প্র– অবস্থা তো খুব খারাপ।
ত–কী রকম খারাপ?
প্র—কিছু নন-বেঙ্গলি মুসলিম তো আপনাকে মেরে ফেলার সব প্ল্যান করে ফেলেছে।
ত–তাই নাকি?
প্র–যা তাই। আমি তো আপনাকে সিকিউরিটি দিচ্ছি। আমার ছেলেরা তো সব আছে এখানে। সিকিউরিটি বাড়িয়েছি তো অনেক। জানেন তো?
ত–হা নিশ্চয়ই। অনেক ধন্যবাদ। আমি খুব নিরাপদ বোধ করছি এখন।
প্র–কিন্তু আপনি হায়দারাবাদে না গেলেই পারতেন। হায়দারাবাদে যাওয়াটা উচিত হয়নি আপনার।
ত–আসলে কয়েক বছর থেকেই যেতে বলছিলো। বারবারই না বলে দিয়েছি। কিন্তু এবার আমার বই এর প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করে এমন করুণভাবে ডাকাডাকি করলো যে, মনে হল, না হয় ঘুরেই আসি। শহরটায় আগে যাইনি কখনও, যাওয়াও হল।
প্র–যাওয়া উচিত হয়নি।
ত–ওখানে যে সিকিউরিটির ব্যবস্থা ছিল না, আমি জানতামই না। আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যারা, বুঝতে পারেনি এরকম কিছু ঘটতে পারে।
প্র–হুম। খুব ভুল করেছেন।
ত–ভুল করবো কেন? হায়দারাবাদে যে অমন ঘটনা ঘটবে, তা তো আর আমি আগে থেকে জানি না!
প্র–হায়দারাবাদে কেন গিয়েছিলেন?
ত–আমার একটা বই তেলুগু ভাষায় বেরিয়েছে। বইটার উদ্বোধন করতে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন হায়দারাবাদের প্রকাশক।
প্র–আপনার বই? হায়দারাবাদে? কেন? কেন ওরা তেলুগু ভাষায় বের করেছে? কী কারণে?
ত–আমি তো বই লিখি বাংলা ভাষায়।
প্র–সেটা জানি।
ত–বাংলা ভাষায় বই বেরোলে সে বই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। তেলুগু ভাষায়ও হয়েছে।
প্র–তাই নাকি?
ত–হ্যাঁ। তেলুগু ভাষা ছাড়াও অন্য ভাষাতেও আছে বই।
প্র–সত্যি বলছেন?
ত–মিথ্যে বলবো কেন?
প্র–আর কোন ভাষায় বই বেরিয়েছে?
ত–মারাঠি, হিন্দি, উড়িয়া, অসমীয়া, পাঞ্জাবি, মালায়ালাম..
প্র–তাই নাকি? কেন? কেন ওসব ভাষায় বেরিয়েছে?
ত–বেরিয়েছে কারণ ওসব ভাষার মানুষ আমার বই পড়তে চেয়েছে। তাই পাবলিশাররা ছাপিয়েছে।
প্র–যাই হোক। আপনার হায়দারাবাদে যাওয়াটা উচিত হয়নি।
ত–গিয়েছি তো ভারতের অনেকগুলো রাজ্যে। ওসব জায়গায় সংবর্ধনা দিয়েছে। আমার ভালোও লাগে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশতে। আর পাঠকের সঙ্গে কথোপকথন তো ভালো লাগারই কথা।
প্র–হায়দারাবাদ ছাড়াও অন্য জায়গায় গিয়েছেন?
ত–তা তো গিয়েছিই। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই আমাকে ডাকা হয়।
প্র–কেন ডাকে আপনাকে? কে ডাকে?
ত–প্রকাশক আমন্ত্রণ জানান। সাহিত্য সংগঠন থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সব সময় যাওয়া হয় না। মাঝে মাঝে যাই। কখনও তো কোথাও ভালো ছাড়া মন্দ কিছু ঘটে না। সব রাজ্যেই অবশ্য নিরাপত্তার একটা ব্যবস্থা থাকে। দিল্লিতে দুবার গিয়েছি। একবার উইমেনস ওয়ার্ল্ডের আমন্ত্রণে। আরেকবার রাডিক্যাল হিউম্যানিস্টদের আমন্ত্রণে। তখন কোনও সিকিউরিটিই ছিল না। কিছু তোবিপদ হয়নি।
প্র–তাই নাকি? কেন ডেকেছিল ওরা?
ত–মানবাধিকার নিয়ে বা নারীর অধিকার নিয়ে কিছু বলার জন্য, অথবা নিজের লেখা থেকে পড়ার জন্য, এরকম আমন্ত্রণ তো জানানোই হয়।
প্র–কারা শোনে?
ত–মানুষ।
প্র–ও।
ত–(দীর্ঘশ্বাস)
প্র–কী বলেছিলেন আপনি হায়দরাবাদে? কেন আপনাকে অ্যাটাক করলো?
ত–শোধ বইটার অনুবাদ হয়েছে ওখানে, একটা মেয়ের জীবনকাহিনী। আমার বক্তব্যে আমি শুধু মেয়েদের নিজের ডিগনিটি নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারের কথা বলেছি।
প্র–ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছিলেন?
ত–ধর্মের ধ-ও উচ্চারণ করিনি। ইসলামের ই-ও উচ্চারণ করিনি।
প্র–তাহলে ওরা ক্ষেপলো কেন?
ত–আমার সম্পর্কে একটা প্রচার হয়েছে চারদিকে, আমি নাকি অ্যান্টি ইসলাম, সে কারণেই অ্যাটাক। অবশ্য পরে নানা লেখালেখি থেকে যা জানলাম তা হল, মুসলমানদের ভোট পাওয়ার জন্য আমাকে আক্রমণ করে বোঝাতে চেয়েছে ওরা ইসলামকে আমার হাত থেকে বাঁচাচ্ছে।
প্র–আপনার বিরুদ্ধে কলকাতায় ফতোয়াও জারি হয়েছে।
ত–ফতোয়া তো অনেক জারি হয়েছে। এখন তো ফতোয়া নিয়ে তেমন কিছু আর হচ্ছে না। আর আপনি তো টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে একবার বোঝাতে পারেন। আগের বার ফতোয়া দেওয়ার পর আপনি তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে কথা বলার পর সে বলেছিল, ফতোয়াই নাকি দেয়নি। ওরকম করে এবার তো তাকে ডাকতে পারেন।
প্র–ওই ইমামের কথা বাদ দিন। ইমাম কোনও ভয়ংকর লোক নয়। যারা সামনে আসছে, ফতোয়া দিচ্ছে, ওরা ভালো। খারাপ লোক নয়। খারাপ লোক সব দল পাকাচ্ছে। তারা ডেনজারাস। গোপনে গোপনে সব তৈরি হয়ে আছে। আমাদের কাছে খবর আছে, ওদের প্ল্যান প্রোগ্রাম হয়ে গেছে আপনাকে মারার।
ত–আপনি জানেন কারা ওরা?
প্র–জানি।
ত–সব খবর যদি জানেন কারা এসব করছে, তাহলে তো অ্যারেস্ট করতে পারেন।
প্র–না, সেটা সম্ভব না।
ত–আমার মনে হয়না কিছু হবে। আমার সঙ্গে তোসিকিউরিটির লোক আছে। মনে হয়না ওরা এই কলকাতায় একজনকে প্রাণে মেরে ফেলার সাহস পাবে।
প্র–কী করে জানেন আপনি? আমি কি খবর না জেনে বলছি?
ত–কিছু তো ঘটছে না। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীরা বলেছিলো মহাকরণ ঘেরাও করবে। সেই প্রোগ্রামও তত বাদ দিয়েছে।
প্র–(ধমক মেরে, জোরে) আপনি আমাকে ইনফরমেশন দেবেন নাকি আমি আপনাকে ইনফরমেশন দেব?
ত–কাগজে পড়লাম বলে বলছি।
প্র–খবরের কাগজ কিচ্ছু জানে না। আমরা সব জানি। গোপনে কী হচ্ছে শহরে, তা জার্নালিস্টরা কী করে জানবে! (ধমক)