শ্রোতামণ্ডলীকে ভয় পাবেন না। তাদেরকে ভালবাসুন। তারা আপনার কথা। শুনবে, সুতরাং তাদের জন্যে আপনার মধ্যে ভালো মনোভাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
কিভাবে, কোন পরিবেশে কোন্ ভঙ্গিতে কথা বলবেন আপনি তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কথা বলার ভঙ্গি রপ্ত করা-এটা হোক আপনার দু’নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ।
খুব দ্রুত বা খুব ধীর ভঙ্গিতে, খুব জোরে বা খুব নিচু গলায় অবশ্যই কথা বলবেন না। সুর, উচ্চারণ, শব্দচয়ন, বাক্যগঠনরীতি ইত্যাদির দিকে তীক্ষ্ণ মনোযোগ দিতে হবে আপনাকে।
কণ্ঠস্বর সম্পর্কে সচেতন হোন। সচেতন থাকলেই কণ্ঠস্বরের ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। জোর গলায় পড়বার চেষ্টা করুন, পরীক্ষা করুন নিজের কণ্ঠস্বরটিকে কতরকমভাবে পরিবর্তন করা যায়। পরিষ্কার কণ্ঠে উচ্চারণ করুন প্রতিটি শব্দ।
আপনার তিন নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ হতে পারে: ভাষার ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা।
নির্ভুল ভাষায় কথা বলা শিখতে হবে আপনাকে। আপনি যদি আপনার বক্তব্য পরিষ্কার করে তুলে ধরতে চান, বড়সড় একটা শব্দের ভাণ্ডার একান্তভাবেই থাকা দরকার আপনার। মনের ভাব বা বক্তব্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে শব্দের দান সবচেয়ে বেশি। চিন্তার বাহক শব্দ। আপনি যা চিন্তা করছেন তা যদি প্রকাশ করতে চান, শব্দের সাহায্যেই শুধুমাত্র তা সম্ভব। সুতরাং, নিজের মধ্যে প্রচুর শব্দের একটা ভাণ্ডার তৈরি করুন।
.
ঈর্ষা কেন?
নিজের যোগ্যতা ও উপযুক্ততাকে যে খাটো করে দেখে সে অপরকে ঈর্ষা করে। ঈর্ষা হলো নিজের প্রতি সন্দেহের লক্ষণ। হীনম্মন্যতার পরিচায়ক।
এনাম যদি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো যে সে-ও ইচ্ছা করলে মতিনের মতো অবস্থায় উঠতে পারে, তখন কি সে মতিনের সমৃদ্ধি দেখে ঈর্ষা করতে?
না।
পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে মার্কেটে গেলেন, গিয়ে দেখলেন অনেকে অনেক জিনিস কিনছে-এদের কেনাকাটা দেখে কি আপনার মধ্যে ঈর্ষাভাব জাগবে? না। কারণ, আপনিও তো কিনতে গেছেন, কিনছেন। ওরা যা কিনছে, আপনিও ইচ্ছা করলেই তা কিনতে পারেন।
আপনার বন্ধু আপনার চেয়ে ভালো বাড়িতে বসবাস করছে। আপনি যদি তার এই ভালো বাড়িতে বসবাস করাটাকে ঈর্ষার চোখে দেখেন তাহলে পরিষ্কার প্রকাশ হয়ে পড়ছে যে আপনি আপনার বন্ধুর মতো একটা ভালো বাড়ির ব্যবস্থা করার। ব্যাপারে নিজের যোগ্যতাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।
অন্যকে, তাদের যা আছে তার জন্যে ঈর্ষা না করে, বৃহত্তর এবং ক্ষুদ্রতর থিওরি প্রয়োগ করে যে জিনিস দেখে পাবার ইচ্ছে হয় তা অর্জন করার চেষ্টা করুন।
ঈর্ষা করা মানে নিজেকে অযোগ্য বলে মেনে নেয়া। আপনার কোনো এক বন্ধুর কথা ধরুন। সে সকলের সম্মান পায়, ভালবাসা পায়, শ্রদ্ধা পায়। তার এতো সব পাওয়া দেখে আপনি ঈর্ষাবোধ করেন। অথচ ঈর্ষাবোধ করার কোনো কারণ নেই আপনার। কারণ, সম্মান, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, প্রশংসা তার মতে, এমনকি তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আপনিও পেতে পারেন-পাবার ইচ্ছে যদি আপনার মধ্যে থাকে।
ঈর্ষাবোধকে আপনি গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করতে শিখুন। যার যে জিনিসটি দেখে আপনার মধ্যে ঈর্ষার উদ্রেক হয় সেই জিনিসটি অর্জন করার জন্যে উদ্যোগী হোন। ওই জিনিসটিকেই আপনি গ্রহণ করুন আপনার কাম্যবস্তু হিসেবে। তারপর নিয়ম মেনে সেটি অর্জন করার জন্যে যা যা করা দরকার করুন। পেয়ে যাবেন জিনিসটি। আপনার মধ্যে কণা পরিমাণেও ঈর্ষাবোধ থাকবে না। জিনিসটা আপনার ছিলো না বলেই আপনি চেয়েছেন, তারপর অর্জন করে। নিয়েছেন, ঈর্ষা কেন?
.
কিভাবে ভাগ করে এগোবেন
যে-কোনো একটি কাজ সম্পূর্ণ করতে চান আপনি। কাজটা কোত্থেকে শুরু করবেন, জানা দরকার আপনার। প্রত্যেকটি কাজের শুরু এবং শেষ আছে। যে। কাজটি করবেন বলে স্থির রবেন সেই কাজটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা, দরকার আপনার। একটা উদাহরণ দিয়ে বক্তব্যটাকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা। যাক।
ধরুন, আপনি একটি বই ছাপতে চান।
বই ছাপার কাজটিকে এখানে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছি বটে কিন্তু এই উদাহরণ অন্য যে-কোনো কাজের সাথে সঙ্গতি রাখবে। বই ছাপতে হলে আপনাকে যে-সব নিয়ম পালন করতে হবে সব জানিয়ে দিচ্ছি, অন্য কাজের বেলাতেও এই নিয়মগুলো প্রযোজ্য।
আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন: একটি বই ছাপবেন।
সিদ্ধান্ত নিলেন ছাপবেন, কেন সিদ্ধান্ত নিলেন? এটা একটা প্রশ্ন। কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত তখনই কেউ নেয় যখন সেই কাজটির দ্বারা সে উপকৃত হবার সম্ভাবনা দেখে। আপনি বইটি ছাপার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? বইটা বাজারে বিক্রি করে ব্যবসা করবেন, তাই। আপনার বই ছাপার উদ্দেশ্য, ধরা যাক, টাকা রোজগার করা।
সিদ্ধান্ত নেবার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় ব্যাপার। কি বই ছাপাবেন? উপন্যাস, না প্রবন্ধের বই? গল্পের বই, না কবিতার বই? বাজারে এখন, ধরা যাক, আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের খুব চাহিদা। বেশ, ওই বিষয়ের উপর একটি বই ছাপবেন, স্থির হলো।
কাজে হাত দিতে যাচ্ছেন আপনি। তার আগে একটি ডেস্ক ক্যালেণ্ডার কিনুন। আজ মে মাসের এগারো তারিখ, ধরুন। ক্যালেণ্ডারের পাতায় এগারো তারিখের নিচে লিখুন: এক, লেখকের সন্ধান চাই।
আপনি যে ধরনের বই লেখাতে চান তা সব বা যে-কোনো ধরনের লেখকের পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। এই বিষয়ে কয়েকজন নির্দিষ্ট লেখক আছেন। তাঁদের সাথে। আপনার যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু তাদেরকে আপনি হয়তো চেনেন না। কারো হয়তো নাম জানেন, কিন্তু তার বাড়ির ঠিকানা জানা নেই। কি করবেন?