সব কাজ একসাথে একবারে করতে যাবেন না। প্রথমে একটা কাজকে ধরুন। ডেস্ক ক্যালেণ্ডারে লিখুন সেই কাজের নাম। নির্দিষ্ট তারিখ এবং সময়ের। মধ্যে শেষ করুন সেই কাজটি। যতোক্ষণ না সেই কাজটি শেষ হচ্ছে ততোক্ষণ। অন্য কাজের কথা ভাববেন না, অন্য কাজে হাত দেবেন না।
কোনো কারণে নির্দিষ্ট কাজটি নির্দিষ্ট তারিখে যদি শেষ করতে না পারেন, কি করবেন? সেটি বাদ দিয়ে অন্য কাজে হাত দেবেন?
না। তা কক্ষনো করবেন না। ডেস্ক ক্যালেণ্ডারে যে কাজটির কথা লেখা আছে। সেটি আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ, যতো ছোটো বা নগণ্যই হোক সেই কাজ। সেটি আগে শেষ করুন। এই নগণ্য কাজটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আপনাকে। নির্দিষ্ট তারিখে যদি শেষ করতে না পারেন, পরদিন শেষ করার চেষ্টা করুন। কাজটা পরে করবো বলে ফেলে রাখবেন না বা অন্য কাজে হাত দেবেন না। এই কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনার অন্য কাজে হাত দেবার অধিকার নেই। আগে একটি শেষ করুন, তারপর অন্য কাজে হাত দিন। অন্য কাজটিতে যখন হাত দেবেন তখন সেটিই হবে আপনার প্রধান বা বৃহত্তর অবজেকটিভ।
লেখক সম্পর্কে জানতে পরিচিতদের কাছে যাবেন। এটি করবেন মে মাসের বারো তারিখে। ওই তারিখের সবচেয়ে বড় কাজ আপনার ওইটিই-রিকশা বা বাসযোগে কিংবা পায়ে হেঁটে বাংলাবাজারে যাওয়া। এটি আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ মনে করতে হবে। এইভাবে প্রত্যেকটি কাজকে আপনি প্রধান কর্তব্য। বলে মনে করে এগোতে শুরু করুন।
যখন কোনো অবজেকটিভ অর্জন করার চেষ্টা করছেন তখন সেটিকেই। আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ বলে মনে করতে হবে। একটি একটি করে কাজ সমাধা করুন। বিন্দু বিন্দুতে যেমন সিন্ধু হয় তেমনি খণ্ড খণ্ড অবজেকটিভের দ্বারা সম্পন্ন হবে একটি সম্পূর্ণ সৃষ্টি।
অর্জিত ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তুর সমষ্টি বৃহত্তর কাম্যবস্তু। অর্জিত বৃহত্তর কাম্যবস্তুর সমষ্টি-ফলাফল। বই প্রকাশ করা, বাড়ি কেনা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এই ধরনের প্রত্যেকটি মৌলিক কাম্যবস্তু আসলে অনেকগুলো বৃহত্তর অবজেকটিভ অর্জনের ফলাফল মাত্র।
১১. জীবনের নতুন মান
আপনার বয়স যখন আরো কম ছিলো, কর্মজীবনে প্রবেশ করার প্রথম দিকে আপনি হয়তো উন্নতমানের বিলাসবহুল জীবন যাপনের রঙিন স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবের কঠোর কষাঘাতে দুমড়ে মুচড়ে কদাকার রূপ ধারণ করেছে বহুদিন আগেই।
আজ এই বইটি পড়ছেন। এটি যদি গভীর আগ্রহ এবং মনোযোগর সাথে আপনি পড়তে শুরু করে থাকেন, আনকোরা উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠেছেন। আপনি। উন্নত মানের, উপভোগ্য জীবন যাপন করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়-এর বদলে এখন আপনি জানেন এবং ভাবছেন, উন্নত মানের সুখ সমৃদ্ধিতে ভরা। সুখকর জীবন যাপন আপনার দ্বারা অনায়াসে সম্ভব।
নাকি এখনও আপনার সন্দেহ রয়েছে? ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না এই ফর্মুলা প্রয়োগ করে যে-কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব?
সন্দেহ থাকলে, আপনার প্রথম কাজ, সন্দেহ দূর করা। সন্দেহ দূর করতে হলে বইটা আবার শুরু করুন প্রথম থেকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন এমন একটিও। বাজে কথা আমি বলেছি কিনা যেটার উপযুক্ত ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ দিতে অসমর্থ হয়েছি। আমার প্রতিটি বক্তব্য যদি আপনার মনে হয় সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, এবং যুক্তিযুক্ত–কেবলমাত্র তাহলেই দূর হবে আপনার সন্দেহ।
.
মানুষের জীবন কি
মানুষের জীবন অসংখ্য অভ্যাসের সমষ্টি। অভ্যাসগুলো হলো উপাদান। অভ্যাস নামক উপাদানের সমষ্টি আপনার জীবন। ঘুম থেকে জাগার পর থেকে আবার ঘুমুতে যাবার আগে পর্যন্ত আপনি যা যা করেন তার প্রায় সবগুলোরই ভিত্তি হলো অভ্যাস। আপনি সাফল্যের পথে একজন নবাগত যাত্রী, বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করতে যাচ্ছেন। নিজেকে অবশ্যই তৈরি করতে হবে আপনার। নতুন এবং উন্নতমানের জীবনের অধিকার লাভ করার জন্যে।
নিজেকে তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এক কোটি টাকা পেলে কি করবেন তা যদি পরিষ্কার জানা না থাকে আপনার, টাকাটা পেলে হয় আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে, নয়তো পাঁচ ভূতকে লুটে নিতে সুযোগ করে দেবেন।
সাফল্য লাভের চাবিকাঠি রয়েছে আপনারই হাতে। এখন আপনি জানেন দৈনন্দিন জীবনে কি কি করলে মাস শেষে, বছর শেষে কি কি লাভ করতে যাচ্ছেন আপনি। আমি আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি সাফল্য লাভ করা না করা একান্তভাবে নির্ভর করছে আপনারই উপর-ফর্মুলাটা কাজে প্রয়োগ করলে সাফল্য অবধারিত, প্রয়োগ না করলে পিছিয়ে পড়া অনিবার্য পরিণতি। যাদুবিদ্যাটি শেখা হয়ে গেছে আপনার। এই ফর্মুলা বা যাদুবিদ্যাই আপনাকে ঠেলে নিয়ে যাবে সাফল্যের অনন্ত দিগন্তের দিকে।
কাম্যবস্তু অসংখ্য, সবই এক এক করে অর্জন করবেন আপনি। সেগুলো ব্যবহার করবেন, উপভোগ করবেন, সুখী হবেন। কিন্তু কাম্যবস্তু অর্জন করে সুখে। জীবন যাপন করতে হলে উন্নতমানের জীবন সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা থাকা। চাই আপনার।
আপনার কাম্যবস্তুর সংখ্যা যত বেশিই হোক সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) টাকা। খ) সামাজিক পদ-মর্যাদা। গ) ক্ষমতা।
এই তিনটে যথেষ্ট পরিমাণে অর্জন করে নিয়েই উন্নততর জীবনের অধিকারী হবার জন্যে নতুনভাবে যাত্রায় বের হবেন।
উন্নত জীবনের সন্ধানে বেরুবার আগে কি দরকার আপনার, বলতে পারেন? হ্যাঁ, দরকার প্রস্তুতির। কিন্তু তারও আগে দরকার পরিকল্পনার একটা ছক। ছকের একটা নমুনা এখানে খাড়া করা যাক।