বেন সুইটল্যাণ্ড আপনাকে বলছেন, নিজেকে তুমি সফল একজন বলে মনে করো, কারণ সফল হবার মনোভাব এসেছে তোমার এবং এই মনোভাবই সফলতা আনতে যাচ্ছে।
আপনি সাফল্য লাভ করেছেন। কারণ, সাফল্য লাভ করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছেন আপনি। দুই লক্ষ টাকার চেক পাবার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ এটা। চেকটা আপনাকে দিচ্ছে মাত্র দুই লক্ষ টাকা, তাছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু সাফল্যলাভ করার মনোভাব আপনাকে দেবে, গাড়ি, বাড়ি, স্বাচ্ছন্দ্য, সুখ, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য, উপভোগ্য জীবন। তাহলে কেন সুখী হবেন না এখুনি?
আপনি কি অবসর সময়ে হাতের কাছে কাগজ কলম থাকলে আঁক কাটেন? বইয়ের ব্যাক কাভারে, খবরের কাগজের গায়ে, লেটার প্যাডে খামোকা দাগ কাটেন? এই বদভ্যাসটাকে কাজে লাগাবার উপায় বের করেছেন নেপোলিয়ান হীল। তিনি বলছেন, অবসর সময়ে হাতের কাছে কাগজ কলম থাকলে অর্থহীন। দাগ কাটার বদলে কিংবা বারবার সর্বত্র নিজের নাম লেখার বদলে লিখুন, সুখ
এই শব্দটি। বিভিন্ন ভঙ্গিতে লিখুন শব্দটি। ছোটো করে লিখুন, বড় করে লিখুন, গোটা গোটা অক্ষরে লিখুন, মোটা করে লিখুন, দ্রুত লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন। ইংরেজিতে লিখুন, বাংলায় লিখুন যতোরকম ভাবে সম্ভব সুযোগ পেলেই লিখুন-‘সুখ’। কিংবা ‘সাফল্য’। কিংবা ‘সমৃদ্ধি’। যতোভাবে লেখা যায় ততোরকম ভাবে বারবার লিখুন-আমি সুখী, আমি সফল, আমি সমৃদ্ধ।
যে বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে চান সে বিষয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন–এই রকম কল্পনা করবেন আপনি আমি সফল’ শব্দ দুটো লেখার সময়।
নিয়ম-কানুন জানিয়ে দেয়া হলো। যদি পালন করতে পারেন, সাফল্যলাভ করবেন আপনি, কোনো সন্দেহ নেই।
০৪. সুখ
সাফল্য চান আপনি। কেন চান?
সাফল্য সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা আছে কিনা তা কখনও খতিয়ে ভেবে দেখেছেন কি? অনেকে মনে করে সাফল্য মানে টাকা, যার প্রচুর টাকা আছে সেই সফল। আসলে কি তাই?
টাকা থাকলেই কিন্তু সুখী হওয়া যায় না। টাকা মানেই সুখ নয়। টাকা মানেই যদি সুখ না হয় তাহলে সাফল্য মানেই টাকা হতে পারে না। কারণ, সাফল্য সুখেরই নামান্তর। যে সুখী সেই সফল। সাফল্যলাভ মানে সুখ লাভ।
আপনি সাফল্যলাভ করতে চান-কারণ কি? কারণ একটিই, আপনি সুখী হতে চান।
সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সুখ শব্দের অর্থ দিচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম, তৃপ্তি, আনন্দ, হর্ষ-সবগুলোই ভালো হলে থাকার অর্থ প্রকাশ করছে।
এমনিতেই মানুষের জীবন অত্যন্ত কষ্টকর। বেঁচে থাকাটা সত্যি কঠিন একটা ব্যাপার। কষ্ট লাঘবের জন্যে আপনাকে আহোরাত্র খাটতে হচ্ছে, প্রাণপণ চেষ্টা করতে হচ্ছে। সংখ্যা সীমাহীন কষ্টগুলোকে দুর করার নামই জীবন-যুদ্ধ।
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে চায়। যুদ্ধ করার প্রেরণা পায় কোত্থেকে? মানুষের মধ্যে রয়েছে আরাম পাবার ইচ্ছা। তৃপ্তি পাবার সাধ, আনন্দবোধ করার লোভ, হর্ষ লাভ করার শখ। অর্থাৎ, মানুষ সুখ চায়। সুখ পাবার ব্যাকুলতাই তাকে প্রেরণা যোগায়।
সুখ সবাই চায়। কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় এই একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসটি?
ছুটি উপলক্ষে শহরের মানুষ বেড়াতে যায় কক্সবাজারে, রাঙ্গামাটিতে, যেখানে যার ইচ্ছা। যারা শহর ছাড়তে পারে না তারা ছুটির ক’টা দিন সিনেমা দেখে, পার্কে বেড়ায়, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে শহরের আশপাশে পিকনিক করে। কেন মানুষ এসব করে? কেন মানুষ বেড়াতে বের হয়, সিনেমা দেখে, পিকনিক করে? জি একটাই উত্তর, মানুষ এসব করে শুধুমাত্র সুখ খুঁজে পাবার জন্যে। সুখের সন্ধানে মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে। খ্যাপা যেমন পরশপাথর খুঁজে মরে তেমনি সুখকে খুঁজছে মানুষ।
কিন্তু মুশকিল হলো, সুখ কিনতে পাওয়া যায় না, কুড়িয়েও পাওয়া যায় না। এমনকি সুখ ভাড়ায়ও পাওয়া যায় না। হাজার হাজার মাইল দূরে যান সুখের সন্ধানে, লক্ষ-কোটি মাইল দূরে যান-পাবেন না তার সন্ধান, যদি আপনি আপনার সাথে সুখকে সাথী করে নিয়ে না যান। ( সুখকে খুজছেন খামোকা, কারণ তাকে খোঁজার দরকারই নেই, সে তো রয়েছে আপনারই মধ্যে। সুখ আপনার মধ্যেই বসবাস করছে। তাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেটা আপনার দোষ। তাকে যদি দেখতে পেতে চান, দেখা দেবে সে সাথে সাথে। চাইলেই হয়।
সুখের অস্তিত্ব অনুভব করুন নিজের মধ্যে। তাকে স্বীকৃতি দিন।
আপনার সুখ মানুষ বা বস্তুর উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে মানুষ এবং বস্তুর প্রতি আপনার মনোভাবের উপর। উদাহরণস্বরূপ: একই পরিস্থিতিতে একজন হয়তো সন্তুষ্ট এবং খুশি থাকলো, অপরজন হয়তো অনুভব করলো তার বিষণ্ণ হবার যথেষ্ট কারণ বর্তমান রয়েছে। সহজ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থিত করছি।
মিসেস ক এবং মিসেস খ-দুটো চরিত্র। নেপথ্য থেকে অপর এক চরিত্র মিসেস ক এবং মিসেস খ-কে কিছু উপহার পাঠালো। দুটো উপহারের প্যাকেট। প্যাকেট দুটোয় হুবহু একই উপহার সামগ্রী রয়েছে।
মিসেস ক প্যাকেটটি খুলে উপহার সামগ্রী দেখলেন। উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হলেন তিনি। উপহার সামগ্রী তাঁকে অত্যন্ত আনন্দ দান করেছে। সুখী হয়েছেন তিনি।
ওদিকে, মিসেস খ-এর উপহার মিসেস ক-এর উপহারের ডুপ্লিকেট কপি হওয়া সত্ত্বেও মুখ ভার করলেন তিনি মোটেই পছন্দ হয়নি এই উপহার। তার মনে আনন্দের উদ্রেক হলো না মোটেই। অসন্তোষ অনুভব করলেন তিনি, অসুখী বোধ করলেন।