রফিক চৌধুরীর কথা ধরুন। শিক্ষিত, বুদ্ধিমান যুবক। যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। প্রচুর পড়াশোনাও করে। নাটক, উপন্যাস, রহস্যোপন্যাস, প্রবন্ধ-যা পায় তাই পড়ে এবং পড়া শেষ করে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বইটা, বলে, যাচ্ছে তাই! এর চেয়ে ভালো আমিই লিখতে পারি।
লিখতে পারি–এই বিশ্বাস রফিক চৌধুরীর মধ্যে রয়েছে। আসলেও সে হয়তো লিখতে পারবে। কিন্তু লিখছে না। কেন লিখছে না? লিখবো-এই সংকল্প নেই তার মধ্যে, তাই। সংকল্পটি নেই বলে তার লিখতে পারি এই বিশ্বাসটিরও কোনো মূল্য নেই। লিখতে পারি, বা হতে পাত্তেম-এই কথাটি বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে ওকে, লেখা ওর দ্বারা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। অবশ্য, লিখবো। এই সংকল্প ও যদি কখনো গ্রহণ করে তাহলে অন্য কথা।
অপর দিকে, সুলতান আহমেদের কথা ধরুন। রফিক চৌধুরীর চেয়ে বিদ্যা বুদ্ধিতে কম যায় না সে-ও। পড়াশোনা রফিক চৌধুরীর চেয়েও বেশি। নানা বিষয়ে যোগ্য যুবক সে। একবার উঠে পড়ে লাগলো ব্যবসা করবে বলে। টাকা যোগাড়, কারখানার জন্যে জায়গা নির্বাচন, শ্রমিক নিয়োগ, উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরি–ইত্যাদি কাজে কয়েকদিন ব্যস্ত থাকার পর হঠাৎ কি যে হলো, হাত-পা গুটিয়ে ফেলে বলে বসলো-দূর! আমাকে দিয়ে ব্যবসা হবে না!
এই রকম একবার নয়, বহু কাজে বহুবার হাত দিয়ে খানিকটা করে এগিয়ে হঠাৎ থেমে গেছে সুলতান আহমেদ, বলেছে, আমার দ্বারা হবে না!
সুলতান আহমেদের আমার দ্বারা হবে না বলবার কারণ কি?
পারবো-এই আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে ওর মধ্যে। যতোদিন এই বিশ্বাসের অভাব ওর মধ্যে থাকবে, ততোদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে ওর জীবনে।
রফিক চৌধুরীর মধ্যে নেই আমি করবো এই সংকল্প, তাই আমি পারবো এই বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সে ব্যর্থ। অপরদিকে সুলতান আহমেদের মধ্যে নেই আমি পারবো এই বিশ্বাস, তাই আমি করবো এই সংকল্প তার মধ্যে দেখা গেলেও সে। ব্যর্থ।
তার মানে, আমি পারবো এবং আমি করবো এই দুটোই আপনার মধ্যে থাকতে হবে, তবেই আপনি সফল হবেন।
অনেকে অনেক কিছুই করতে চায়। রফিক চৌধুরী এবং সুলতান আহমেদের মতো যুবক আমাদের দেশে হাজারে হাজারে আছে। আপনি নিজের কথাই ভেবে দেখুন না। কতো কি করার, কতো কি হবার ইচ্ছাই না আছে আপনার মধ্যে। কিন্তু আজও করতে পারেননি, হতে পারেননি। কেন? খতিয়ে ভেবে দেখুন, হয় আপনার মধ্যে আমি পারবো এই বিশ্বাসের, নয়তো আমি করবো এই সংকল্পের অভাব আছে। হয় দুটোরই, নয়তো যে-কোনো একটির অভাব আছে বলে আপনি। তেমন কিছু করতে পারেননি, হতে পারেননি।
.
লক্ষ্যস্থির করুন
অর্থাৎ যা করতে চান তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। কেউ উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায়, কেউ ব্যবসা করতে চায়, কেউ নেতা হতে চায়, কেউ আবার লেখক হতে চায়। হতে চাওয়া এবং করতে চাওয়ার শেষ নেই। আপনি কি হতে চান? কি করার ইচ্ছা আপনার? সেটা স্থির করে নিন আগে।
যে কাজটি করতে চান তা নির্ধারণ করুন, তারপর নিজের মধ্যে এই বিশ্বাস আনুন যে কাজটা আপনি করতে পারবেন, এরপর আমি করবো এই সংকল্পে। অটল হোন, দেখবেন আশ্চর্য সব অনুকূল ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে।
আপনার অবস্থান এবং আপনার লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের মধ্যবর্তী দূরত্বটা মেপে নিন, মাঝখানে যে-সব বাধা আছে সেগুলো এক এক করে দেখে নিন, বুঝে নিন। প্রত্যেকটি বাধাকে পরিষ্কার চিনে নিতে হবে আপনার। বাধাগুলো কি কি তা যদি আপনি না জানেন, ওগুলোকে টপকাবেন কিভাবে? বাধাগুলোকে শত্রু বলে মনে করুন। তবে আপনার তুলনায় এইসব শত্রুগুলো নিতান্তই দুর্বল, ইচ্ছা করলেই আপনি এদের প্রত্যেকটিকে ঘায়েল করতে পারেন-মনে রাখবেন কথাটা।
বাধা বা শত্রুর চেনার কাজ শেষ করুন। তারপর? একযোগে শত্রুদলকে সংহার করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বেন নাকি? না। একবার একটি বাধাকে ধরুন। ওটাকে পথ থেকে সরান। তারপর দ্বিতীয় বাধাটিকে ধরুন, সরান ওটিকেও। এইভাবে এগোন, একটি একটি করে বাধাগুলোকে সরিয়ে দিন।
কিন্তু একটি একটি করে তো সরাবেন, আগে সরাবেন কোটিকে? তাও ঠিক করে নিতে হবে আপনাকে আগেভাগে। বাধাগুলোকে এক এক করে লিখে নিতে হবে আপনার নোটবুকে। সংখ্যায় হয়তো দশটা কিংবা বিশটা হবে বাধাগুলো। ধরুন বিশটা। এই বিশটা বাধাকে এক এক করে টপকাবার বা সরাবার জন্যে কি করতে হবে আপনাকে?
তৈরি করতে হবে সক্রিয় তৎপরতামূলক একটি কর্মসূচী। এ বিষয়ে অন্য পরিচ্ছেদে বিশদ আলোচনা করবো।
.
মানুষ কেন ব্যর্থ হয়
সাফল্যলাভ করতে চায় না এমন লোক নেই। সবাই চায়। চেষ্টাও করে অনেকে। কেউ কেউ প্রাণপণ চেষ্টা করতেও কসুর করে না। সাফল্যলাভ করার উপায় সম্পর্কেও এদের কারো কারো বেশ ভালো ধারণা আছে। তবু, এদের মধ্যে থেকে অধিকাংশ লোক ব্যর্থ হয়!!
কেন?
ব্যর্থতার কারণ হিসেবে এরা এক হাজার একটা কারণ দেখায়, যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করে, উপায়টা সকলের জন্যে সব পরিস্থিতিতে কার্যকরী নয়।
আমি পারবো এই বিশ্বাস এবং আমি করবো এই সংকল্প এদের মধ্যে থাকলেও এরা ব্যর্থ হয়। কারণটা খুঁজে বের করা দরকার। তা না হলে প্রশ্ন দেখা দেবে: সাফল্যলাভের সহজ কেন, আদৌ কোনো নির্দিষ্ট উপায় (ফর্মুলা) আছে, না নেই?
একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখা যাক।