিন পুনরাবৃত্তির জন্যে প্রতি সপ্তাহে একটি মাত্র সাজেশন নিন, পরের সপ্তাহে আর একটাকে ধরুন।
ডক্টর জেম্স এম. হিক্সন বলেছেন, অবচেতন মনকে যে বক্তব্যটা গ্রহণ করাতে চান সেটাকে বিস্তারিতভাবে লিখে ফেলুন আগে। তারপর লিখিত বক্তব্যের সারমর্ম লিখুন। সারমর্মটাকে আরো সংক্ষিপ্ত করে একটা বা দুটো লাইনে দাঁড় করান। বাড়তি কথা সব বাদ দিন, যেটা চান Cটাই শুধু থাকুক।
আপনি যা চাইছেন সেটাকে হ্যাঁ-সূচক একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে ধরতে হবে। কিভাবে কাজটা করতে হবে তা জানা আছে আপনার অবচেতন মনের; সুতরাং আপনি যে ফলাফলটা চান বেশি কথা না বাড়িয়ে শুধু সেটারই উল্লেখ করুন। সংক্ষেপে। এই একটি বাক্যে আপনি ঠিক কি কি বোঝাতে চাইছেন ভেবে নিন ভালো করে।
ধরা যাক, আপনি একটা বাক্য তৈরি করলেন: আমি বড় হবো। আমি বড় হবো-এই কথাটি দিয়ে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চান–শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক বা সামাজিক কোন্ দিক থেকে কোন্ বিষয়ে কতো বড় হতে চান সে সব ভালো করে বুঝে নিন একবার। তারপর সব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে তোতাপাখির মতো শুধু আউড়ে যান: আমি বড় হবো, আমি বড় হবো, আমি বড় হবো…।