- বইয়ের নামঃ সুখ-সমৃদ্ধি
- লেখকের নামঃ বিদ্যুৎ মিত্র
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ আত্মজীবনী
০. ভূমিকা – সুখ-সমৃদ্ধি – বিদ্যুৎ মিত্র
সুখ-সমৃদ্ধি – বিদ্যুৎ মিত্র / প্রজাপতি প্রকাশন
SHUKH-SHAMRIDDHI By: Biddyut Mitra
কামনা: নবীন-প্রবীণ সকল পাঠকের সুখ-সমৃদ্ধি
.
ভূমিকা
আপনি সাফল্য চান?
জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে নিজেকে জানতে হবে। নিজেকে জানতে হলে সবচেয়ে আগে জানতে হবে-এ জানার শেষ নেই।
জানা ব্যাপারটার মধ্যে রকমফের আছে। কেউ বেশি জানে, কেউ কম জানে, কেউ আংশিক জানে, আবার কেউ ভুল জানে।
ভুল জানাটা ক্ষতিকর। ভুল জানার চেয়ে না জানা তবু ভালো। গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সাফল্য জিনিসটা কি এ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষেরই সঠিক ধারণা নেই।
অর্থাৎ সাফল্য সবাই চায়। সবাই জানতে চায় সাফল্য লাভের সহজ ও নিশ্চিত উপায়।
এ প্রচলিত ধারণা হলো, সাফল্য লাভের সহজ কোনো উপায় নেই। অমানুষিক পরিশ্রম করো, পৌনঃপুনিক ব্যর্থতার মুখ দেখলেও অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাও, জীবন থেকে বহিষ্কার করে উপভোগ, বিশ্রাম, আনন্দ; দিবারাত্র কাজ করো, কাজ করো আর কাজ করো–এই হচ্ছে সাফল্যের প্রচলিত ফর্মুলা।
অকারণে পুকুরে ঢিল ছোঁড়া পরিশ্রমের কাজ, চেয়ারে বসে পা দোলানোতেও পরিশ্রম হয়–কিন্তু কিছু অর্জিত হয় কি? ব্যর্থ হলে বারবার চেষ্টা চালাতে বলা সহজ, কিন্তু ব্যর্থ যাতে না হতে হয় তার ব্যবস্থাপত্র দেয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। উপভোর্গ, আনন্দ এবং বিশ্রাম যে জীবনে সাফল্য লাভের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত এ-খবর রাখে কজন?
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশা করে একটা ব্যাপার উপলব্ধি করেছি, জীবনে সাফল্য লাভ সম্পর্কে প্রত্যেকেরই জানার প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। সবাই জানতে চায় সাফল্য লাভের সহজ এবং নির্দিষ্ট কোন উপায় আছে কিনা।
প্রশ্নটা নিয়ে দীর্ঘদিন নাড়াচাড়া করেছি। অসংখ্য বই গিলেছি গোগ্রাসে। আমার উদ্দেশ্য ছিলো সাফল্য লাভের জন্যে একটা সহজ ফর্মুলা আবিষ্কার করা। কাজটায় নেমেই দেখলাম অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য সম্পর্কে আমাদের ধারণাই ভুল। সাফল্য কি তাই আমরা অধিকাংশ মানুষ জানি না। আরো আবিষ্কার করলাম, সাফল্য অর্জনের সহজ উপায় অবশ্যই আছে।
আপনি সাফল্য চান। যদি না চান, এ বই আপনার জন্যে নয়।
এই বইয়ে আমি নিশ্চিত সাফল্য লাভের একটি সহজ ফর্মুলা প্রকাশ করছি। এই যাদুবিদ্যার সাহায্যে আপনি সুখ অর্জন করবেন, পাবেন আরো টাকা, আরো সম্মান, পূরণ করবেন আপনার মনের সবগুলো শখ-সাধ-ইচ্ছা-অভিলাষ। এই। বইতে যে ফর্মুলা আপনি শিখবেন সেটিকে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ বলতে পারেন।
ফর্মুলাটা যে সত্যি কাজের, বুজরুকি বা ধোকাবাজি নয় তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী আমি, বিদ্যুৎ মিত্র। এই ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছি। আমি।
আপনিও পাবেন।
বইটিকে লুকিয়ে ফেলবার কথা ভাবছেন বুঝি? ভাবছেন আর কেউ যদি ম্যাজিক ফর্মুলাটা শিখে নিয়ে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে যায়, আপনার ভাগে কম পড়ে যাবে? না, সে ভয় নেই। এই ফর্মুলা আপনাকে যে গুপ্তধনের সন্ধান দেবে তার সীমা-পরিসীমা নেই। সেখানে আছে অঢেল, অফুরন্ত ধনের ভাণ্ডার। পৃথিবীর চারশো কোটি মানুষ অবিরাম একশো বছর ধরে সেই ভাণ্ডার লুট করলেও এর ধনুরাশি ফুরাবার নয়।
তার মানে, আপনি বঞ্চিত হচ্ছেন না।
নিশ্চিন্তে মন দিন এবার বইয়ের পাতায়।
০১. সাফল্য একটি ভ্রমণ
সাফল্য কি? সাফল্য কি একটি লক্ষ্য বা গন্তব্যস্থান?
ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে আপনি বরিশাল যাবেন। বরিশাল আপনার গন্তব্যস্থান। বরিশালে পৌঁছুলেই আপনার যাত্রা শেষ। কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা তাহলে? নির্দিষ্ট একটা জায়গা বা লক্ষ্যের নাম গন্তব্যস্থান। সাফল্যকে যদি গন্তব্যস্থান বলে মনে করি, তাহলে নির্দিষ্ট জায়গা বা লক্ষ্যে পৌঁছেই ভাবতে পারি, আমি সফল হয়েছি। কিন্তু আসলে কি তাই? কোনো জিনিস অর্জনের মধ্যেই কি সাফল্য সীমিত বা নিহিত?
আসুন, বিশ্লেষণ করা যাক।
ধরুন, আপনি সুনাম চান। সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দিয়ে, বিপদগ্রস্ত লোককে সাহায্য করে, মানুষকে সৎ পরামর্শ দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুনাম অর্জনও করলেন। যতোটুকু সুনাম অর্জন করলেন, তাতেই কি আপনি সন্তুষ্ট, তাই কি আপনার জন্যে যথেষ্ট? না, তা কখনো হতে পারে না। আপনি আরো সুনাম চাইবেন, আরো সম্মান আশা করবেন। যদি না চান, না আশা করেন-কি হবে? আপনার সুনাম অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে, শুধু তাই নয়, যে সুনামটুকু। খাটাখাটনি এবং ত্যাগ স্বীকার করে অর্জন করেছেন তাও নষ্ট হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে ক্রমশ।
অর্জিত সুনামটুকু ধরে রাখার উপায় কি? উপায় এগিয়ে যাওয়া। যে পথে চলেছেন সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে, অর্থাৎ আরো সুনাম অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। শুধুমাত্র এই চেষ্টার মাধ্যমেই আপনি পূর্ব-অর্জিত সুনাম ধরে রাখতে পারবেন এবং আরো বেশি সুনাম অর্জন করতে পারবেন।
বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা শিখলাম: সাফল্য কোনো নির্দিষ্ট জিনিস পাওয়ার মধ্যে বা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে পৌঁছার মধ্যে সীমিত বা নিহিত নয়। লক্ষ্য বা গন্তব্যস্থান একটা নির্দিষ্ট বিন্দু, সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত। কিন্তু সাফল্যের সীমা নেই, সাফল্যের ক্ষেত্র সীমারেখাহীন।