সম্মানিত দেশবাসী! তসলিমার অসংখ্য অশ্লীল ও অসভ্য বিষোদগার থেকে নিম্নের কয়েকটি উদ্ধৃতি লক্ষ করুনঃ
০ আমি ছোটখাটো কোনও পরিবর্তনের পক্ষে নই। এর দ্বারা কোনও উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। কুরআনের পুরোপুরি সংশোধন করা প্রয়োজন। (০৯/০৫/৯৪ তারিখে কলিকাতা থেকে প্রকাশিত The Statesman পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তসলিমার উক্তি) উপরোক্ত বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে ১১/০৫/৯৪ তারিখে ঝবন জঢ়তঢ়নড়লতশ পত্রিকায় তার একটি চিঠি ছাপা হয়। তা পূর্বের চাইতে মারাত্মক এবং ভয়ংকর। তসলিমার কথায়, এই ব্যাপারে আমার মত পরিষ্কার এবং সুস্পষ্ট। আমার মত হলো কুরআন, বেদ, বাইবেল এবং এ ধরণের যাবতীয় গ্রন্থ যা তাদের অনুসারীদের জীবন পরিচালনা করে তা আজকের স্থান ও কালের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। যে সমাজ ইতিহাসের পটভূমিতে এগুলো লেখা হয়েছিল, তা আমরা অতিক্রম করে এসেছি। সুতরাং এই সবের দ্বারা পরিচালিত হবার আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই। আংশিক বা পুরোপুরি সংশোধনের কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। আমরা যদি উন্নতি করতে চাই তাহলে এই পুরোনো গ্রন্থগুলোকে পরিত্যাগ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
০ এখানে হাসান হোসেন থেকে শুরু করে মুহম্মদ পর্যন্ত কেউই পুতপবিত্র মানুষ নয়। সকলেই দোষে গুণে লোভে মোহে, হিংসায় এজিদ মাবিয়ার মত অর্থাৎ অন্ধকার সমাজের আর সব মানুষের মত। ( ছোট ছোট দুঃখ কথা)
০ আমি নামাজ বা কোরান বিশ্বাস করি না। আমি যখন কোরান পড়ছিলাম, তখন তাতে দেখেছি, কোরানে বলা হয়েছে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আমি তখন আমার মাতৃদেবীকে বলেছিলাম আমি বিজ্ঞানের বই পড়ে জেনেছি যে, সূর্যেরই চারদিকে পৃথিবী ঘুরছে। কাজেই আল্লাহ একজন মিথ্যাবাদী। (বোম্বে থেকে প্রকাশিত ফ্যাশন ম্যাগাজিন Savvy র নভেম্বর ৯২ সংখ্যায় প্রকাশিত তসলিমার আত্মকথা)
০ রবীন্দ্রনাথকে আমি ঈশ্বর বলে মানি। আমার চোখের সামনে ঈশ্বরের যে ছবিটি ভেসে ওঠে, সে তার রক্তমাংস শিল্পসহ কেবলই রবীন্দ্রনাথ। এই আমার ধর্ম, আমি এই এক ঈশ্বরের কাছে পরাজিত। আর কোনও ঈশ্বর দোষ, আর কোনও লৌকিক বা পারলৌকিক মোহ আমার নেই। জগতে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কোনও দেয়াল রাখিনি। আর কোনও গন্তব্য নেই আমার। ( নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য পৃঃ ৮০)
০ এইসব আখেরাত, পুলসেরাত, দোযখ, বেহেস্ত এগুলো আমার বিশ্বাস হয় না। আল্লাহ টাল্লা আবার কি? সব বাহানা। ( নিমন্ত্রণ পৃঃ ২৯)
০ হ্যাঁ আমি ইসলামকে আঘাত করে থাকি। কারণ ইসলাম নারী স্বাধীনতা দেয় না। (জতৎৎঁ নভেম্বর ৯২)
০ ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে/ জিবরাইলের কাশি/মুনকার আর নাকির গেছে হুরের নিমন্ত্রণে/ফেরেশতারা যে যার মত সাত আকাশে ঘোরে/ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে শিঙ্গা ফুঁকবে কে?/পুলসেরাতে একলা বসে শেষ বিচারক কাঁদেন/আর, আখেরাতের দাড়িপাল্লা কব্জা খসে পড়ে। ( কবিতাঃ ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে, সূত্র সাপ্তাহিক পূর্ণিমা ১৭ নভেম্বর ৯৩)
০ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমি লজ্জা লিখেছি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী পরিস্থিতিকে ভিত্তি করে। আমি বাবরি সম্পর্কে লিখেছি, কারণ এটা বৈষম্যের এক প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। ( পূর্ণিমাঃ ১৭ নভেম্বর ৯৩)
০ চরিত্র গঠনের জন্য খাদিজা কেন অপরিহার্য এই দেশে? হযরতের তের বা চৌদ্দজন বিবির জীবনী পড়ে স্কুলের মেয়েরা কোন আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছে তা আমার জানবার প্রয়োজন বৈ কি!..তাদের কেন জোন অব আর্ক, মেরি ওল্টস্টনক্রাফটের জীবনী, বাংলার মাতঙ্গিনী হাজরা, সরোজিনী নাইডু, বেগম রোকেয়া, ননীবালা দেবী, লীলা নাগ, ইলা মিষেনর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে কোনও ধারণা দেয়া হয় না? ( নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য পৃ: ১২১)
০ এদেশে নানা জাতের অসাধু পুরুষ আছে, তাদের মধ্যে পীর অন্যতম। .. দেশের আনাচে কানাচে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা পীর নামে পরিচিত মানুষগুলোর মূল পেশা অসাধুতা। লম্বা চুল, দাড়ি, জোব্বার আড়ালে অর্থ ও নারী লিপ্সাই পীর চরিষেনর প্রধান দিক। .. পীর বলতে এখন আর সিদ্ধ সাধু পুরুষের ভাবমূর্তি মনে আসে না। পীর মানেই দুশ্চরিত্র, লম্পট, পীরমাত্রই ঝাঁক ঝাঁক যুবতী বেষ্টিত প্রচণ্ড কামুক পুরুষ। ( নির্বাচিত কলাম পৃঃ ২৭)
০ আমাদের মত সমাজে মেয়েদের কখনও বিয়ে করাই উচিত নয়। কারণ তার ফলে তারা পুরুষের ক্রীতদাসীতে পরিণত হবে। .. যৌনতার ব্যাপারে বলি আমি অবাধ যৌন সংসর্গে বিশ্বাস করি তার জন্য আপনাকে বিয়ে করার দরকার নেই। (জতৎৎঁ নভেম্বর ৯২)
০ জরায়ুর স্বাধীনতা নারী মাষেনরই প্রয়োজন। সে পতিতা হোক কী অপতিতা হোক। (সাক্ষাৎকার পাক্ষিক সোনার তরী ১-১৫ ডিসেম্বর ৯৩)
০ নারী ধর্ষণ করতে শিখুক, ব্যাভিচার করতে অভ্যস্ত হোক। (নির্বাচিত কলাম পৃ: ১১৮/কলিকাতা ১৯৯২)
০ শালা শুয়োরের বাচ্চা বাংলাদেশ। ( লজ্জা পৃষ্ঠা ৫৭)
০ স্বৈরাচারী সরকার এই দেশের জন্য একটি রাষ্ট্রধর্ম তৈরি করেছে। যে ধর্ম দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানুষ ভারত বিরোধিতায় ভোগে এবং দেশে একটি ইসলামতন্ত্র চালু করতে চায়। ( যাবো না কেন, যাবো , পৃঃ ৪৯)
০ বাঙালি বলতে আমি উনিশ কোটি মানুষকে বুঝি। দেশ বলতে বঙ্গদেশ বুঝি। আমরা তোমরা বলে কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। আজ না হয় ধর্মের দেওয়াল উঠেছে। আমাদের মাঝে এ তো সূর্যের মত সত্য যে একদিন এই দেওয়াল ভাঙবে। ধর্ম নির্বাসিত হবে, বাঙালি ফিরে পাবে তার পূর্ব পুরুষের মাটি, দিগন্ত অবধি অবাধ সবুজ ধানক্ষেত, আম জাম কাঁঠালের বন। মাটির মূর্তির পায়ে ফুলপাতা রেখে কেউ নমো নমো বলবে না, পাপী আর সন্তপ্ত মানুষ মসজিদে পাঁচবেলা কপাল ঠুকবে না। একদিন নিশ্চয়ই বাঙালিরা হাতে হাত ধরে হাঁটবে বনগাঁ থেকে বেনাপোল, রংপুর থেকে কুচবিহার, মেঘালয় থেকে হালুয়াঘাট, শিলং থেকে তামাবিল, ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে বৈঠা বাইবে মাঝি পদ্মা থেকে গঙ্গার উত্তাল জলে। এরকম একটি স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমি বাঁচি। (বন্দি আমি — তসলিমা নাসরিন ঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ৩১ অক্টোবর, ৯৩)