জীবনকে ভালবাসা উচিত। কথাটা আপনাকেই বলছি।
জীবনের প্রতি ভালবাসার মনোভাব সাফল্যের চাবিকাঠি। কাম্যবস্তুটাকে ভালবাসতে শিখুন। তাকে কল্পনার চোখে দেখুন। আপনাকে জানতে হবে আপনার কাম্যবস্তু কেউ তৈরি করে রাখেনি, আপনিই তাকে তৈরি করবেন। কি দিয়ে?
নানারকম উপাদান সংযোগে তৈরি করবেন আপনি আপনার কাম্যবস্তু। কাম্যবস্তুর প্রতি ভালবাসার মনোভাব উপাদান অর্জনে আপনাকে সাহায্য করবে। এখানে প্রশ্ন ওঠে, কি কি উপাদান লাগছে?
কাম্যবস্তু সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকলে কি কি উপাদান দরকার তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
এখন, এক এক করে লিখে ফেলুন খাতায় উপাদানগুলোর নাম। তালিকা বড় হয়ে যাবার ভয় যেন পেয়ে না বসে আপনাকে। উপাদানের সংখ্যা বেশি হওয়া শুভ লক্ষণ। এতে প্রমাণ হয়, তৈরি করার মাধ্যমে কাম্যবস্তু অর্জনের কাজে আপনি। নিবেদিতপ্রাণ, কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন না বা ভেজাল মিশাচ্ছেন না।
আপনি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চান। এটা আপনার একটা কাম্যবস্তু হতে পারে। আপনার এই বিশেষ চাহিদার উপাদান কি কি?
আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এমন কোনো জিনিস নয় যে একদল লোকের মধ্যে তা। থাকবে আর একদল লোকের মধ্যে তা থাকবে না। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী যে-কেউ হতে পারে।
চরিত্রের বিশেষ কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের সমষ্টির ফলাফল আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। সেগুলো কি কি?
সেগুলো: বন্ধু বাৎসল্য, উদারতা, মুক্তবুদ্ধি, সহানুভূতি, কর্তব্যবোধ, আনন্দমুখরতা ইত্যাদি। এগুলোই আপনার উপাদান, এক এক করে সংগ্রহ করে নিন। তৈরি হয়ে যাবে আপনার মধ্যে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।
০৯. বিভক্তিকরণ এবং সংযুক্তকরণ
আমাদের কাম্যবস্তুকে যখন আমরা এককভাবে দেখি তখন সেটা সংযুক্ত। সংযুক্ত বা একক কাম্যবস্তুকে কিভাবে বিভক্ত ও বিশ্লেষণ করতে হয় সেই পদ্ধতি শিখতে যাচ্ছেন আপনি এই নতুন পরিচ্ছেদে। সংযুক্ত এবং বিভক্ত কাম্যবস্তু কাকে বলে? একটা উদাহরণ দিয়ে উত্তরটা দেবার চেষ্টা করছি।
ধরুন, একটি হাতঘড়ি। ঘড়িটি যেমন (সংযুক্ত) সেটিকে সেভাবে না দেখে আমরা ঘড়িটির ছোটবড় অসংখ্য সব অংশগুলোকে বিবেচনা করবো (বিভক্ত)। এ বিন্দু বিন্দু পানির সমষ্টি সিন্ধু। এঁটের উপর ইট সাজিয়ে তৈরি করা হয় একটি আকাশছোঁয়া প্রাসাদ। মাইলের পর মাইল অতিক্রম করলে ঢাকা থেকে দিল্লী পৌঁছানো যায়। যে-কোনো বস্তু বা বিষয়কে আপনি দু’ভাবে দেখতে পারেন। একটি তার সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিণত রূপ, অপরটি খণ্ড খণ্ড, টুকরো টুকরো চেহারা।
গোটা একটা জিনিসকে চিন্তা করা, আর তাকে টুকরো টুকরো, আলাদা আলাদা করে চিন্তা করার মধ্যে পার্থক্য আছে।
ধরুন, আপনি একটা বাড়ি তৈরি করতে চান। আপনার মনে, আর কিছু নয়, যদি বাড়িটার স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপটাই সর্বক্ষণ স্থান পায় তাহলে বাড়ি তৈরি করার কাজটা এমন বিরাট এবং অসম্ভব বলে মনে হবে যে কাজে হাত দেবার সাহসই আপনার মধ্যে আসবে না। অথচ একটার উপর একটা ইট স্থাপন করা খুবই সহজ কাজ। সেই ইটটার উপর আর একটা ইঁট চড়ানো, এও জলবৎ তরলং। এইভাবে একটা একটা করে আপনি যদি ইটের উপর ইট গাঁথতে থাকেন, একটা পাঁচিল তৈরি হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
আপনার কাম্যবস্তুকে দু’রকম দৃষ্টিতে এখন থেকে দেখবেন আপনি। এক, কাম্যবস্তুর স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপটা দেখুন বা চিন্তা করুন। দুই, আপনার কাম্যবস্তুকে দেখুন কয়েক ভাগে ভাগ করে, বিভক্ত অবস্থায়।
এই পদ্ধতিতে দেখা বা চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, নিজেকে যোগ্য, পারদর্শী এবং দক্ষ বলে মনে হবে।
একটা বইয়ের কথা ধরুন।
দু’হাজার পাতার একটি বই দশ ইঞ্চি ইটের মতো দেখতে। বইটা দেখে আপনি ভাবতে পারেন, ইস্! এতো বড় বই লেখা চাট্টিখানি কথা নয়! কী অমানুষিক পরিশ্রমই না করেছেন লেখক। আমার দ্বারা এইরকম একটা বই লেখা কক্ষনো সম্ভব নয়।
আপনার সাথে একমত হতে পারবো না। বইটার লেখক পরিশ্রম করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন-এ আমি মানতে রাজি নই।
আচ্ছা, বলুন তো,ফুলস্কেপ কাগজের দু’পাতা ব্যাপী একটা চিঠি লিখতে কি আপনার অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়? নিশ্চয়ই হয় না। সারাদিনে ক’টা ওই। রকম চিঠি লেখা সম্ভব আপনার পক্ষে, অমানুষিক পরিশ্রম না করে? গোটা পাঁচেক? আরো বেশি? গুড-দশটা চিঠি তাহলে, কেমন? দশটা চিঠি মানে, কুড়ি পৃষ্ঠা।
এটা একটা তথ্য। তথ্য বলছে, আপনি সারাদিনে কুড়ি পৃষ্ঠা লিখতে পারেন। কিভাবে লেখেন? কুড়ি পৃষ্ঠা কি একসাথে লেখেন? না, তা সম্ভব নয়। এক লাফে যেমন গাছের মগডালে ওঠা যায় না, তেমনি এক ঝটকায় কুড়ি পৃষ্ঠা লেখা সম্ভব নয়।
লেখক প্রথমে শব্দ লেখেন, শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বাক্য রচনা করেন। কয়েকটি বাক্য রচনা করার পর হয় একটি প্যারাগ্রাফ। বেশ কয়েকটি প্যারাগ্রাফের সমষ্টি একটি পরিচ্ছেদ। পরিচ্ছেদের সমষ্টি একটি বই।
আপনি এক মাসে লিখতে পারেন ছয়শো পৃষ্ঠা। ফুলস্কেপ কাগজের এক পৃষ্ঠা সমান ছাপা বইয়ের এক পৃষ্ঠা ধরা যাক। তিন মাস যদি নিয়মিত লেখেন আপনি, আঠারোশো পৃষ্ঠার দীর্ঘ চিঠি বের হচ্ছে আপনার হাতের কলম দিয়ে। চিঠি না লিখে আপনি একটা বইও লিখতে পারেন এই তিন মাসে।