এই বয়স্ক লোকগুলোর মধ্যেও অতৃপ্তি আছে, কিন্তু বয়সের অজুহাত দেখিয়ে এরা অতৃপ্তিকে দমিয়ে রাখে। এটা উচিত নয়।
মানুষ বুড়ো হলে কি তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় বা কমে যায়? সুখ, আরাম, আয়েস, উপভোগ ইত্যাদি কি তার দরকার হয় না?
দরকার হয়। বরং, অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে দরকার হয়। এবং বয়সটা কোনো মতেই একটা বাধা নয়। ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে, বুড়ো বয়সে মানুষ উন্নতি করেছে, সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
মানুষ বুড়ো হয় কখন? বয়সটাই কি বুড়ো হবার লক্ষণ? তা নয়। মনটা যদি বুড়ো হয়ে যায় অর্থাৎ কোনো যুবকের মনও যদি তৃপ্তি লাভ করে চূড়ান্তভাবে, তাকে বুড়ো বলা চলে। শরীর বুড়ো হলে কিছু যায় আসে না, মনটা যুবক থাকলে নিজেকে বুড়ো মনে না করে যুবক ভাবতে পারেন অনায়াসে। শতবর্ষের কাছাকাছি বয়স এমন অনেক মানুষকে যুব-মানসিকতার অধিকারী থাকতে দেখেছি আমি। দেহটা তাদের সত্যি জরাগ্রস্ত কিন্তু মনটা তাজা, উৎসাহে ভরপুর, প্রফুল্লতায় ঝকঝকে, আনন্দে উজ্জীবিত। এরা মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত যুবক থাকে। এ প্রখ্যাত কন্সালটিং সাইকোলজিস্ট বেন সুইটল্যাণ্ডের কথা ধরুন। নিজের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আমার জীবনের প্রথম পঞ্চাশ বছরে আমি যতোটুকু অর্জন। করেছি তার চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করেছি পঞ্চাশের পর মাত্র অল্প ক’বছরে। পঞ্চাশের ক’বছরে জীবনের সর্বক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার তুলনায় শতগুণ বেশি সাফল্য লাভ করেছি আমি ষাটের পর।
বেন সুইটল্যাণ্ড এখনো থামেননি, সাফল্যের পথে যাত্রায় তার অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়েনি। যদিও তিনি প্রচুর সয়-সম্পত্তির মালিক এখন, তবু অতৃপ্তির সীমা নেই তাঁরও। কাম্যবস্তুর দীর্ঘ তালিকা তৈরি করে রেখেছেন তিনি, এক এক করে প্রত্যেকটি কাম্যবস্তু অর্জন করার দৃঢ় সংকল্প কাজ করছে তার মধ্যে।
তিনি মনে করেন, বয়সটা কোনো বাধা নয়। জীবনের শেষ দিনটিতে, শেষ মুহূর্তটিতেও আরো সাফল্য দরকার তাঁর, আরো সুখ দরকার, আরো সমৃদ্ধি দরকার।
আপনার বেলায়ও এই কথা খাটে।
০৭. অ্যাকশন
কাজ কি?
মানুষ যা করবো বলে ভাবে তাই কাজ। তার মানে মানুষের চিন্তার ফসল কাজ।
কাজ স্বয়ং কোনো রূপ ধারণ করে না, কাজ নিরাকার। কাজকে বাস্তবে রূপান্তরিত করলে তা নির্দিষ্ট আকার প্রাপ্ত হয়, বিশেষ একটা রূপ ধারণ করে। কেবলমাত্র তখনই তাকে আমরা দেখতে পাই, তার সম্পর্কে ধারণা পাই, তার গুণাগুণ বিচার করতে পারি।
কাজকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে কি নিয়ম পালন করতে হবে আপনাকে? তৎপর হতে হবে, সক্রিয় হতে হবে, অর্থাৎ, হাত-পা নেড়ে, পরিশ্রম করে একটু একটু করে পরিপূর্ণ আকার দিতে হবে কাজটাকে। এই যে পরিশ্রম, এই যে সক্রিয়তা এবং তৎপরতা, একেই বলে অ্যাকশন।
কাজ বা অ্যাকশন দুটো আলাদা জিনিস। অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘অমুক কাজটা করবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় কাজটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি সে। কেন পারেনি? পারেনি এই জন্যে যে কাজ করার ইচ্ছা তাদের মধ্যে থাকলেও, অ্যাকশন ছিলো না।
এ খবরের কাগজে এক লোকের কাহিনী ছাপা হলো। সহজ সরল, সাধারণ একটা আইডিয়া থেকে এই লোক অঢেল প্রাচুর্যের অধিকারী হয়েছে।
খবরটা পড়ে অনেকেই মন্তব্য করলো, “কি জানেন, এইরকম একটা আইডিয়া তো আমার মাথাতেও এসেছিল!’
‘আইডিয়াটাকে বাস্তবে রূপ দেবার চেষ্টা করেননি কেন?’ তাদেরকে এই প্রশ্ন করা হলে সবাই কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তরটা এড়িয়ে যায়।
উত্তরটা এড়িয়ে গেল এই জন্যে যে উত্তরে বলবার মতো কিছু নেই তাদের। আইডিয়া আছে, প্রায় সব মানুষের মধ্যেই অসংখ্য আইডিয়া থাকে, কিন্তু সেটাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্যে পরিশ্রম করে ক’জন, সক্রিয় এবং তৎপর হয় ক’জন? শতকরা দু’ভাগও নয়। সুতরাং আইডিয়াধারীরা শতকরা আটানব্বই জনই আইডিয়া পুষে রাখে মনে মনে, সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। বাকি শতকরা দু’জন পরিশ্রম, সক্রিয়তা এবং তৎপরতার দ্বারা কাজটিকে বাস্তবে রূপ দেবার চেষ্টা করে এবং কাগজে উল্লেখিত সেই লোকের মতো সাফল্য লাভ করে, অঢেল প্রাচুর্যের অধিকারী হয়।
অ্যাকশন কাজের বাস্তব মূর্তি তৈরি করে। কিন্তু অ্যাকশন বলতে আমরা কি বুঝি?
অ্যাকশন হলো শক্তির প্রয়োগ।
ফিজিক্সে দু’ধরনের শক্তি বা এনার্জির কথা বলা হয়েছে। পোটেনশিয়াল এবং কাইনেটিক।
আসুন, এই দুই এনার্জি সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করা যাক। এই আলোচনা থেকে আপনার বেশ কিছু শেখার আছে।
পোটেনশিয়াল এনার্জিকে বলা যায় সম্ভাবনার মধ্যে উপস্থিত একটা শক্তি, যার সত্যিকার বাস্তব কোনো রূপ নেই।
কাইনেটিক এনার্জিকে বলতে পারি মূর্তিমান শক্তি, যে শক্তির প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।
আমার, আপনার, সকলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পোটেনশিয়াল এনার্জি বিদ্যমান। পোটেনশিয়াল এনার্জিকে আমরা যখন আড়াল থেকে বের করে আলোর মধ্যে আনি, তাকে গড়িয়ে দিই, ছুটিয়ে দিই, নির্দিষ্ট একটা আকার দিই তখনই। সেটা নতুন পরিচয় লাভ করে, সে রূপান্তরিত হয় কাইনেটিক এনার্জিতে।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধে হবে আপনার।
ধরুন, লোহার তৈরি আধমণ ওজনের একটা গোল বল, টেবিলের উপর স্থির। হয়ে বসে আছে। বলটাকে ধাক্কা দিয়ে গড়িয়ে দিলে কি হবে?