আপনাকেও নিয়ম পালন করে কাজ করতে হবে। কাজ করতে যদি আপত্তি না থাকে, তাহলেই যা করতে চান তা করতে পারবেন।
.
আমি করবো–এই দৃঢ় সংকল্প
আমি করবো এই দৃঢ় সংকল্প নিজের মধ্যে আনা যায় কিভাবে?
এক, সুখী একজন মানুষ বলে মনে করুন নিজেকে। দুই, উদ্দেশ্যের প্রতি উৎসাহী থাকুন।
তিন, বাধাবিঘ্নগুলোকে খুঁটিয়ে দেখে নিন, যেগুলোকে আপনার টপকাতে হবে।
চার, সক্রিয় তৎপরতামূলক পরিকল্পনা রচনা করুন।
পাঁচ, জড়তা কাটিয়ে উঠন। কাজ ফেলে রাখার বদভ্যাস ত্যাগ করুন। ছয়, কাজে হাত দেবার জন্যে তৈরি হোন এবং তৈরি হয়েই হাত দিন। সাত, একনাগাড়ে এগিয়ে যান।
.
সুখী বলে মনে করুন নিজেকে
বলবেন, হুহ মনে করলেই কি সুখী হওয়া যায়?
এ আসলে, যায়। কিন্তু তার আগে সুখী হওয়ার সুফল সম্পর্কে বলতে হয় দু’চার কথা। অসুখী হওয়ার কুফলও আলোচ্য এ প্রসঙ্গে। আপনি অসুখী হলে মন তো বটেই, শরীরও আপনার দুর্বল হবে, নড়তে চড়তে চাইবে না। অসুখী লোক না-বাচক মতামত পোষণ করে, নৈরাশ্যব্যঞ্জক মানসিকতার অধিকারী হয়। ছোটোখাটো কাজ তার কাছে হয়ে দাঁড়ায় জটিল, নিরস, পাহাড়প্রমাণ।
উৎসাহ তৈরি করে, মনে আগ্রহ জন্মায়, প্রেরণা ও উদ্যম যোগায় এই সুখবোধই। আপনি যখন সুখী, শরীরটাও চমৎকার থাকে। এমনকি কাজের সময়গুলোও অত্যন্ত দ্রুত এবং আনন্দের মধ্যে দিয়ে কেটে যায়।
সুতরাং, সুখী হোন। কিভাবে? আপনি বলবেন, জীবনে যা যা চেয়েছিলাম। তার কিছুই তো পেলাম না। সুখী নই তবু নিজেকে সুখী বলে মনে করতে হবে?
সুখী নন, কে বললো? আসলে আপনি সুখী, মুশকিল হলো ব্যাপারটা গোপন রয়েছে আপনার কাছে। আপনি সুখী, কিন্তু তা আপনি জানেন না। জীবনে যা যা চেয়েছিলেন, পাননি এতোদিন-কিন্তু এবার তো পাবেন! ‘আমি পারবো’ এই বিশ্বাস আছে আপনার, আমি করবো এই সংকল্পও গড়ে তুলছেন নিজের মধ্যে-জীবনের সব শখ-সাধই তো পূরণ হতে যাচ্ছে আপনার, সকল কাম্যবস্তুই তো পাচ্ছেন, বলা যায় পেয়ে গেছেন-এরপরও কি কোনো যুক্তি আছে আপনার নিজেকে সুখী বলে মনে না করার?
যাদের মধ্যে ‘আমি পারবো’ এই বিশ্বাস এবং আমি করবো এই সংকল্প নেই তারা কাজে হাত দেবার পূর্বেই ব্যর্থতাকে মেনে নেয় এবং তাদের ব্যর্থতার কারণস্বরূপ অসংখ্য অজুহাত দেখিয়ে বেড়ায়। লক্ষ্য করুন, অজুহাত শব্দটি ব্যবহার করছি আমি, যুক্তি শব্দটি নয়। সে আপনাকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে পারেশিক্ষার অভাব। এটা একটা যুক্তি নয়। বর্তমান যুগের রেডিও-টেলিভিশন, অসংখ্য লাইব্রেরী, প্রকাশনালয়, নাইট স্কুল ইত্যাদির বদৌলতে যে-কেউ যে কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জন করে নিতে পারে।
এ সময়ের অভাবটাকে কেউ কেউ ব্যর্থতার যুক্তি হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে। এটাও একটা অজুহাত মাত্র। গঠনমূলক কাজে মানুষ যতোটা না সময় খাটায় তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি সময় অপব্যয় করে সে নিষ্ফল, উৎপাদনহীন কাজে।
সময়টাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের জন্যে ভাগ করে নেয়াটা জরুরী। সঠিকভাবে সময়ের বাজেট না করলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র আধ ঘণ্টার কাজ বাজারে যাওয়ার সময়ও আপনি খুঁজে পাবেন না।
কিছু মানুষ আছে যারা দায়সারা গোছের কাজ করতে অভ্যস্ত। এরা হাফ আন্তরিক ভাবে কাজ করে। ফলে, সময় ঠিকই বয়ে যায় তার নিজস্ব গতিতে, কাজটা যেমন সুচারু হওয়া উচিত ছিল তেমন হয় না। কাজটা মানগত দিক দিয়ে নিকৃষ্ট বিধায় মানসিক সন্তুষ্টির অভাব ঘটে, এবং সময়ের পরবর্তী ভাগগুলো উপভোগ্য হয় না বা গঠনমূলক কাজের উপযুক্ত থাকে না।
অভিজ্ঞতার অভাব-এটাও একটা অজুহাত, যুক্তি নয়। কেউই অভিজ্ঞ হয়ে জন্মায় না। অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। কাজে হাত দিলেই অভিজ্ঞতা হয়। অভিজ্ঞতা নেই মনে করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে কোনোদিনই অভিজ্ঞতার অধিকারী হতে পারবেন না।
বাংলাদেশে প্রখ্যাত এক ইণ্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট জজ কোর্টের চত্বরে ঘুরে ঘুরে কেটলীতে গরম চা বিক্রি করতেন, কাপ প্রতি এক আনা, পাকিস্তান আমলের প্রথম যুগে। সেই ব্যক্তি এখন নিজের বিশাল কারখানায় তৈরি ছাতা বিদেশে রফতানী করেন। অ্যাকাডেমিক ডিগ্রী ছিল না ভদ্রলোকের, ছিল না ছাতা তৈরি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতাও।
পুরানো ঢাকার বসুবাজার নামক পাড়ায় রাস্তার উপর দশ ইঞ্চি একখানা ইটের উপর বসে সিঙ্গাড়া, পিয়াজি, ফুলুরি বিক্রি করতেন হোসেন আলী, মাত্র ছয় বছর আগে। সাতাত্তরে তিনি একজন হোটেল ম্যানেজার মাসে বেতন পাচ্ছেন আড়াই হাজার টাকা।
‘আমি পারি’ এই বিশ্বাস এবং সচেতনতা নিজের মধ্যে আমদানী করা সহজ হবে আপনার পক্ষে যদি আপনি এই সত্যটা জানেন: সফল এবং ব্যর্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য হলো, একজন জানে, বিশ্বাস করে এবং ভাবে আমার দ্বারা সম্ভব; আর একজন জানে, ভাবে, বিশ্বাস করে, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
সুখী হবার সবচেয়ে বড় ও সহজ এবং একমাত্র উপায় হলো, নিজেকে সুখী বলে মনে করা। মনে করে দেখুন, নিজেকে সুখী মানুষ বলে স্বীকার করে নিতে বিশেষ দেরি হবে না। সত্যিই সুখ আসবে আপনার অন্তরে।
.
উদ্দেশ্যের প্রতি উৎসাহী থাকুন
লক্ষ্যের প্রতি আগ্রহ এবং উৎসাহের কমতি হলে সে-লক্ষ্যে পৌঁছানো কক্ষনো সম্ভব নয়। এমনকি ‘আমি পারবো’ এই বিশ্বাস আপনার মধ্যে থাকলেও, দক্ষতা অর্জনে, যোগ্যতা অর্জনে বা সিদ্ধিলাভে আপনি সফল হতে পারবেন না-অর্জনে যদি উৎসাহ না থাকে।