প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী–পুরোহিত ডক্টর নরম্যান ভিনসেন্ট পীলের মতে, ভালোবাসা বা প্রেম হলো উৎসাহের সবচেয়ে বড় উৎসস্থল। একজন মানুষ তার স্ত্রীকে গভীরভাবে ভালোবাসে, সে তার স্ত্রীকে সুখী করার জন্যে, খুশি করার জন্যে বিস্ময়কর সব বস্তুগত, আদর্শগত উপকরণ সংগ্রহে উৎসাহ বোধে সর্বদা আপ্লুত থাকবে।
খ্যাতি, দক্ষতা, যোগ্যতা, মর্যাদা, সৌন্দর্য এগুলোর প্রতি ভালোবাসা থাকলে অঢেল উৎসাহ আসে এগোবার কাজে।
আপনি নেতৃত্ব চান, চান সাধারণ মানুষের চেয়ে উপরে উঠতে, চান সবাই আপনাকে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখুক, শ্রদ্ধা করুক-এই ইচ্ছা, এই চাওয়া আপনাকে উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং এই উৎসাহ আপনাকে এগিয়ে যাবার কাজে সক্রিয়, তৎপর করে তুলবে।
.
বাধাবিঘ্ন গুলোকে খুঁটিয়ে দেখে নিন
আপনার এবং আপনার যে-কোনো কাম্যবস্তুর মাঝখানে মাথা তুলে শত্রুর মতো দাঁড়িয়ে আছে কিছু বাধা-বিঘ্ন। এই বাধাবিঘ্নগুলো না থাকলে যা ইচ্ছা তাই তুলে নিলেই হতো, কামনা করামাত্র হাতের মুঠোয় পেয়ে যেতেন আপনি, শুধু নেয়ার অপেক্ষা।
চিনে-জেনে নিন আপনার এবং আপনার কাম্যবস্তুর মাঝখানে কি কি বাধা রয়েছে।
বাধাবিঘ্নগুলো চেনা হলে আপনার পক্ষে সহজ হবে সেগুলোকে টপকাবার। জন্যে কি কি বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা নেবেন তা ঠিক করা। পরিকল্পনা করে এগোবেন আপনি। একটা করে বাধাকে বেছে নেবেন, আগে থেকে ঠিক করা ব্যবস্থা অনুযায়ী বাধাটাকে টপকাবার কাজে হাত দেবেন। এই ধরনের তৎপরতামূলক কাজে প্রচুর মজা পাওয়া যায়। একটা করে বাধা টপকাবেন এবং নিজেকেই নিজের শিক্ষক বলে গর্ব অনুভব করবেন, যা অন্য কোনো ভাবে অনুভব করার সুযোগ নেই আপনার।
.
জড়তা কাটিয়ে উঠুন
জড়তার মানে হতে পারে কুঁড়েমি। উৎসাহের অভাবেও জড়তা আসে। অকারণ চক্ষুলজ্জ, মিথ্যে সম্মানবোধ, অহেতুক ভয় ইত্যাদির ফলে জড়তার শিকার হতে পারেন আপনি। জড়তা মানুষকে বন্দী করে রাখে তার হাতের মুঠোয়, এতোটুকু নড়তে চড়তে দেয় না। বন্দী মানুষ কি কাজের কাজ কিছু করতে পারে? পারে না। জড়তায় আক্রান্ত মানুষ মৃত মানুষের সমতুল্য। জড়তা মানে অচলতা, এবং অচলতা উন্নতি, প্রগতি ও সাফল্যের পরম শত্রু।
এক ব্যক্তির কথা ধরুন, চাকরি জীবনে সে হয়তো জড়তাগ্রস্ত, অফিসে উপস্থিত হয় নামেমাত্র, কাজে মন নেই, চেয়ারে বসে ঘুমে ঢোলে। এই ব্যক্তিই বেলা দুটোর পর নিউজপ্রিন্টের বাজারে দালালী করে, তখন তাকে দেখলে চেনাই মুশকিল। গোটা বাংলাবাজার এবং নয়াবাজার এলাকাটা সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অমন পঞ্চাশবার চক্কর মারবে, কাজ ছাড়া ফালতু এক সেকেণ্ড ব্যয় করবে না। এরকম দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি দেয়া যায়। কেন হয় এরকম? কাজে আনন্দ থাকলে সে কাজ করতে ভালো লাগে, এটাই কারণ। যে কাজে আনন্দ আছে সে কাজ করতে জড়তার বাধা আসে না।
জড়তার কবল থেকে মুক্ত থাকতে হলে আপনাকেও কাজের ভিতর আনন্দ পেতে হবে। জেনে রাখুন, আপনার কাজগুলোয় আনন্দের অভাব ঘটতেই পারে। না। কারণ, আপনার কাজের দ্বারা আপনি মুক্তি, নিরাপত্তা, সচ্ছলতা, প্রশংসা, ক্ষমতা, মর্যাদা এবং সুখ অর্জন করতে যাচ্ছেন। যে-সব কাজ করবেন সেগুলো আপনাকে দেবে প্রাচুর্য। শুধু যতোটুকু না হলেই নয়, ততোটুকু না-অঢেল, প্রচুর। সুতরাং আপনার কাজের ভিতর আনন্দ থাকবেই।
.
কাজে হাত দেবার জন্যে তৈরি হোন
কখনো কি অকস্মাৎ অচল হয়ে যাওয়া গাড়িকে ঠেলে চালু করার চেষ্টা করেছেন? করে থাকলে নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, গাড়িটাকে চালু করার জন্যে আপনার দেহের সর্বশক্তি ব্যয় করতে হয়েছিল। তাই-ই হয়। কিন্তু গাড়িটা একবার চালু হয়ে গেলে সামান্য শক্তিতেই সেটাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া যায়। মানুষের বেলাতেও সেইরকম-একটা কাজ শুরু করতে উইল-পাওয়ার দরকার হয়, কিন্তু কাজটায় একবার হাত দেয়া হলে তা শেষ করার জন্যে তেমন কোন বেগ পেতে হয় না।
.
একনাগাড়ে এগিয়ে যান
একজন শল্য চিকিৎসকের কথা ধরুন। অপারেশন থিয়েটারে রোগী শুয়ে আছে। চিকিৎসক অপারেশনের জন্যে এলেন। রোগীর পেট কেটে বের করতে হবে একটা পাথর। চিকিৎসক পেট কাটলেন কিন্তু পাথরটা বের না করে তিনি ত্যাগ করলেন অপারেশন থিয়েটার। কয়েক ঘণ্টা বা ক’দিন পর কাজটা সম্পন্ন করবেন তিনি। এরকম ভাবা যায়? যায় না। অপারেশন যখন শুরু হয়েছে, সেটাকে শেষ করতেই হবে, ফেলে রাখা চলবে না। সেইরকম যে-কোনো কাজেই হাত দিন, কাজটা শেষ না করে ক্ষান্ত হবেন না। শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম শেষের দিকে এগিয়ে যেতে কুন, শেষ পর্যন্ত পৌঁছুন।
.
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল?
বইয়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে রয়েছেন আপনি। এরপর তৃতীয় পরিচ্ছেদ। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদটা শেষ করে বইটা বন্ধ করে যদি আলমারিতে তুলে রাখেন, সত্যি খুব খুশি হবো। দুদিন পর আবার বের করবেন বইটা, পড়বেন তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
এই দু’দিন বইটা না পড়ে বর্তমান যুগের প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি পরিকল্পনাভিত্তিক প্রত্যক্ষদর্শনে মনোনিবেশ করুন। আপনার তৈরি অবজেকটিভ তালিকাটা, আর একবার খতিয়ে দেখে নিন। তারপর মানসপটে দেখতে থাকুন কাম্যবস্তুগুলো আপনার অধিকারে এসে গেছে। সবচেয়ে বেশি কাম্য যে বস্তু-কি সেটা? ঠিক, নতুন একটা, চমৎকার একটা বাড়ি দরকার আপনার। বেশ। এবার প্রত্যক্ষদর্শনের জন্যে কাজে হাত দিন। কোন্ কোন্ এলাকা পছন্দ আপনার ঠিক করুন। বাড়িটা যে এলাকায় চান সেই এলাকাটা দেখে আসুন আজই। সেই এলাকায় নিজের পছন্দ মতো কোনো বাড়ি আছে কিনা, বেছে বের করুন। থাকলে ভালো, না থাকলে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী একটা বাড়ির ছবি আঁকিয়ে নিন কোন আর্কিটেক্টকে দিয়ে, কিংবা পত্র-পত্রিকায় ছাপা কোনো বাড়ির ছবি যদি আপনার পছন্দ হয়ে যায়, সেটা কেটে নিন কাঁচি দিয়ে। ঠিক যে-ধরনের বাড়ি আপনি চান হুবহু সেই ধরনের একটা বাড়ির ছবি সংগ্রহ করতে হবে আপনাকে। ছবিটা দেখবেন এবং মনকে অসংখ্যবার বলবেন, এই বাড়িটা আমার। আশা বা ইচ্ছাভিত্তিক কিছু ভাববেন না। আপনি বিশ্বাস করবেন ওইরকম একটা বাড়ির মালিক হয়ে গেছেন আপনি ইতিমধ্যেই। বাড়িটা অর্জন করেছেন আপনি, শুধু দখল পাওয়াটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার মাত্র।