সুতরাং, ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হোন। সুফল হাতে হাতে ফলবে।
একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক অলকেশ বিহারীর কথা ধরুন। মাত্র বছর কয়েক আগে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ‘চার আনা’, ‘চার আনা’, ‘চার আনা’, ‘যে-কোনো বই চার আনা’–গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতো। তখনও দেখেছি ওকে, এখনও দেখছি। ফুটপাথের হকার ছিলো, তখনও বলতো, হবে। কি হবে? বলতো গাড়ি হবে, বাড়ি হবে, পত্রিকা হবে, পাবলিকেশন হবে, সুখ হবে, সম্মান হবে, টাকা হবে, পেপটিক আলসার ভালো হবে।
হবে, হবেই হবে-এই ছিলো অলকেশের মূলমন্ত্র। নেতিবাচক বক্তব্য তার মুখ থেকে কেউ কখনো শোনেনি। ফলাফল?
মাসিক একটি পত্রিকার মালিক সে এখন। বাংলাবাজারে বইয়ের দোকান আছে। শতাধিক বইয়ের প্রকাশক। মাসিক আয় দশ হাজার টাকার উপর। চারটে বড় বড় সুসজ্জিত কামরা নিয়ে তার অফিস। নতুন আরো একটি পত্রিকা বের করার জন্যে ডিক্লারেশন চেয়েছে, পেলো বলে। প্রচুর জমি কিনেছে। বাড়িতে টিভি, থ্রী-ইন-ওয়ান, রেডিও, ফ্রিজ, দামী আসবাবপত্র, মুভি ক্যামেরা, প্রজেক্টর-ভালো থাকতে হলে যা যা দরকার প্রায় সব উপকরণই সংগ্রহ করেছে সে ইতিমধ্যে। শুনেছি, শিগগিরই গাড়ি কিনবে একটা।
প্রায় নিরক্ষর যে, বাল্য এবং কৈশোর কাল দুর্যোগপূর্ণ যার, ক্লেদাক্ত পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে যার বয়স বেড়েছে-তার এরকম সাফল্যের কারণ কি?– ইতিবাচক মনোভাব। হবে, হবেই হবে-এই ছোট্ট অথচ যাদুকরী শব্দ তিনটিই অলকেশের সাফল্যের একমাত্র গোপনসূত্র।
সাফল্যের পথে ভ্রমণে বেরুবার আগে আপনার কাছে দুটি অনুরোধ করবো আমি। এক, অতীতের স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ভুলে যান। অতীতের ব্যর্থতার জন্যে মনে দুঃখ পুষে রাখা দরকার নেই। কারণ, আপনার জীবনের সব আশা এবং সব রঙিন স্বপ্নই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আরো পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, এক এক করে আপনার কাম্যবস্তু পেতে শুরু করেছেন আপনি।– হ্যাঁ, পেতে শুরু করেছেন, কোনো সন্দেহ নেই এতে। পাবার জন্যে কি কি করতে হবে, জেনে ফেলেছেন আপনি, তাই না? যা যা করতে হবে, করতে শুরু করেছেন। কি দাঁড়ালো? পেতে যাচ্ছেন আপনি আপনার কাম্য-বস্তু, কোনো বাধা নেই আর, ঠিক?
কেউ যদি আশপাশে না থাকে, আমার কথায় সায় দিন, বলুন, বেশ জোরে বলুন–ঠিক।
দুই, তৃতীয় পরিচ্ছেদ শুরু হবে এরপর। কিন্তু তৃতীয় পরিচ্ছেদে যাবার আগে। পিছনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন। প্রত্যেকটি প্যারাগ্রাফ পড়ুন। প্রতিটি বাক্যের অর্থ সঠিকভাবে আপনি হৃদয়ঙ্গম করেছেন কিনা। পরীক্ষা করুন। কোনো বক্তব্য যদি অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য বলে মনে হয়, বারবার পড়ুন সেই অংশটা। যতক্ষণ না সম্পূর্ণ, পরিষ্কার অর্থটা বুঝতে পারেন ততোক্ষণ পড়ুন, বুঝুন। কারণ সাফল্যের চাবিকাঠি রয়েছে প্রথম দুটো পরিচ্ছেদেই। এরপর সমস্তই ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।
০৩. সফল হতে শুরু করেছি
আমেরিকার কন্সালটিং সাইকোলজিস্ট এবং লেখক বেন সুইটল্যাণ্ড সমুদ্রপথে ভ্রমণ করছিলেন। জাহাজের ডেকে পূর্ব পরিচিত একজন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিকের সাথে তাঁর দেখা। এই ভদ্রলোকের বিস্ময়কর সাফল্য লাভের ইতিহাস জানতেন বেন সুইটল্যাণ্ড ভদ্রলোকের লক্ষ লক্ষ বিঘা সম্পত্তি আছে, ইউরোপের কোটিপতিদের একজন তিনি।
গল্পে মেতে গেলেন দুজনে। এক সুযোগে ভদ্রলোককে প্রশ্ন করলেন বেন। সুইটল্যাণ্ড, ‘তোমার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনা কি? প্রথম মিলিয়ন ডলার ব্যাঙ্কে জমা হলো যখন-সেটাই কি তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক ঘটনা?’
কোটিপতি দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দার্শনিক ভঙ্গিতে বললেন, ‘না, বেন, প্রচুর টাকার মালিক হবার পর সে ঘটনা ঘটেনি, ঘটনাটা ঘটেছিল প্রথম যখন আমি টাকা রোজগার করতে শুরু করি।’
সাধারণ এক মানুষ ছিলেন এই ভদ্রলোক। স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে কায়ক্লেশে দিন কাটাতেন। নিজের বাড়ি গাড়ি কিছুই ছিলো না। অতিরিক্ত রোজগার করার ইচ্ছা থাকলেও, মনের মতো কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না। একসময় বাজারে এলো। নতুন একটা আইটেম। জিনিসটা আর কিছু নয়, নতুন একটা গায়ে মাখার সাবান। বাজারে নামকরা টয়লেট সোপ প্রচুর ছিলো। একচেটিয়া বাজার সেগুলোর। নতুন। এই সাবানের বাজার পাবার কোনো কারণই দেখতে পেলো না কেউ। কিন্তু ওই ভদ্রলোক নিজে ওই নতুন সাবান ব্যবহার করতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, এটি অন্য নাম-করা যে-কোনো ভালো সাবানের চেয়ে কোনো অংশে নিম্নমানের নয়, বরং এর সুগন্ধটা আরো ভালো এবং দামও অপেক্ষাকৃত কম।
সরাসরি নতুন সারান কোম্পানির অফিসে গিয়ে হাজির হলেন তিনি। আলোচনা, দর কষাকষি করে শহরে বিক্রি করার জন্যে নতুন সাবানটার এজেন্সী নিয়ে নিলেন। প্রথম প্রথম ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। নতুন জিনিস, কেউ সহজে কিনতে চায় না। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিলো, এই সাবানকে প্রত্যাখ্যান করা
শহরবাসীর পক্ষে সম্ভব নয়। দু’দিন আগে বা পরে এর কদর বুঝবে সবাই।, ঘটলও তাই। নতুন সাবানটা মাসকয়েকের মধ্যে একচেটিয়া ভাবে বাজার। দখল করে ফেললো। ভদ্রলোক পয়সা কামাতে শুরু করলেন। এই যে অতিরিক্ত পয়সা কামাবার ঘটনা, এই ঘটনাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক, রোমাঞ্চকর ঘটনা। প্রথম পর্যায়ের এই অ রিক্ত টাকা দিয়ে তিনি কেনেন স্ত্রীর জন্যে পোশাক, ছেলে-মেয়েদের জন্যে খেলনা, বাড়ির জন্যে টিভি, ফার্নিচার, গাড়ি-এসবই রোমাঞ্চকর ঘটনা তাঁর জীবনের। অর্থাৎ পরিবর্তনের সূচনাটাই আনন্দদায়ক, রোমাঞ্চকর।