অন্যের সুখ দেখে আপনি কি ঈর্ষা বোধ করেন? যদি করেন, তাহলে আমি বলবো, বোকামি করেন। কারণ, ঈর্ষা বা হিংসা হলো খুনী, আপনার সুখকে খুন করাই এর প্রধান কাজ।
পরশ্রীকাতরতাও একটা মানসিক ব্যাধি। এই ব্যাধি যদি আপনার মধ্যে থাকে, সুখী হবার কোনো সম্ভাবনাই আপনার নেই, জেনে রাখুন। তাড়াতাড়ি রোগটার হাত থেকে মুক্ত হওয়া দরকার আপনার।
কিভাবে?
উপায়টা সহজ। উপায়টার কথা পরে বলছি। তার আগে আপনাকে জানাতে চাই কেন আপনি পরশ্রীকাতরতায় ভুগছেন।
আপনার চেয়ে ভালো হলে আছে যারা, যারা ভালো খায়-দায়, ভালো রোজগার করে, ভালো কাপড়-চোপড় পরে, গাড়ি চড়ে, বাড়ি কেনে-এরাই কি আপনার ঈর্ষার পাত্র? তা যদি হয়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। সহজেই ওদেরকে হিংসা না করে থাকতে পারবেন আপনি।
সাফল্য অর্জনের পথে যাত্রী আপনি, অচিরেই আপনি পেতে যাচ্ছেন আর্থিক সচ্ছলতা, গাড়ি-বাড়ি, মানসম্মান, সকলের শ্রদ্ধা, নেতৃত্ব এবং সুখ। আপনার হিংসার পাত্র যারা, তাদেরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন আপনি সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে।
সুখী হবার পথে চার নম্বর বাধা: স্বার্থপরতা।
সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেবার প্রবণতা আছে যার মধ্যে অথচ সে-সব জিনিস ব্যবহার বা কাজে লাগাবার প্রয়োজন নেই তার-এই রকম লোককে স্বার্থপর বলে। স্বার্থপর লোক কারো দিকে তো তাকায়ই না, মূলত সে নিজের দিকেও তাকায় না। কোনো জিনিসের বা বিষয়ের মালিক হওয়াটাই তার কাজ, সে। জিনিসের ব্যবহারটা তার কাছে বড় নয়। ফলে সুখী হবার প্রচুর উপকরণ থাকা সত্ত্বেও সেগুলোকে সে কাজে লাগাবার কথা ভাবে না।
স্বার্থপরতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। স্বার্থপর লোক নিতে পারে, দিতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতি শুধু দেয়। বৃক্ষ, ফুল, পাখি, নদী, মাটি, আকাশ-সবাই দাতা। প্রকৃতির দানের সীমা নেই। এ প্রকৃতির নিয়মের সাথে সঙ্গতি রেখে সৃষ্টি হয়েছে বিনিময় প্রথা। তুমি কিছু দাও, বদলে তোমাকে কিছু আমি দেবো-এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। যতো বেশি। দেয়া যায় ততো বেশি পাওয়া সম্ভব। কেউ যদি তার জীবনে খুব বেশি কিছু না। পায়, বুঝে নিতে হবে খুব বেশি কিছু কাউকে সে দিচ্ছেও না। আপনি কি স্বার্থপর কোনো লোককে সুখী হতে দেখেছেন? আমি দেখিনি। প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করা মানে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা। অর্থাৎ স্বার্থপর মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হবে, তার সুখী হওয়া তো পরের কথা।
পাঁচ নম্বর বাধা: ক্ষুদ্রতা বা ভীরুতা।
ক্ষুদ্রতার সাথে স্বার্থপরতার ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে। আত্মবোধ বা বিপরীত ভঙ্গিতে বললে বলতে হয় নিজের সম্পর্কে অতি-সচেতনতাই ক্ষুদ্রতার মূল কারণ। আমরা যদি বিশেষ এক পর্যায়ে উঠে শুধুমাত্র আমাদের সুখ শান্তি সমৃদ্ধির কথা ভাবার বদলে সমাজের সুখ শান্তি সমৃদ্ধির কথা ভাবতে পারি তাহলেই ক্ষুদ্রতার গণ্ডি থেকে স্বাধীনতা এবং উদারতার অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারি।
আমার জন্যে সকলে নয়, সকলের জন্যে আমি-এই রকম একটা মনোভাব গড়ে তুলুন নিজের মধ্যে। তুমি আমার সুখের জন্যে কি করতে পারো’-এর বদলে ভাবুন, তোমার সুখের জতে কি করতে হবে আমাকে?’
আপনাকে মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবে, নিজের স্বার্থ দেখে। এটা মনে রাখলে, মানুষের সাথে মেলামেশা করতে, ওঠাবসা করতে, মানুষের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে কোনোই অসুবিধে হবে
আপনার। মানুষ কি চায় তা আপনি জানেন। সুতরাং, যা চায় তাই করুন। তাকে সাহায্য করুন, সে খুশি হয়ে উঠবে-এবং প্রতিদানও দেবে। মানুষকে আপনি সাহায্য করবেন, কারণ, আপনি তার কাছ থেকে পাবেনও অনেক কিছু।
সুখী হবার পথে ছয় নম্বর বাধা: দুশ্চিন্তা।
দুশ্চিন্তা এবং সুখ পরস্পরের পরম শত্রু। এদের সহাবস্থান সম্ভব নয়। দুশ্চিন্তা যদি সুখের শত্রু হয়, সুখও তেমনি দুশ্চিন্তার শত্রু। আপনি সুখী-এই মনোভাব। নিজের মধ্যে গড়ে তুলুন, দুশ্চিন্তা পালাতে দিশে পাবে না।
দুশ্চিন্তা সময়ের অপব্যয় ঘটায়। দুশ্চিন্তা কিছুই উৎপাদন করে না। দুশ্চিন্তা সমাধান দেবার ক্ষমতাও রাখে না। দুশ্চিন্তার ধর্ম ক্ষয় করা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে ক্ষয় করে, ক্ষয়রোগে আক্রান্ত সেই মানুষ সুখী হবে কিভাবে?
সুখী হবার উপায় নিজেকে সুখী মনে করা। সুখ সম্পর্কে আলোচনা করুন। মানুষের সাথে। নিজেকে সুখী বলে প্রচার করুন। প্রচুর হাসুন, মানুষকে হাসান। এবং আপনি সুখী একথা ভেবে গর্ব অনুভব করুন-দেখবেন সত্যি সত্যি সুখী। একজন মানুষে পরিণত হয়েছেন আপনি।
যেখানেই যান, সাথে করে সুখী সুখী ভাবটা নিয়ে যান। সুখের ভঙ্গি করা সুখী হবার নামান্তর। সুখ আসলে একটা বিশেষ মনোভঙ্গি মাত্র।
যে সুখী হতে চায় সেই সুখী হতে পারে।
০৫. গভীর আগ্রহ
প্রখ্যাত প্রবন্ধকার এমারসন বলেছেন, ‘গভীর আগ্রহ ব্যতীত মহৎ কোনো উদ্দেশ্য এযাবৎ সাধিত হয়নি।’
আগ্রহ শব্দটির অর্থ সবাই জানে, আপনিও জানেন। কিন্তু অনেক শব্দ আছে যার অর্থ মানুষ আবছা এবং আংশিকভাবে জানে, পরিষ্কার এবং সম্পূর্ণভাবে জানে না। আগ্রহ শব্দটির অর্থ আপনি কি পরিষ্কার এবং সম্পূর্ণভাবে জানেন?
সংসদ বাঙ্গালা অভিধান বলছে, আগ্রহ মানে ঝোঁক, ব্যগ্রতা, ঐকান্তিক চেষ্টা বা ইচ্ছা; আসক্তি।