এবার দেখা যাক, নব্য কোটিপতি লোকটার বেলায় কি ঘটনা ঘটছে।
সাফল্য সম্পর্কে এই লোকটার কোনো ধারণাই নেই। গরীব ছাড়া নিজেকে লোকটা আর কোনো কিছু ভাবতেই পারতো না। অকস্মাৎ হাতে অগাধ ধন-সম্পদ এসে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়লো সে। সুবিন্যস্ত জীবনধারা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকায়, উন্নত মানের জীবন যাপন কাকে বলে তা জানা না থাকায় টাকা পয়সা না ব্যয় করলো নিজের উপভোগের জন্যে, না কোনো গঠনমূলক প্রকল্পে। তার টাকা পাঁচ ভূতে লুটেপুটে খেলো, বাকি যা ছিলো ব্যবসা করতে গিয়ে অনভিজ্ঞতা ও অবহেলার দরুন সব হারালো। আবার সে পরিণত হলো একটা গরীব মানুষে। কিন্তু, তার স্বাস্থ্য? সে অন্য গল্প।
স্বাস্থের ব্যাপারে কক্ষনো সে দুশ্চিন্তায় ভুগতো না। নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুলেও সে খারাপ কিছু ভাবতো না। স্বাস্থ্য ভালো আছে, বেশ আছে, এই ছিলো তার একমাত্র বিশ্বাস। বাছ বিচার করে খাওয়া কাকে বলে, জানতো না। খাবার যা পেতো, পেট ভরে খিদে মিটিয়ে খেতো। হজম হবে কি হবে না এ বিষয়ে মাথা ঘামাতো না। ফলে স্বাস্থ্যটা তার পূর্বের মতো হয়ে উঠলো। অর্থাৎ আবার সে স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠলো।
গল্পটা থেকে শিক্ষণীয় কি পাচ্ছি আমরা?
‘আমরা নিজেকে যা মনে করি আমরা তাই!’ নিজেকে জানুন, আপনি নিজেকে শিল্পী বলে জানুন, শিল্পী হতে পারবেন অনায়াসে। নিজেকে আপনি বুদ্ধিমান বলে জানুন, দেখবেন, সত্যি সত্যি বুদ্ধিমান। হয়ে উঠবেন আপনি।
নিজেকে জানাটাই বড় কথা। শিল্পী, লেখক, গায়ক, ব্যবসায়ী, নেতা, খেলোয়াড়-কি হতে চান জেনে নিন। হওয়াটা তখন অনায়াসসাধ্য হবে।
এবার আসুন, পিছনের ফেলে আসা পরিচ্ছেদগুলোর কিছু কিছু স্মৃতি রোমন্থন করা যাক। রোমন্থন উপকারী অভ্যাস, যদি তা থেকে কিছু শিখে নিতে পারেন। আপনি, সংশোধন করে নিতে পারেন ত্রুটিগুলো।
প্রথম পরিচ্ছেদ: এই পরিচ্ছেদে আপনি শিখেছেন, সাফল্য গন্তব্য স্থান নয়, ভ্রমণ বা যাত্রা। সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যে যেই মুহূর্তে পা রাখলেন পথে সেই মুহূর্তে সাফল্য লাভ করলেন আপনি। ব্যাঙ্কে টাকা জমা হোক, নতুন বাড়ি কেনা হোক, সব দেনা শোধ হোক–সফল হবার আগে এসবের জন্যে আপনার অপেক্ষা করবার দরকার নেই। এই মুহূর্তে, যখন আপনি সাফল্য লাভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে মনে করতে হবে।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: এই পরিচ্ছেদে আপনি শিখেছেন আপনার চাওয়া এবং হওয়ার তালিকা কিভাবে তৈরি করতে হবে। সুখী হওয়ার সহজ উপায় কি জানানো হয়েছে আপনাকে। প্রত্যক্ষদর্শন কততটা উপকারী ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ: এই ফর্মুলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হলো, মানুষের মন। থেকে নেতিবাচক মনোভাব সমূলে উৎপাটন করতে হবে। ইতিবাচক, হ্যাঁ-সূচক, আশাব্যঞ্জক এবং গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও মনোভাবের অধিকারী হতে হবে আপনাকে।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: সুখ। সুখ ভাড়ায় পাওয়া যায় না। সুখ রয়েছে আপনার মধ্যেই। সুখী বলে নিজেকে মনে করাই সুখী হবার সর্বোত্তম উপায়। সাফল্য চান? চাইলে, আগে সুখী হোন। যে সুখী নয়, তার দ্বারা সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ: গভীর আগ্রহ। গভীর আগ্রহ প্রচণ্ড একটা পরিচালিকা শক্তি। আপনি শিখেছেন গভীর আগ্রহবোধ কিভাবে নিজের মধ্যে আমদানী করা যায়। গভীর আগ্রহবোধ কাজকে ভালবাসতে শেখায়।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: অতৃপ্তি। মানুষের অতৃপ্তিই স্পৃহা যুগিয়েছে মানব সভ্যতাকে গড়ে তুলতে। যত বড় বড় আবিষ্কার, মহৎ শিল্পকর্ম, বিস্ময়কর সাফল্য-অতৃপ্তির বদৌলতেই সম্ভব হয়েছে। আপনি শিখেছেন কিভাবে অতৃপ্তি দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।
সপ্তম পরিচ্ছেদ: অ্যাকশন। চিন্তা বা আইডিয়ার কোনোই দাম নেই যদি সেটাকে কাজে, বাস্তবে রূপান্তরিত করা না যায়। আপনি শিখেছেন দু’ধরনের এনার্জির কথা। পোটেনশিয়াল এনার্জি এবং কাইনেটিক এনার্জি। আপনি আরো শিখেছেন নিষ্ক্রিয়তা কারণ নয়, ফলাফল। উপদেশ দেয়া হয়েছে, কাজে নামুন, কাজে হাত দিন, কাজের ভেতর দিয়ে এগোন-জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দুটোই অর্জন করা সম্ভব হবে।
অষ্টম পরিচ্ছেদ: ধারাবাহিকতা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোনো কিছুই স্থির হয়ে নেই; আপনারও স্থির হয়ে থাকলে চলবে না। এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় কাজ করা। কাজের পর কাজ, একের পর এক কাজ করে যেতে হবে আপনাকে। একটা কাজ প্রথমে শেষ করুন, শেষ হবার পরই আপনি অপর কাজে হাত দেবেন। কাজের পর আবার কাজে হাত দিন। এগিয়ে যান অবিরত।
নবম পরিচ্ছেদ: উপাদান। আপনার কাম্যবস্তু একক কোনো জিনিস দিয়ে তৈরি নয়, ওটা কয়েক প্রকার উপাদানের সমষ্টি। আপনি শিখেছেন, কাম্যবস্তুকে ভালবাসতে হবে, তাকে কল্পনার চোখে দেখতে পেতে হবে। আপনার কাম্যবস্তু কেউ তৈরি করে রাখেনি, আপনিই তাকে বিভিন্ন উপাদান সহযোগে তৈরি করবেন।
দশম পরিচ্ছেদ: বিভক্তিকরণ এবং সংযুক্তকরণ। যে-কোনো কাম্য-বস্তুকে দু’ভাবে দেখতে শেখানো হয়েছে। প্রথমে কাম্যবস্তুর স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপটা দেখুন বা চিন্তা করুন, তারপর সেটাকে দেখুন কয়েকটা ভাগে ভাগ ভাগ করে, বিভক্ত করে। এই পদ্ধতিতে দেখায় বা চিন্তা করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে আপনাকে।