একটা মূল কাজের অংশ নিজেই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে মূল কাজটার প্রেক্ষিতে, কিন্তু অংশটি এককভাবে তেমন কোনো গুরুত্ব বহন নাও করতে পারে-এই ধরনের আংশিক বা আনুষঙ্গিক কাজকে অবহেলা করতে বলছি না আমি। আমি বলছি সেই সব কাজের কথা যা কিনা নির্দিষ্ট ফলাফল দিতে অপারগ। ধরুন, জুয়ার কথা। এটিকে একটি কাজ মনে করতে পারেন। রোজ সন্ধ্যার পর আপনি খেলতে যান। নির্দিষ্ট ফল দিতে এই কাজ সমর্থ নয়, এটা প্রমাণিত সত্য। সুতরাং, এই কাজ আপনি করবেন না, আপনার করা উচিত নয়। পাকা জুয়াড়ীদেরকে দেখে আমি একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝেছি, তারা আর জেতার জন্যে জুয়া খেলতে বসে না, এতোদিন ধরে তারা যা হেরেছে তার কিছুটা ফিরে পাবার আশায় খেলতে বসে। এদের মধ্যে আমি আবিষ্কার করেছি নৈরাশ্য, নিজের প্রতি অনাস্থা। এতোদিনে তারা টের পেয়ে গেছে, জুয়া খেলাটা কোনো কাজের কাজ নয়, গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়, নির্দিষ্ট ফলপ্রসূ কাজ নয়-যার ফলে তারা এই জুয়া খেলা কাজটির প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছে।
জুয়া একটি অকাজ বা গুরুত্বহীন কাজ। দৃঢ় সংকল্পের এখানে কোনোই ভূমিকা নেই। জুয়া খেলে জিতবো-এই সংকল্প গ্রহণ করে না কেউ। সংকল্প গ্রহণের ফলে কেউ জেতে না। সুতরাং, জুয়াড়ীর মধ্যে দৃঢ় সংকল্পের অভাব থাকবে।
কোনো কাজ অকাজ বা গুরুত্বহীন কিনা তা অনেক সময় নির্ভর করে সময়ের উপর। অফিস কামাই করে যদি কেউ মাছ ধরতে ব্যয় করে সারাটা দিন-এক্ষেত্রে মাছ ধরাটা অকাজ। ছুটির দিন মজা পাবার জন্যে মাছ ধরতে যান–সেক্ষেত্রে এটা একটা খেলা, একটা আনন্দদায়ক ঘটনা, অকাজ নয়। খেলাও ফলপ্রসূ একটা কাজ। খেলারও প্রয়োজন আছে আপনার।
অফিস কামাই করে মাছ ধরতে গিয়ে দেখুন, মাছ ধরার কাজে উৎসাহবোধ করার চেয়ে অস্বস্তিবোধ করবেন অনেক বেশি। মাছ ধরার প্রতি তেমন মনোযোগী হতে পারবেন না। অথচ আপনার মাছ ধরতে যাবার মূল উদ্দেশ্য: মাছ ধরে মজা পেতে হবে আপনাকে। মজা পাবার জন্যে দৃঢ়ভাবে সংকল্পিত হয়ে পুকুর পাড়ে নেমেছেন আপনি। কিন্তু দৃঢ় সংকল্প আপনার মধ্যে এতোটুকু থাকবে না, অফিস কামাই করে একটা অকাজ করার পিছনে সময় অপব্যয় করছেন বলে।
দৃঢ় সংকল্পের অভাব হবার অন্যতম আর এক কারণ হলো, নেতিবাচক ভঙ্গিতে চিন্তা করার কু-অভ্যাস। পিরবো না, হবে না, সম্ভব নয়-এই রকম ভাববেন না কক্ষনো। আপনার ভাবনা-চিন্তার পদ্ধতি বদলে ফেলুন, ভাবুন-হবে, পারবো, সম্ভব। অর্থাৎ ইতিবাচক ভঙ্গিতে চিন্তা করতে শিখুন। তাহলেই দৃঢ় সংকল্পের অভাব ঘুচে যাবে আপনার মধ্যে থেকে।
এই পরিচ্ছেদে আপনি শিখছেন কিভাবে গভীর আগ্রহবোধের অধিকারী হওয়া যায়। ইতোমধ্যে আপনি শিখেছেন অভিপ্রায় নির্ধারিত করলে, দৃঢ় সংকল্প নিজের মধ্যে আমদানী করলে গভীর আগ্রহবোধের অধিকারী হওয়া যায়। এবার: আত্ম-উপলব্ধি।
আত্ম-উপলব্ধিও অভিপ্রায় এবং দৃঢ় সংকল্পের মতো একটা গুণ। এইসব গুণেরই সমষ্টি হলো গভীর আগ্রহবোধ।
আত্ম-উপলব্ধি।
ধরুন, নিজের কদর বোঝেন আপনি, নিজের প্রশংসা করেন মনে মনে। এতে কি প্রমাণ হয় আপনি অহমিকায় ভুগছেন? না, মোটেই তা প্রমাণ হয় না।
আপনি যা, নিজেকে আপনি তাই বলে মনে করবেন, এতে দোষ কিছুই নেই। এবং যেহেতু আপনি আর সকলের মতোই একজন মানুষ, তাই আপনার সম্ভাবনা। অন্য কারো চেয়ে এতোটুকু কম নয়। যে-কোনো মানুষের সমকক্ষ হতে পারেন আপনি। মানুষের যতগুলো ভালো গুণ আছে, সবই আছে আপনার মধ্যে। সুতরাং ভালো গুণগুলো আছে বলে নিজের প্রশংসা করবেনই তো আপনি।
আসলে, আপনি নিজের সম্পর্কে যা ভাববেন না, যা বিশ্বাস করবেন। না-দুনিয়ার কেউ আপনার সম্পর্কে তা ভাববে না, বিশ্বাস করবে না। আপনি যদি নিজেকে বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি বলে মনে করেন, লোকেও আপনাকে তাই মনে করবে।
যে ডাক্তার বা আইনবিদের নিজের উপর আস্থা নেই তার উপর কি নিজের সন্তানের চিকিৎসা, কিংবা কোনো আইনসংক্রান্ত দায়িত্ব দিতে চাইবেন আপনি?
কোনোদিন ভেবে দেখেছেন, আপনার মধ্যে হাজারো গুণ আছে? আসলে, না থেকে পারে না। আছেই আছে, আপনি জানুন বা না জানুন।
এবং সেইসবগুলোকে কাজে লাগতে দেখা মানেই নিজেকে উপলব্ধি করা।
কিন্তু অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আত্ম-উপলব্ধির ফলে আপনার মধ্যে যেন সন্তুষ্টি পয়দা না হয়। সন্তুষ্টি আসলে একটি বেড়া, ব্যারিকেড। সন্তুষ্ট ব্যক্তি এগোয় না, এগোবার প্রয়োজন বোধ করে না সে।
অনেকে মনে করে নিজেকে পছন্দ করা মানে আত্ম-উপলব্ধি করা। তা সত্যি নয়। নিজেকে নয়, নিজের কাজকে; যা ভাবছেন, যা করছেন সেই ভাবনা এবং কর্মকে পছন্দ করা মানে আত্ম-উপলব্ধি।
সুখ:
কোটা আগে, মুরগী না ডিম? সুখবোধ গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করে। সেই রকম গভীর আগ্রহবোধ জন্ম দেয় সুখবোধের।
সুখী হওয়াটা জরুরী। আগে দরকার।
সবচেয়ে ভালো হয়, সুখ-এর উপর লেখা পরিচ্ছেদটি এই ফাঁকে জরুরী মনে করে আর একবার পড়ে নিলে। আগে সুখী বলে মনে করুন নিজেকে, তারপর পড়তে শুরু করুন ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
০৬. অতৃপ্তি
সময় সবার মুখেই এই রকম কথা শোনা যায়: যা আছে তোমার তাতেই তুমি তৃপ্ত থাকো, যা পেয়েছে তাতেই তোমার সন্তুষ্ট থাকা উচিত, অতৃপ্তি ভালো নয়, অসন্তুষ্ট হওয়া, অনুচিত-অর্থাৎ অতৃপ্ত এবং অসন্তুষ্টির বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার। প্রচলিত ধারণা হলো, অতৃপ্তি এবং অসন্তুষ্টি খারাপ জিনিস।