গন্তব্যস্থান থাকলেই সেখানে পৌঁছুবার প্রশ্ন উঠছে। কোথাও পৌঁছুতে হলে কি করতে হয় আপনাকে? হাঁটতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। সাফল্যকে গন্তব্যস্থান মনে করলে রাস্তাটা দুৰ্গম, চড়াই উতরাইবহুল, কণ্টকাকীর্ণ–এরকম মনে হবে। রাস্তাটা দীর্ঘ, এবড়োখেবড়ো, বিপদ-সঙ্কুল হবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর ব্যাপারটা নিরস, কষ্টকর একটা কাজ। কিন্তু সাফল্যকে গন্তব্যস্থান মনে না করে যদি মনে করা হয় ভ্রমণ? কি তারতম্য ঘটছে? একটা। উদাহরণ ব্যবহার করে ব্যাপারটাকে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
ধরুন, কোচযোগে চট্টগ্রাম, ওখান থেকে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে যাবেন। আপনার আনন্দ কি শুরু হবে রাঙ্গামাটিতে পৌঁছুবার পর? মোটেই না। যাবেন এই সিদ্ধান্ত নেবার পর থেকেই আপনি পুলক অনুভব করবেন। অগ্রিম টিকেট কিনতে আপনি বি. আর. টি. সি-র স্টেশনে যাবেন। এই যাওয়াতেও আনন্দ। যাত্রার খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সাথে আলাপ করার সময় অনুভব করবেন রোমাঞ্চ। ব্যাগ-ব্যাগেজ ঠিকঠাক করার সময়ও শিহরণ অনুভব। করবেন। কাপড়-চোপড়, নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিস একটি একটি করে ব্যাগে ভরবেন আর কল্পনায় দেখবেন চট্টগ্রামে পৌঁছে এই শার্টটা গায়ে দিচ্ছেন বা ওই শাড়িটা পরছেন, রাঙ্গামাটি পৌঁছে অমুক জায়গায় যাবেন ওই জুতো জোড়া পায়ে দিয়ে–এসবই আনন্দ জোগাবে আপনাকে। যাত্রার আগে বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ীদের সাথে দেখা করে বিদায় নেবেন। আপনার চারপাশে একটা হাসিখুশির পরিবেশ পাবেন আপনি। হাসি-ঠাট্টা হবে, কারণে অকারণে হোঃ-হোঃ হাসবেন আপনি। কোচ রওনা হবে। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে পরিচয় হবে, গল্পগুজব জমে উঠবে তাদের সাথে। পথের দু’পাশের দৃশ্যাবলী দেখে বৈচিত্র্যের স্বাদ পাবেন। উপভোগ করবেন শ্যামল বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত ধানখেতের হিল্লোল। নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রামে পৌঁছুলেন, তারপর ওখান থেকে রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটিতে পৌঁছুবার সাথে সাথে কি আপনার আনন্দ শেষ হয়ে গেল? কক্ষনো না! মাত্র তো পৌঁছুলেন, থাকবেন বেশ ক’টা দিন। যে-কদিন থাকবেন, আনন্দ আর আনন্দ আর আনন্দ করবেন। এখানে বেড়াবেন, ওখানে বেড়াবেন। কতো কি দেখবেন। এক সময় বেড়ানো শেষ হবে। বেড়ানোর শেষ মানে কি আনন্দেরও শেষ? না। ফেরার সময়ও আনন্দ কম নয়। ফিরে এলেন, কিন্তু স্মৃতিটা কি রইলো না? স্মৃতি রোমন্থন করে এরপরও কি আপনি আনন্দ পাবেন না?
কেন এতো আনন্দ হয়? কারণ, এটা ভ্রমণ। ভ্রমণে একঘেয়েমি নেই। সাফল্যও একটি ভ্রমণ। যে-মুহূর্ত থেকে আপনি সাফল্য লাভ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে-মুহূর্ত থেকে শুরু হলো আপনার ভ্রমণ। এবং ভ্রমণ মানেই শুরু থেকে আনন্দ, রোমাঞ্চ, পুলক এবং শিহরণ।
ভ্রমণে চলুন। আনন্দের ছোঁয়া পাচ্ছেন না প্রস্তাবটা পাওয়া মাত্র? ভ্রমণ শরীর ও মনের জন্যে একটা টনিক। ভ্রমণে আছে নতুন নতুন জিনিস দেখার, শেখার, অর্জন করার অনির্বচনীয় আনন্দ। আছে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। আছে অচেনাকে। চেনার, অজানাকে জানার সুযোগ।
.
বেঁচে থাকার অপর নাম সৃষ্টি
করা সৃষ্টি উৎপাদনশীল। এবং সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের অস্তিত্বের ভিত্তিমূল। মানুষ যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে সৃষ্টি বা উৎপাদনমূলক কাজে লেগে না থাকে, প্রকৃতির আইন কানুনের সাথে তার বিরোধ লেগে যাবে। টিকে থাকাই হয়ে পড়বে দুষ্কর।
শুধুমাত্র সাফল্য অর্জনে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। কোথাও পৌঁছুতে চান খেটেখুটে, গলদঘর্ম হয়ে, চোখকানু বুজে গন্তব্যস্থানের দিকে ছুটলেন, অন্য কোনো দিকে খেয়াল রাখলেন না, পৌঁছানোটাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য, এবং শেষ পর্যন্ত পৌঁছুলেন সেখানে-তারপর? পিছন ফিরে তাকান একবার। দীর্ঘ, দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, কিন্তু চিহ্ন কি রেখে এসেছেন কিছু? কিংবা, সাথে করে কি এনেছেন কিছু যা নিজের তৈরি? আপনার থলেতে কিছু সংগ্রহ করেছেন কি? পথে একটি গাছের চারাও কি পুঁতে আসেননি? এতোদিন ধরে এতো পরিশ্রম করলেন, কিছুই কি উৎপাদন করেননি?
সব প্রশ্নের উত্তর যদি না-সূচক হয়, আপনার সাফল্য লাভে আনন্দ কোথায়?
আসলে সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে হবে। তাতে আনন্দ পাবেন প্রচুর। সৃষ্টিশীল হোন, এগিয়ে যেতে একঘেয়েমির শিকার হতে হবে না। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে উল্লসিত হবেন আপনি শুরু থেকেই।
.
বিশেষ একটি অনুরোধ
অনুরোধ করছিঃ এই বইটি যে বিশেষ ভাবে আপনার জন্যে লেখা হয়েছে, এই কথাটি মনে গেঁথে নিন। বিশেষ করে আপনার জন্যেই লিখেছি এই বই। এর প্রতিটি পরিচ্ছেদ, প্রতিটি প্যারা, সবগুলো বাক্য এবং প্রত্যেকটি শব্দ আপনার উদ্দেশ্যে রচিত। আর কেউ এই বই পড়ছে কি না পড়ছে, দেখার দরকার নেই আপনার। তাদের জন্যে লেখা হয়নি এই বই। আপনার জানা দরকার, এ বইটি লেখা হয়েছে শুধুমাত্র আপনার জন্যে। এ আপনি এবং আমি, আমরা মাত্র দু’জন-কাছেপিঠে আর কেউ নেই। আমি আপনাকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য লাভের সহজতম উপায় জানিয়ে দিচ্ছি। আপনি শিখে নিচ্ছেন।
এবার, বিশেষ একটি অনুরোধ করবো। যে-সব উপায় আপনাকে জানাবো সেগুলো যদি গুরুত্বের সাথে কাজে লাগাতে না চান, দয়া করে এরপর আর একটি লাইনও পড়বেন না। আমি প্রতিশ্রুতি চাই, এই ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে আপনি প্রাচুর্যের রাজ্যে প্রবেশ করবেন। তা নইলে ব্যর্থ হয়ে যাবে এ বই রচনার উদ্দেশ্য।