অধিকাংশ মানুষ মনে করে তারা জানে তারা কি চায়। আসলে তাদের এই জানাটা সঠিক জানা নয়। প্রশ্ন করে দেখা গেছে তাদের নিজেদের ধারণা পরিষ্কার নয় ঠিক কি চায় তারা।
ধরুন, আপনার কাম্যবস্তু বা অবজেকটিভ হলো, রাজনৈতিক নেতৃত্ব লাভ করা।
একজন রাজনৈতিক নেতা কাকে বলে, বিভিন্ন মতাদর্শের মধ্যে পার্থক্য কি, কোন্টা গ্রহণ করবেন আপনি, নেতার করণীয় কাজ কি, কর্তব্য কি, কি কি নিয়ম তাঁকে পালন করতে হয়, কি ধরনের দায়িত্ব তার কাঁধে থাকে, তার আচার ব্যবহার, পোশাক-আশাক, চলন-বলন কি রকম হওয়া উচিত এবং অন্যান্য গুণ কি থাকা বাঞ্ছনীয় ইত্যাদি যদি আপনার ভালোমত জানা না থাকে, তাহলে বলা যায় কাম্যবস্তু বা অবজেকটিভ সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা নেই।
যা হতে চান তা হবার পর কি করবেন, কি করার জন্যে হবেন, কিভাবে কি করার নিয়ম-এ আপনাকে জানতেই হবে। নেতা কাকে বলে তাই যদি পরিষ্কারভাবে না জানেন, কি দরকার আপনার তা হয়ে? দরকারও নেই, তা হবার অধিকার নেই আপনার। কাম্যবস্তু নির্ধারণ বা নির্দিষ্ট করার সময় একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলবো আমি আপনাকে, তা হলো, কাম্যবস্তু অর্জনের লাইসেন্স আপনি তখনই পেতে পারেন যখন কাম্যবস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ, পরিষ্কার ধারণা আসবে আপনার মধ্যে।
ধরুন, আপনি নিজের একটা ব্যবসা চান। বেশ, ভালো কথা।
এখন বলুন, কি ধরনের ব্যবসা করতে চান আপনি? ব্যবসা তো অনেক রকমেরই আছে-ম্যানুফ্যাকচারিং, হোলসেল, রিটেইল, মেইল অর্ডার, না ইনডেন্টিং। কোন্ ধরনের ব্যবসা করতে চাইছেন আপনি? যে ব্যবসা করতে চান কল্পনায় নিজেকে সেই ব্যবসা করতে দেখতে পান কি?
বেন সুইটল্যাণ্ড একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, এক ভদ্রমহিলা এই প্রসঙ্গে আলোচনার সময় আমাকে বলেন, ‘আমার অবজেকটিভ ঠিক আছে। লেখিকা হতে চাই আমি।’
‘কি ধরনের লেখিকা হতে চান?’
আমার প্রশ্ন শুনে ভদ্রমহিলা বেশ একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়েন। তাকে আমি জানাই, লেখিকা অনেক রকম হয়, কেউ গল্প লেখে, কেউ প্রবন্ধ লেখে, কেউ ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে মালমশলা সংগ্রহ করে লেখে, কেউ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুকে পুঁজি করে লেখিকা হয়, কেউ অনুবাদক, সংবাদপত্রের মহিলা রিপোর্টারদেরকেও লেখিকা বলা হয়, কেউ ভ্রমণ কাহিনী লেখে। এরা সবাই। লেখিকা কিন্তু প্রত্যেকে আলাদা আলাদা বিষয়ের লেখিকা। আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলা বুঝতে পারেন, অবজেকটিভের অংশবিশেষ সম্পর্কে তাঁর ধারণা আছে, গোটাটা সম্পর্কে ধারণা নেই। এই ভদ্রমহিলার অবস্থা ছিলো সেই খেলোয়াড়ের মতো, যে জানতে সে মাঠে প্রবেশ করবে কিন্তু মাঠে সে কি খেলায় অংশগ্রহণ করবে তা জানতো না।
ভালো একটা চাকরি খুঁজছেন আপনি। ঠিক করুন কি ধরনের চাকরি চান। যে ধরনের কাজ আপনার কাছে প্রিয়, করতে ভালো লাগে সেই ধরনের কাজ করার সুযোগ আছে যে চাকরিতে সে চাকরি খুঁজুন।
চাকরির জন্যে কোনো কোম্পানির কর্মকর্তার কাছে গেলেন। বললেন, “যে-কোনো একটা চাকরি দিন, আমি করবো।’ কর্মকর্তা আপনাকে চাকরি দেবেন বলে মনে হয় না। কারণ, বুদ্ধিমান কর্মকর্তারা চান সেই ধরনের লোক যারা জানে তারা কি ধরনের কাজে পটু বা কি ধরনের কাজ তাদের কাছে প্রিয় বা পছন্দ।
নিজের একটি বাড়ি, এই যদি হয় আপনার অবজেকটিভ তাহলে সর্বপ্রথম স্থির করুন কি ধরনের বাড়ি চান, কতোটা জায়গা জুড়ে হবে বাড়িটা, আশপাশে কি থাকবে, বাড়ির ভিতর বাগান থাকবে কিনা, রূমের সংখ্যা ক’টা হবে, একতলা না বহুতলা, কোন্ এলাকায় চান বাড়িটা?
.
বাধাবিঘ্ন
গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করতে চান আপনি? যদি চান, বাধা আপনি পাবেনই।
বাধাগুলোকে আমরা সাধারণত বিরূপ চোখে দেখে অভ্যস্ত। এটা একটা অবৈজ্ঞানিক বদভ্যাস। বাধা যেখানে নেই সেখানে উত্তরণ নেই, এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা। বাধাগুলোকে আমরা আসলে সঠিকভাবে চিনতে ভুল করি বলে ওগুলোকে খারাপ চোখে দেখি। আসলে, বাধাগুলোই কিন্তু আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বাধা টপকানো মানে এগিয়ে যাওয়া, তাই নয় কি? বাধা আছে বলেই না। সেটাকে জয় করার, টপকাবার উদ্যোগ আয়োজনের প্রয়োজন পড়ছে। বাধা না থাকলে কি হতো, ভাবুন একবার! আপনি হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকতেন। উত্তরণ ঘটতো না আপনার, এগোতে পারতেন না।
বাধা আসলে প্রয়োজনীয়। এই বাধাগুলোকে এক এক করে জয় করেই আপনি আপনার কাম্যবস্তুর দিকে ধীরে ধীরে এগোবেন।
বাধাগুলোকে জয় করার আগে আপনার প্রথম কাজ হলো সেগুলোকে চেনা। প্রথমে একটি বাধাকে ধরুন। ওটার ভাবগতিক বুঝুন, আকার-আয়তন পরিমাপ করুন, ওর স্বভাব-প্রকৃতি অনুধাবন করুন। একটা বাধাকে একবার চেনা হয়ে গেলে সেটাকে অতিক্রম বা জয় করা তেমন কঠিন হবে না। অপর দিকে, বাধা। সম্পর্কে আপনার যদি কোনো ধারণা না থাকে, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সেগুলো আপনার সামনে আবির্ভূত হবে, ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য করবে আপনাকে।
বাধাগুলোকে একে একে চিনে নিন। তারপর খাতা পেন্সিল সাথে নিয়ে বসুন। ক্রমিক নাম্বার দিয়ে এক এক করে লিখুন বাধাগুলোর নাম। তালিকা তৈরি করুন। তালিকা হবে দুটো। একটা সম্ভাব্য বাধার তালিকা, আর একটা প্রত্যক্ষ বাধা তালিকা।