আপনি যখন বলেন, ‘আমি জানি কাজে আমি ব্যর্থ হবো।’–আপনি নিজের অজ্ঞাতে তখন আত্মসম্মোহনের একটা রীতি ব্যবহার করছেন। আপনি আপনার অবচেতন মনকে আক্ষরিক অর্থে নির্দেশ দিচ্ছেন, সে যেন এমন চিন্তা করে এবং এমন কাজ করে যার ফলাফল হয় নির্দিষ্ট ওই কাজে ব্যর্থতা।
আপনি যখন বলেন, ‘আমি জানি, কাজটা করতে পারবো।’–এক্ষেত্রেও আপনি আত্মসম্মোহনের একটা রীতি ব্যবহার করছেন। আপনার অবচেতন মনকে আপনি নির্দেশ দিচ্ছেন, কাজটাতে সফলতা লাভ করার জন্যে আমাকে সাহায্য করো বা গাইড করো।
আত্মসম্মোহনের নিয়ম-কানুনগুলোকে আপনার পক্ষে কাজে লাগানো যেমন সহজ, তেমনি আপনার বিরুদ্ধেও কাজে লাগানো সহজ। স্বপক্ষে কাজে লাগাতে হলে আপনাকে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। পারবো না, করবো, সম্ভব নয়–এগুলোর পরিবর্তে ভাবতে হবে, পারবো, করবো, সম্ভব-ইত্যাদি।
এর আগে আপনি পড়েছেন শিক্ষা বা জ্ঞানের কোনো দাম নেই যদি না তা আপনি ব্যবহার করেন। তা যদি সত্যি বলে মানেন, এইমাত্র যা শিখেছেন, সেটাকে ব্যবহার করতে শুরু করুন এই মুহূর্তে।
নেতিবাচক মনোভাবের জায়গায় সযত্নে স্থান দিন ইতিবাচক মনোভাবকে।
আপনার নিজস্ব আইডিয়া, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির উপর যদি আস্থা না থাকে, যদি সেগুলোকে মূল্যবান বলে মনে করতে বাধা বোধ করেন, নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে চিন্তা করুন:
‘আমি একটা সুন্দর, সৃষ্টিশীল মনের অধিকারী, যে মন মূল্যবান, গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা রাখে। আমার চেতনায় যে চিন্তা প্রবাহিত হচ্ছে তা। গুরুত্বপূর্ণ, প্র্যাকটিকাল চিন্তা।’
এবার আলোচনা করবো সময়ের অভাব সম্পর্কে।
‘চাকরি করি, যা বেতন পাই তাতে সংসারই ভালো চলে না, ব্যবসার জন্যে। জমাবো কোত্থেকে!’
ব্যবসার জন্যে টাকা জমাতে পরামর্শ দিলে এক লোক আমাকে এই উত্তরটা দিয়েছিল। কিন্তু উত্তরটা শুনে আমি মনে মনে হেসেছিলাম। তারপর তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘রাত এবং দিন, কখন কিভাবে, কোন্ কাজ করে কাটান, বলবেন আমাকে?’
লোকটা বললো, আট ঘণ্টা ঘুমাই। সকাল ছয়টার সময় ঘুম থেকে উঠি। মুখ হাত ধুয়ে নাস্তা সেরে কাপড়-চোপড় পরতে পরতে বেজে যায় সাতটা। সাড়ে সাতটায় অফিস, দু’মাইল হাঁটতে হয় আধঘণ্টার মধ্যে। অফিস থেকে বের হই দুটোর সময়, বাড়ি ফিরতে আড়াইটা বাজে। স্নানাহার সেরে একটু গড়াগড়ি দিই। বিকেল পাঁচটার সময় ছেলেমেয়েদেরকে পড়াতে বসি। সন্ধ্যার পর একটু হাঁটাহাঁটি করি, শরীরটা ঠিক রাখতে হবে তো। বাড়ি ফিরি আটটার দিকে। খেয়েদেয়ে গিন্নীর সাথে সাংসারিক আলোচনা সারতে বেজে যায় সাড়ে নটা দশটা। দশটায় বিছানায় উঠি।’
লোকটাকে বললাম, বিকেলে ছেলেমেয়েদেরকে এক ঘণ্টা পড়ান, দু’ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করেন বাইরে-এই দু’ঘণ্টা কিন্তু অপব্যয় করেন। শরীর ঠিক রাখার জন্যে সকালে বা দুপুরে স্নান করার আগে পনেরো মিনিট ব্যায়াম করলেই যথেষ্ট। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ুনো যায়, জানেন তো? এই একই জায়গায়। দাঁড়িয়ে দৌডুনোটা খুবই বিজ্ঞানসম্মত একটি ব্যায়াম। এই ব্যায়াম করলে দু’ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি না করলে চলবে আপনার।’
লোকটি বললো, ‘আচ্ছা, তাই নাকি!’।
বললাম, দুপুরে ঘুমান বা গড়াগড়ি খান দু’ঘণ্টা। এই দু’ঘণ্টার মধ্যে দেড় ঘণ্টাই আপনি অপব্যয় করেন। কারণ, আট ঘণ্টা রাতে ঘুমুবার পর দিনের বেলা ফের বিছানায় দু’ঘণ্টা কাটাবার কোনো মানে হয় না। একজন মানুষের জন্যে আট ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। আর হিপনোটিজমের মাধ্যমে যদি ঘুমটাকে গাঢ় করে নিতে পারেন, তাহলে তোকহ নেই, সাত ঘণ্টা, এমনকি ছয় ঘণ্টা ঘুমালেও শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না অ, নার। সে যাক, দুপুরে না ঘুমিয়ে আপনি দেড়টি ঘণ্টা বাঁচাতে পারেন। হাঁটাহাঁটি থেকে দু’ঘণ্টা এবং দুপুরের ঘুম থেকে দেড় ঘণ্টা-মোট সাড়ে তিন ঘণ্টা বাঁচছে আপনার। চেষ্টা করলে অন্যান্য কাজ থেকে, যেমন রাতে খেয়েদেয়ে গিন্নীর সাথে গল্প করার সময় থেকে আরো এক দেড় ঘণ্টা বাঁচাতে পারেন। ধরুন, সাড়ে চার ঘণ্টা বাঁচবে মোট।’
লোকটি বললো, তা হয়তো বাঁচানো যায়। কিন্তু সময় বাঁচিয়ে কি হবে?
বললাম, ‘পার্টটাইম একটা চাকরি অনায়াসে করতে পারেন আপনি এই বাঁচানো সময়টাতে। টাইপ জানেন, চাকরি না পাবার কারণ নেই। মাসে বেশ কিছু টাকা অতিরিক্ত আসবে।’
লোকটা আমার দিকে বোকার মতো চেয়ে ছিলো অনেকক্ষণ। ব্যবসার জন্যে টাকা জমাবার এমন সহজ একটা উপায় রয়েছে অথচ সে তা দেখতেই পায়নি-এই ভেবে লজ্জাই পেয়েছিল বেচারা। যাই হোক, আমার পরামর্শ অনুযায়ী সময় বাঁচিয়ে একটা চাকরির জন্যে উঠে পড়ে লাগলো সে। এবং, অবশেষে চাকরি পেলোও। পার্টটাইম সেই চাকরি করে প্রতি মাসে পাঁচশো টাকা করে অতিরিক্ত রোজগার করছে সে। টাকাটা জমাচ্ছে ব্যবসা করবে বলে।
এই বাস্তব ঘটনাটা থেকে প্রমাণ হয়, সময়ের অভাব বলে কোনো জিনিস নেই।
আসলে টাকার বাজেট না করলে যেমন মাস শেষে টাকার টান পড়ে যায়। তেমনি সময়ের বাজেট না করলে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যে সময়ের অভাব দেখা দেয়।
.
সময়ের বাজেট চাই
স্বল্প আয়ের কোনো লোক যদি তার টাকার বাজেট না করে, বিপদে পড়তে হবে। তাকে। প্রতিমাসে নির্ধারিত খরচ আছে তার: বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, রেশন, বাজার, ওষুধপত্র, কাপড়-চোপড়, স্কুলের বেতন, ইলেকট্রিসিটির বিল, ইসুরেন্স-আরো কতো রকম খরচ। বাজেট না করলে আজেবাজে খাতে টাকা খরচ হবেই তার। প্রয়োজনীয় খাতের জন্যে টাকার অভাব ঘটবে তখন।