মিসেস ক সুখী হলেন কিন্তু মিসেস খ অসুখী হলেন, একই উপহার পাওয়া সত্ত্বেও…কেন?
গ্রহণ করার মনোভাব এর জন্যে দায়ী। মিসেস ক উপহারটিকে সম্মান এবং প্রীতির প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, উপহারের সামগ্রী তাঁর কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। যে উপহারটি পাঠিয়েছে সে তাকে ভালবাসে, স্নেহ করে-এটা প্রমাণ হয়েছে, এতেই তিনি খুশি এবং আনন্দিত।
ঠিক উল্টোটি ঘটেছে মিসেস খ-এর বেলায়। উপহারটিকে নয়, উপহারের সামগ্রীটিকে তিনি বড় করে দেখছেন। প্যাকেট খোলার পর উপহার সামগ্রী দেখে সামগ্রীর বাজার দর কি হতে পারে, অনুমান করে মন খারাপ হয়ে গেছে তাঁর, ভেবেছেন, এতো সস্তাদরের জিনিস উপহার দেয় কেউ কাউকে!
জিনিস একই গ্রহণ করার মনোভাবের তারতম্য হেতু একই জিনিস পেয়ে একজন সুখী, অপরজন অসুখী। সুখটা জিনিসের মধ্যে নয়-মনের মধ্যে।
মানুষ অসুখী কেন হয়?
বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে অসুখী বলে মনে করে। হয়তো আপনিও নিজেকে সুখী বলে মনে করেন না। অথচ নিজেকে আপনার অসুখী বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
কেন আপনি নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন? কখনও ভেবেছেন কি?
নিজেকে অসুখী মনে করার নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কয়েকটা কারণ আছে। সেই কারণগুলো কি আপনার জানা আছে? আমার বিশ্বাস, জানা নেই আপনার।
আসুন, কেন আপনি নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন জেনে নেয়া যাক। কারণগুলো জানা থাকলে উপকৃত হবেন, সুখী হবার রাস্তাটা পরিষ্কার করে ফেলতে পারবেন।
নিজেকে অসুখী মনে করার সাধারণ কয়েকটি কারণের কথা এখানে আমি উল্লেখ করছি। আরো অনেক কারণ আছে, সহজেই সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন আপনি।
কারণ সমূহ: ১) অপরাধবোধ। ২) আত্মগ্লানি। ৩) পরশ্রীকাতরতা। ৪) স্বার্থপরতা। ৫) ভীরুতা। ৬) দুশ্চিন্তা।
এই ছয়টা কারণই প্রধান। আসুন, এক এক করে প্রত্যেকটি কারণ আলোচনা করি। কারণগুলোকে বাধা বলে ধরে নিতে পারি আমরা, সুখী হবার পথে। বাধাগুলোকে দূর করা সম্পর্কে আলোচনা করবো আমরা।
প্রথমে ধরুন, এক নম্বর বাধার্টিকে: অপরাধবোধ।
আপনি জানেন, দেহের যেমন রোগ আছে তেমনি মনেরও নানারকম রোগ আছে। অপরাধবোধ একটি রোগ। মনের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ জড়তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সচেতন বা অচেতনভাবে সে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে যে সুখ জিনিসটা তার জন্যে নয়। সব ভুলে নিজেকে কখনও যদি সে হাসতে আবিষ্কার করে, আচমকা থামিয়ে দেয় সেই হাসি, হাসি-খুশি-আনন্দ-সুখ তার জন্যে নয়, মনে পড়ে যায় কথাটা।
অপরাধবোধ মানুষকে কুরে কুরে খায়। দুর্বল, বিষণ্ণ করে তোলে।
অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবার সহজ দুটি উপায় হলো, এক: যদি সম্ভব হয় যে-কারণে অপরাধবোধ জন্মেছে সেই কারণটাকে সংশোধন বা উৎপাটন করুন। দুই: যে ঘটনা ঘটে যাবার ফলে নিজেকে আপনি অপরাধী বলে মনে করছেন তা যদি সংশোধনের অতীত হয় তাহলে নিজেকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব কম আছে যে তার জীবনে গুরুতর ধরনের কোনো না কোনো অপরাধ করেনি। অপরাধের গুরুত্ত্বও আবার এক একজনের কাছে এক এক রকম। ক্রোধবশত কাউকে প্রচণ্ডভাবে আহত করেও কেউ কেউ অপরাধবোধে ভোগে না, নিজেকে ক্ষমা করে দিতে পারে বলে। এই লোক নিজেকে তো ক্ষমা করেই, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞাও গ্রহণ করে। আসলে প্রথমে সে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে, তারপর নিজেকে ক্ষমা করে দেয়। এই প্রতিজ্ঞাটাই ক্ষমা করতে সাহায্য করে তাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন: যে অপরাধ করে ফেলেছেন তার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ নিজের বিরুদ্ধে যে-সব কঠোর ব্যবস্থা নেবার কথা ভেবেছেন, সব পরিহার করুন। প্রতিজ্ঞা করুন, নিজেকে ক্ষয় হতে দেবেন না, অসুখী হতে দেবেন না, ধ্বংস হতে দেবেন না এবং যে ভুল করেছেন সেটাকে একটা শিক্ষা ধরে নিয়ে তার দ্বারা
ভবিষ্যৎ জীবনে উপকার পাবার চেষ্টা করবেন, নিজেকে গড়ে তুলবেন নিরপরাধ, সুনাগরিক, সুখী একজন মানুষ হিসেবে।
সুখী হবার পথে দু’নম্বর বাধা: আত্মগ্লানি।
যে-লোক করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে আছে সে আত্মগ্লানিতে ভুগছে, বলা যেতে পারে। অনেক সময় কেউ কেউ অকারণে নিজেকে করুণার পাত্র বলে মনে করে।
আপনি যদি আত্মগ্লানিতে ভুগতে না চান, মাথা চাড়া দিয়ে উঠুন, নিজেকে জানিয়ে দিন, আমি কারো দয়া গ্রহণ করছি না। আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি পাবার দুটো উপায় রয়েছে। এক: নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করা। খাটবেন, উপার্জন করবেন, কারো দয়ার দান নেবেন না। দুই: পরিশ্রমের বিনিময়ে বা বুদ্ধি খরচ করে যা পাচ্ছেন তা আপনার প্রাপ্য, কারো দয়ার দান নয় এই কথাটা বিশ্বাস করা।
সহানুভূতির কাঙাল হবেন না। এই কাঙালেপনা সুখী হবার পথে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কখনও যদি বিপদে পড়ে কারো সাহায্য গ্রহণ করার। দরকার পড়ে, গ্রহণ করবেন বৈকি-কিন্তু সে জন্যে আত্মগ্লানিতে ভোগার দরকার। নেই। বিপদে পড়েছেন, তাই সাহায্য নিচ্ছেন, সবাই নেয়। বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার পর সেই সাহায্য ফিরিয়ে দেবেন-পরিশোধ হয়ে যাবে ঋণ। এই রকম সাহায্যকে দয়া বলে মনে করবেন না। মনে করবেন ধার নিচ্ছেন সাহায্য, পরিশোধ করে দেবেন যথাসময়ে।
তিন নম্বর বাধাটি হলো: পরশ্রীকাতরতা।