একাদশ পরিচ্ছেদ: বৃহত্তর-ক্ষুদ্রতর। আপনার স্বয়ংসম্পূর্ণ কাম্যবস্তুকে আপনি বৃহত্তর কাম্যবস্তু বলে মনে করুন। বৃহত্তর কাম্যবস্তুটিকে এবার ভাঙুন টুকরো টুকরো করে। এই টুকরোগুলো আপনার ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তু। এই ভাঙা টুকরোগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। তালিকায় উপর দিকে থাকবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তুগুলো। তালিকার এক নম্বর ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তুটি অর্জন করতে হবে আপনার। তারপর দু’নম্বরটা, এরপর তিন নম্বরটা–এইভাবে এক এক করে সবগুলো অর্জন করার চেষ্টা করতে যাচ্ছেন আপনি।
তালিকার এক নম্বর ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তুটি অর্জন করতে যাওয়ার আগে ওটিকে ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তু না ভেবে, ভাবুন ওটিই আপনার বর্তানের বৃহত্তর কাম্যবস্তু। এই পদ্ধতিতে যখন যে ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তু অর্জন করার পালা আসবে তখন সেইটিকেই ভাবুন বৃহত্তর কাম্যবস্তু হিসেবে।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ: জীবনের নতুন মান। নিজেকে তৈরি করাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সাফল্য লাভের চাবিকাঠি রয়েছে আপনার হাতে। ফর্মুলাটা কাজে প্রয়োগ করলে সাফল্য লাভ অবধারিত, প্রয়োগ না করলে পিছিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ: আপনি পারেন না এমন কোনো কাজ নেই পৃথিবীতে, এই বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে আপনাকে।
আমরা নিজেদেরকে ধোকা দিচ্ছি, নিজেদের কাছে মিথ্যে কথা বলছি, কিন্তু তার জন্যে কোনো অপরাধবোধে ভুগছি না। এর প্রতিক্রিয়া খারাপ হতে বাধ্য।
আপনি নিজের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করবেন সেটা ভঙ্গ করে আপনার অবচেতন মনকে কুশিক্ষা দিচ্ছেন। আপনার অবচেতন মন আপনার উপরই প্রতিশোধ নেবে।
সম্পদের সদ্ব্যবহার করার নিয়ম জানানো হয়েছে আপনাকে। আপনার ধন সম্পদ যেন আপনার প্রভু না হয়ে ওঠে। আপনার জন্যে যে আন্তরিকভাবে কাজ করছে, তাকে সুখী মানুষ হতে সুযোগ করে দিন।
কেউ যদি প্রচুর পরিমাণে না পায় মনে করতে হবে প্রচুর পরিমাণে দিচ্ছে না সে, তাই পাচ্ছে না।
বয়স মাত্রই সম্পদ, আপনার বয়স পঞ্চাশ-ই হোক আর নব্বই-ই হোক। বুড়ো সে-ই যে নিজেকে বুড়ো বলে ভাবতে শুরু করেছে, আর কেউ নয়।
১৪. কার্যসাধন প্রণালী
মনকে নিয়েই আমাদের কারবার। মনই মানুষ। মন যদি বলে পারবো, তবে পারা যাবে। মন যদি বলে পিরবো না, পারা যাবে না।
মনের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন আপনি। অতএব মনকে বশ করুন, অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠবেন। মনকে রাজি করান সুখী হতে। মনকে রাজি করান সাফল্য অর্জন করতে। মনই আপনার পুঁজি, আপনার মূলধন, আপনার ভাগ্য-নিয়ন্তা।
এই যে মন, একে আমরা কতোটুকু চিনি?
মনকে চেনাটা জরুরী। মনকে চিনতে পারলে মনের কাছ থেকে লক্ষ-কোটি মণি-মুক্তো আদায় করে নেয়া সম্ভব হবে আপনার পক্ষে।
মনকে বশ করার উপর আপনার জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। মনকে মনের মতো করে গড়ে তুলতে হলে কি করতে হবে ইতিমধ্যে জেনেছেন আপনি।
মনের ভিতর আরো ভালোভাবে দেখতে হলে সমোহন বিদ্যায়, অটোসাজেশন এবং আত্মসম্মোহন সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা দরকার। সম্মোহন, অটোসাজেশন এবং আত্মসমোহন, এগুলোর সাহায্যে মনের ভিতরটা দেখতে পাবার সুযোগ তো পাবেনই আপনি, তার ওপর, এই বিদ্যা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সাফল্য অর্জনে কামিয়াব হবার সুযোগও পাবেন।
.
অবচেতন মন
অবচেতন মনের অনেক নাম। কেউ বলে সাবজেকটিভ, কেউ বলে সাবলিমিনাল, কেউ বলে অচেতন।
আমরা অবচেতনই বলবো, এটাই বহুল প্রচলিত। অবচেতন মন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা না থাকলে সম্মোহন কি এবং কেন, ঠিক বোঝা যাবে না। তবে, কি জানেন, অবচেতন মন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও বেশি কিছু একটা জানতে পারেনি। অবচেতন মন এখনও একটা প্রায় অপরিচিত রহস্য। তবে জানা গেছে, এই মনের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো সম্মোহন।
শরীরের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে অবচেতন মন। এই মন শরীরে ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গ্ল্যাণ্ডের উপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে নার্ভাস সিস্টেমের সাহায্যে।
আমাদের চেতন মনের সাথে অবচেতন মনের পার্থক্য অনেক। যেমন, চেতন মন বহু কথা, বহু ঘটনা ভুলে যায় কিন্তু অবচেতন মন কিছুই ভোলে না।
অবচেতন মন কর্তব্যপরায়ণ এবং দায়িত্বশীল। এর প্রধান কাজের অন্যতমটি হলো আপনাকে রক্ষা করা। আপনি জেগে, ঘুমিয়ে বা অজ্ঞান অবস্থায় থাকুন, আপনার অবচেতন মন সজাগ থাকছে সবসময়, বিপদ-আপদের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করার জন্যে।
এই মনটির সাহায্য নিতে পারলে আপনি আপনার বদভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে পারবেন খুব সহজে। এই মনের সাহায্য পেলে আপনার চেতন মনকে আপনি বশে আনতে পারবেন, গড়ে তুলতে পারবেন সু-অভ্যাস, সাফল্য অর্জনে প্রত্যক্ষ সাহায্য আদায় করে নিতে পারবেন।
সাহায্য পাবেন কিভাবে? সম্মোহনের মাধ্যমে।
.
সম্মোহিত হবার যোগ্যতা
শতকরা পঁচানব্বই জন মানুষ সামান্য চেষ্টাতেই হালকা, মাঝারি বা গভীর সম্মোহনের স্তরে পৌঁছে যেতে পারে একটু চেষ্টা করলেই। অথচ অধিকাংশ লোকের ধারণা, তার সম্মোহিত হবার মতো যোগ্যতা নেই। যে সব লোক দাবি করে তাদের মনটা পাথরের মতো শক্ত, তাদেরকে সম্মোহিত করা সম্ভব নয়–এরাই। আসলে চট করে সম্মোহিত হয় এবং গভীর স্তরে চলে যায়।