অবস্থায় তপ্ত থাকতে বাধ্য করছে সে।– আমি যোগ্য নই-এটা একটা অমূলক ভয়, এই ভয় অনেক সময় মানুষকে তৃপ্ত থাকতে বাধ্য করে।
অতৃপ্ত মানুষকে আবার প্রধান দু’ভাগে ভাগ করা যায়। এক দল কাজ করে, অপর দল নিজের হাত কামড়ায়। শতকরা পঁচানব্বই জন মানুষ তাদের বর্তমান অবস্থায় অখুশি, অতৃপ্ত এবং অসন্তুষ্ট। এদের মধ্যে অধিকাংশই হা-হুঁতাশে কাল কাটায়, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নৈরাশ্যে হাবুডুবু খায় অর্থাৎ নিজেদের হাত কামড়ায়।
পরিশ্রমকে ভয় পায় অনেকে। পরিশ্রম করার চেয়ে বর্তমান অবস্থায় তৃপ্ত থাকা ভালো-এইরকম ভাবে তারা। ভালো একটা ক্রিকেট ব্যাট কেনা দরকার এক শিক্ষানবিস খেলোয়াড়ের। তার বাড়ির কাছাকাছি যে-সব দোকান আছে সেগুলোয় তেমন ভালো ব্যাট কিনতে পাওয়া যায় না। ভালো ব্যাট কিনতে হলে যেতে হবে বিশ মাইল পথ অতিক্রম করে বড় কোনো শহরের দোকানে। বিশ মাইল পথ অতিক্রম করার পরিশ্রম যদি সে স্বীকার না করে, কাছাকাছি দোকান থেকে খারাপ ব্যাট কিনেই তৃপ্ত থাকতে হবে তাকে। এ থেকে প্রমাণ হয়, পরিশ্রমের ভয়ে। অতৃপ্তিবোধকে মূল্য দিচ্ছে না সে।
.
আপোসমূলক মনোভাব
অধিকাংশ মানুষ তার নিজের দুরবস্থাকে মেনে নেয়। সচেতন বা অচেতন ভাবে তারা অনুভব করে, আমার কপালের লিখনই এই, কি আর করার আছে! এরা হয়। অলস, নয় ভীতু কিংবা হীনম্মন্যতায় ভুগছে। এরা জানে না, কপালের লিখন বলে কোনো জিনিস নেই, যে যার ভাগ্য নিজেই গড়ে তার কর্ম দ্বারা।
এক ভদ্রমহিলা আমাকে প্রায়ই বলতেন, এমন কপাল, কোনো বন্ধু নেই আমার।’ প্রশ্ন করে জানলাম, বন্ধু সংগ্রহ করার কোনো চেষ্টাই তিনি করেননি। তাকে কেউ শেখায়নি যে বন্ধু পেতে হলে আগে বন্ধু হতে হবে নিজেকে।
এই মহিলা যদি বন্ধুত্বহীনতার সাথে আপোস না করে বন্ধু না থাকায় অতৃপ্তি বোধ করতেন তাহলে বন্ধুর অভাব ঘটতো না তার।
অতৃপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এই আপোসমূলক মনোভাবের দরুন অধিকাংশ মানুষ নিজেকে তৃপ্ত থাকতে বাধ্য করে। বলুন তো কার না গাড়ি কিনতে, বাড়ি তৈরি করতে, ব্যাঙ্কে টাকা জমাতে, দামী দামী ফার্নিচার কিনতে, বিদেশ ভ্রমণ করতে ইচ্ছা না হয়? শখ সাধ নেই কার মধ্যে? এক লক্ষ লোককে প্রশ্ন করে দেখুন, তারা। সবাই বলবে, চাই, চাই, এটা চাই, ওটা চাই, সম্ভাব্য সব কিছু চাই।
কিন্তু কেন তারা যা যা চায় তা তা পায় না? কারণ, সেই একটাই, তারা অতৃপ্তিবোধকে দমিয়ে রাখে, বর্তমান অবস্থাকে মেনে নেয়। = শিল্পী হওয়া আমার দ্বারা সম্ভব নয়। অনেকে বলে। এতে কি প্রমাণ হয়? প্রমাণ হয়, শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা তাদের মনে জাগে। ইচ্ছা জাগে কেন? জাগে এই জন্যে যে, অবচেতন মন এবং প্রকৃতি তাদেরকে ইঙ্গিতে বলে দিচ্ছে, তোমরা শিল্পী হতে পারবে।
অবচেতন মন কক্ষনো ভুল বা মিথ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করে না। কিন্তু এক ধরনের লোক আছে যারা অবচেতন মনের ভবিষ্যদ্বাণীতে পূর্ণ আস্থা, পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে না। এরা যদি বিশ্বাস রাখতো, যদি ‘পারবো না’ থেকে না শব্দটি বাদ দিয়ে বলতো পিরবো, তাহলেই এরা হয়তো বড় শিল্পী হতে পারতো।
আপোসমূলক মনোভাব কাপুরুষতার লক্ষণ। আপনি মানুষ, কেন আপনি আপনার দৈন্য দশাকে মেনে নেবেন? কেন আপনি প্রচুর টাকা রোজগার করতে চাইবেন না, কেন গাড়ি কিনতে বাড়ি তৈরি করতে চাইবেন না? আপনার মন এসব জিনিস চায়–কেন তাকে আপনি বঞ্চিত করবেন? ই নিজের মধ্যে অতৃপ্তিবোধ আমদানী করুন। ভাবুন, আমার বাড়ি নেই, একটা বাড়ি তৈরি না করা পর্যন্ত আমার তৃপ্তি নেই।
বাড়ি চান, এই বাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাবেন, সেটা পাবার জন্যে জেদ থাকবে আপনার মধ্যে, যতোক্ষণ না পান ততোক্ষণ অতৃপ্ত থাকবেন আপনি।
ধরুন, একটা বাড়ির জন্যে অতৃপ্তি ছিলো আপনার, সুপরিকল্পনার মাধ্যমে, প্রত্যক্ষদর্শনের মাধ্যমে পেলেন সেটা-মিটলো অতৃপ্তি?
মেটা উচিত নয়। কোনো না কোনো, একটা না একটা জিনিসের জন্যে আপনার মধ্যে সর্বক্ষণ অতৃপ্তি থাকতেই হবে। একটা অতৃপ্তি মিটেছে, আরো একটা মেটান। বাড়ি হয়েছে, এবার গাড়ির জন্যে অতৃপ্তি বোধ করুন। গাড়ি হবার পর, নতুন ফার্নিচারের জন্য অতৃপ্ত হোন। শুধু যে বস্তুগত উপকরণের জন্যে আপনি অতৃপ্ত বোধ করবেন তা নয়। প্রতিষ্ঠা অর্জনের, পারিবারিক মর্যাদা বৃদ্ধি করার, নেতৃত্ব লাভের, জ্ঞান অর্জনের, সম্মান বৃদ্ধির জন্যেও আপনাকে অতৃপ্ত থাকতে হবে। আপনি যা হতে চান তার জন্যে অতৃপ্তিবোধ না করলে হবেন। কিভাবে? এলাকাব্যাপী সম্মান পেয়েছেন, এবার দেশব্যাপী সম্মান পাবার চেষ্টা করুন, তারপর নেতৃত্ব লাভ করার জন্যে অতৃপ্ত হোন। এইরকম পদ্ধতিতে নিজেকে সবসময় একটা না একটা ব্যাপারে অতৃপ্ত রাখুন।
অতৃপ্তির সংখ্যা-সীমা নেই। ভুলেও কখনও সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত হবেন না। চূড়ান্তভাবে তৃপ্ত-হওয়া মানে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দেয়া।
বয়সের দোহাই অচল। অতৃপ্ত অনেক মানুষ তাদের অতৃপ্তিকে গুরুত্ব দেয় না, একের পর এক অতৃপ্তি মিটিয়ে তৃপ্ত হবার চেষ্টা করে না। এই ধরনের লোকেরা নানারকম যুক্তি দেখাবার চেষ্টা করে।
বয়স্ক কিছু লোক আছে, যারা বয়সের দোহাই দিয়ে বলে, জীবনে পরিবর্তন আনার জন্যে যে বয়স দরকার তা আমার নেই, বুড়ো হয়ে গেছি।