• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বুধবার, মে 14, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

Nei Kichu Nei by Taslima Nasrin

শান্তিনগরের আমার বাড়িটা দাদা আর ছোটদা দুজনই ব্যবহার করে। বাড়িটা ভাড়া দিলে বা বিক্রি করে দিলে ভালো টাকা পেতাম। কিন্তু কিছুই করি না আমি। নিজের ভাইদের কাজে লাগছে বাড়ি, লাগুক। ইট কাঠ কংক্রিটের কোনও মোহ আমার নেই। আমার মন পড়ে থাকে আমার সেই বইগুলোয়, সেই আধ-লেখা লেখাগুলোয়, আমার সেই সহস্র রকম খেরোখাতার লেখালেখিতে। কত যে অপ্রকাশিত লেখা আমার কমপিউটারের ভেতরে বা বাইরে ছিল। কার এত সময় বাইচ্ছে আছে ওগুলো যত্ন করে রাখার, বা আমাকে পাঠিয়ে দেওয়ার। ছোটদা আসে আমেরিকায়। সুটকেস ভরে ভরে গীতার জন্য জিনিসপত্র নিয়ে আসে, তার সুটকেসে আমার প্রয়োজনীয় কোনও কিছুর জায়গা হয় না। আসলে জায়গা বড় ব্যাপার নয়, মা, ইচ্ছে হয় না। আমি এখন তাদের কাছে কোনও আর মূল্যবান কিছু নই। আমার রেখে আসা জিনিসপত্র অনেকটাই আবর্জনা তাদের কাছে। তারা হয়তো ঝেড়ে ফেলে দেয়, নয়তো কাউকে দিয়ে দেয়, এসবে কোনও মমতা নেই তাদের। তুমি যখন ছিলে, কাজের লোক ঘর ঝাড় দেওয়ার সময় বলতে, ঘর থেকে কোনওদিন যেন কোনও কাগজ না বেরোয়। মেঝেয় পড়ে থাকা হাবিজাবি কাগজও তুমি কোনওদিন ফেলতে দিতে না। আবর্জনার ঝুড়ি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসতে যে কোনও কাগজ। অথচ কত মূল্যবান কত কিছু ছোটদা ফেলে দিচ্ছে। কারণ তার ওসব দরকার নেই। আমি আর বেঁচে থাকতে ও দেশে ফিরতে পারবো না, সুতরাং ওসবপুরোনো জিনিসে ঘর ভরে থাকলে তাদের চলবে কেন। কলকাতায় যখন ছিলাম, দাদাকে বলেছিলাম দেশে যখন ফেরা কোনওদিনই সম্ভব হবার নয়, যেন পাঠিয়ে দেয় শান্তিনগরের বাড়ি থেকে আমার যা আছে সব। দাদা একাঁপারবে না বলে মিলনকে টিকিট পাঠিয়েছি আমেরিকা থেকে দেশে যাওয়ার। বিয়াল্লিশটা বড় বড় কার্টুনে সব ভরে ওরা কুরিয়ার করে দিয়েছে। কিন্তু কলকাতায় সামান্য কিছু বই এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলো নাকি কুরিয়ারের লোক বলে দিয়েছে কাস্টমস-এ আটকে রেখেছে। ওগুলো ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা কেউ করেনি। আমার জিনিসপত্র সব দূর করে বাড়িঘর এখন বেশ হালকা করা গেছে। সবার জন্য বিস্তর জায়গা হয়েছে এখন। কী বলবো মা, শোকে পাথর হয়ে যাই। জোরে যে কাঁদবো, পারি না। বুঝি, জীবন তছনছ হয়ে গেছে, এ জীবনে স্মৃতি ছাড়া আর কিছু নেই নিয়ে বাঁচার।

.

এদিকে যত আমি সুয়েনসনের বাড়িতে শেকড় গাড়ছি, যত আমি তার এলোমেলো বাড়িকে সাজাচ্ছি, তত রুক্ষ হতে শুরু করলো সুয়েনসনের ব্যবহার। তার অটিজম রোগ কোনও নতুন কিছু সহ্য করতে পারে না। যেটা যেখানে ছিল, সেভাবে থাকলেই স্বস্তি বোধ করে। আমার একটা রুট ক্যানেলের দাঁত ছিলো তোমার মনে আছে? ওই দাঁতটার ওপর যে ছোট্ট একটা মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই মুকুটের একটা অংশ একদিন ভেঙে গিয়েছিলো। দাঁতেরহাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখালে বললো মুকুট একটা নতুন বানিয়ে নিতে হবে। পরসালিন মুকুট বানাবো, এরকম ঠিকও করে রাখলাম। কিন্তু দাঁতের হাসপাতাল বাড়ি থেকে দূর, কত আর দূর, পনেরো মিনিট লাগে যেতে। সুয়েনসনের পরামর্শ, তার চেয়ে পাঁচ মিনিট সময় নেবে, এমন কাছের কোনও ক্লিনিকে যাওয়া উচিত, যে ক্লিনিকে অন্য সব রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি দাঁতের ব্যাপারটাও আছে। সুয়েনসনের অবসর সময়ে তাই করলো, বাড়ির কাছের ক্লিনিকে নিয়ে গেল আমাকে। থেরেস নামের এক বেঁটে মেয়ে, দাঁতের ডাক্তার বলে কিছুতেই তাকে মনে হবে না, নার্স বলেও মনে হবে না, আমার রুট ক্যানেলের দাঁতের ওপর থেকে মুকুটটা সামান্য ভেঙে গেছে, মুকুটটা যেন লাগিয়ে দেয় সে, বলাতে যত দাঁত আছে আমার মুখে, সবগুলো দাঁতের আলাদা আলাদা করে এক্সরে নিল। যত বেশি এক্সরে, তত বেশি ক্যানসারের সম্ভাবনা, জানো তো। তোমার কোলন ক্যানসার হয়েছিল, তাই তোমার সব ছেলেমেয়েদের কোলন ক্যানসার হওয়ার আশংকা আছে। এর মধ্যে একটা কেলোনোস্কপি আমাকে করতে হয়েছে। হাশেম মামার ক্যানসার হল, তোমার হলো। আমাদের শরীরে ক্যানসার হওয়ার আশংকা, যাদের পরিবারে ক্যানসার নেই, তাদের চেয়ে বেশি। বিজ্ঞান তাই বলে, মা। আমি থেরেসকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রত্যেকটা দাঁতের আলাদা এক্সরে করছো কেন? দুটি দাঁতের তো এক এক্সরেই যথেষ্ট! দাঁতাল হাসি দিয়ে মেয়ে বলে, তাদের ক্লিনিকে নাকি ওই সুবিধে নেই। আসলে কি জানো, তখনই আমার উঠে চলে আসা উচিত ছিল। এখনও আমি অনুতাপ করি, কেন আমি উঠে আসিনি। এক্সরে করে ফিরে আসার কদিন পর থেরেসের ফোন আসে আমার কাছে। তার দাবি, আমার রুট ক্যানেলের দাঁতের ওপরের হাড়ে ব্যাকটেরিয়া জমেছে, সুতরাং আমি যেন এক্ষুনি গিয়ে দাঁতটা ফেলে আসি। বলে কী! দাঁত ফেলতে হবে কেন! তখন আমার উচিত ছিল দাঁতের হাসপাতালে বড় দাঁতের ডাক্তারের কাছেগিয়ে জিজ্ঞেস করা, তোমরা যে বলেছো মুকুট পরিয়ে দেবে দাঁতের ওপর, তো ওদিকে যে আমাকে ডাকা হচ্ছে দাঁত ফেলতে। বলো তো ঘটনা কী! ঘটনা ওরা বলে দিতে পারতো, থেরেস দন্ত বিজ্ঞানের কচু জানে। রুট ক্যানেলের দাঁতের ওপরের হাড়ে একটু ছায়াপড়েছে, ওটা ইনফেকশন নয়। কিন্তু দাঁতের হাসপাতালে নাগিয়ে আমি থেরেসের আহ্বানে বাড়ির কাছের সেই ক্লিনিকে উপস্থিত হলাম। অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিলাম, দাঁত তোলার আগে, যে, আমি কিনতুন দাঁত বসাতে পারবো ওখানে, ইমপ্ল্যান্ট করতে পারবো? থেরেস সঙ্গে সঙ্গে বললো, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। তারপর যে কী ঘটলো, সে যে কী ভয়াবহ দৃশ্য, তুমি না দেখলে বিশ্বাস করতেপারবেনা। মাড়ি অবশ করে শুরু করে দিল থেরেস তার অজ্ঞতার চর্চা। নানারকম সাঁড়াশি দিয়ে চেষ্টা করেও কিছুতেই সে আমার শক্ত পোক্ত দাঁত তুলতে পারে না। শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়ে সে ডেকে আনলো তার মতোই এক অজ্ঞতার পিণ্ডকে। সেই পিণ্ডও অনেক ছুরি কাচি চালিয়ে মাড়ি কেটে ব্যর্থ হয়ে কোত্থেকে কুড়োল, কোদাল, করাত নিয়ে এলো জানি না, দাঁতের ওপরের হাড় কাটতে লাগলো, হাড় একটু কেটে দাঁত টেনে তোলার চেষ্টা করলো, হল না। আবারও কাটতে লাগলো। হাড় কাটার সময়, মা, আমার চোখ বেয়ে অঝোরে জল ঝরছিলো। খুলির ভেতর মস্তিষ্ক প্রতি কুড়োল আর করাতের আঘাতে প্রবল নড়ছিলো। অবশ করা কিছুই আর অবশ ছিলো না। ওই প্রবল আঘাতগুলোতে আমার হাড় গোড় সব ভেঙে যাবার অবস্থা। আমি বুঝতে পারছিলাম। ওদের বলার চেষ্টা করলাম, এবার থামো। তোমরা ভুল করছো, তোমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। তোমরা আমার হাড় কেটে ফেলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, সাদা মূর্খগুলো বাদামি রঙের বুদ্ধিকে সহ্য করে না। ধমক দিয়ে থামায়। আমি এখন তাদের হাতের মুঠোয়, তারা যা ইচ্ছে তাই করবে। ক্রুদ্ধ কসাই দুটো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছিল, খুলি ফেটে মস্তিষ্ক ছিটকে বেরিয়ে পড়বে। তখনও যদি আমি ওভাবেই উঠে চলে আসতে পারতাম। আমার যদি তখন মনে হতো, এই সুইডেনের ডাক্তাররা তোমাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরেছে। আমাকেও মারতে যাচ্ছে। যদি মনে হতো, এদের হাতে মরার আমার কোনও সাধ নেই। কিন্তু আমাকে ওরা জোর করে চেপে ধরেছে এমন করে যে বাঁচার আর উপায় ছিল না। অসহায় চোখে সুয়েনসনের দিকে তাকাচ্ছিলাম। ও যদি আমাকে এই বর্ণবাদী অজ্ঞদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু সুয়েনসনের মুখে মিষ্টি মিষ্টিহাসিও হয়তো বোঝেইনি কী ঘটছে, আর বুঝলেও প্রতিবাদ করার চরিত্র ওর নেই। সুয়েনসন তো ওদের চেয়ে আলাদা নয়, তারও বিশ্বাস বাদামির চেয়ে সাদা বেশি বোঝে, বেশি জানে। সুতরাং আমাকে যদি ওই ওখানে মরে পড়ে থাকতে হতো, তাহলেও সুয়েনসন মনে করতো, নিশ্চয়ই মৃত্যুটাও আমার প্রাপ্য ছিলো। আমি জানি না কেন আমি এই দেশ তোমাকে মেরেছে জেনেও আমি এই দেশের অজ্ঞদের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছি! আমার উচিত ছিল ওই হাড়কাটা দস্যুদের কবল থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসা। চার ঘণ্টা সময় ওরা নিল আমার হাড় কাটতে, আমার সর্বনাশ করতে। পিণ্ড চলে গেল। থেরেসকে তারপরও জিজ্ঞেস করলাম, দাঁত ইমপ্ল্যান্ট হবে তো! সে সজোরে মাথা নেড়ে আবার বললো নিশ্চয়ই। মাড়ি কাটা হাড় কাটা অবস্থায় ফেরত এলাম। সঙ্গেতৃপ্ত সন্তুষ্ট সুয়েনসন। এর মাথার ব্যারাম আছে সে গ্রীসেই দেখেছি। এথেন্সের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার যখন আমাকে অন্ধকার গলিতে থামিয়ে কয়েক হাজার ডলার ডাকাতি করে নিয়ে গেল, সুয়েনসন পাশে থেকেও বুঝতে পারেনি কী ঘটেছে। পরে গলি থেকে বেরিয়ে এথেন্সের এক ক্যাফেতে বসে ওকে যখন বলেছি, কী ঘটেছে, ওর গা এত কাঁপছিলো যে হাতে ধরা গ্লাসটিও কাঁপছিলো, ছলকে উঠছিলো গ্লাসের পানীয়। দাঁতের ডাক্তাররা যে হাড় কেটে ভুল করেছে, তা সুয়েনসনকে বলার পরও তার বোঝা সম্ভব হয়নি। পরদিন দাঁতের হাসপাতালে গিয়ে বড় ডাক্তারদের বললাম ইমপ্ল্যান্ট করতে চাই। ডাক্তাররা এক্সরে দেখে নিয়ে আমাকে বললেন, তোমার হাড় এত বেশি কাটা হয়েছে যে কোনও ইমপ্ল্যান্ট আর সম্ভব নয়। বলেছিলাম, হাড়ে কিইনফেকশন হয়েছিলো? বড় ডাক্তার সোজাসুজি বলে দিলেন, দাঁত ফেলার কোনও প্রয়োজন। ছিলো না। ওসব ইনফেকশন নয়। কালো যে ছায়াপড়ে, রুট ক্যানেল করা দাঁতের ওপরের হাড়ে ওই ছায়া স্বাভাবিক। হাড় কি গজাবে? আমার প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বললেন, হাড় গজায় বটে, তবে তোমার হাড় অনেকটাই কেটে নিয়েছে, গজালেও এত গজাবে না যে নতুন একটা দাঁত লাগানো সম্ভব হবে। নতুন দাঁতের জন্য হাড় চাই। তখন কী করতে ইচ্ছে হয় বলো! মনে হয় না ওই থেরেস আর এই অজ্ঞতার পিণ্ডকে গিয়ে গলা টিপে মেরে আসি! যেমন ইচ্ছে হয়েছিলো ওই অজ্ঞ ডাক্তারটিকে, কুপিয়ে মেরে ফেলতে, যে তোমাকে দেখেছিলো! ইচ্ছেই শুধু হয়, কারও বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া বলো, কারও অন্যায়ের প্রতিশোধ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি অসহায়পড়ে থাকি একা পাশে সুয়েনসনও থাকেনা দুটো সান্ত্বনার কথা শোনাবার জন্য! হাসিতে আমার আর মুক্তো ঝরবে না আগের মতো। সে কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, সৌন্দর্যের বারোটা বেজেছে সামনের চার নম্বর দাঁত না থাকায়, সে কথাও চলো ভুলে যাই। মস্তিষ্ক যেভাবে খাবি খেয়েছে, ওতে যদি আবার ওতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়, কাটা হাড় পড়ে থেকে থেকে হাড়ে ঘা হয়ে যদি আবার হাড়ের ক্যানসার হয়ে যায়! এসবে ওই অজ্ঞদের ওপর যত রাগ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে নিজের ওপর রাগ। কেন আমি চলে এলাম না! কেন আমি তখনই প্রতিবাদ করিনি যখন ঘটনা ঘটছে। তোমাকে কেন আমি বড় ডাক্তার দেখাইনি, সে কারণে নিজের ওপর আমার যেমন রাগ হয়, দাঁতাল দস্যুদের হাত থেকে নিজেকে কেন বাঁচাইনি, নিজের ওপর সেই রাগটাও হয়। সুয়েনসন একটা আবেগহীন অপদার্থ। আর কিছুদিন ও দেশে থাকলে আমাকে অঘোরে প্রাণ দিতে হবে। নিজেকে বাঁচাই আমি অতঃপর। চিরবিদায় জানিয়ে দিই দেশটাকে। আমার বইপত্র, আমার যাবতীয় সবপড়ে থাকে সুয়েনসনের বাড়িতে। আমি চরম হতাশা আর শূন্যতার হাত থেকে বাঁচতে দেশ ত্যাগ করি। অনেকবার আমার এও মনে হয়েছে, এই শাস্তি বুঝি আমার প্রাপ্য ছিলো। তোমার ভালো ভালো দাঁতগুলোও যখন ফেলে দিয়েছিলো, তখন তো আমি প্রতিবাদ করিনি। তুমি জানতে তোমার দাঁত ফেলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত ওরা নিয়েছে, ভুল নিয়েছে। কোথাও ওদের ভুল হচ্ছে। তুমি অসহায় চোখে তাকিয়েছিলে আমার দিকে। ওদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছিলে। কিন্তু আমার হাত থেকে তো বাঁচোনি মা। আমি তো ডাক্তারদের বিশ্বাস করেছিলাম। ওই অজ্ঞ অশিক্ষিত ডাক্তারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধও নিইনি। প্রতিবাদও করিনি। নিজের জীবনে যখন ঘটলো একই রকম দুর্ঘটনা, ভুল চিকিৎসা, ভুল সিদ্ধান্ত, নিজে যখন একই রকম অসহায় হলাম, নিজে যখন কষ্ট পেলাম অন্যের নির্বুদ্ধিতার কারণে, তখনই তোমাকে আমি অনুভব করলাম সত্যিকারের। নিজের জীবন দিয়ে অনুভব না করলে সম্ভবত কোনও অনুভবই এত তীব্র হয় না।

Page 87 of 94
Prev1...868788...94Next
Previous Post

সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

Next Post

নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

Next Post

নির্বাসন - তসলিমা নাসরিন

দ্বিখণ্ডিত - তসলিমা নাসরিন

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In