এইভাবে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট বইটা সম্পর্কে চিন্তা করার পর, কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়ুন বইটা নিয়ে একটা রচনা লিখতে। বইটাকে নিয়ে রচনা লিখবেন, কিসের উপর ভিত্তি করে? পাঁচ মিনিট ধরে বইটার কথা যা ভেবেছেন, সেই
ভাবনাই হবে আপনার রচনার মালমশলা।
লিখেছেন? বেশ। রেখে দিন ওটা।
পরদিন বই নয়, অন্য কোনো একটা জিনিস গ্রহণ করুন আপনার দ্বিতীয় রচনা লেখার জন্যে। আম, কাঁঠাল বা যে-কোনো একটা ফলকে বেছে নিতে পারেন। বইটার উপর যেভাবে পাঁচ মিনিট সময় খরচ করেছিলেন এই ফলটার উপরও সেই পদ্ধতিতে সময় খরচ করুন। ভাবুন, ফলটা কিভাবে জন্মালো, কিভাবে গাছ থেকে বাজারে এলো, কিভাবে বাজার থেকে আপনার বাড়িতে তসরিফ আনলো, ফলটার স্বাদ কি রকম, দেখতে কেমন, কি ভিটামিন কি পরিমাণ, আছে, এই ফল বছরের কোন্ সময় ফলে-ইত্যাদি।
ফলের উপর রচনা লিখলেন, কেমন? রেখে দিন এটাও। ভালো কথা, রচনাগুলো যেন পাঁচশো শব্দের কম না হয়।
এইভাবে, সপ্তাহের সাতদিন সাতটি আলাদা আলাদা জিনিসের উপর সাতটি রচনা লিখবেন আপনি। লিখিত রচনাগুলো রেখে দিতে বলেছিলাম, আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই। সর্বশেষ রচনাটি লেখা শেষ হলে প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় রচনাটি ড্রয়ার থেকে বের করে পড়ুন। প্রথম দিকের রচনাগুলোয় অনেক ত্রুটি পাবেন। যে-ধরনের ক্রটি আপনার শেষ দিকের রচনাগুলোয় পাবেন না। তার মানে, শেষের দিকে উন্নতি হয়েছে আপনার। রীতিমত বিস্মিত হবেন আপনি শেষের দিকের রচনাগুলোয় আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তির উন্নত প্রকাশ দেখে। এই অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ শক্তি অর্জন করছেন, সেই সাথে মনোযোগ ঘনীভূত করার চমৎকার কৌশলটা শিখে নিচ্ছেন। এবং বোনাসস্বরূপ, রচনা লেখকের কৃতিত্ব লাভ করছেন, নিজের চিন্তা-ভাবনাকে গুছিয়ে প্রকাশ করার কায়দাও রপ্ত হয়ে যাচ্ছে আপনার।
১০. বৃহত্তর–ক্ষুদ্রতর
আগেই জানিয়ে দিয়েছি আপনাকে, এক সাথে নয়, এক এক করে কাম্যবস্তু অর্জন করার মধ্যেই সাফল্য নিহিত।
একবারে একটি কাম্যবস্তু অর্জন করার চেষ্টা করবেন আপনি। যখন যে কাম্যবস্তুটি অর্জন করতে চাইবেন সেটিই হবে তখন আপনার প্রধান কাম্যবস্তু, একমাত্র চাওয়া বা মেজর অবজেকটিভ।
আপনার যে-কোনো কাম্যবস্তুকে আপনি প্রধান বা বৃহত্তর কাম্যবস্তু বলে মনে করুন। বৃহত্তর কাম্যবস্তুকে এবার ভাঙতে হবে ছোটো ছোটো টুকরোয়। এই ছোটো ছোটো টুকরোগুলো আপনার ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তু বা মাইনর অবজেকটিভ। ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তুগুলোকে এরপর গুরুত্ব অনুযায়ী লিখিতভাবে সাজান। এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে এক নম্বর থেকে সর্বশেষ ক্ষুদ্রতর কাম্যবস্তু বা অবজেকটিভ এক এক করে অর্জিত হলে ফলাফল দাঁড়াবে: বৃহত্তর অবজেকটিভটি অর্জনে সাফল্য।
মনে আছে তো, এর আগে আমরা শিখেছি, আমাদের অবজেকটিভ (এখন যাকে বলবো বৃহত্তর অবজেকটিভ) সম্পর্কে পরিষ্কার এবং বিশদ ধারণা থাকতে হবে আমাদের? আমরা ঠিক কি অর্জন করতে চাই তা জানতেই হবে নিখুঁত ভাবে।
আপনার এক নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভটিকে ধরুন। যে পর্যন্ত সেটা অর্জিত না হচ্ছে, মনে করুন, সেটাই আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভ।
এক নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভটিই এখন পরিণত হলো আপনার বৃহত্তর অবজেকটিভে। এই বৃহত্তরে রূপান্তরিত অবজেকটিভকে বাস্তবায়িত করার আগে। আপনার এবং আপনার উক্ত অবজেকটিভের মাঝখানে কি কি বাধা আছে গবেষণা। করে বের করুন। বাধাগুলোকে সনাক্ত করা খুবই জরুরী। প্রত্যক্ষ এবং সম্ভাব্য। বাধাবিঘ্নগুলোকে টপকাবার জন্যে একটা তৎপরতামূলক সক্রিয় কার্যপদ্ধতি স্থির করুন, তারপর রচনা করুন কাজে হাত দেবার পরিকল্পনা। এই অবজেকটিভ অর্জিত হলে এরপর ধরুন দু’নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভটিকে।
দুনম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভটিকে গ্রহণ করুন পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী বৃহত্তর অবজেকটিভ হিসেবে। এটি এখন আর আপনার কাছে ক্ষুদ্রতর থাকছে না, হয়ে দাঁড়াচ্ছে বৃহত্তর।
আসুন, উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটাকে আরো পরিষ্কার করার চেষ্টা করা যাক।
ধরুন, আপনি কিছু একটা আবিষ্কার করতে চাইছেন। আবিষ্কার করার পর জিনিসটাকে আপনি নিজের কারখানায় তৈরি করে সারা দেশের মার্কেটে সাপ্লাই দেবেন–এই হলো আপনার অবজেকটিভ।
আপনি বর্তমানে কপর্দকহীন, একটা ফুটো পয়সাও নেই আপনার পকেটে।
বড় একটা কারখানার মালিক হতে গেলে রাশি রাশি টাকা লাগে। কারখানা। পরিচালনা করাটাও প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ। আপনার কাছে টাকা নেই। আছে শুধু একটা ইচ্ছা।
আপনার এই ইচ্ছাটাকে কি বাস্তবায়িত করা অসম্ভব? না, অসম্ভব নয়। আপনি যদি আপনার এই ইচ্ছাটাকে বৃহত্তর অবজেকটিভ বলে গ্রহণ করেন, এবং তারপর বৃহত্তর অবজেকটিভকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে অনেকগুলো ক্ষুদ্রতর
অবজেকটিভে পরিণত করেন, আপনার দ্বারা সাফল্য লাভ অবশ্যই সম্ভব।
আবিষ্কার না করেই মাঠে নেমেছেন আপনি। সুতরাং, আবিষ্কারটাই হোক অনিবার্য প্রয়োজনের খাতিরে আপনার এক নম্বর ক্ষুদ্রতর অবজেকটিভ।
কোনো আবিষ্কারের মালিক হওয়া আপনার পক্ষে দুই ভাবে সম্ভব। হয় নিজের মাথা থেকে বের করুন আবিষ্কারটাকে, নয়তো কারো কাছ থেকে কিনে নিন। ধরা যাক, আপনার মধ্যে কিছু একটা সৃষ্টি করার তাগিদ আছে বলেই মাঠে নেমেছেন। আপনি, সৃষ্টি করার আনন্দ পেতে চান বলে জিনিসটার আবিষ্কারক হতে চান নিজেই, অন্য কোনো আবিষ্কারকের আবিষ্কার কিনতে চান না। বেশ, ভালো কথা।