.
পাওয়ার উপায়
পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে দেয়া। কেউ যদি প্রচুর পরিমাণে না পায়, মনে করতে হবে প্রচুর পরিমাণে দিচ্ছে না সে, তাই পাচ্ছে না।
দেয়া-নেয়ার এই নিয়ম প্রকৃতির কাছ থেকে শিখতে পারেন আপনি। গাছ তার শুকনো পাতা ছেড়ে দেয়, সে জানে নতুন পাতা পাবে সে। এমন কোনো গাছ আপনি দেখেছেন যে নতুন পাতা পাবে না এই ভয়ে শুকনো পাতা ধরে রেখেছে? প্রকৃতির প্রতিটি অংশ শুধুই দিয়ে চলেছে। অথচ মানবজাতি-প্রকৃতিরই অংশ বা সন্তান–এই মৌলিক আইন লঙ্ঘন করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
শুধু ধন-সম্পদ থাকলেই আপনাকে ধনী বা সম্পদশালী বলা যায় না। তাছাড়া, সম্পদ হয়ও অনেক রকম। আপনি সৎ, এটা আপনার একটা সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদের ব্যবহার যদি না করেন, কি তার মূল্য? এক কানাকড়িও নয়। আর ব্যবহার করলে? লোকে আপনাকে বিশ্বাস করবে, আপনার প্রশংসা করবে, আপনাকে শ্রদ্ধা করবে।
.
বয়স সবচেয়ে বড় সম্পদ
বয়স যে একটা সম্পদ একথা ব্যাখ্যা করে বলবার দরকার করে না। আমরা সবাই কথাটা জানি। কিন্তু আমাদের জানার মধ্যে কিছু কিছু ভুল আছে, থাকা স্বাভাবিক।
অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, যুবক বয়সটা নিঃসন্দেহে একটা সম্পদ, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সটা কক্ষনো সম্পদ হতে পারে না। এটা ভুল।
বৃদ্ধ পাঠক, আপনি হয়তো ভাবছেন, বড় বুড়ো হয়ে গেছি আমি, বিদ্যুৎ মিত্রের ফর্মুলা আমার জন্যে নয়, নতুন জীবন শুরু করার সে বয়স আর নেই আমার।’ যথোচিত সম্মান এবং শ্রদ্ধা সহকারে বলছি আপনাকে, আপনি ভুল করছেন।
নতুন জীবন শুরু করতে হলে বুড়ো হওয়া চলবে না একথা খাঁটি। বুড়ো লোককে দিয়ে কোনো কাজ হয় না, ঠিক। কিন্তু বুড়ো কে? কোন্ বয়সটাকে বুড়ো বয়স বলে?
বুড়ো হবার কোনো বয়স নেই। আসলে মানুষ বুড়ো হয় তখনই যখন সে নিজেকে বুড়ো বলে মনে করে। কারো বয়স চল্লিশ, সে নিজেকে বুড়ো বলে মনে করলে কারো কিছু করার নেই-নতুন জীবন শুরু করা হলো না তার।
নির্দিষ্ট কোনো বয়সকে বুড়ো বয়স বলে না। বেন-সুইটল্যাণ্ড ষাটের পর সাফল্য অর্জন করেছেন। নিজেকে তিনি বুড়ো বলে মনে করলে সাফল্য অর্জন করা কি তার দ্বারা সম্ভব হতো?
বয়স মাত্রই সম্পদ, আপনার বয়স পঞ্চাশই হোক আর আশি-নব্বই-ই হোক।
মনীষীদের জীবনী ঘেঁটে দেখুন, তারা তাদের তথাকথিত মধ্যবয়স অতিক্রম করার পরই মহৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন।
নিজেকে বুড়ো মনে করলেই আপনি বুড়ো। নিজেকে বুড়ো মনে করলে মৃত্যুভয় জাগে। মৃত্যুভয় মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনে।
পঞ্চাশ বছর বয়সের দিকে অনেক মানুষ মনে করে তারা বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। তাদের আচার-ব্যবহারে, কথাবার্তায় বুড়োমি প্রকাশ পায়। এরা আসলে নিজেদেরকে আরো বুড়ো হতে সাহায্য করছে। এই সাহায্য করাটা যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো, জানে না তারা।
মানুষ শারীরিক দিক থেকে সাবালক হয় বিভিন্ন বয়সে, তবে সাধারণত ১৬ থেকে ২০ বছরের এদিক ওদিক হয় না। কিন্তু মানসিক ম্যাচিউরিটি, দুর্বল দৃষ্টান্ত বাদ দিলে, ৫০-এর আগে আসে না। কিন্তু আমরা যখন পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছাই, মৃত্যুকে গ্রহণ করার জন্যে মনে মনে তৈরি হতে শুরু করে দিই।
মৃত্যু অবধারিত, অনন্তকাল বেঁচে থাকার মহৌষধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি যখন। কিন্তু মরার আগে মরবেন কেন আপনি? নিজেকে বুড়ো মনে করা মৃত্যুর সমান-ভুল হলো–মৃত্যুর বাড়া!
যে মৃত তার নিজের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যে বুড়ো তার রাজ্যের সমস্যা আছে অথচ সমাধান বের করার উপায় জানা নেই।
নিজেকে, বয়স আপনার যতোই হোক, কক্ষনো বুড়ো বলে মনে করবেন না।
সেই লোকই বুড়ো যে নিজেকে বুড়ো মনে করে।
১৩. নিজেকে জানুন
একটা গল্প শুনুন।
দুটো প্রধান চরিত্র: একজন, তার অগাধ ধন-দৌলত আছে, কিন্তু স্বাস্থ্য তার খুবই খারাপ; অপরজন, তার টাকা-পয়সা নেই কিন্তু স্বাস্থ্যটা দেখবার মতো, যেন ব্যায়ামবীর। এরা একজন অপরজনকে ঈর্ষা করে।
ধনী লোকটা তার সর্বস্ব ধন-সম্পদ দিয়ে দিতে রাজি আছে যদি সে তার বিনিময়ে ভালো স্বাস্থ্য পায়, ওদিকে গরীব লোকটা এক কথায় রাজি হয়ে যাবে প্রচুর নগদ টাকা-পয়সা পেলে তার স্বাস্থ্যটা হারাতে।
পৃথিবী বিখ্যাত এক সার্জেন এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যার সাহায্যে এক দেহ থেকে আরেক দেহে ব্রেন বদলাবদলি করা সম্ভব।
ধনী লোকটা গরীব লোকটার সাথে একটা চুক্তি করলো। চুক্তি অনুযায়ী তারা পরস্পরের ব্রেন বদল করবে। ফল দাঁড়াবে, ধনী লোকটা হবে পথের ফকির কিন্তু অত্যন্ত ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারি, গরীব লোকটি হবে প্রচুর ধন-দৌলতের মালিক কিন্তু তার শরীর হবে দুর্বল, রোগ-জর্জরিত।
অপারেশন সফল হলো। গরীব লোকটা হলো ধনী, ধনী লোকটা পরিণত হলো ভিখিরিতে। কিন্তু দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি ঘটলো।
প্রাক্তন ধনী লোকটার মধ্যে সবসময় সাফল্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বিদ্যমান ছিলো। গরীব হওয়ার পরও সেই সচেতনতা তার মধ্যে অটুট রইলো। জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে কি করতে হয় তা সে জানে। সেই জানা কৌশলটা সে ব্যবহার করতে শুরু করলো এবং অচিরেই আবার অগাধ ধন সম্পদের মালিক হয়ে উঠলো। কিন্তু স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অতি-সচেতনতার ফলে, একটু সর্দি লাগলে বা বুক-মাথা একটু ব্যথা করলে ভীষণ রকম ঘাবড়ে যেতো সে, মুষড়ে পড়তো। হজম হবে না এই ভয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া করতো না সে। ফলে, উত্তম, নীরোগ স্বাস্থ্যটা ভেঙে পরিণত হলো দুর্বল রোগজর্জরিত স্বাস্থ্যে। অন্য কথায়, সে তার সাবেক অবস্থায় ফিরে এলো-ধনী একজন মানুষ কিন্তু দুর্বল। স্বাস্থ্যের অধিকারী।