তার মধ্যে একটি হলো: অভিপ্রায়।
অভিপ্রায়কে আমরা উদ্দেশ্য বলতে পারি। অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য না থাকলে কোনো জিনিস অর্জন করার ইচ্ছা জাগে না। ধরুন, চাকরি পাওয়াটা আপনার অভিপ্রায় বা উদ্দেশ্য নয়, সেক্ষেত্রে আপনি কি চাকরির জন্যে চেষ্টা করবেন? চাকরি পাবার ইচ্ছা থাকবেই না আপনার মধ্যে।
উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় আগে ঠিক করে নিন, তারপর উদ্দেশ্য হাসিলের পথে নামুন। প্রশ্ন করতে পারেন, অভিপ্রায় কাকে বলে ব্যাখ্যা করুন। নিন ব্যাখ্যা।
এ আপনি কিছু কামনা করুন, কিছু দাবি করুন, কিছু আশা করুন-এর যে কোনোটাই আপনার অভিপ্রায়। সুন্দর একটি এলাকায় চমৎকার একটি বাড়ি তৈরি করতে চান-এটা হতে পারে আপনার একটা অভিপ্রায়।
অসংখ্য বিষয় বা বস্তুকে আপনি আপনার অভিপ্রায়ের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, আপনার চাওয়ার শেষ সীমা নেই। কিন্তু প্রত্যেকটি চাওয়াই আপনার অভিপ্রায় হতে পারে না।
চাওয়ার পিছনে জোর থাকতে হবে, চাইলে কায়মনোবাক্যে, প্রত্যক্ষদর্শনের মাধ্যমে, সুখী মনোভাব নিয়ে, জীবনে সাফল্য লাভের একটি অংশ বলে মনে করে, অন্তর দিয়ে, উৎসাহের সাথে চাইতে হবে। তবেই হবে সেটি আপনার একটি অভিপ্রায়।
অভিপ্রায়ের পর আসছে: অর্জন করতে পারবেন এই জ্ঞান।
অভিপ্রায় নির্দিষ্ট হলে আপনাকে সতর্কভাবে ভাবতে হবে অভিপ্রেত বস্তুটিকে বাস্তবে রূপ দেয়া কিভাবে সম্ভব। অথচ, অভিপ্রায় নির্ধারিত করার পর অধিকাংশ লোক কি ভাবে জানেন? ভাবে, উদ্দেশ্য তো ঠিকই আছে, কিন্তু আমার দ্বারা কি কাজটা করা সম্ভব?
নিজেকে এই যে প্রশ্ন, এটা পরিষ্কার সন্দেহ এবং ভয়ের লক্ষণ প্রকাশ করছে। কেউ বৈজ্ঞানিক হতে চায়, কেউ ব্যবসা করতে চায়, কেউ নাবিক হতে চায় অথচ শেষকালে দেখা যায় এরা যা হতে চেয়েছিল তা হতে পারেনি। কেন পারেনি? খোঁজ নিয়ে, তদন্ত চালিয়ে দেখুন, অধিকাংশের ক্ষেত্রে একটিমাত্র কারণ খুঁজে পাবেন–এরা নিজেদের যোগ্যতা, গুণ, ক্ষমতা এসবের প্রতি আস্থাবান ছিলো না। উদ্দেশ্যটা যে তাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব একথা তারা নিজেরাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেনি।
ভুলেও কেউ যদি ভাবে অভিপ্রেত বস্তুটি অর্জন করা আমার দ্বারা সম্ভব নাও হতে পারে-তার দ্বারা সত্যি সাফল্যলাভ নাও হতে পারে।
আপনাকে এই বিপদ থেকে সাবধানে থাকতে হবে। আপনি যদি বলেন, পারবো না-শেষ হয়ে গেল ব্যাপারটা, পারার চেষ্টাই আপনি করবেন না। যদি বলেন, নাও পারতে পারি-সন্দেহ রয়েছে আপনার, সন্দেহ থাকলে কাজে হাত দেয়া বোকামি, কারণ ব্যর্থ হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তাতে। যদি বলেন, পারবো কি!এতেও রয়েছে সন্দেহ এবং ভয়, সুতরাং পরিত্যজ্য। যদি বলেন, বোধ হয় পিরবো-বোঝা যায় আপনার নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা নেই। যদি বলেন, পিরবো কিনা জানি না-এতেও নিজের প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাসের অভাব পরিলক্ষিত হয়। হয়তো পারবো, পারি কিনা দেখি চেষ্টা করে, মনে হয় পিরবো, পারতেও পারি, পারি বা না পারি দেখি একবার নেড়েচেড়ে-এই ধরনের কথা ভাবা আসলে ক্ষতিকর, নিজের প্রতি অনাস্থার, কাজের প্রতি ভয়ের পরিচায়ক।
আপনাকে ভাবতে হবে জোর দিয়ে পারবো। অবশ্যই পারবো। নিশ্চয়ই পারবো।
নেতিবাচক মনোভঙ্গি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে আপনাকে। আপনি বিশ্বাস করবেন, পারবো, আমার দ্বারা একশোবার সম্ভব।
এরপর আসছে: দৃঢ় সংকল্প।
স্মরণ করে দেখুন, যাদের সাথে নিত্যদিন আপনার দেখা হয় এখানে সেখানে তারা দেখা হলেই বলে কিনা এটা করবো, ওটা করবো? আপনার আশপাশে এমন প্রচুর লোকের সন্ধান আপনি পাবেন। যাদের মুখে লেগেই আছে এটা করবো, ওটা করবো। কিন্তু তাদের মধ্যে কাজটা করে ক’জন, মাত্র দু’একজনে, তাই না?
আমি পনেরো বছর আগে এক বাকপটু ভদ্রলোককে বলতে শুনেছিলাম, অমুক কাজটি করতে যাচ্ছি আমি। পনেরো বছর গত হয়ে গেছে তারপর। ইদানীং হঠাৎ করে তার সাথে আমার আবার দেখা হয়েছিল। ভদ্রলোকের চুলে পাক ধরেছে, রেখা পড়েছে মুখে-বয়স বাড়ার ছাপ ফুটে উঠেছে সর্বত্র। অনেক বদলে গেছেন তিনি। কিন্তু দেখা হবার পর কথায় কথায় আমাকে জানালেন-অমুক কাজটি করতে যাচ্ছি আমি।
ভাবুন একবার! গত পনেরো বছর ধরে কাজটা করতে চাইছেন তিনি!
শুধু এই ভদ্রলোকই নন, অধিকাংশ মানুষই বলে করবো, কিন্তু করে না। কেন। করে না? কেউ কি তাদেরকে কাজটি করতে বাধা দেয়?
দেয়। তবে বাধাটা অন্য কোনো মানুষের তরফ থেকে আসে না। বাধাটা। আসে সূংকল্পের অভাব হেতু, নিজের মধ্যে থেকেই। এই ধরনের মানুষ। নিজেদেরকে নিজেরাই নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে।
যার মধ্যে দৃঢ় সংকল্প নেই, জেদ নেই তার নিজের দ্বারা বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। জেদ জিনিসটা আসলে খুবই উপকারী, যদি তা গঠন বা উন্নয়নমূলক কোনো কাজে প্রয়োগ করতে পারেন।
দৃঢ় সংকল্পের অভাব কেন হয় মানুষের মধ্যে?
অনেকগুলো কারণ আছে।
তার মধ্যে একটি হলো: অকাজ বা গুরুত্বহীন কাজ।
কাজ অনেক রকম, সবগুলোই কি আপনার জন্যে উপকারী? তা নয়। কাজটি কি তা নির্ধারণ করার আগে অর্থাৎ অভিপ্রায় নির্দিষ্ট করার আগে আপনি বিবেচনা এবং বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে চিন্তা করে দেখুন যে কাজটি করতে চান বলে ভাবছেন। সেটি আপনার জন্যে কতটা উপকার বয়ে আনবে, কি পরিমাণ লাভবান হবেন, আপনি। কাজটাকে কাজের কাজ হতে হবে। তবেই না সেটা করার জন্যে আপনি আগ্রহী হবেন, সংকল্প গ্রহণ করবেন দ্রুত এবং নিখুঁত ভাবে সেটা সম্পন্ন করার জন্যে।