ত—তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু, যারা মেরে ফেলার প্ল্যান করছে, তাদেরকে অ্যারেস্টকরা যায় না? কারণ মেরে ফেলার প্ল্যান করা তো আইনের চোখে অপরাধ, তাই না?
প্র–না, অ্যারেস্ট করা যায় না। বিশেষ করে যখন মাইনরিটির ব্যাপার, তখন যায় না।
ত–এটা কোনও কথা হল? আইন তো সবার জন্য এক হওয়া উচিত।
প্ৰ–রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট আলাদা জিনিস।
ত–তা ঠিক। কিন্তু এই টেরোরিস্ট, যাদের কথা আপনি বলছেন, তারা কি আমার বই পড়েছে? মনে তো হয় না।
প্ৰ–তা জানি না। তবে ওরা তৈরি আপনাকে মারার জন্য। সব আয়োজন কমপ্লিট। এখন শুধু টাইমের অপেক্ষা। আর নভেম্বরের মাঝামাঝি তো বিরাট করে বন্ধ ডাকা হচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে। খুব বিচ্ছিরি কান্ড হতে যাচ্ছে।
ত–কী রকম?
প্র–মব চলে আসতে পারে আপনার বাড়িতে।
ত–তাই নাকি? বাড়ি অবদি চলে আসার আগে নিশ্চয়ই বাধা দেওয়া হবে।
প্র–আমি তো আপনাকে প্রোটেকশান দিচ্ছি। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন প্রোটেকশান বাড়িয়েছি অনেক। কিন্তু মব চলে এলে যদি আমার ছেলেরা ওদের একটাকে গুলি করে, তাহলেই তো রায়ট লেগে যাবে।
ত–বলছেন কী?
প্র–ঠিকই বলছি।
ত–রায়ট লাগবে কেন?
প্র–যা রায়ট লেগে যাবে। আপনি চান গুলি চলুক? আপনি চান আপনার কারণে কাউকে গুলি করা হোক?
ত–না আমি চাই না।
প্র–ওদের কারও গায়ে গুলি করলেই রায়ট বাধবেই। মুসলমানদের পাড়ায় খবর হয়ে যাবে। ব্যস।
ত–রায়ট কেন? এখানে কোনও তো হিন্দু মুসলমানের ব্যাপার নেই। এটা ক্রিমিনালিটির ব্যাপার। আইন কি হিন্দু মুসলমান বিচার করে?
প্র–করতে হয়। আইনের কথা বলছেন? আপনি দেখছেন না আপনার বেলায় কী হচ্ছে। কোনও সাপোর্ট পেয়েছেন কারওর? এই যে হায়দারাবাদে মার খেলেন, কেউ কি আপনাকে সাপোর্ট করেছে? কোনও পলিটিক্যাল পার্টি? সবারই মুসলিম ভোট দরকার। সুতরাং এগুলোআপনাকে বুঝতে হবে। আপনার কিন্তু সোসাইটিতে কোনও সাপোর্ট নেই।
ত–আমি তো সাধারণ মানুষের সাপোর্ট পাই।
প্র–কে বলেছে আপনাকে?
ত–আমি বলছি। মানুষ আমাকে ফোন করছে। চিঠি লিখছে। বলছে, আমার লেখা তাদের ভালো লাগে।
প্র–ওসবে কিস্যু হবে না। কোনও পলিটিক্যাল পার্টি আপনাকে সাপোর্ট করছে না, সেটা বড় কথা। খুব বাজে অবস্থা আপনার। চা বিস্কুট খেতে খেতে প্রসূন মুখার্জি কথা বলতে থাকেন।
প্র–মাইনরিটি লিডাররা দেখা করবে সিএম-এর সঙ্গে। ওরা তো আপনাকে ডিপোর্টেশনের দাবিতে পথে নামছে। ওরা প্ল্যান করছে সিএমএর কনভয় আটকাবে। আটকালে আমাদের তো লাঠিচার্জ করতে হবে। আর লাঠিচার্জ করার মানে জানেন? খবর হয়ে যাবে। বিরাট রায়ট লেগে যাবে। লাগবেই।
ত–অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
প্র–অবিশ্বাস্য নয়। আপনার জন্য তো রায়ট লাগবে কলকাতায়। আপনি থাকলে রায়ট লাগবেই।
ত–কলকাতায় আমি থাকলে রায়ট লেগে যাবে। এত বছর কলকাতায় আছি আমি, কোনওদিন কিছু হয়নি। আর হঠাৎ করে রায়টের মতো কাণ্ড ঘটবে, এ আমার বিশ্বাস হয় না।
প্র–বিশ্বাস না হলে সেটা আপনার প্রবলেম। তবে ঘটনাটা তাই ঘটতে যাচ্ছে। এখন আপনাকে ডিসিশান নিতে হবে।
ত–কী ডিসিশান?
প্র–আপনি কিছুদিনের জন্য কোথাও চলে যান। ত মানে? প্র মানে আপনাকে কিছুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোথাও যেতে হবে। ত কোথায়?
প্ৰ–ইওরোপে চলে যান না।
ত–ইওরোপে? কিন্তু ওখানে তো আমার বাড়িঘর নেই।
প্র–দেখুন, কোথাও থাকার বন্দোবস্ত করুন।
ত–ফিরবো কবে?
প্র–পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন।
ত–(হেসে) মনে পড়ছে বাংলাদেশ থেকে যখন চুরানব্বই সালে আমাকে প্লেনে তুলে দেওয়া হয়, আমাকেও বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন। আজ তেরো বছর হয়ে গেল, পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি।
প্র–আপনি ফিরে আসতে চাইলে নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।
ত–কিন্তু আমি তোইওরোপে যেতে পারবোনা। ওখানে সব গুটিয়ে আমি এসেছি। গেলে ওখানে আমাকে হোটেলে থাকতে হবে। সে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর আমার কাছে আমার বোন আসছে দুদিন পর। অনেকদিন থাকবে।
প্র–বোনকে নিয়ে চলে যান।
ত–কোথায় যাবো?
প্র–আমেরিকায় চলে যান।
ত–আমেরিকা থেকেই তো আসছে আমার কাছে। ওকে নিয়ে আমি আমেরিকা যাবো কেন?
প্র–তবে অন্য কোথাও চলে যান।
ত–আমি তো বললাম আপনাকে, ইওরোপ বা আমেরিকায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি অত খরচ কুলোতে পারবো না।
প্র–তাহলে ভারতের কোথাও যান।
ত–কোথায় যাবো?
প্ৰ–সে আপনি খুঁজে দেখুন কোথায় যাবেন। কেউ নেই আপনার চেনা পরিচিত কোথাও ভারতের কোনও রাজ্যে?
ত–আমার চেনা আছে তোঅনেকে। আমার পাবলিশার আছে কেরালায়, মহারাষ্ট্রে, উড়িষ্যায়। কেরালার সরকার আমাকে বেশ ভালোবাসে। এডুকেশন মিনিস্টিার এমএ বেবি আমাকে তার বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছেন। ফরেস্ট মিনিস্টারের বাড়িতেও ব্রেকফাস্টের জন্য ডেকেছিলেন। ওঁরা বেশ চমৎকার মানুষ।
প্ৰ–কেরালায় চলে যান। আপনার পাবলিশারকে বলুন আপনার থাকার ব্যবস্থা করতে।
ত–কিন্তু ওখানে তো মানুষ জেনে যাবে যে আমি গেছি। গতবার কেরালায় কিছু মুসলিম মৌলবাদী আবার আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।
প্র–কেরালায় জানিয়ে দিন আপনি আসছেন। ওখানে প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করবে, সে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আর কোথায় বললেন, মহারাষ্ট্র?
ত–ওখানে আমার মারাঠী পাবলিশার আছেন। অনিল মেহতা। উনিও খুব ভালো।