.
কাজের সময় পাঁচ ঘণ্টা
প্রখ্যাত এক মনোবিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন নির্দিষ্ট ক’টা কাজ একনাগাড়ে পাঁচ ঘণ্টা করার পর যে কেউ কাজটির প্রতি চরম বিরক্ত এবং ক্লান্ত হতে বাধ্য। সৌভাগ্যই বলতে হবে, কদাচ কেউ কোনো নির্দিষ্ট কাজ নিয়ে একনাগাড়ে মগ্ন থাকে। আপনার কাজের মাঝখানে রয়েছে লাঞ্চ-আওয়ার, টি-আওয়ার। বিরতির পর আবার আমরা সেই একই কাজে ফিরে আসি।
একটা কাজ দীর্ঘক্ষণ না করাই ভালো। কাজের মধ্যে বৈচিত্র্য, নতুনত্ব থাকলে। কাজের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে, অল্প সময়ে বেশি কাজ করা যায়।
.
নেতৃত্ববোধ
নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি গড়ে তোলা দরকার আপনার।
আপনি কারো চাকর নন, আপনারও কেউ চাকর নয়, আপনি আপনার নিজের মতো, আর কারো মতো নন আপনি।
নিজেকে আপনি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে মনে করুন। নিজেকে আর সকলের চেয়ে দ্র, আর সকলের চেয়ে সৎ, সত্যবাদী, উদার, নীতিবান, বিবেকবান বলে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। কারো নিচে নন আপনি এই রকম চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আপনাকে। এমন একটা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব থাকবে আপনার মধ্যে, যে আপনি কোনো কামরায় প্রবেশ করা মাত্র সবাই কথাবার্তা বন্ধ করে আপনার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে চোখ তুলে তাকাবে, আপনাকে সানন্দে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে।
মানুষকে সৎ এবং সঠিক পথ দেখান, পরামর্শ দিন–প্রচুর শ্রদ্ধা এবং সুনাম অর্জন করতে পারবেন। প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করুন, তার বক্তব্যে মনোযোগ দিন, তার দুঃখে কাতর হোন, তার আনন্দে আনন্দ প্রকাশ করুন, আপনি তার জন্যে চিন্তা করুন, তার কষ্ট অনুভব করেন বুঝতে দিন তাকে, সে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করবে, আপনার ভক্ত হয়ে উঠবে সে।
নেতা হিসেবে কল্পনা করুন নিজেকে। কিন্তু নেতা হিসেবে নিজেকে কল্পনা করার আগে আপনাকে জানতে হবে নেতা মানে কি।
নেতা মানে শাসক বা শোষক নয়। নেতা মানে পথ-প্রদর্শক, সৎপরামর্শদাতা, সাহায্যকারী। নেতা হতে হলে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। নেতাকে হতে হয় সদয়, মিষ্টভাষী, অভিজ্ঞ, বিবেচক। সত্যিকার নেতা নিজেকে নেতা বলে ঘোষণা করে না। তার কাজই তাকে নেতৃত্ব এনে দেয়।
আপনি নিজেকে নেতা বলে কল্পনা করুন, সুকর্মের মাধ্যমে নেতৃত্ব গ্রহণ করুন মানুষের কাছ থেকে।
১২. নতুন আর এক ধরনের জীবন
আপনি পারেন না, আপনার দ্বারা সম্ভব নয় এমন কোনো কাজ নেই পৃথিবীতে–এই কথাটা বর্ণে বর্ণে সত্যি। এই সত্যে বিশ্বাস রাখুন। স্বপ্ন যখন দেখবেন, বড় বড় স্বপ্ন দেখুন।
আপনি আগেই জেনেছেন, কোনো কাজ করতে পারবেন বলে মনে করলেই সেই কাজ করা যায়। সেই কাজ যাতে করা যায় তার জন্যে আপনাকে সাহায্য করছে আপনার অবচেতুন মুন। বড় বড় স্বপ্ন দেখুন, বড় বড় কাজে হাত দিন (বৃহত্তর এবং ক্ষুদ্রতর থিওরি প্রয়োগ করে), ভাবুন বড় স্বপ্ন এবং কাজগুলো। বাস্তবায়িত করা আপনার দ্বারা নির্ঘাৎ সম্ভব।
নিজেকে বড় বড় কাজের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবচেয়ে আগে ত্যাগ করতে হবে বদভ্যাস। অভ্যাসের নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাকে।
অভ্যাসের দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে অভ্যাসের প্রভু হতে হবে আপনাকে। এই প্রসঙ্গে আপনাকে জানানো দরকার একটি প্রকৃত তথ্য: মানুষ মন-যুক্ত একটি দেহ নয়, মানুষ আসলে দেহ-যুক্ত একটি মন। মানুষের প্রধান অংশ মন। মনই। মানুষ। মনের বাসগৃহ দেহ। মানুষের সাথে মানুষের একমাত্র মৌলিক পার্থক্য কোথায়? তাদের প্রত্যেকের মন আলাদা আলাদা। সব মানুষের দেহই এক ধরনের উপাদানের সমষ্টি। সকলের দেহই অক্সিজেন চায়, আহার চায়, বিশ্রাম চায়। কিন্তু কার মন কি চায় তার ফিরিস্তি দেয়া মুশকিল। সকলের মন সমান নয়।
মনই মানুষ, মনই সব-সুতরাং, মনকে বদলান। মন পাল্টালে আপনার দুনিয়া পাল্টে যাবে। অভ্যাসের ফাঁদ থেকে বেরুতে চান? মনকে বোঝন, তাকে
আপনি শিখলেন, মনই আপনি, আপনিই মন-আপনার দেহ আপনার আধার মাত্র। মনকে বদলান, আপনি বদলে যাবেন।
.
অধিকাংশ মানুষ মিথ্যেবাদি
রূঢ় এবং ঢালাও মন্তব্য বলে মনে হচ্ছে কথাটাকে?
অধিকাংশ মানুষ পরস্পরের সাথে মিথ্যে কথা বলে কিনা সে বিতর্কিত বিষয়ে আমি যোগ দিতে চাইছি না, আমি বলতে চাইছি বেশিরভাগ মানুষ নিজের কাছে মিথ্যে কথা বলে। কথাটা যে সত্যি আপনিও তা স্বীকার করবেন।
সাধারণত এইরকম ঘটে: আপনি হয়তো কারো কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, অমুক নিয়মটা আর কখনো লঙ্ঘন করবো না। প্রতিজ্ঞা করার পর খুব সাবধানে থাকবেন আপনি, চেষ্টা করবেন প্রতিজ্ঞাটা রক্ষা করতে। কারণ, ভয় আছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে ধরা পড়লে লজ্জায় পড়তে হবে, মুখ দেখাতে পারবেন না সে-লোকের কাছে। কিন্তু আপনি যদি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন সে-প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার ব্যাপারে তেমন সাবধান হন না, গা করেন না। কারণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না, কারো কাছে লজ্জায় পড়তে হবে না।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিজের কাছে অসংখ্য প্রতিজ্ঞা করি-রক্ষা করি ক’টা? আসলে প্রায় সবগুলোই ভঙ্গ করি নির্বিচারে, নির্বিকারে, নির্লজ্জের মতো এর জন্যে নিজেদের মধ্যে কোনো অপরাধ বোধও নেই। অথচ প্রতিজ্ঞা করে তা রক্ষা না করা অপরাধ বৈকি!
মাস শেষে বেতন পেয়ে সব খরচ করে ফেললেন, কিন্তু সঞ্চয় করবার কথা ভেবে রেখেছিলেন কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। নিজের কাছে এবার প্রতিজ্ঞা করলেন, আগামী মাসের বেতন থেকে কিছু টাকা আমি আলাদা করে রাখবোই।