.
আমি পারবো বনাম আমি করবো
সাফল্য এবং ব্যর্থতার মধ্যে ফারাকটা কোথায়? ফারাক মনোভাবের। কেউ ভাবে, আমি পারবো না। সে ব্যর্থ। সে কেন ব্যর্থ? কারণ, সে চেষ্টা করে না, চেষ্টা করার আগেই জানিয়ে দেয়, সে পারবে না। যে চেষ্টা করে না তার দ্বারা পারা সম্ভব নয় সত্যি কথা।
আবার যে ভাবে, আমি পারবো–সে পারে। সে কেন পারে? কারণ, সে চেষ্টা করে। চেষ্টা করলে পারা যায়। মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। এটাও একটা। প্রমাণিত সত্য। ই চেষ্টা করলে সব পারা যায়। আপনার দ্বারা সম্ভব নয় এমন কোনো কাজ নেই।
অসম্ভব কাজ কোনটিকে বলবেন আপনি? ধরুন, আজ আপনার বয়স চল্লিশের। উপর। লেখাপড়া তেমন শেখেননি, সুযোগ-সুবিধে পাননি বলে। এখন আপনার ইচ্ছা, লেখাপড়া শিখবেন। এই বয়সে লেখাপড়া শিখতে যাওয়া বিড়ম্বনা, স্বীকার– করি। অনেক বাধা পাবেন, তাও সত্যি। কেউ কেউ হাসবে, ব্যঙ্গ করে লজ্জা দেবার চেষ্টা করবে আপনাকে। আপনার স্ত্রীই হয়তো বলবেন, বুড়ো বয়সে ভিমরতিতে ধরেছে। বইপত্রের দোকানে ঘনঘন ছুটতে হবে আপনাকে, সময় খরচ করে ঢু মারতে হবে লাইব্রেরীগুলোয়, আপনার ছেলের বয়সী কোনো পাকা ছাত্রকে হয়তো প্রাইভেট টিউটর হিসেবে পাবার দরকার হতে পারে আপনার, তার জন্যে কিছু অতিরিক্ত টাকা চাই-এই ধরনের প্রতিটি ব্যাপারই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে
এক একটা মস্ত বাধা। এই বাধাগুলোর কথা মনে হলেই আপনি যদি বলেন, নাহ্, এই বয়সে আর সম্ভব নয়-তাহলে ভুল করবেন। আসুন, দেখা যাক বিচার করে, এই বাধাগুলোকে জয় করা সম্ভব কিনা।
লোক ব্যঙ্গ করবে, করুক-আপনি কান দেবেন না। আপনার উদ্দেশ্যের প্রতি আপনি অবিচল থাকুন। এক নম্বর বাধাটা সরে যাচ্ছে এতে করে।
সময়ের অভাব, এটা হতে পারে আপনার দুনম্বর বাধা। চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন। পুরো একদিন অর্থাৎ চব্বিশ ঘণ্টা আপনি পরিশ্রম করেন না, তাই না? আট ঘণ্টা ঘুমান, আট ঘণ্টা কাজ করেন, বাকি আট ঘণ্টা বিশ্রাম, প্রাত্যহিক কাজকর্ম, খাওয়া, খেলাধুলা ইত্যাদির জন্যে নির্ধারিত। বিশ্রামের সময় থেকে আধঘণ্টা, খেলাধুলার সময় থেকে আধঘণ্টা এবং ঘুমের সময় থেকে আধঘণ্টা করে মোট দেড় ঘণ্টা আদায় করুন। খেলা, বিশ্রাম এবং ঘুমের কোনো গুরুতর ক্ষতি না করে এই সময় আদায় করা সম্ভব। এইভাবে মাসে পাচ্ছেন আপনি পঁয়তাল্লিশ ঘণ্টা। প্রতিমাসে পয়তাল্লিশ ঘণ্টা লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করতে পারছেন আপনি। দূর হলো দু’নম্বর বাধা।
এইভাবে এক এক করে বাধাগুলোকে টপকাতে চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করলে পারবেন।
আমি পারবো-এটা একটা ঘোষণা। এটা আত্মবিশ্বাসেরও লক্ষণ। যদি ভাবেন, আমি এ কাজ পারবো না-সেটা করার জন্যে কি আপনি চেষ্টা করবেন? করবেন না। যেটা পাওয়া সম্ভব নয় সেটা পাবার জন্যে কেউ চেষ্টা করে না। যে চেষ্টা করে না সে পারে না।
কি দাঁড়ালো? চেষ্টা করার আগে আপনাকে জানতে হবে, আপনি পারবেন। কাজটা যতোই কঠিন হোক, মানসূচক্ষে যতো বাধাই আপনি চাক্ষুষ করুন, মনের জোর খাঁটিয়ে ঘোষণা করুন-আমি পারবো। বিশ্বাস করুন, এই ঘোষণার দ্বারা আপনি যে কাজটি করতে চান তার অর্ধেক সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
কাজকে ভয় করবেন না। নিজের যোগ্যতাকে ছোটো করে দেখবেন না। কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি দেখেন সত্যি সত্যি আপনার যোগ্যতার অভাব রয়েছে তাহলে আমি পারবো না এই কথা না বলে যোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করুন এবং আমি পারবো না এই কথা না বলে বলুন আমি পারবো। সাফল্যের মূলমন্ত্রই হলো–আমি পারবো। আপনি যদি সাফল্য চান, আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে আপনি সফল হতে পারবেন। এই জানাটা একান্তই প্রয়োজনীয়। আমি পারবো-এটা একটা বিশ্বাস। খুবই মূল্যবান বিশ্বাস। এই বিশ্বাস আপনার। মধ্যে থাকতেই হবে।
এখন দেখা যাক, আমি পারবো এবং আমি করবো-দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি।
কোনো কাজ আপনি করতে পারবেন একথা জানা আর সেই কাজটা করা, দুটো আলাদা ব্যাপার। আপনি জানেন আপনি করতে পারবেন–কাজটা সম্পন্ন করা আপনার দ্বারা সম্ভব। এই জানার সাথে করার দূরত্ব আকাশ পাতালের।
পারবেন এই বিশ্বাস নিয়ে কোনো কাজ করতে চাইলে তা আপনি করতে পারবেন। আপনি চাকরিতে উন্নতি করতে পারবেন। আপনি লেখাপড়া শিখতে পারবেন। আপনি বড় একজন লেখক হতে পারবেন। ডাক্তার, আইনবিদ, এঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন। কিন্তু হবেন কি? আপনি করতে পারেন না এমন কিছু নেই–কিন্তু করবেন কি? এইটাই হলো সংকল্প-নির্ধারক প্রশ্ন।
আমি পারবো- এটা ঘোষণা করে আপনি জানিয়েছেন আপনার যোগ্যতার অভাব নেই। যদি থাকে, তা পূরণ করে নেবেন।
আমি পারবো-এই বিশ্বাস প্রকাশ করে আপনি জানিয়েছেন প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস আপনার মধ্যে আছে।
সেই সাথে আপনি আমাকে কথা দিয়েছেন-চেষ্টা করবেন।
এখন আপনার যোগ্যতার প্রমাণ চাই। দেখতে চাই আপনার আত্মবিশ্বাসের নমুনা। চাক্ষুষ করতে চাই প্রতিশ্রুতি পালন করেন কিনা।
অর্থাৎ এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে–আমি করবো।
আমি করবো–এটা একটা সংকল্প।
আমি পারবো এই সচেতনতা যে-কোনো কাজের ব্যাপারে একান্ত প্রয়োজনীয়, আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। আর আমি করবো এই সংকল্প যে-কোনো কাজ সম্পন্ন করার চাবিকাঠি, ট্রিগার। দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে-কোনো একটির অভাবে অন্যটি অচল।