(১) লেখকের সন্ধান চাই।
এটি আপনার প্রথম বৃহত্তর অবজেকটিভ। মনে করুন একটি বড় কাজ। এটি আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ। এই বৃহত্তর অবজেকটিভটিকে আপনি কয়েকভাগে ভাগ করে কয়েকটি ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে রূপান্তরিত করুন। কিভাবে তা সম্ভব?
* আপনার পরিচিত প্রকাশকদের কাছে যেতে হবে আপনাকে। কয়েকজনের নাম লিখে ফেলুন নোট বইতে। এঁরা হয়তো আপনাকে লেখকের সন্ধান বা তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারবেন। বাড়ি বা অফিস থেকে এখন আপনাকে। বেরুতে হবে। যেতে হবে কয়েকজন প্রকাশকের কাছে। প্রকাশকদের অফিস, ধরুন, বাংলাবাজার, বাংলাবাজারে যাওয়া কি খুব কঠিন? মোটেই নয়। রাস্তায় নেমে একটা রিকশা নিন, পৌঁছে দেবে সে আপনাকে বাংলাবাজারে।
ক) প্রকাশকদের সাথে দেখা করুন। তাদেরকে লেখক সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।
খ) এখন আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ। খোঁজ নিয়ে, ধরুন, আপনি পাঁচজন। লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন।
গ) লেখকের কাছে যাওয়া এবং তাকে আপনার উদ্দেশ্যের কথা জানানো।
এটি আপনার আর একটি ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ। এটিকে এখন আপনি বৃহত্তর অবজেকটিভ রূপে গণ্য করবেন। তারপর এটিকে কয়েকভাগে ভাগ করে ফেলে রূপান্তরিত করতে পারেন কয়েকটি ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে।
পাঁচজন লেখকের সাথে এক এক করে, আলাদা আলাদা ভাবে দেখা করলেন। আপনি। তাঁদের সাথে কথা বললেন। যাকে আপনার পছন্দ হলো, যিনি আপনার নির্বাচিত বিষয়ের উপর আপনার নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাণ্ডুলিপি লিখে দিতে সম্মত হলেন আপনি তাকে নিযুক্ত করলেন।
লেখকের সন্ধান চাই–এটি ছিলো আপনার এক নম্বর বৃহত্তর অবজেকটিভ। এই অবজেকটিভ অর্জিত হলো।
এরপর আর এক বৃহত্তর অবজেকটিভ।
(২) পাণ্ডুলিপি পড়া, সংশোধন করা, প্রেসে ছাপতে দেয়া।
দু’নম্বর বৃহত্তর অবজেকটিভ এটি আপনার। এটিকে ভাগ করতে হবে অনেকগুলো ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে।
ক) লেখক পাণ্ডুলিপি দিলে সেটি পড়তে হবে।
খ) সংশোধনের জন্য পাঠাতে হবে আবার।
গ) সংশোধিত পাণ্ডুলিপি টেবিলে নিয়ে বসতে হবে হিসেব করার জন্যে। শব্দ গুণে স্থির করুন বইটা কতো ফর্মা হবে। হিসেব করে জেনে নিন কতো রীম। কাগজ লাগবে।
ঘ) প্রেস অনেক রকম আছে। বইটা কোন্ প্রেসে ছাপবেন স্থির করে সেই শ্রেণীর প্রেসে যান। ছাপার রেট সম্পর্কে আলোচনা করুন। তাদের সাথে একটা চুক্তিতে আসুন।
ঙ) পাণ্ডুলিপি প্রেসে জমা দেবার আগে ঠিক করুন ছাপা হবার পর প্রত্যেকটি বইয়ের জন্যে খরচ পড়বে কতত। তারপর মূল্য স্থির করুন। কমিশন বাদ দিয়ে। যা পাবেন তা খরচের চেয়ে বেশি হতে হবে, তবেই না লাভ করবেন বইটি ছেপে।
চ) কাভার ডিজাইন করান।
ছ) প্রেসে কাগজ দিন।
জ) প্রুফ দেখুন বা দেখান।
এখানে দেখা যাচ্ছে আটটি খণ্ড খণ্ড কাজের সমষ্টি হলো আপনার দু’নম্বর। বৃহত্তর অবজেকটিভ। এই আটটি খণ্ডের প্রত্যেকটিকে আপনি বৃহত্তর অবজেকটিভ ধরতে পারেন সুবিধের জন্যে। ধরুন প্রথম খণ্ডটির কথা। ক) লেখক পাণ্ডুলিপি দিলে সেটি পড়তে হবে। পড়তে হলে সময় চাই। কাজের মানুষ আপনি, সময়ের অভাব খুব। তবু সময় বের করতেই হবে। কিভাবে সময় বের করবেন স্থির করুন। ডেস্ক ক্যালেণ্ডারে লিখুন, দুপুরের ঘুম বাদ দিয়ে পাণ্ডুলিপি পড়বো। ক যদি হয় আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ তাহলে ‘দুপুরের ঘুম বাদ দিয়ে পাণ্ডুলিপি পড়বো’-এটি হবে আপনার ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ। এইভাবে প্রত্যেকটি খণ্ডকে খণ্ডাংশে পরিণত করে নিতে পারেন আপনি।
ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। বইগুলো নির্দিষ্ট একটা তারিখে ডেলিভারি পাবেন আপনি। কিন্তু কাজ এখনও অনেক বাকি।
এরপর আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ হবে—
(৩) বিক্রয়।
বইগুলো দ্রুত বিক্রি করে ফেলতে হবে আপনাকে। যত তাড়াতাড়ি বিক্রি করতে পারবেন ততো তাড়াতাড়ি পুঁজিসহ লাভ উঠে আসবে আপনার। দ্রুত এবং অধিক সংখ্যক বই বিক্রি করার জন্যে এখন থেকেই একটা কার্যক্রম হাতে নিতে হবে আপনাকে।
বৃহত্তর অবজেকটিভটি ক ভাগ করুন।
ক) বিজ্ঞাপন।
খ) সংবাদপত্রে সমালোচনা বিভাগের সাহায্য নিন বইটিকে সর্ব সাধারণের কাছে পরিচিত করে তোলার জন্যে।
গ) পোস্টার ছেপে দেশের সম্ভাব্য সর্বত্র দেয়ালে দেয়ালে সাঁটার ব্যবস্থা করুন।
ঘ) বইয়ের দোকান, এজেন্ট বা ডিলারদেরকে চিঠি লিখে আপনার বইয়ের কথা জানান।
ঙ) আপনি যদি আপনার বইয়ের বিনিময়ে অন্য কোনো বই গ্রহণ করতে চান, যোগাযোগ করুন অন্য বইয়ের প্রকাশকের সাথে।
এগুলোর প্রত্যেকটিকে আপনি কাজের সুবিধের জন্যে বৃহত্তর অবজেকটিভ ধরতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটিকে ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে পরিণত করুন ভাগ করে।
বইটা ছাপা শেষ হলো। এর আগেই আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে, কোথায় বইটি বাইণ্ডিং করাবেন।
বাইন্ডিং করা হলে বই তুলবেন গোডাউনে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এজেন্সী, বুক স্টল এবং পাঠক-পাঠিকার কাছ থেকে আপনার বইয়ের জন্য অর্ডার আসতে শুরু করেছে।
আপনি অর্ডার মোতাবেক রেলযোগে, লঞ্চযোগে, পোস্টযোগে, রেজিস্ট্রি যোগে, প্লেনযোগে, ট্রাকযোগে বই পাঠাতে শুরু করবেন।
প্রত্যেকটি কাজকে আলাদা আলাদা করে লিখে নিতে হবে আপনাকে। তারপর প্রত্যেকটি কাজকে বৃহত্তর অবজেকটিভ ধরে নিয়ে ভাগ করতে হবে, ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে। তারপর, কাজটাকে আরো খণ্ড খণ্ড করার জন্যে এক নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভকে ধরতে হবে বৃহত্তর অবজেকটিভ রূপে। তারপর সেটিকে ভাগ করতে হবে ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে, প্রয়োজন মনে করলে সর্বশেষ ক্ষুদ্রতর অবজেটিভগুলোর প্রথমটিকে আবার, প্রত্যেকবার, বৃহত্তর অবজেকটিভ রূপে গণ্য। করতে পারেন। এইভাবে, লেখকের নাম জানার জন্যে রিকশাযোগে বাংলাবাজার যাওয়া, পরিচিত প্রকাশকদের সাথে দেখা করা, তাদের কাছ থেকে লেখক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, রিকশা বা বাস যোগে গিয়ে লেখকের সাথে দেখা করা, তাকে প্রস্তাব দেয়া, তার সাথে একটা চুক্তিতে পৌঁছানো, পাণ্ডুলিপির জন্য তাগাদা দেয়া, সেটা যথাসম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে আদায় করা, পাণ্ডুলিপি পড়া, সংশোধন করার জন্যে লেখকের কাছে ফেরত দেয়া, সংশোধিত পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে আনা, হিসেব করতে বসা, বইটি কতো ফর্মা হবে, কতো সংখ্যক ছাপা হবে, খরচ পড়বে কতো, কতো দাম রাখা চলবে, কাভার ডিজাইন কি রকম হবে, কোন্ শিল্পীকে দিয়ে করাবেন, প্রেসে কাগজ দেবেন কখন, প্রাফ দেখবেন কোন্ সময়, বাইণ্ডিং করবেন। কোথায়, গোডাউনে তুলবেন কবে, সাজিয়ে রাখবেন কিভাবে, অর্ডার অনুযায়ী সাপ্লাই দেবেন কি পদ্ধতিতে-ইত্যাদি আরো হাজারটা কাজকে আপনি বৃহত্তর অবজেকটিভ বলে মনে করতে পারেন, তারপর সেগুলোকে ভাগ করতে পারেন, কয়েক ভাগে, ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে।