- বইয়ের নামঃ নেই, কিছু নেই
- লেখকের নামঃ তসলিমা নাসরিন
- বিভাগসমূহঃ আত্মজীবনী
০১. মা, কেমন আছো তুমি?
নেই, কিছু নেই – আত্মজীবনী ষষ্ঠ খণ্ড – তসলিমা নাসরিন
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১০
পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ : নভেম্বর ২০১১
.
মা,
কেমন আছো তুমি?
কতদিন তোমার সঙ্গে আমার কথা হয় না। কত দীর্ঘদিন! তুমি কি হিসেব করছে দিনগুলো! চিরকালই তো তুমি দিন হিসেব কর, আঙুলের কড়ায় গোনো দিন। এতগুলো দিন এখন কি তুমি গুনতে পারছো? এখন তো দিন বা মাসের হিসেবে কুলোবে না। তোমাকে বছর হিসেব করতে হবে। বছর! ভাবলে কেমন গা কাঁপে। একসময় তো ঘণ্টা হিসেব করতে। ক’ ঘণ্টা ক’ মিনিট ঘরে ফিরছিনা, কোথায় কাটাচ্ছি, খেয়েছি কিনা, কোনও অসুবিধে হল কিনা কোথাও, এসব ভাবতে। বারান্দায় বসে থাকতে যতক্ষণ বাড়ি না ফিরি। তারপর তোমাকে ছেড়ে অন্য শহরে যখন চলে গেলাম, তখন কি আর ঘণ্টা হিসেব করে কুলোতেপারতে! তখন তোমার দিন হিসেব শুরু হল। আমি ফিরেছি তোমার কাছে, আমাকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে বলতে কতদিন পর এলাম আমি। তেতাল্লিশ দিন পর নাকি সাতাত্তর দিন পর। তুমি প্রতিদিন মনে রাখতে দিন কটা গেল। কী করে পারতে মা! তখন তোমাকে খুব বোকা ভাবতাম। বলতামও তোমার কি আর খেয়ে দেয় কাজ নেই, এসব হিসেব করো কেন বসে বসে! ’ হিসেব করা কিন্তু মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। যে করে, সে খেয়ে দেয়ে কাজ থাকলেও করে। যেকরে না, তার অখণ্ড অবসরেও সে করে না। আমি কোনওদিন কোনও কিছুর হিসেব করিনি, তোমার সঙ্গে দেখা না হওয়ার কোনও কিছু। না ঘণ্টা, না দিন, না মাস, না বছর। এক দুই তিন করে বছর চলে গেছে শুধু নিজের চারদিকে আবর্তিত হতে হতে, বুঝিওনি যে চলে গেছে।
তোমার কি কিছু ছিল না আর অপেক্ষা ছাড়া? ছিলই তোনা! কী ছিল তোমার যে কারও জন্য অপেক্ষা না করলেও চলবে তোমার! সংসারটা ছিল, যেটাকে সবচেয়ে আপন ভাবতে তুমি। সংসারে স্বামী আর চারটে সন্তান। বাবাকে আসলে তোমার স্বামী বলে কোনওদিন আমার মনে হয়নি। মানুষটাকে বাবা হিসেবেমানাতো। পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, ভাইপো, বাবা, কাকা, জ্যাঠা, মামা সবকিছুতেই মানাতো। শুধু ওই স্বামীটা মানাতো না। বিশেষ করে তোমার স্বামী। তোমার কি কোনওদিন তা মনে হয়েছে, মা? মনে নিশ্চয়ই হয়েছে। কোনওদিন বলোনি কাউকে। একসময় মনে হত, তুমি বুঝি সব কথা বলো। যেহেতু ভাবতাম তুমি বেশি কথা বলো। পরে বড় হয়ে, আরও অনেক বড় হয়ে বুঝেছিসব কথা তুমি কোনওদিনই বলোনি। তোমার অনেক কথা ছিল, যেসব কেউ কখনও জানেনি। শুধু তুমিই জানতে নিভৃতে। তোমার ভেতরে তোমার নিজস্ব কিছু কথা, কষ্টের কথা, একান্ত তোমারই কথা, তা জানার, আমার মনে হয় না কারও কখনও কোনওদিন কোনও উৎসাহ ছিল। সংসারে তুমি ছিলে, যেহেতু ওই সংসারটা ছাড়া কিছু ছিল না তোমার। ভাবলে শিউরে উঠি। গোটা একটা জীবনে আর কিছু নেই, শুধু খাঁ খাঁ করা ফাঁপা একটা সংসার পড়ে আছে, ইচ্ছে না হলেও এই ফাঁপা ফাঁকা জিনিসটা নিয়ে বাকি জীবন পার করতে হবে।
তুমি তো কোনওদিন শিউরে ওঠোনি! বরং শুরু থেকে শেষ অবধি এই সংসারটাই চেয়েছিলে যেন তোমার হয়। তোমার নিজের হয়। যে সংসারে তোমার জন্য কারওর কোনও ভালোবাসা ছিল না, সেই সংসারটাকে ভালোবাসা দিতে দিতে তুমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলে। নিঃস্ব রিক্ত সর্বস্বান্ত। সব হারিয়ে সব ফুরিয়ে তুমি আমার পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কেন যে তোমার মনে হতো, নির্বাসন থেকে আমি ফিরতে পারবো কখনও বা ফিরবো কখনও। মা, আমি কি তোমার কাছে ফেরার কথা ভেবেছিলাম কখনও? মনে হয় না। আমি চেয়েছিলাম দেশে ফিরতে। আমার ঘরে, আমার সংসারে। আমার বন্ধুদের কাছে। আমার শিল্প সাহিত্যের জগতে। আমার শৈশব কৈশোর যৌবনের স্মৃতির কাছে। চেনা বাড়িঘর, মাঠ মাটি, গাছ নদীর কাছে। স্বজনের কাছে। স্বজন বলতে কত কারও মুখ ভাসতো। তোমার মুখ কি আমার মনে পড়েছে কখনও? কখনও পড়েছে বলে তো মনে পড়ে না। তোমাকে, তুমি খুব ভালো করেই জানতে, যে, ভালো আমি বাসিনি। অভিযোগ করোনি কোনওদিন। ভালোবাসা দাবি করোনি। দাবি কি কারও কাছেই করেছিলে! স্বামীর ভালোবাসা দাবি করারও তোমার স্পর্ধা হয়নি কোনওদিন। শুধু ঘৃণা অবজ্ঞা অবহেলার বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অনুযোগ করতে। যাদের ভালোবাসো, তাদের কাছে কাঁদতে। কাঁদার সময় কখনও বলতে না যে স্বামী ভালোবাসে না বলে তোমার মনে কষ্ট। মনে কষ্ট কারণ স্বামী অপমান করছে প্রতিদিন, কেউ তার ক্রীতদাসীর সঙ্গেও এমন ব্যবহার করে না, যে ব্যবহার তোমার স্বামী তোমার সঙ্গে করে। স্বামী যদি ঘৃণাটা কমাতো, যদি বিষ চোখে না তাকাতো তোমার দিকে, যদি দূর দূর করে না তাড়াতো, তাহলেই যেন ভালো ছিলে তুমি। আর কিছুর আশা তুমি করোনি। সত্যি, ভালোবাসা আশা করার সাহস তোমার হয়নি। ভালোবাসা, তুমি, আমার মনে হয় কারও কাছ থেকেই আশা করোনি। না তোমার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে, না স্বামীর কাছ থেকে।
ভালোবাসা ছাড়াকীকরে বাঁচতে! এখন ভাবলে কী রকম যেনহুহু করে ওঠে বুকের ভেতরটা। একটা মানুষ অন্যকে কেবল দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে, চোখ বুজে, মুখ বুজে কেবল দিয়েই যাচ্ছে। কারও কাছে কিছু চাইছে না। কেউ কিছু দিতে চাইলে বা দিলে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নিচ্ছে। নিয়ে তোমার অভ্যেস ছিল না মা। তাই গুটিয়ে নিতে। লজ্জা পেতে। পেতে কিন্তু ভেতরে ভালো লাগার বীণা বেজে উঠত তোমার, গোপনে গোপনে অহংকার হত খুব। দাদা কোনও শাড়ি এনে দিলে সেই শাড়ির কথা তুমি অনেককে বলতে। নানিবাড়িতে ছুটে গিয়ে বলে আসতে সবাইকে। শাড়িটা সস্তা হলেও বলতে দামি। শাড়িটা যেন তেন হলেও নানাভাবে বোঝাতে চাইতে যে শাড়িটা আসলে টিকবে অনেকদিন, শাড়ির জমিন খুব ভালো। যদিশাড়িটা পরতে বলা হত তোমাকে, পরতে পারতে না। পরতে লজ্জা হত তোমার। নয়তো চোখে জল চলে আসতো খুশিতে। শাড়িটা আমাকে দিয়ে দিতে, নয়তো ইয়াসমিনকে। তুমি তোমার পুরোনো মলিন ছেঁড়া শাড়ি পরেই থাকতে। ওই যে অহংকার করতে, ওই অহংকারটাও করতে তোমার সংকোচ হত। অহংকার করেও তো তোমার অভ্যেস ছিল না। তোমাকে কেউ ভালোবাসছে, ভালোবেসে কেউ দিচ্ছে, তোমাকে নিয়ে ভাবছে, এটা কী যে অসম্ভব ঘটনা ছিল আমাদের বাড়িতে! কী করে ছিলে বাড়িটায়? আমি তোমার জায়গায় হলে বিয়ের পর দিনই হয় স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করে দিতাম, নয়তো কোনও এক সময় নিজেই বেরিয়ে যেতাম। বেরোতে কি তুমি কম চেয়েছিলে! পারোনি। কে তোমাকে আশ্রয় দেবে, তোমার বাবা মা ভাই বোনরা তখন তো ধারণাই করতে পারতো না যে মেয়েরা স্বামীকে ত্যাগ করতে পারে! আবার তোমার ওই অশান্তির সংসারে এক এক করে সন্তান জন্ম নিল, সন্তানদের মুখ চেয়েও সংসার ছাড়তে তুমি পারোনি। ভেবেছিলে, ওরাই তোমার দুঃখ ঘোচাবে কোনও একদিন। সন্তান জন্ম দিলে আমিও হয়তো তোমার মতোই ভাবতাম! বিশেষ করে তোমার মতো যদি কপর্দকশূন্য হতাম বা যদি কোথাও আশ্রয় পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা না থাকতো। তুমি বলতে কোনও বড় বা মাঝারি চাকরি তুমি নিতে পারো না, কারণ তোমার আইএ বিএ পাশ হয়নি। আবার খুব ছোট চাকরি, যেমন লোকের বাড়িতে রান্না করা কাপড় ধোয়া বাসন মাজা, সেটাও তুমি নিতে পারো না, কারণ ও-কাজও তোমাকে দেবে না কেউ, কারণ তুমি খুব গরিব ঘরে জন্ম নাওনি, তোমার আত্মীয় স্বজন কেউ রাস্তায় ভিক্ষে করে না। তোমার কোনও উপায় ছিল না মা। উপায় থাকলে তুমি চলে যেতে। একবার বছর দশেকের ছোটদাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলে চাকরি খুঁজতে। ঢাকা গিয়েছিলে কারণ ময়মনসিংহে তোমার চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। নামি দামি ডাক্তারের বউ ছোটখাটো কোনও চাকরি করতে চাইছে, এ কেউ মানবে না। আবার বাড়ি থেকেও তোমাকে বাইরে চাকরি করতে যেতে কেউ দেবে না। ঢাকার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছো নার্সের চাকরি পেতে। কেউ তোমাকে সে চাকরি দেয়নি। দেয়নি কারণ তারাও কোনও না কোনওভাবে জেনে গেছে তোমার স্বামী একজন ডাক্তার। ডাক্তারের স্ত্রীর তো এত চাকরির প্রয়োজন নেই, দেবে কেন! আর সংসার ফেলে তুমি চাকরি করবে, তাই বা আমাদের সমাজের কর্তারা মানবে কেন। তুমি মোটেও বলতে চাওনি যে তোমার স্বামী ডাক্তার, কিন্তু খুঁচিয়ে তোমার সবকিছু জেনেও নিয়েছে ওরা। মিথ্যেও বলতে পারোনি। মিথ্যে বলতে তুমি জানতে না। স্বামী ডাক্তার, সে তো স্বামী, তুমি তো নও। টাকা পয়সা সে তো স্বামীর, তোমার তো নয়। এ কথা যত বোঝাতে চেয়েছো, তত ব্যর্থ হয়েছে। নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছিলে ময়মনসিংহে। বাড়িতে ছোট কাজই করতে, কিন্তু মাইনে ছাড়া বিনে পয়সার কাজ। তুমি চলে গেলে কোনও একদিন কোনও এক সৎ মা এসে আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে, এই দুশ্চিন্তাও তোমার ছিল, কোথাও শেষ পর্যন্ত তোমার যাওয়া হয়নি। শৈশব কৈশোর জুড়ে শুনেছি, তুমি কোথাও চলে যাবে। খুব ছোট যখন ছিলাম, ভয় হত, তুমি চলে গেলে আবার কী না কী হয় আমাদের। তুমি চলে গেলে তোমার কী হবে ভাবিনি। ভেবেছি, আমাদের কে খাওয়াবে, কে নাওয়াবে, আদর যত্ন করবে কে। ভয় ছিল, আবার রাগও হত তোমার ওপর। আরেকটু বড় হয়ে, আরেকটু বুদ্ধি হওয়ার পর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম, গেলে ঠিক কোথায় যাবে তুমি। তোমার মুখে দ্রুত কোনও উত্তর ফুটতো না। ভাবতে তুমি। ঠিকই তো, কোথায় যাবে! আসলে তুমি বুঝতে যে পৃথিবীর কোনও বাড়ি নেই যেখানে তোমার থাকার জায়গা হবে, পৃথিবীতে মানুষ কেউ নেই যে তোমাকে আশ্রয় দিতে পারে। ‘কোথায় আর, কোনও জঙ্গলে টঙ্গলে’, বলতে। খুব দূরের কোনও জঙ্গলের ইঙ্গিত করতে তুমি, যেখানে কেউ পৌঁছোতে পারে না সহজে, আর যেখান থেকে কেউ কোনওদিন ফিরেও আসতে পারে না। মনে মনে তুমি কোন জঙ্গলের কথা ভাবতে? চোখের সামনে তোমার যে ভেসে উঠবে কোনও জঙ্গল, সে কোন জঙ্গল! তুমি তো দেখনি কোনও জঙ্গল, শহরের কাছেই যে মধুপুরের জঙ্গল, সে জঙ্গলও তোমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ওসব জঙ্গলে তো বড় হয়ে কত আমরা চলে গেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি, কোনওদিন তো ভুলেও তোমাকে নেওয়ার কথা ভাবিনি। আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে যেতাম গাড়িতে, বন্ধু বান্ধব খুঁজতাম কাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারি। তোমার কথা কোনওদিন মনে হয়নি মা। এখন প্রশ্ন করি নিজেকে, কেন মনে হয়নি। আসলে মনে হওয়ার মতো করে তোমাকে ছোটবেলা থেকে দেখিনি, বড়বেলায় যে বোধ জাগতে হয়, সেই বোধটা জাগেনি। ঘরে বসে, আমরা যারা হৈহুল্লোড় করে মধুপুর জঙ্গলে বেড়াতে যাবো, তারা কখন ফিরে আসবো তার অপেক্ষা করবে তুমি। নানা রকম সুস্বাদু খাবার তৈরি করে আমাদের জন্য দরজায় বা জানালায় দাঁড়িয়ে অস্থির অপেক্ষা করবে। দেরি হতে থাকলে তুমি বিড়বিড় করে সুরা পড়তে থাকবে যেন সব অমঙ্গল অতিক্রম করে ফিরতে পারি ভালোয় ভালোয়। জঙ্গলটাও বোধহয় তুমি কল্পনা করেই নিয়েছিলে। সিনেমায় দেখা কোনও জঙ্গলের কথা মনে করতে সম্ভবত। রাজাদের গল্পে মানুষকে বনবাস দেওয়া হত, অথবা সব হারিয়ে কেউ কেউ দুঃখে শোকে একা একা জঙ্গলে চলে যেত। তোমার কল্পনার জঙ্গলটি ঠিক কী রকম গভীর ছিল, জানি না। আমি আমার মতো করে তোমার জঙ্গলটি ভেবে নিতাম, যেখানে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। একবার কেউ সে জঙ্গলে হারিয়ে গেলে, জন্মের মতো হারিয়ে যায়। তোমার জন্য কী আমার ভয় হত? মনে হয় না। বরং রোমাঞ্চকর গল্পের মতো মনে হত সবকিছু। তোমার দিকে লাফিয়ে বাঘ আসছে, সাপ তোমাকে পেঁচিয়ে ধরেছে, তুমি চিৎকার করে বাঁচতে চাইছো, পারছে না। তোমার জন্য খুব মায়া হত বলেও আমার মনে হয় না। জিজ্ঞেস করতাম, কী খাবে জঙ্গলে? বলতে, আল্লাহর এই এত বড় দুনিয়ায় খাওয়ার অভাব হবেনা। আরও চাপ দিয়ে কথা বের করতে চাইলে বলতে যে ফলফলান্তি খেয়েই তোমার কেটে যাবে। আমি ভাবতে চেষ্টা করতাম, নানারকম ফল খাচ্ছো। ফল খেতে আসলেই তুমি খুব ভালোবাসতে। বাড়িতে কত ফলের গাছ লাগিয়েছিলে। কিছু কি খেয়েছে কোনওদিন? হঠাৎহয়তো গোপনে কামড় দিতে কোনও ফলে। গোপনেই। তুমি কি আর প্রকাশ্যে কিছু খেতে পারতে! বাবা লজ্জা দিত বলে খেতে না। খেতে আমাদের ফেলে রাখা আধ-খাওয়া কোনও ফল। নিজে গোটা একটা ফল কখনও খেয়েছো দেখিনি। খেলে চেখে দেখার জন্য খেয়েছে। ফলটা মিষ্টিকী না, রসালো কী না, ভালো জাতের কী না বোঝার জন্য। সবকিছু ছিল তোমার ছেলেমেয়েদের জন্য, ছিল বাবার জন্য, কাজের মানুষের হক আছে বলে তাদেরও দিতে। তোমার নিজেরহকের কথা তুমি নিজে কখনও বলেনি। হয়তো জানতেও না যে তোমার আদৌ কোনও হক আছে, জানলেও ভুলে গিয়েছিলে। আর, আমরাও স্মরণ করিয়ে দিইনি।