ইয়াসমিন এক রাতে বাড়ি ফেরে না। রাত গভীর হতে থাকে, বাড়ি ফেরে না। শহরে ওর যত বন্ধু বান্ধবী আছে সবার বাড়িতে গিয়ে খুঁজি, না ও নেই। ওর চেনা পরিচিত কারও বাড়িতেই ও নেই। আত্মীয়দের বাড়িতেও খুঁজি, নেই। রাত পার হয়, আমি আর মা নির্ঘুম রাত পার করি। বাবা সারারাতই পাঁয়চারি করেন ঘরে। কোথায় হারাবে মেয়ে? অন্যদিনের মত কলেজে গেছে, কলেজ থেকে দুপুরে না হোক বিকেলে বাড়ি ফেরে, সেখান বিকেল পেরিয়ে রাত পেরিয়ে ভোর হতে যাচ্ছে, ইয়াসমিনের কোনও খবর নেই। আশঙ্কায় আমি নীল হয়ে থাকি। মার দুচোখ বেয়ে অবিরল জলের ধারা, তিনি মেঝেয় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজের পর নামাজ পড়ে যাচ্ছেন আর আল্লাহর কাছে মেয়েকে যেখানেই রাখেন হেফাজতে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন। ভোরবেলা থেকে কালো ফটকের সামনে বসে আছি, সকাল কেটে যায়, দুপুর পার হয়, ইয়াসমিন ফেরে না। বাবা বার বার চেম্বার থেকে ফোন করছেন বাড়িতে ইয়াসমিন ফিরেছে কি না জানতে। মা বুড়া পীরের মাজারে গিয়ে কিছু একটা মানত করে আসেন। আমার শ্বাস কষ্ট হতে থাকে দুর্ভাবনায়। আমার আর চিন্তা করার শক্তি থাকে না কোথায় ও যেতে পারে। রাত যখন নেমে আসে, রাত নেমে রাত বাড়তে থাকে, তখন খবর আসে ইয়াসমিন সানকিপাড়ায়, ওর ক্লাসে পড়ে ছেলে মিলনের বাড়িতে। খবরটি ঈশান চক্রবর্তী রোডে থাকে জাহাঙ্গীর নামের ইয়াসমিনের চেনা একটি ছেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে নিয়ে আমি ছুটি সানকিপাড়ায় ওকে নিয়ে আসতে। একটি বিছানায় হাঁটুতে মাথা গুঁজে ও বসে ছিল। কি হয়েছে ইয়াসমিনের! আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত ধরলে ও এক ঝটকায় ওর হাত ছাড়িয়ে নেয়। বলে ‘ছুঁয়ো না আমারে!’
ছোঁবো না, হয়েছে কী! কেউ কিছু বলেছে! রাগ কেন!
‘চল বাসায় চল।’
‘না।’
এ কেমন উত্তর!
ইয়াসমিনের বক্তব্য মিলনের বড় ভাই মানু যা জানায় তা হল ইয়াসমিন মিলনকে বিয়ে করতে চায়। এক্ষুনি যেন আমরা ওকে মিলনের সঙ্গে বিয়ে দিই। হতবাক আমি জীবনে আর কখনও এভাবে হইনি! আমি বাকরুদ্ধ বসে থাকি। মিলনের সঙ্গে কোনওরকম প্রেমের সম্পর্ক ওর নেই এ ব্যপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু কী কারণে বিয়ের মত একটি অশালীন শব্দ ইয়াসমিন উচ্চারণ করতে পারে আর এমন অসভ্যের মত বিয়ের আবদার করছে আমি বুঝতে পারি না। ইয়াসমিন ঘোষণা দিয়ে দেয়, ও আর অবকাশে ফিরবে না। ফিরবে না তো ফিরবেই না। টেনে হিঁচড়ে তো নেওয়া সম্ভবই নয়, আদর করে বুঝিয়েও কোনও কাজ হয় না। শরীর লোহার মত শক্ত করে রেখেছে, মনটিকেও জানি না কি দিয়ে পিটিয়ে লোহা বানিয়ে নিয়েছে। ওর সব কিছু বড় অদ্ভুত লাগে। আজ ওর কাছে আমি বা দাদা কেউ নই, মিলন সারাক্ষণই বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল মাথা নিচু করে, যখন ভেতরের ঘরে এই নাটক ঘটছিল। ইয়াসমিন বেরিয়ে ছিল গতকাল জামা পাজামা পরে, এখন পরে আছে নীল একটি শাড়ি। শত ভেবেও আমার মাথায় কিছু ঢোকে না কি ঘটেছে, কি কারণে ও এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মানুর কাছে জিজ্ঞেস করে কোনও উত্তর পাই না। দাদা ইয়াসমিনকে বুঝিয়ে বললেন, ‘বিয়ে তো এভাবে হয় না, এখন বাড়ি চল, পরে বিয়ের ব্যবস্থা হবে।’ আমিও বললাম, ‘এই মিলনকেই যদি তোর বিয়ে করতে হয়, ঠিক আছে লেখাপড়া শেষ কর, পরে ওকেই বিয়ে কর।’ ইয়াসমিন তিন দিন সময় দেয়, তিন দিনের মধ্যেই যেন ওর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় মিলনের সঙ্গে। আমি হু হু করে কাঁদলাম বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে। ইয়াসমিন আমার কান্না দেখেও মত পরিবর্তন করেনি। মধ্যরাত পার হয়ে যায় কেবল বিয়ের ব্যপারটির মিমাংসা করতে। ইয়াসমিনের ঘোষণা আমার নিজের কানে শোনা হয় না, ও মিলনের ভাই বোনের কাছে বলেছে ওর যা বলার। ওরাই এখন আপন ওর, যা কিছু ও জানাতে চাইছে, জানাচ্ছে ওদের দিয়ে। আমাকে সরাসরি ও কিছু বলে না। ওর কেন হঠাৎ আমার ওপর এই রাগ, আমি বুঝে পাই না। কী এমন ঘটেছে, আমি কী করেছি যে আমার ওপর এই রাগ! রাতে আমার আর অবকাশে ফেরা হল না। দাদা ফিরে গেলেন। আমি রাতটুকু ওর পাশে শুয়ে আরও একটি নির্ঘুম রাত কাটালাম। রাতে যতবারই চুপি চুপি জিজ্ঞেস করেছি কি ঘটেছে যেন আমাকে বলে ও, যতবারই আমি ওর কাঁধে বা হাতে আলতো করে হাত রেখেছি, ও আমার হাত সরিয়ে দিয়েছে শক্ত হাতে। ও নিজেও ঘুমোয়নি। নাটকটির পেছনে কোনও রহস্য আছে, আমি নিশ্চিত। পরদিন সকালে ইয়াসমিনকে অবকাশে ফিরিয়ে নিয়ে আসি কথা দিয়ে যে বিয়ে মিলনের সঙ্গেই ওর হবে, আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু। এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না ওকে বাড়ি নিয়ে আসার। সারা পথ ও আমার সঙ্গে কোনও কথা বলে না। আমার চোখের দিকে তাকায় না। এরকম পরদিনও। সারাদিন শুয়ে থাকে দেয়ালের দিকে মুখ করে। দাদা বাড়ি এলে চেঁচিয়ে নির্লজ্জের মত নিজের বিয়ের কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়। আমার সহস্র প্রশ্নের একটি উত্তরও ও দেয় না। বলে না কি হয়েছে ওর, যে রাতে বাড়ি ফেরেনি, কোথায় ছিল সে রাতে, বলে না। কী এমন ঘটেছে যে মিলনকে ওর তিনদিনের মধ্যেই বিয়ে করতে হবে, বলে না। রহস্যের কোনও কূল কিনারা আমি পাই না। বাড়ির কেউই পায় না। পরে, অনেক বছর পর যখন নিজের স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করছে ইয়াসমিন, যখন ওর সেই বয়সের আড়ষ্টতাগুলো দূর হয়েছে, বলেছে কি ঘটেছিল সে রাতে। একই ক্লাসে পড়া বন্ধু-মতো ছেলে মিলন তার বড় ভাইয়ের মোটর সাইকেল চালিয়ে কলেজে গিয়েছিল। ক্লাস শেষে মিলন ইয়াসমিনকে আমন্ত্রণ জানায় মধুপুরে বেড়াতে যাওয়ার। ইয়াসমিন না করেনি। মোটর সাইকেলের পেছনে বসে দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ব্যপারটি স্পষ্টতই লোভনীয়। মধুপুরে বোটানির ছাত্রছাত্রী গাছপালা দেখতে দেখতে জঙ্গলে হাঁটে। কোন গাছের কি নাম, কোন পাতায় কি অসুখ তা বলতে বলতে, কিছু পাতা আর শেকড় তুলে জমাতে জমাতে মধুপুর কটেজের দিকে হেঁটে যেতে থাকে যেখানে মোটর সাইকেলটি দাঁড় করানো। কটেজ পর্যন্ত পৌঁছোয়নি, তখনই একটি পেটমোটা পুলিশ এসে দুজনকে থামতে বলে। পেটমোটা ওদের দিকে বাঁকা হাসি ছুঁড়ে বলল, ‘কি করস তরা এইখানে!’ ওরা জানালো যে ওরা কলেজে পড়ে, কলেজ থেকে এখানে এসেছে ঘুরে ঘুরে গাছপালা দেখতে। পেটমোটা বিকট হাসি হাসে। এদিক ওদিক দেখে নিয়ে কেউ আসছে কি না, খেঁকিয়ে ওঠে, ‘পাঁচ হাজার টাকা দে।’ পাঁচ হাজার টাকা কেন দিতে হবে এ কথাটি জিজ্ঞেস করার আগেই পেটমোটা বলে, ‘জঙ্গলে অবৈধ কাজ করতে আইছস, টাকা না দিলে এইখান থেইকা যাইতে পারবি না।’ ওরা অস্বীকার করল, কোনও রকম অবৈধ কাজ করার উদ্দেশে ওরা আসেনি। পেটমোটা কান দেয় না ওদের কথায়। ইয়াসমিনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে, ‘ছেড়ি তো বাজারের ছেড়ি, দেইখ্যাই তো বুঝা যাইতাছে।’ না, দেখে তা মনে না হলেও পেটমোটা বলল তা। মিলন বলল তার হাতে টাকা নেই, টাকা নিয়ে আসতে তার শহরে যেতে হবে। পেটমোটা খপ করে ইয়াসমিনের হাত ধরে মিলনকে বলে, ‘যা শহরে, তুই যা, এইটারে রাইখা যা।’ইয়াসমিন পেটমোটার খসখসে শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে ব্যর্থ হয়। মিলনের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলে, ‘মিলন তুমি যাইও নাঞ্চ। করুণ চোখে তাকিয়ে অনেকে অনেক কিছু আবদার করে, কিন্তু সেই আবদার সবাই রাখে না। নিজের কথা ভাবে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে যে একটি কথা আছে, তা মিলন জানে না তা নয়, জানে। মিলনের ওপর এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সে ইয়াসমিনকে এই জঙ্গলে এক বদমাশ পুলিশের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে কী না। মিলন চলে গেলে টাকা নিয়ে সে ফিরুক না ফিরুক, পুলিশ ইয়াসমিনকে অক্ষত অবস্থায় রাখবে না। হয়ত ওকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যাবে জঙ্গলে। লজ্জায় শরমে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না ওর। চোখ কান নাক মুখ বন্ধ করে এরকমই ভাবছে ইয়াসমিন। মিলনের একটি হাত মোটর সাইকেলে, আরেকটি হাত কোমরে, কোমরের হাতটি যদি মোটর সাইকেলের হাতল স্পর্শ করে, যদি করে এই ভয়ে ইয়াসমিন চোখ খোলে না। আশঙ্কায় কাঁপছে ও ভেতরে, বধির হতে চাইছে যেন ওকে শুনতে না হয় মোটর সাইকেল স্টার্ট হওয়ার কোনও ভয়ংকর শব্দ। ইয়াসমিনের অনুরোধ মিলন না রাখতেও পারত। মোটর সাইকেলে চড়ে দিব্যি চলে যেতে পারত পেছনে কি হবে না হবে তার কিছুই না ভেবে, পুলিশ তো তাকে ছেড়েই দিয়েছে। হ্যাঁ মিলন চলে যেতে পারত, ইয়াসমিন তার কোনও প্রেমিকা নয় যে ঝাঁপিয়ে পড়বে বিপদ থেকে ওকে উদ্ধার করতে। কিন্তু মিলন যায়নি। না সে যায়নি। পুলিশকে বলেছে, ‘মোটর সাইকেল রাইখা দেন, আমাদেরে যাইতে দেন, শহর থেইকা টাকা নিয়া আসি।’ নাহ, মোটর সাইকেল পুলিশ রাখবে না, রাখবে ইয়াসমিনকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে সে যা ইচ্ছে তাই করবে ওকে। কারও অনুমান করতে অসুবিধে হয় না কী করবে। ইয়াসমিন ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পুলিশের মুহূর্মহু আদেশেও মিলন জিম্মি হিসেবে একা ইয়াসমিনকে রাখতে দেয়নি। মিলন যখন স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে সে যাবে না, হারিয়ে যেতে থাকা জীবনটি ইয়াসমিন হাতে পেল, কৃতজ্ঞতায় সে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তারপর সত্যি সত্যি যখন একসময় সন্ধে নামল, ঝুপঝুপ করে অন্ধকার ঝরে জঙ্গল কালো হয়ে গেল, পুলিশ ওদের দুটিকে নিয়ে বনবিভাগের এক কর্মকর্তার বাড়িতে ঢুকিয়ে বলে এল, কাল সকালে গুণে গুণে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে যেন ওরা বেরোয়। মোটর সাইকেল জমা রইল পুলিশের কাছে। সেই বাড়িতে ইয়াসমিনের নাম ঠিকানা যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বিবর্ণ মুখে ইয়াসমিন বাবার নাম আবদুর রফিক, পেশা ব্যবসা, ঠিকানা কাঁচিঝুলি বলে নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখে দুহাতের দু মুঠির মধ্যে। রাখে কারণ নিজের বাবা স্বনামধন্য ডাক্তার রজব আলীর মুখে ও চুন কালি দিতে চায় না। মেয়ে রাতে বাড়ি ফেরেনি, কোনও এক ছেলেসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, এর চেয়ে বড় কলঙ্ক একটি মেয়ের জীবনে আর কী হতে পারে! ইয়াসমিন সারারাত ঘুমোয় না। ওকে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছে বাচ্চাকাচ্চাদের ঘরে। সারারাত বারান্দার একটি ঘরে মিলনও না ঘুমিয়ে কাটায়। মিলন কর্মকর্তার বাড়ি থেকে এক বন্ধুকে ফোন করে দিয়েছে যেন খুব সকালে পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় করে মধুপুরের বনবিভাগের কর্তার বাড়িতে আসে। সকালে বন্ধু টাকা নিয়ে এলে সেই টাকা পুলিশকে দিয়ে মোটর সাইকেল ফেরত নিয়ে দুজনে ফেরে শহরে। শহরে তো ফিরল, এখন কী হবে! কলঙ্ক যাবে কোথায়! এক রাতের কলঙ্ক মোচন করবে ইয়াসমিন কী করে! মিলন পরামর্শ দেয়, এই মুহূর্তে বিয়ে ছাড়া এই কলঙ্ক থেকে মুক্তির কোনও উপায় নেই। ইয়াসমিন রাজি হয় না। অবকাশের কাছেই ওর চেনা সেই জাহাঙ্গীর ছেলেটির বাড়িতে উঠল, সারাদিন ভাবল অবকাশে ফিরবে কী ফিরবে না। ফিরলে সকলে ঘিরে ধরবে, জিজ্ঞেস করবে কাল রাতে কোথায় ছিল ও। কী উত্তর দেবে! ও তো নানির বাড়ি ছিল না, কোনও খালার বাড়িতে ছিল না, কোনও বান্ধবীর বাড়িতে ছিল না। ছিল না যে এসব কোনও বাড়িতে, তা তো অবকাশের সকলে কাল রাতেই জেনে গেছে নিশ্চয়ই। জাহাঙ্গীরের বাড়ি থেকে অবকাশের কালো ফটকের সামনে এসে সন্ধেবেলায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছে। ঢুকবে কি ঢুকবে না করেছে। অপেক্ষা করেছে, কিসের অপেক্ষা ও নিজেই জানে না। কোনও আলো এসে ওর রাতের কলঙ্ক মোচন করার অপেক্ষা! কোনও জাদু বলে জীবনকে একটি রাত পিছিয়ে নিতে পারার অপেক্ষা! না, কিছুই গতরাতের নিখোঁজ হওয়া মেয়ের কলঙ্ক মোচন করে না। এরপর নিজের ওপর ধিককার ওকে মিলনের বাড়িতে নিয়ে নাটকটি ঘটায়। মুখ দেখাতে তখনও ও পারেনি, তাই হাঁটুতেই গোঁজা ছিল মুখ। নাটকের যবনিকা পতন হওয়ার পর অবকাশে ফিরেছে বটে, গোঁজা মুখটি তুলেছে বটে, কিন্তু চোখ কারও চোখে পড়তে দেয় না, চোখ হয় দেওয়ালে, নয়ত কড়িকাঠে। ও যেন এ বাড়ির কেউ নয় আর, সেই আগের ইয়াসমিন ও নয়, এ বাড়ির কণিষ্ঠা কন্যা ও নয় আর। দেখে এত মায়া হয় আমার, মায়া হয় আবার রাগও হয়। শত জিজ্ঞাসাতেও যখন ও মুখ খোলে না, বলে না কী ঘটেছে যে এমন হুট করে বিয়ে করতে হবে ওর, আমি দরজার চৌকাঠে বসে সন্ধের আঁধার আঁধার উঠোনের দিকে তাকিয়ে, যেন বিছানায় শুয়ে থাকা ও শুনতে পায়, মুখ এদিকে না ফেরালেও, বলি ‘জীবন কিন্তু একটাই, যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘইটা থাকে ওই রাত্রে, তাইলে কী হইছে এমন! মানুষের জীবনে কত দুর্ঘটনাই ত ঘটে, এইল্লিগা বিয়া করতে হইব? তর সাথে কী সম্পর্ক মিলনের? যদি ওর সাথে গোপনে গোপনে প্রেম কইরা থাকস, যদি ওরে ছাড়া না বাচস, তাইলে যা, বিয়া কর। বিয়া করার শখ হইছে বিয়া কর। কিন্তু একটা জিনিস মরে রাখিস, বিয়া করার সিদ্ধান্ত হুট কইরা লওয়া বালা না। নিজে আগে লেখাপড়া শেষ কইরা চাকরি কর। তারপর ত বিয়া। নিজের পায়ে দাঁড়া আগে। কারও ওপর ডিপেণ্ডেন্ট হইস না। বোটানিতে মাস্টার্স কর। পিএইচডি কর। টিচার হ। তুই তো এগ্রিকালচার ইনিভার্সিটির টিচার হইতে পারবি। বিয়া করার শখ হইছে, তাইলে মিলন কেন? ও কী জানে? কী পারে? শুদ্ধ কইরা ত একটা বাক্যও কইতে পারে না। তার ওপর মানুর ভাই ও। অমন শয়তানের ভাই আর কত ভাল হইব! কত ভাল ভাল ছেলেরা আসে এই বাড়িতে। তাদেরে কাউরে পছন্দ কর। আমার অনেক ডাক্তার বন্ধুই তো তরে বিয়া করার সুযোগ পাইলে ধন্য হইয়া যাইব।’