পরবর্তী মাসের বেতন পেলেন। খরচ করলেন সব টাকা। সঞ্চয় করতে পারলেন না। প্রতিজ্ঞা ভাঙলেন নাকি?
খবরের কাগজে ক্যান্সারের ভয়ঙ্করত্ব সম্পর্কে একটা খবর পড়ে প্রতিজ্ঞা করলেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেবোই। আধঘণ্টা পর আপনাকে দেখা গেল নতুন একটা সিগারেট আয়েশ করে ধরাচ্ছেন।
আজ আমি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো, দশটার পরে কোনোমতেই জেগে থাকবো না-প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে টিভির সামনে বসলেন। দশটা বাজার খানিক। আগে টিভির ঘোষক জানালেন, আজ রাত সাড়ে-দশটায় শুরু হচ্ছে অমুক প্রোগ্রাম…ব্যস, আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন আপনি, এই প্রোগ্রাম না দেখলেই নয়।
এই রকম, প্রতিজ্ঞার পর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করছেন, পিঁপড়ে মারার মতো সবগুলোকে খুনও করছেন নির্বিচারে।
প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার প্রতিক্রিয়া খারাপ হতে বাধ্য। আপনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে আপনার অবচেতন মনকে কুশিক্ষা দিচ্ছেন। জীবনে কখনো যদি সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন এবং তা অটুট রাখতে চেষ্টা করেন, কুশিক্ষাপ্রাপ্ত আপনার অবচেতন মন আপনাকে তা অটুট রাখতে দেবে না, প্রতিজ্ঞাটা ভঙ্গ করতে সে আপনাকে প্ররোচিত করবে, আপনার জন্যে ফাঁদ পাতবে।
নিজের কাছে সাচ্চা হওয়া বেশ কঠিন। একদিনে পারবেন না সাধু হতে। নিজের কাছে নিরপরাধ হবার জন্যে, সৎ হবার জন্যে ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে। হবে।
আপনি যদি নিজেকে অভ্যাসের প্রভু হিসেবে গড়ে নিতে পারেন, যদি পারেন। মনটাকে বদলাতে, নিজের কাছে সৎ এবং নিরপরাধ হওয়াটা মোটেই কঠিন হবে না।
.
সম্পদের সদ্ব্যবহার
ধন সম্পদের চাবি এখন আপনার হাতে। যতো আপনার দরকার, চাবি দিয়ে তালা খুলে নিতে পারলেই হয়। সঠিক ফর্মুলা প্রয়োগ করে যে অগাধ ধন-সম্পদ অর্জন করবেন আপনি, কি হবে তা দিয়ে আপনার, যদি আপনি অর্জিত ধন-সম্পদের চাকরে পরিণত হন?
সাবধান! আপনার ধন-সম্পদ আপনাকে যেন ক্রীতদাসে পরিণত না করে। ধন-সম্পদের মনিব হওয়া চাই আপনার।
ত্রিশ বছর বয়সে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, ধনী লোকদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এই কথাটি বলেছিলেন, ‘ধন-সম্পদ তার নয় যার আছে–ধন-সম্পদ তার যে তা উপভোগ করে।’
ধন-সম্পদ আপনার প্রভুও হতে পারে, আপনার দাসও হতে পারে। ধন সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা আপনাকে শিখতে হবে। এটা একটা। রীতিমত শিক্ষণীয় বিষয়। এই শিক্ষা আপনাকে পেতে হবে যখন ধন-সম্পদ আহরণ করতে শুরু করবেন তখনই, ধন-সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলবার পর নয়।
জমুক, আরো জমুক, তারপর উপভোগ করবো-এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়।
বেন-সুইটল্যাণ্ডের পরিচিত এক যুবক দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করে, ধনী সে হবেই।
বিস্ময়কর ত্যাগ এবং বহু বছর কঠোর পরিশ্রম করে সত্যি সত্যি ধনী হয় সে। কিন্তু ধন যখন এলো তখন তার বয়স ষাটের উপর। এই লোক অগাধ টাকার মালিক হলে কি হবে, টাকাকে কিভাবে সদ্ব্যবহার করতে হয় তা সে জানতো না। অঢেল টাকা থেকে কিয়দংশও নিজের বা পরিবারের কারো আনন্দ-উপভোগের জন্যে খরচ করেনি সে তখনও। ছোট্ট, নোংরা একটা বাড়িতে স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে বাস করছিল সে কয়েক যুগ ধরে। বাড়ির যাবতীয় কাজ। তার স্ত্রীকেই করতে হতো। লোকটা এক ডলার খরচ করতে পঁচিশবার নিজেকে জিজ্ঞেস করতো, খরচটা না করলেই কি নয়?
মন্দা এলো ১৯২৯ সালে। সেই মন্দায় লোকটার অঢেল টাকা কর্পূরের মতো উবে গেল। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে যা সে রোজগার করেছিল, তা দিয়ে এক মুহূর্তের আনন্দও কিনতে পারেনি এই লোক।
ধন-সম্পদ যখন হয়েছে আপনার, তার সদ্ব্যবহার করুন। নিজেকে আনন্দ দিন, উপভোগ করুন। সেই সাথে অপরকেও সুখ দিন, আনন্দ দিন।
.
সুখের বিনিময়ে সুখ
অন্যকে সুখী করা থেকে যে সুখ আসে সেই সুখই সত্যিকার সুখ।
আপনার দখলে যা যা আছে তা যদি শুধু আপনি একাই ভোগ-দখল করেন, আনন্দ পাবেন না। দিয়ে থুয়ে ভোগ করুন, ভোগের আনন্দ শতগুণ বেড়ে যাবে।
কেউ আপনার অধীনে চাকরি করে। তার মাসিক প্রাপ্য অর্থাৎ বেতন সে নিয়মিত নিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যে হারে বেতন দেয় আপনিও আপনার কর্মচারীকে সেই হারে বেতন দিচ্ছেন। অর্থাৎ তাকে আপনি ঠকাচ্ছেন না। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠান আপনার মতো বেশি টাকা রোজগার করছে না। এরকম ক্ষেত্রে আপনার কর্মচারীকে আপনি নির্ধারিত বেতন ছাড়াও টাকা দিতে পারেন, দেয়া উচিত আপনার। কর্মচারীরা কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটায় অথচ আপনার প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রেখেছে তারাই। বিবেকের বিচারে কর্মচারীরা আপনার কাছ থেকে বেতন ছাড়াও পুরস্কার হিসেবে বা উপহার হিসেবে কিংবা সাহায্য বা দান হিসেবে কিছু। পেতে পারে। এটা তার দাবি নয়, আপনার বিবেচনা।
আপনি যদি সম্পদশালী হন, কাউকে দাবিয়ে রাখা অপরাধ। প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে তার ভাগ্যকে পরিবর্তন করার, কখনো তাতে আপনি বাদ সাধতে পারেন না। বরং আপনার উচিত তাকে সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য করা।
দুনিয়াতে কিছু লোক আছে যারা নিতান্তই সৎ, নিরীহ এবং আন্তরিক। এদের কর্ম কিনতে পারেন আপনি অনায়াসে। এদের কর্ম কিনে তা বিক্রি করেই ধন সম্পদের অধিকারী হয় অধিকাংশ ধনীরা। এদের প্রতি বিশেষ ভালবাসা, স্নেহ, সহানুভূতি থাকা দরকার আপনার মধ্যে। সে আপনাকে প্রচুর দিচ্ছে না? তা যদি হয়, তাকেও আপনি প্রচুর দিন এবং সে যাতে প্রচুর পায় তার নানা প্রকার ব্যবস্থা করুন।