আপনি টাকার বাজেট করতে অভ্যস্ত? যদি অভ্যস্ত হন, খুবই ভালো। কিন্তু সময়ের বাজেট করেন কি?
টাকার বাজেট করার চেয়ে সময়ের বাজেট করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি একটা টাকা হারিয়ে ফেললে সেটা পুনরুদ্ধার বা পুনরায় রোজগার করা সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি একটা ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন? পাবেন কখনো আর সেটা ফিরে? পাবেন না। ঘণ্টাটা চিরকালের জন্যে হারিয়ে গেল।
বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যেকদিন কয়েক ঘণ্টা করে সময় নষ্ট করছে। সকলের নষ্ট করা সময়গুলো একত্রিত করলে দেখা যাবে কয়েক শতাব্দী সময় পৃথিবীর মানুষ নষ্ট করেছে। এই সময় যদি নষ্ট করা না হতো, সভ্যতা এগিয়ে যেতো আরো অনেক পথ।
যে-কোনো একটি দিনকে ধরে হিসেব করা যাক। একজন মানুষ কাজ করে আট ঘণ্টা, ঘুমায় আট ঘণ্টা। বাকি রইলো আরো আট ঘণ্টা। কি কি কাজ করে সে এই আট ঘণ্টায়।
খাওয়া-দাওয়া, প্রাত্যহিক ক্রিয়াকর্ম, ব্যবসা বা চাকরিস্থলে আসা-যাওয়া করতে ধরুন আরো লাগে তিন ঘণ্টার অবশিষ্ট থাকে হাতে পাঁচ ঘণ্টা। এর। মধ্যে কাজের আটঘণ্টা পুরোপুরি কাজ করে ব্যয় করে না সে, কাজে ফাঁকি দেয় প্রচুর। তার মানে, প্রত্যেকদিন একজন মানুষ পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা সময় নষ্ট করছে।
সময়ের অভাব আপনি ইচ্ছা করলেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। এর অভাব ঘোচাবার একমাত্র উপায় সময়ের বাজেট করা।
জ্ঞানের অভাব-এখন আমাদের আলোচ্য বিষয়।
স্কুল-কলেজে না পড়েও জ্ঞান অর্জন করা যায়। আপনার কি গল্পের বই, প্রবন্ধের বই, সাময়িক পত্র-পত্রিকা, বিজ্ঞানের বই পড়বার অভ্যাস আছে?
থাকলে, খুবই আনন্দের কথা। বই পড়ার অভ্যাসটা আসলে অত্যন্ত উপকারী। জ্ঞান অর্জন করার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হচ্ছে, বই পড়া।
বই পড়তে খুব একটা খরচ হয় না। অসংখ্য লাইব্রেরী আছে সবখানে। পাঠ করে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করা যায় এমন পুরানো বই পথেঘাটে প্রচুর কিনতে পাওয়া যায় সস্তা দরে। বই ধার করাও সম্ভব। এমনকি বই ভাড়াতেও পাওয়া যাচ্ছে। অনেক জায়গায়।
জ্ঞান এমন একটা জিনিস যা একবার অর্জিত হলে তা আর আপনার কাছ থেকে পালাতে পারবে না কোনোদিন। আপনার জ্ঞান কেউ কেড়ে নিতে পারে না, কেউ চুরি করতে পারে না।
নিয়ম করে পড়ুন। ঠিক করুন কতোটা সময় পড়ার পিছনে ব্যয় করবেন। পড়ার অভ্যাস একবার গড়ে উঠলে কাপড়-চোপড় পরার মতো সহজ একটা। ব্যাপার বলে মনে হবে পড়াটাকে।
যা পড়বেন, অর্থ বুঝে পড়বেন। প্রথমে ধীরে ধীরে পড়ার অভ্যাস করুন। একবার পড়ে না বুঝলে আবার পড়ুন, বারবার পড়ুন। অর্থ না বুঝে সামনের পাতায় চোখ রাখবেন না।
এবার অভিজ্ঞতা।
অভিজ্ঞতা কাকে বলে তা আপনার জানা দরকার।
জ্ঞানের সাথে অভিজ্ঞতার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। জ্ঞানকে যাচাই করার নাম অভিজ্ঞতা।
এমনিতে জ্ঞানের বিশেষ কোনো মূল্য নেই, যাচাই করার পরই তার প্রকৃত মূল্য নিরূপণ করা সম্ভব। বেচাকেনা করার পদ্ধতি শেখা খুব একটা কঠিন নয়, কিন্তু শেখা জ্ঞানটাকে কাজে লাগাতে হলে অভিজ্ঞতার দরকার হয়।
কাজে হাত দিন, কাজে নামুন, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দুটোই অর্জন করবেন, যে বিষয়ে জ্ঞানার্জনের গভীর আগ্রহ রয়েছে আপনার মধ্যে, সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে অবসর সময়টাকে কাজে লাগান।
সর্বশেষ আলোচ্য বিষয়টি হলো-আলস্য।
নিষ্ক্রিয়তার মতোই, কুঁড়েমি বা আলস্য কোনো কারণ নয়-ফলাফল। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, কেন আমি অলস?
নিজের সাথে কারচুপি না করলে সঠিক উত্তরটি আপনি পেয়ে যাবেন। হয়তো উত্তরটি হবে, আমি তৃপ্ত, তাই অলস।
আসলে যে আপনি তৃপ্ত নন, অতৃপ্তিকে দমিয়ে রেখেছেন কোনো না কোনো কারণে তা তো এর আগেই বলেছি। সুতরাং উত্তরটি সঠিক হলেও, ধারণাটা ভুল। ভুল ধারণা ত্যাগ করুন।
পছন্দসই, মনের মতো কাজ বেছে নিতে হবে আপনাকে। যে কাজ করতে ভালো লাগে সে-কাজে আলস্য নেই।
কুঁড়েমির হাত থেকে রেহাই পেতে হলে আগে ঠিক করুন কোন ধরনের কাজ আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
প্রিয় কাজ পাবার চেষ্টা করুন। কুঁড়েমির কবল থেকে রক্ষা পাবেন।
০৮. ধারাবাহিকতা
প্রখ্যাত এক জার্মান কবি বলেছেন, ‘যে সামনের দিকে এগোচ্ছে না সে আসলে পিছনে সরে যাচ্ছে।’
কেউ কি পিছিয়ে থাকতে চায়? যদি কেউ চায়, তাকে আমি একটি পরামর্শ দিতে পারি-কাজ না করে হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকুন, তাহলেই নিশ্চিন্তে পিছিয়ে যেতে পারবেন।
মানুষ কাজ করে। কেন করে? আসলে দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে মানুষ। দুটোই ফলপ্রসূ, কিন্তু দুটো দু’রকম দু’জাতের ফল দেয়।
অধিকাংশ মানুষ কাজ করে অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে। তাদের উদ্দেশ্য টিকে থাকা।
কাজ করার আর এক উদ্দেশ্য হলো, এগিয়ে যাওয়া অর্থাৎ সমৃদ্ধি অর্জন করা। খুবই স্বল্পসংখ্যক মানুষ এগিয়ে যাবার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে।
কাজ না করলে মানুষ পিছিয়ে যায়, একথা আগেই বলেছি। এখন ওই কথার সাথে যোগ করে আর একটা কথা বলতে চাই, তা হলো, শুধুমাত্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে যে মানুষ কাজ করে সে-ও আসলে পিছিয়ে থাকে।
কাজ কেন করবেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
শুধুমাত্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে খুব বেশি কাজ করার দরকার হয় না। ছোটো একটা সংসার আপনার, অল্প সময় কাজ করে যা রোজগার করেন, মোটা ভাত খেয়ে মোটা কাপড় পরে দিন কাটাচ্ছেন–আরো বেশি কাজ করবার দরকার কি আপনার?