যে-লোক অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে কাজ করে সে মনে করে, স্থিতিশীল একটা পর্যায়ে অবস্থান করছে সে। আসলে তার এই মনে করাটা সম্পূর্ণ ভুল। সে নিজেকে স্থির হয়ে আছে ভাবলে ভুলই করবে।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোনো কিছুই স্থির হয়ে নেই। নদী, বাতাস, নক্ষত্র, এমন কি বৃক্ষ-কেউ স্থির নয়, সবাই, সবকিছু এগিয়ে চলেছে। যে এগিয়ে যায় না সে পিছিয়ে থাকে। কাজ না করে বসে থাকা মানে এই নয় যে আপনি নির্দিষ্ট এক জায়গায় পৌঁছে দাঁড়িয়ে আছেন, আসলে আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন। আপনাকে। পিছনে রেখে এগিয়ে চলেছে মহাকাল। যারা কাজ করছে তারা আপনাকে পিছনে রেখে ছুটে চলেছে সামনের দিকে।
অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র উপায় কাজ করা। কিন্তু এগিয়ে যাবার উপায় কি?
এগিয়ে যাওয়ারও নির্দিষ্ট উপায় আছে।
এগিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট উপায় হলো একটির পর একটি কাজ করা। শুধু। একটি কাজ নয়, একটির পর একটি কাজ করলে এগিয়ে যেতে পারবেন আপনি।
একটি কাজ ধরলেন। শেষ হলো সেটা। কিন্তু তারপর? চুপচাপ বসে থাকতে চান নাকি?
চুপচাপ বসে থাকা মানে তো পিছিয়ে পড়া। পিছিয়ে তো আপনি পড়তে চান না। তা যদি না চান, এগিয়ে যাবার নিয়ম পালন করতে হবে আপনাকে। নিয়মটা হলো: কাজের পর কাজ, একের পর এক কাজ করে যাওয়া।
একটা কাজ শেষ করুন, তারপর আর একটা কাজ ধরুন। কাজের পর আবার কাজে হাত দিন। যদি এগিয়ে যেতে চান, ভুলেও কক্ষনো প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কাজের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন না।
কাজকে গ্রহণ করবেন আনন্দের উৎস হিসেবে। কাজের প্রতি ভালবাসা থাকা। চাই, তবেই না গভীর মনোযোগ আনতে পারবেন। কাজকে কষ্টকর ব্যাপার বলে। মনে করবেন না। কাজ কষ্টকর, একথা সত্যি। কিন্তু কাজ তেমনি সুফলদায়কও বটে। কি না দেয় কাজ আপনাকে? গাড়ি, ড়ি, সয়-সম্পত্তি, মর্যাদা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব সামাজিক সম্মান, ব্যক্তিত্ব, পারিবারিক মর্যাদা, প্রশংসা, খ্যাতি-এমন কিছু তো দেখি না যা মানুষকে দিতে পারে না কাজ। যে কাজ সম্ভাব্য সবকিছু দেয় তা করতে কষ্ট হয় নাকি আবার?
কষ্ট মনে করলে, কষ্ট তো রসগোল্লা খেতেও হয়। দোকান থেকে কিনে নিয়ে যাবেন বাড়িতে, বাক্স থেকে খুলবেন, প্লেটে সাজাবেন, হাত মুখ ধুয়ে এসে বসবেন, তারপর হাত দিয়ে তুলে মুখের ভিতর পুরবেন, চিবাবেন। কষ্টকর বৈকি। কিন্তু তবু রসগোল্লা খাওয়াটাকে কেউ কষ্টকর বলে মনে করে না।
রসগোল্লা খাওয়াটা যদি কষ্টকর কাজ না হয়, সমৃদ্ধি অর্জন করাটা কষ্টকর। কাজ হতে যাবে কেন? এটা তো আনন্দের কাজ।
কাজকে আপনার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য বলে মনে করতে হবে। এমন একটা মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে যার ফলে নিজেকে কাজ করতে বাধ্য করার দরকার পড়বে না। কাজ করাটা আপনার জন্যে হবে একটা শখ, একটা মজার ব্যাপার। কাজ করে মজা পেতে হবে। তা পেতে হলে প্রয়োজন মনে করে নয়, ভালবাসি মনে করে কাজ করতে হবে।
একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন, আপনার করার মতো কাজ অনেকগুলো রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিলেন, অমুক কাজটা ধরবো।
ধরলেনও।।
কিন্তু কাজটা ধরে খানিকদূর করে কিছু বাধাবি দেখতে পেলেন আপনি। ফলে সেটা বাদ দিয়ে অন্য একটি কাজ ধরলেন আবার। এই দ্বিতীয় কাজটির বেলাতেও কিছু বাধার সৃষ্টি হলো, আপনি সেই বাধাগুলোকে টপকাবার চেষ্টা না করে এরপর ধরলেন তৃতীয় কাজটিকে। ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে? ধরছেন বটে আপনি, কিন্তু একটা কাজও শেষ করতে পারছেন না।
এ থেকে প্রমাণ হয়ে গেল বাধাগুলোকে আপনি ভয় পাচ্ছেন। কেন, জানেন? কাজের প্রতি আপনার ভালবাসা নেই, তাই।
এ কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলে বাধাগুলোকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করতেন, ওগুলোকে জয় করবার জন্যে উদ্যমী হয়ে উঠতেন, বাধাগুলোকে অপসারণ করার মধ্যে প্রচুর মজা পাবার কথা আপনার, নৈরাশ্য বা বিরক্তি বোধ করার কথা নয়।
কাজ ধরেও শেষ করতে না পারার আরো একটা কারণ হলো, পরিকল্পনার অভাব। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনার অভাব কাজের প্রতি মানুষের অহেতুক আতঙ্কেরও সৃষ্টি করে।
পরিকল্পনার অর্থ অনেক। তার মধ্যে একটি হলো, প্রস্তুতি।
প্রস্তুতি না থাকলে কাজের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও, কাজটি শেষ করতে আপনি ব্যর্থ হবেন। সুতরাং প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে আপনাকে। অনেক সময় দেখা যায় কাজের প্রতি উৎসাহ এবং ভালবাসা আছে বটে কিন্তু প্রস্তুতির অভাব থাকায় কাজটি কোনদিনই শেষ করা সম্ভব হয় না। সুতরাং, প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে আপনাকে।
স্থির হলো, প্রস্তুতি নিতেই হবে। কিন্তু কিসের জন্যে আপনার এই প্রস্তুতি? কেউ যদি আপনাকে হুট করে প্রস্তুত হতে বলে আপনি কি প্রস্তুত হতে পারবেন? পারবেন না। কেন প্রস্তুত হতে হবে, প্রস্তুতি কিসের জন্যে তা আপনাকে জানতে হবে প্রথমে, তাই না?
প্রস্তুতি নেবার আগে আপনাকে জানতে হবে কি সেই জিনিস যা আপনি চান। অর্থাৎ কাম্যবস্তু বা অবজেকটিভ নির্দিষ্ট করতে হবে আপনাকে।
পাঠক, আপনি হয়তো ভাবছেন, উপরিউক্ত কথাটি আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলছি না, কারণ, কাম্যবস্তু তো আপনার নির্দিষ্ট করাই আছে। কিন্তু আসলে কি তাই? সত্যিই কি আপনি নিজের কাম্যবস্তু নির্দিষ্ট করে রেখেছেন? আপনি জানেন আপনি কি চান?