এরপর মাত্র চারদিন পর ফিরে এলো ও। বললো, সকলের কাছে যাবার দরকার পড়ে, মাত্র চারজনের কাছে গিয়েই পেয়েছি চার হাজার টাকা। চেয়েছিলাম দুশো করেই কিন্তু আমার পরিকল্পনা শুনে চারজনই দিয়েছে এক হাজার টাকা করে।
দোকানটা এককোণায় পড়ে গেছে। খুব একটা ভালো বেচাকেনা হবার কথা নয় ওখানে। কিন্তু ওর উদ্যম, পরিশ্রম এবং বিক্রি বাড়াবার নিত্য নতুন কৌশল। বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাচ্ছে। আশাতীত বেচাকেনা করছে ও।
এটা একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শেখরের মধ্যে সব ছিলো, ছিলো না শুধু ‘আমি করবো’ এই সংকল্প। এই সংকল্পের অভাবটাই ওকে ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতির মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল।
সংকল্পবদ্ধ হয় ও এবং সেই সাথে রচনা করে একটা নিখুঁত পরিকল্পনা। যার ফল, একটি চালু বইয়ের দোকান, একটি লাভজনক ব্যবসা।
ওর মতো সফল হবেন আপনিও, যদি ওর পদ্ধতিটা গ্রহণ করেন। ভ্রমণের পরিকল্পনাটা প্রচুর খেটে তৈরি করুন, আপনাকে আটকায় এমন কেউ জন্মায়নি। এখনও পৃথিবীতে।
.
গোপনসূত্র বা প্রত্যক্ষদর্শন
প্রত্যক্ষদর্শন এখন একটি প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক কৌশল হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবী বিখ্যাত আধুনিক মনস্তত্ত্ববিদরা প্রত্যক্ষদর্শনের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, যা পেতে চাও তার ছবি দেখতে হবে, মনে গেঁথে নিতে হবে তার চেহারা।
প্রত্যক্ষদর্শন নতুন কোনো ব্যাপারও নয়। প্রাচীনকালের মানুষও কাম্যবস্তুর ছবি আঁকতো গুহার দেয়ালে, কল্পনা করতে হত্যা করেছে সে বাইসনটাকে। কোনো কিশোর হয়তো স্বপ্ন দেখতো সে বড় হয়ে যোদ্ধা হবে। রণক্ষেত্রে যোদ্ধার পোশাক পরে, অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখতে পেতো সে নিজেকে, মানসপটে। রাজপুত্র স্বপ্ন দেখতো অমুক রাজার মেয়ে, রাজকুমারী চপলাকে সে। বিয়ে করবে। সে রাজকুমারীকে চাক্ষুষ করতো মনের পর্দায়। আজকের মানুষও কাম্যবস্তুর স্বপ্ন দেখে। মনের পর্দায় দেখার সাথে যোগ হয়েছে খাতার পাতায় দেখা।
বইটা বন্ধ করে বাড়ি থেকে বেরোন, দোকান থেকে কিনে আনুন একটা বাইণ্ডিং করা খাতা। আর যদি ওরকম একটা খাতা হাতের কাছে থকে, তাহলে তো কথাই নেই। এখুনি বসে পড়ুন কাজে। গোপন সূত্র দিচ্ছি, লিখে নিন। যাদুর মতো কাজ দেবে এই সূত্র।
এই খাতাটাকে আপনি রোমাঞ্চকর এক ছবির খাতায় পরিণত করবেন। কাম্যবস্তুর ছবি সংগ্রহ করুন এক এক করে, প্রত্যেকটি ছবি খাতার পৃষ্ঠায় এক এক করে আলাদা আলাদা ভাবে আঠা দিয়ে সেঁটে দিন। নতুন, সুন্দর একটি বাড়ি চাই আপনার। কোনো ডিজাইনারকে দিয়ে মনের মতো একটা বাড়ির নকশা আঁকিয়ে নিন। সেই নকশাটা খাতার পৃষ্ঠায় লাগান। বাড়িটার সামনে, পিছনে, পাশে যদি সুন্দর বাগান, লেক, খেলার মাঠ ইত্যাদি থাকে, সেগুলোও যেন ডিজাইনের মধ্যে স্থান পায়।
নতুন একটা গাড়ি, হোক না আপনার দু’নম্বর কাম্যবস্তু। যে মডেলের গাড়ি চান, সংগ্রহ করুন তার একটা ছবি, তারপর খাতার দু’নম্বর পৃষ্ঠায় আঠা দিয়ে সাটুন সেই ছবি।
একটা বিখ্যাত কোম্পানির টেলিভিশন সেট যদি হয় আপনার তিন নম্বর কাম্যবস্তু, যোগাড় করুন সেই কোম্পানির টিভি সেটের একটা ছবি, খাতার তিন নম্বর পৃষ্ঠায় আটকান এটাও। আর কি? আর যা যা দরকার সংগ্রহ করুন সবগুলোর একটা করে ছবি এবং খাতায় লাগান আঠা দিয়ে।
বিদেশ ভ্রমণ করতে চান, যেতে চান লণ্ডন, নিউ ইয়র্ক বা কায়রোতে? বেশ তো, সংগ্রহ করুন যে-দেশে যেতে চান সে-দেশের রাজধানীর একটা বিখ্যাত এলাকার ফটো। সেটাকেও খাতার পৃষ্ঠায় স্থান দিন।
প্রশ্ন করবেন, যে জিনিস আমি চাই সেই জিনিসের ছবি সংগ্রহ করলেই কি তা আমি পাবো?
এর উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, পাবেন। আপনি যদি কোনো জিনিস অন্তর দিয়ে চান সে জিনিস কিভাবে যেন পেয়ে যান। এই রকমটি সব মানুষের বেলাতেই ঘটে। চাইলেই হয়, চাওয়ার মধ্যে আন্তরিকতা ও গভীরতা থাকলে, তা পাবেনই।
খাতায় ছবি সাঁটলেই কিন্তু কাজ হচ্ছে না। প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রথম কাজ হবে ড্রয়ার থেকে বা তোশকের নিচ থেকে খাতাটা টেনে বের করে পাতা ওল্টানো। প্রত্যেকটি ছবি, নকশা বা ফটোর দিকে তাকাবেন আপনি। একটি ছবির দিকে কমপক্ষে দেড় মিনিট, ঊর্ধ্বে পাঁচ মিনিট করে তাকিয়ে থাকতে হবে। যতো বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন ততোই ভালো ফল লাভের আশা। ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকার সময় কক্ষনো ভাববেন না যে ছবির এই জিনিসটি পাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার বা পেলে ভালো হয় কিংবা ওটা পেলে আমার আশা পূরণ হয়। ছবিটির দিকে দৃষ্টি রেখে আপনি ভাববেন, ওটা আমার। ওটার একচ্ছত্র অধিপতি হতে যাচ্ছি আমি। জিনিসটাকে আমার জন্যে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে।
এ কাজ আমার দ্বারা হবে না, জিনিসটা পাবার আশা নেই, আশা করে লাভ কি, জানিই তো কপাল খারাপ, সে যোগ্যতা আমার নেই, পারবো না, করবো না, যেমনটি চাই তেমনটি ঘটবে না-আপনি কদাচ না-সূচক বাক্য উচ্চারণ করবেন না। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনার জন্যে হারাম।
ইতিবাচক মনোভাবের সুফল হলো, আপনার অবচেতন মনকে আগে-ভাগেই মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন আপনি, অমুক কাজটা করবো বলে ভেবেছি, সুযোগ এলে খবর দিয়ে আমাকে, সাহায্য কোরো।
অবচেতন মনকে গুরুত্ব দেয়া দরকার আপনার। আপনি সচেতনভাবে যা করার পরিকল্পনা করেন আপনার অবচেতন মন আপনাকে সেই কাজ সম্পন্ন করার কাজে পরম বন্ধুর মতো সাহায্য করতে পারে।