তালিকা দুটো তৈরি হয়ে গেলে বসুন এবার বিশ্লেষণে। একটা একটা করে বাধাকে ধরুন, চিন্তা করে বের করুন কিভাবে ওই বিশেষ বাধাটিকে অতিক্রম করা যায়। এই ভাবে প্রত্যেকটি বাধাকে অতিক্রম করার উপায় বের করুন।
তারপর তৈরি করুন কাজের পরিকল্পনা।
আপনার পরিকল্পনা তৈরি করার মূলনীতি হবে-একটা কাজ ধরবেন, সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকবেন, সেটা শেষ না করে দ্বিতীয় কাজে হাত দেবেন না। এইভাবে কাজ করতে একবার অভ্যস্ত হয়ে উঠলে কাজের ধারাবাহিকতা অটুট রাখতে কোনো অসুবিধা হবে না আপনার। এবং কাজে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখলে কাম্যবস্তুর অধিকারী না হবার কোনোই কারণ নেই আপনার।
.
উপাদান
প্রশ্ন করি, কাম্যবস্তু কি?
সকল বস্তুর উপাদান অণু বা অ্যাটম, এ আমরা জানি। যদিও আমাদের বর্তমান আলোচনায় অণুর মতো ছোটো কোনো জিনিসের দিকে মনোযোগ দেবার দরকার নেই, তবু আপনাকে জানিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছি যে আপনার কাম্যবস্তু নানাপ্রকার জিনিসের সমষ্টিমাত্র। আপনার কাম্যবস্তুতে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে।
অনেকে অনেক বস্তু বা বিষয় কামনা করে, কিন্তু পায় মাত্র অল্প কয়েকজন। এর কারণ কি জানেন? কারণ হলো বেশিরভাগ লোক তাদের কাম্যবস্তুকে একটা ইউনিট হিসেবে গ্রহণ করে। তারা জানে না বা জানতে চায় না যে কাম্যবস্তুটি আসলে একক পদার্থ দিয়ে তৈরি নয়, ওটা বহু উপাদানের সমষ্টি, একত্রিত রূপমাত্র।
আপনি ব্যবসা করতে চান। এটা আপনার একটা কাম্যবস্তু। ব্যবসা করতে অভিজ্ঞতা, টাকা, দোকান, কারখানা বা অফিস লাগে–এইরকম আরো অনেক কিছু লাগে। এগুলো হলো আপনার ব্যবসার অর্থাৎ আপনার কাম্যবস্তুর উপাদান।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
এনাম অর্থহীন জীবনযাপন করে। ছোটো একটা চাকরি করে যা রোজগার করে তাতে তার সংসার ভালো ভাবে চলে না। নোংরা এলাকায় ছোট্ট একটা ভাড়াটে বাড়িতে দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে সে। দেনায় ডুবে আছে, সঞ্চয়ের কৌটা শূন্য।
এনামের বন্ধু মতিন। মতিনের অবস্থা এনামের ঠিক উল্টো। মতিনের প্রচুর টাকা সয়-সম্পত্তি আছে। সুন্দর বাগানসহ চমৎকার একটি বাড়ির মালিক সে। গাড়ি কিনেছে। বাড়িতে চাকর-চাকরানী রাখে। কোনো দেনা তো নেই-ই, সঞ্চয় রয়েছে প্রচুর। আরাম-আয়েসের সব রকম উপকরণ উপভোগ করে সে।
এনাম মতিনকে হিংসা করে এবং মনে মনে সে ভাবে মতিনের মতো অবস্থা যদি আমারও হতো!
মতিনের সুখ এবং প্রাচুর্য দেখতে পাচ্ছে এনাম, ঈর্ষান্বিত হচ্ছে সে এই কারণেই। মতিনের বর্তমান অবস্থাটাই শুধুমাত্র দেখতে পাচ্ছে সে। মতিনের মতো অবস্থায় সে উঠতে চাইলেও সে জানে না যে মতিনকে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছুতে কি কি নিয়ম কানুনের ভিতর দিয়ে আসতে হয়েছে।
নিয়ম কানুনগুলো জানা নেই এনামের। জানা থাকলে সে-ও ইচ্ছে করলে পারবে মতিনের অবস্থায় উঠে আসতে।
এনামের কাম্যবস্তু বা অবজেকটিভ রয়েছে। তার কাম্যবস্তু: সে মতিনের মতো অবস্থায় উঠতে চায়।
কিন্তু নিজের কাম্যবস্তুর উপাদান সম্পর্কে এনামের কোনো পরিষ্কার ধারণা নেই।
মতিনের কাম্যবস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা যাক এবার। প্রথমেই আমরা খোঁজ নিয়ে জানছি যে মতিনের এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, এই অবস্থা প্রথম দিকে তার ছিলো না। বর্তমানে এনাম যে দুরবস্থায় আছে, মতিনও এক সময় সেই দুরবস্থায় ছিলো। কিন্তু তার দুরবস্থাকে সে মেনে নেয়নি। মেনে তো নেয়ইনি, সে নিজের কাছে এই বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল কেউ যদি জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারে, আমিও পারবো, আমাকেও পারতে হবে।
মতিন নিজের মধ্যে গড়ে তুলেছিল গঠনমূলক অতৃপ্তি বোধ।
কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে একত্রে একটা ব্যবসায়ে নামে মতিন। ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথম প্রথম অনেক বাধাবিঘ্নের সম্মুখীন হয় সে, মার খায় বেশ ক’বার। কিন্তু মুষড়ে পড়েনি বা নৈরাশ্যে হাবুডুবু খায়নি সে কখনো, নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়নি, কাজের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হতে দেয়নি, নিজেকে ভুলেও অযোগ্য বলে চিহ্নিত করেনি।
মতিনের কারখানায় যা তৈরি হতো তা প্রথম প্রথম বিক্রি হতো স্থানীয়ভাবে। জিনিসের গুণ এবং মান ভালো হওয়ায় জেলাভিত্তিক বাজার পেলো মতিন। এখন গোটা দেশব্যাপী তার তৈরি জিনিস বিক্রি হচ্ছে।
সাফল্য অর্জনের জন্যে মতিন প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে কিন্তু শুধুই কি পরিশ্রম? না, শুধু পরিশ্রম করলে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গাধার মতো খাটলে সাফল্য আসে না। পরিশ্রমের পিছনে উদ্দেশ্য (অবজেকটিভ) থাকতে হয়। উদ্দেশ্যটাকে ভাগ করে নিয়ে (উপাদান বিভক্তিকরণ এবং সংযুক্তকরণ, পরবর্তী পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য) একটা একটা করে অর্জন করতে হয়। মতিন এইসব নিয়ম পালন করেছিল, জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে, তাই সে জীবনে সাফল্য লাভ করেছে।
.
মনোভাব! মনোভাব!
মনোভাবটাই হলো আসল কথা। জীবন সম্পর্কে আপনার মনোভাব কি রকম? কখনো ভেবে দেখেছেন? জীবন, এই পৃথিবী, বর্তমান সভ্যতা, আপনার পারিপার্শ্বিকতা-এগুলোকে আপনি কি ভালোবাসেন?
পৃথিবী মোটেই খুব একটা সুবিধের জায়গা নয়, এখানে কোনো কিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে না-একথা সত্যি। কিন্তু যেহেতু আপনি জন্মেছেন এই ভালোয় মন্দতে মেশানো পৃথিবীতে, এবং একবার জন্মালে মরতে ইচ্ছা করে না, সেই হেতু মৃত্যু অনিবার্য না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে তো এই পৃথিবীতেই বসবাস করতে হবে। পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করার জন্যে হাজার হাজার মানুষ অক্লান্ত খাটছে, এ-ও তো আপনি মানবেন, তাই না? এবং, দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি সঠিক অর্থে সততা বজায় রেখে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চায় তা সে ঘটাতে পারে, অর্থাৎ এই অসুবিধাবহুল পৃথিবীতে সে পারে নিজের আরাম-আয়েসের ব্যবস্থা করতে, জীবনটাকে আনন্দদায়ক এবং সুখের করে তুলতে; প্রাচুর্য, নেতৃত্ব, মর্যাদার অধিকারী হতে পারে সে নিজেকে সুখী করতে। সুতরাং, জীবনকে কেন ভালবাসবে না সে?