আপনার জীবনেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে, আপনি সাফল্যের যাত্রা পথে ভ্রমণে বেরুচ্ছেন, এই ঘটনাটা আপনার জীবনে রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক হয়ে থাকবে। বিশ্বাস করুন, সাফল্য লাভ করতে শুরু করেছেন আপনি। এই ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন নিজের ভিতর।
আগেই বলেছি, শতকরা পঁচানব্বই জন লোক নেতিবাচক মনোভাবের। অধিকারী। জন্মসূত্রে এই মনোভাবের অধিকারী নয় তারা। বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পরও
এই মনোভাব তাদের মনে শিকড় গাড়েনি। তারা যখন ছোটো ছিলো তখনই তাদের অবচেতন মনে এই নেতিবাচক মনোভাবের বীজ বপন করে দেয়া হয়েছে।
ছোটো বাচ্চা যখন নবাগত আগন্তুকের সামনে যেতে ইতস্তত করে, গুরুজনরা চোখ-কান বুজে মন্তব্য করেন, ‘ও বড্ড ভীরু!’ এভাবেই বাচ্চার অবচেতন মনে ভীরুতার বিষ প্রবেশ করিয়ে দেয়া হলো। যে বিষ সাধারণত: বাচ্চার বাবা হয়ে। যাবার পরও, অর্থাৎ, আজীবন থাকবে তার সাথে।
আমরা গরীব মানুষ, টাকা রোজগার করা সহজ কাজ নয়, সকলের ভাগ্যে সব হয় না-এই ধরনের নেতিবাচক বাক্য শিশুর মনে স্থায়ী ভাবে দাগ কাটে, সে নেতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হয়ে ওঠে।
কাম্যবস্তু অর্জন করার জন্যে হয়তো একটা পরিকল্পনা তৈরি করলেন। কিন্তু। মনটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকছে-কানে কে যেন ফিসফিস করে বলছে, ‘চেষ্টা করে লাভ কি, ব্যর্থ তো হবেই।’
কে বলছে কথাটা আপনাকে? আপনারই অবচেতন মন। আপনি যখন ছোটো ছিলেন, আপনাকে কেউ না কেউ এই ধরনের সাবধানবাণী শুনিয়েছিল নিশ্চয়ই। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন কথাটা। কিন্তু আপনার অবচেতন মন ভোলেনি। সে যা শোনে তা ভোলে না। তাকে যা শেখানো হয় সে তাই শেখায় পরবর্তীকালে।
সাফল্যের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, মন থেকে নেতিবাচক মনোভাব সমূলে উৎপাটন করতে হবে। ইতিবাচক, হ্যাঁ-সূচক, আশাব্যঞ্জক এবং গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। আপনি যদি ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হতে পারেন, শতকরা পাঁচজন মানুষের যে দুর্লভ গুণ আছে আপনিও সেই গুণের অধিকারী হবেন। যে-কোনো কাম্যবস্তু অর্জন করাটা তখন আপনার কাছে অসম্ভব বলে মনে হবে না। যা ইচ্ছা তাই চাইতে পারেন এবং পেতে পারেন। যখন যেখানে ইচ্ছা যেতে পারবেন। আপনি সুখ অনুভব করবেন-সামগ্রিক এবং সাচ্চা অর্থে আপনি হবেন সুখী মানুষদের একজন।
নিজেকে আপনি ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী বলে ভাবতে শুরু করুন। তা ভাবতে পারলে চরম প্রয়োজনীয় এবং কঠিনতম কাজটি শেষ হলো, ধরে নিন।
আপনি সাফল্য লাভ করতে চান, ভালো কথা। কিন্তু একটি শর্ত আছে। মানবেন তো? যদি মানেন, সফল আপনি হবেনই। শর্তটা হলো, আপনাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে- ‘আমি সফল হতে শুরু করেছি। সাফল্য আসতে শুরু করেছে আমার জীবনে।’
ব্যাঙ্কে টাকা জমার জন্যে অপেক্ষা করবার দরকার নেই আপনার, নতুন বাড়ি গাড়ি কিনে তারপর নিজেকে সফল মনে করবার দরকার নেই। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক, কেন আপনি নিজেকে এখুনি সফল একজন বলে মেনে নেবেন, বিশ্বাস করবেন।
ধরুন, আপনি একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, টাকা পয়সা তেমন। কিছুই নেই আপনার। হঠাৎ করে রেডক্রসের লটারির প্রথম পুরস্কারটি পেয়ে। গেলেন। দু’লাখ টাকার প্রাইজ! পেয়ে তো আপনি আনন্দে আটখানা হবেন, নিজেকে একজন ধনী মানুষ বলে ভাবতে শুরু করবেন, তাই না? কিন্তু, চিন্তা করে। দেখুন তো, কি এমন জিনিস পেয়েছেন আপনি যা খবরের কাগজে প্রকাশিত। লটারির নাম্বারের সাথে আপনার কেনা টিকেটের নাম্বার মিলে যাবার আগে ছিলো। না? নাম্বারটা শুধু মিলেছে, এর বেশি কিছুই তো ঘটেনি। টাকা তো পাননি এখনও? তাহলে এতো লাফালাফি কিসের, কিসের এতো আনন্দ?
নাম্বারটা মিলেছে মাত্র। আপনাকে রেডক্রস কর্তপক্ষের কাছে আগামী এক মাসের মধ্যে টিকেটসহ লিখিত আবেদন জানাতে হবে টাকা পাবার জন্যে। কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনপত্র পড়বেন, ডেকে পাঠাবেন আপনাকে চিঠির মারফত, দেখতে চাইবেন তারা আপনার টিকেটটা, পরীক্ষা করবেন টিকেটটা নকল কিনা, যাচাই করে দেখবেন টিকেট বিক্রি করার অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক বা পোস্ট-অফিস থেকে টিকেটটা আপনি কিনেছিলেন কিনা-এতোসব কর্মকাণ্ড সমাপ্ত হবার পর তারা একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন-সেই অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হবে আপনি প্রাইজ পেয়েছেন এবং আপনাকে তারা একটি দু’লাখ টাকার চেক দেবেন।
চেক পেলেও সেটি তখুনি আপনি ভাঙাতে পারছেন না। প্রথমে নিজের নামে একটা একাউন্ট খুলতে হবে আপনাকে। সেই একাউন্টে জমা দিতে হবে চেকটি। চেক বই পেতে আরো কদিন সময় লাগতে পারে। চেক বই পেলে আপনি টাকা। তুলতে পারবেন। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার মধ্যে তেমন কিছু আনন্দ নেই। টাকা। তুলে কি করবেন? টাকা তো খাবার জিনিস নয়। টাকা থাকা না থাকা তো সমানই, যদি না তা আপনি পছন্দসই জিনিস কিনে উপভোগ করেন।
লটারির টিকেটের নাম্বার মিলে যাওয়াতে আপনি আনন্দে লাফাতে শুরু করে দিচ্ছেন, কিন্তু টাকা পেতে, টাকা পেয়ে খরচ করে উপভোগ করতে অনেক সময়ের দরকার-সে কথা ভেবে তো আপনার আনন্দে ভাটা পড়ছে না। টাকা না পেলেও নাম্বার মিলেছে জানতে পেরেই আপনি নিজেকে একজন ধনী মানুষ বলে মনে করছেন।