আমরা সবাই জানি, প্রয়োজন আবিষ্কারের উৎস বা জনক। প্রয়োজন, অর্থাৎ অভাব। একটা নির্দিষ্ট জিনিসের অভাব খুঁজে বের করুন, তারপর অভাব পূরণ করবার জন্যে নির্দিষ্ট জিনিসটি আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
অলসভাবে বসে থেকে যদি চিন্তা করেন, কিছু একটা আবিষ্কার করতে চাই আমি।’ চাওয়া পর্যন্তই, জিনিসটা আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রথমেই জানতে হবে আপনাকে, কি আবিষ্কার করতে চান। নির্দিষ্ট একটা অভাব বা প্রয়োজন খুঁজে বের করুন তারপর পূরণ করুন সেটা।
আপনার প্রথম ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ: বাজার ঘুরে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলেন বাজারে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জন্যে ছোটো তিন চাকাওয়ালা গাড়ি তেমন নেই, যেগুলো আছে সেগুলো টেকসই নয়, দেখতেও তেমন ভালো নয়, দামও গলাকাটা। এর চেয়ে ভালো জিনিস পাওয়া গেলে বাচ্চাদের অভিভাবকরা সেটাকে লুফে নেবে। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন, বাচ্চাদের জন্যে গাড়ি তৈরি করবেন। মাথা ঘামিয়ে বা কোনো ডিজাইনারের সাহায্যে আপনার মনের মতো একটা নকশা তৈরি করুন গাড়ির। এই গাড়ির নকশা আপনার আবিষ্কার। আপনার প্রথম ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ অর্জন করলেন আপনি। এবার দু’নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ অর্জন করার কাজ আপনার সামনে।
নিজের কারখানায় গাড়ি উৎপাদন-এটা আপনার দু’নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ।
নিজের একটা কারখানা গড়তে প্রচুর টাকার দরকার। টাকা আপনার নেই। উপায়?
উপায় হলো, আপনার দু’নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভটিকে আপনার এই মুহূর্তের বৃহত্তর অবজেকটিভ বলে গ্রহণ করুন, এবং তারপর আপনার এই বৃহত্তর অবজেকটিভটিকে ভেঙে কয়েকটি ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভে পরিণত করুন।
যেহেতু আপনার টাকা নেই, তাই কারখানার মালিক হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয় আপনার পক্ষে। আপনি অন্য কোনো কারখানার মালিকের সাথে আলোচনা। করুন, তার সাথে একটা ব্যবসায়িক চুক্তিতে আসুন। তার কারখানায় আপনি আপনার আবিষ্কৃত গাড়ি তৈরি করান, তৈরি করা গাড়ি বাজারে বিক্রি করুন। এতে লাভ হবে, ধীরে ধীরে টাকা জমবে আপনার। তারপর একদিন, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, আপনি নিজে একটা কারখানার মালিক হবেন, নিজের কারখানায় তৈরি করবেন নিজের আবিষ্কৃত গাড়ি।
.
টুকরো বৃহত্তর সম্পর্কে
ক্লাব বা বিভিন্ন ধরনের সমাবেশে, আপনি হয়তো হীনম্মন্যতার পরিচয় দেন। নিজের পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে, সুন্দর শবভঙ্গি সহযোগে, চোখাচোখা যুক্তি দিয়ে বক্তৃতা করে যারা, তারা হয়তো আপনার ঈর্ষার পাত্র। আপনি হয়তো অবাক। হয়ে ভাবেন, অসংখ্য শ্রোতাদের সামনে লোকটা অমন সপ্রতিভ, সহজ থাকে। কিভাবে?
লোকটার মতো আপনিও চান সভা-সমাবেশে সহজ হতে, সাহসী হয়ে উঠতে, আত্মবিশ্বাসের সাথে কিছু বলতে। কিন্তু আপনি সেই সাথেই হয়তো অনুভব করেন: লোকটার মতো আমি কোনোদিনই অমন সহজ, সাবলীল, সপ্রতিভ হতে পারবো না। মঞ্চের উপর নিজেকে আসলে আপনি কল্পনা করতেই ভয় পান।
বৃহত্তর এবং ক্ষুদ্রতর থিওরি প্রয়োগ করে আপনি এই সমস্যার সমাধান বের করতে পারেন। লোক-সমাবেশে কথা বলা কারো জন্মগত গুণ নয়, এই গুণ নিজের মধ্যে তৈরি করতে হয়। বহুলোকে এই গুণ তৈরি করছে যার যার প্রয়োজনে, আপনিও ইচ্ছে করলে এই গুণের অধিকারী হতে পারেন।
কিভাবে? বৃহত্তর এবং ক্ষুদ্রতর থিওরি প্রয়োগ করে।
আলোচ্য ক্ষেত্রে আপনার এক নম্বর দ্রতর অবজেকটিভ কি? মঞ্চ ভীতির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া। এই মুহূর্তে আপনি হয়তো নিজেকে প্রশ্ন করবেন, আমার মধ্যে ভয় ভয় একটা ভাব রয়েছে, এর থেকে রেহাই পাবো কি ভাবে? আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা এতোই সহজ যে শুনে শুধু আনন্দিতই নয়, বিস্মিতও হবেন। তার আগে, একটা প্রশ্ন করবে আপনাকে।
লোক সমাবেশে এমন একজন ব্যক্তি কি আছে যার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে। কথা বলতে আপনি ভয় পান? পান না-বেশ। এখন, একটা সত্য প্রকাশ করি।
মনে করুন, দুশো লোকের একটা সমাবেশে উপস্থিত রয়েছেন আপনি। সুবিধের খাতিরে ধরুন, একজন লোকের বুদ্ধি এবং বিচার মমতা এক পোয়া।
দুশো লোকের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা তাহলে কতো? অঙ্কটা কিন্তু খুবই সহজ।
কি বললেন? দুশো লোকের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা একমণ দশ সের?
না, অঙ্ক মেলেনি আপনার। আলাদা আলাদা ভাবে ওজন করলে দুশো লোকের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা দুশো পোয়া অর্থাৎ একমণ দশ সেরই হয় বটে কিন্তু একটা সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে অঙ্কটা কষতে হবে। সত্যটা কি? সত্যটা হলো, দুশো কেন, দু’হাজার মানুষ একত্রিত হলেও তাদের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা দু’হাজার গুণে উন্নীত হয় না। দুশো লোকের একত্রিত হওয়ার মানে এই নয় যে তাদের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা দুশো গুণ বেড়ে গেছে। আসলে ওই দুশো লোকের বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতা এতোটুকু বাড়েনি, আছে সেই এক পোয়াই। অর্থাৎ এক ব্যক্তির বুদ্ধি-বিবেচনা যতোটুকু দুশো লোকেরও তাই, তার বেশি এক কণাও নয়। সতুরাং, যে-কোনো একজন লোকের সাথে যদি কথা বলতে দ্বিধা বোধ না করেন। আপনি, দুশো লোকের উদ্দেশে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করবেন কেন? একজনের সাথে কথা বলতে পারলে সকলের সাথে একযোগেও বলতে পারবেন। দুশো বা দু’হাজার লোকের সমাবেশে কথা বলার সময় আপনি ধরে নেবেন মাত্র এক পোয়া বুদ্ধি এবং বিচার ক্ষমতার উদ্দেশে কথা বলছেন আপনি।