ভালও নয়, মন্দও নয় কাজটি করার ভার তারিক সুজাত নেয়। তারিকের অল্প বয়স, তার ওপর বাচ্চা বাচ্চা মুখ। জাতীয় কবিতা পরিষদ গড়ার সময় যে সব তরুণ কবি দিন নেই রাত নেই দৌড়োদৌড়ি করেছে, তারিক সুজাত তাদের মধ্যে একজন। পরিষদ গঠন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের চৌরাস্তায় মঞ্চ সাজিয়ে বিরাট করে জাতীয় কবিতা উৎসব করার সেই উত্তেজিত উদ্দীপ্ত সময়ে তারিক সুজাত মোজাম্মেল বাবু শিমুল মোহাম্মদ এমন আরও তরুণ কবির সঙ্গে আমার আর রুদ্রর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। রুদ্রর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে যখন, যখন সম্পর্কটি যায় যায় যাচ্ছে যাচ্ছে অথবা গেছে, তখনও এদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হত। মোজাম্মেল বাবু প্রকৌশলী হয়েও কৌশলে প্রকৌশলে পা না বাড়িয়ে শৈলী নামে একটি পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা বের করছে। শৈলীর আপিস স্টেডিয়ামের দোতলায়। সাহিত্যের নেশায় বৈষয়িক জগত থেকে মুখ ফিরিয়েছে বাবু। ধনী বাবার ছেলে হয়ে মলিন পোশাকে ঘোরাঘুরি করে। তারিক সুজাতও তাই। তারিককে বই ছাপার সব খরচ দফায় দফায় ঢাকা গিয়ে দিয়ে আসি। বইয়ের পঈচ্ছদ করছেন খালিদ আহসান, শুনে খুব ভাল লাগে। চট্টগ্রামে বাড়ি খালিদের। বইমেলার আগে আগে ঢাকা এসে কিছু বইয়ের চমৎকার পঈচ্ছদ করে দিয়ে যান। নিজে তিনি কবিও। বইটি যেদিন আমার হাতে পাওয়ার কথা, সেদিন তো হাতে আসেইনি, মাস চলে যায়, বইয়ের নাম গন্ধও নেই। তারিককেও খুঁজে পাওয়া যায় না। গরু খোঁজার মত খুঁজে যখন পেলাম, বলে দিল বইএর কাজ এখনও শেষ হয়নি। একশ কাজের কাজীকে এ কাজটি দেওয়া মোটেও উচিত হয়নি, বুঝি। বই যখন কাঁচা বেরোলো বাঁধাই ঘর থেকে, তখন ফেব্রুয়ারির বইমেলার শেষ দিকে। একুশে ফেব্রুয়ারিও পার হয়ে গেছে। ছোটদার বাড়ির খাটের তলায় বইয়ের বাণ্ডিলগুলো রেখে দিই। কিছু বই মেলার কিছু দোকানে সদলবলে দিই বটে, দ্বিধায় সংকোচে আমি বইয়ের দোকানগুলোর আশপাশ দিয়ে হাঁটি না, যদি দেখি যে পাঁচটি বই দোকানে ছিল, সেই পাঁচটিই পড়ে আছে অনাথের মত! বিক্রি যদি কিছু হয় তো হয়েছে। খোঁজও নিই না। টাকা আনতেও দোকানে উঁকি দিই না। মেলার চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে কাটাই। মেলা শেষ হলে বইয়ের বস্তা নিয়ে ময়মনসিংহে ফিরি। গাঙ্গিনাড় পাড়ের কবীর লাইব্রেরী আর পারুল লাইব্রেরীতে বই রেখে আসি যদি কেউ কেনে। কদিন পর পর লাইব্রেরীতে বই কিনতে গিয়ে আমার পড়ে থাকা বইগুলোর দিকে চোখ পড়ে। চোখ ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ফিরি। এই মনোকষ্ট থেকে নাইম আমাকে উদ্ধার করে। নাইমের সঙ্গে পরিচয় আবু হাসান শাহরিয়ারের মাধ্যমে। শাহরিয়ার ময়মনসিংহে এসেছিল কবিতা অনুষ্ঠানে। শাহরিয়ার ছড়া লেখে, ময়মনসিংহের ছড়াকার আতাউল করিম সফিকের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ওর। আতাউল করিমই ওকে নিয়ে যায় টাউন হলের বটতলায় সকাল কবিতা পরিষদের প্রতিবাদের কবিতা অনুষ্ঠানে। নিজে সে চমৎকার একটি কবিতা পড়ে অনুষ্ঠানে। তেমন লোক জমেনি বটতলায়। কিন্তু শাহরিয়ার এমনই মুগ্ধ সকালের বৃন্দ আবৃত্তি শুনে যে ঢাকায় গিয়ে স্বরশ্রুতিকে জানায়। স্বরশ্রুতি একটি বড় আবৃত্তি সংগঠন। স্বরশ্রুতি তখন বৃটিশ কাউন্সিলের অডিটোরিয়ামে বিশাল এক অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দেশের প্রথিতযশা কবিদের এমন কী পশ্চিমবঙ্গের কবিদেরও। একক আবৃত্তি, বৃন্দ আবৃত্তির জন্য আমন্ত্রণ যাচ্ছে বিভিন্ন শিল্পীর কাছে, গোষ্ঠীর কাছে এপার বাংলায়, ওপার বাংলায়। স্বরশ্রুতির একটি আমন্ত্রণ সকাল কবিতা পরিষদের জোটে। মেডিকেল কলেজের ছাত্র পাশা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রোজেলিন, শহরের ছোটখাটো চশমাপরা আঁতেল আবৃত্তিকার দোলন, ইয়াসমিন আর আমি আবৃত্তির মহড়ায় মহা উৎসাহে নেমে পড়ি। চলে অবকাশে। সুস্থ রাজনীতি, বৈষম্যহীন সমাজ, সমতা আর সাম্যের স্বপ্ন ঝংকৃত হয় প্রতিটি কণ্ঠে। দল বেঁধে ঢাকা গিয়ে মেয়েরা জামদানি শাড়ি, ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে মঞ্চে উঠে যাই। আবৃত্তি করি কোথাও একক, কোথাও দুজন, কোথাও তিন জন, কোথাও সকলে। কারও কোনও ভুল হয় না, কোনও পা কাঁপাকাঁপি নেই কারও। দিব্যি শ্রোতা দর্শকদের হাততালি কুড়িয়ে নেমে আসি মফস্বলের আবৃত্তি-দল। মফস্বলের দল হিসেবে ঢাকায় তেমন দাম পাওয়া যায় না। বরাবরই ঢাকার কবি বা আবৃত্তিকারদের মধ্যে একটু দাদাগিরি ভাব আছেই। দাদাগিরি উড়িয়ে দিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাঠে বসে ঢাকার কবিবন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা জমিয়ে তুলি। শাহরিয়ার সে মাঠেই পরিচয় করিয়ে দেয় নাইমের সঙ্গে। দেখতে বিচ্ছিরি নাইম। উঁচু দাঁত, উঁচু কপাল। চুলের কোনও ছিরিছাদ নেই। ও কটা চুল এই বয়সেই পাকতে শুরু করেছে। হাড়সর্বস্ব শরীর। হাত পা বাতাসে ছুঁড়ে ছুঁড়ে কথা বলে। হাঁটলে নিতম্ব দোলে। কিলো পঞ্চাশেক ওজনের শরীরে এই এতটুকুন নিতম্ব। নাইম খবরের কাগজ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকাটি রাজনীতি সাহিত্য সমাজ সংস্কৃতি ইত্যাদির পাঁচ মিশেলি পত্রিকা, বেশ নাম করেছে এর মধ্যে। খুব সস্তায় বের করে, পঈচ্ছদও নিউজপ্রিণ্টে। দেশে কয়েক ডজন সাপ্তাহিকী বেরোয়, খবরের কাগজ সবগুলোর চেয়ে অন্যরকম। বড় বড় কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে কলাম লেখানো হচ্ছে পত্রিকায়। এরকম একটি সুস্থ সুন্দর পত্রিকার প্রয়োজন ছিল দেশে। পত্রিকার নাম হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে নাইমের পরিচয়ও বাড়ছে লেখক অঙ্গনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় বিভাগে পড়াশুনো করা ছেলে হঠাৎ করে কবি সাহিত্যিকদের এমন ঘরের লোক হয়ে যায় না। গুণ আছে বটে বিচ্ছিরি দেখতে ছেলেটির। তারিকের মত নাইমও একশ কাজের কাজী। স্বরশ্রুতি আবৃত্তি সংগঠনের সে সভাপতি জাতীয় কিছু একটা হয়ে বসে আছে, যদিও কবিতা বা আবৃত্তি কিছুরই মাথামুণ্ডু সে জানে না। নাইমের একটি ভাল দিক, সে অকপটে স্বীকার করে যা সে জানে না। তবে যা সে জানে, তা নিয়ে অহংকার তার কম নয়। অহংকার কখনও সুপ্ত, কখনও বিকট রূপে প্রকাশিত। কুমিল্লার আঞ্চলিক সুরে কথা বলা নাইমকে আমার প্রথম দেখায় পছন্দ হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু পরিচয় থেকে চেনা জানা, চেনা জানা থেকে বন্ধুত্ব হতে খুব বেশি সময় নেয় না। সময় নেয় না কারণ নাইম সিদ্ধান্তই নিয়েছিল আমার সঙ্গে সে যে করেই হোক বন্ধুত্ব করবে। নাইম যা ভাবে তা যে করেই হোক সে করে ছাড়ে। তার যে জিনিসটি আমার ভাল লাগে, তা হল নতুন কিছু করার উৎসাহ। নতুন ধরনের কিছু। প্রতিনিয়ত সে পরিকল্পনা করছে, আর ঝাঁপিয়ে পড়ছে তা বাস্তবায়ন করতে। প্রচণ্ড উৎসাহী, উদ্যমী, ক্লান্তিহীন, কর্মঠ যুবক। শাহরিয়ার, নাইম, আমি প্রায় সমবয়সী। আমাদের আড্ডা জমে ভাল। শাহরিয়ারও ডাক্তারি ছেড়ে এসে মন্দ করেনি, গতি নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা খুলেছে। গতি, শাহরিয়ার বলে, অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের খোরাক জোটাতে, আর মনের খোরাকের জন্য আছে সাহিত্য। দুটোই চলছে ভাল শাহরিয়ারের। শাহরিয়ারের ছড়াকার বন্ধু সৈয়দ আল ফারুকের আছে গার্মেন্টসএর ব্যবসা। নিজের পয়সায় নিজের ছড়ার বই বের করে। শাহরিয়ার আর ফারুক মিলে একসময় ছড়া-পত্রিকা বের করত। সেই জিগরি দোস্ত ফারুকের সঙ্গে শাহরিয়ারের আজকাল বনিবনা হচ্ছে না। বনিবনা না হলে শাহরিয়ারের ধারালো জিভে তাকে খণ্ড খণ্ড হতেই হবে। নাইম আর শাহরিয়ারের মধ্যে অনেক অমিল, কিন্তু একটি ব্যপারে খুব মিল, তা হল যদি কাউকে পছন্দ করে তো তার মত ভাল পৃথিবীতে আর একটিও নেই, সে দেবতা, ভগবান, ঈশ্বর ! আর যাকে অপছন্দ হয়, সে নরকের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কীট ছাড়া কিছু নয়। এসব আমি তাদের সঙ্গে কেবল কদিনের কথাবার্তাতেই বুঝিনি, দীর্ঘদিন সময় লেগেছে। মাঝে মাঝে কিছু সাদামাটা জিনিসও সময় আমার কিছু বেশিই নিয়ে নেয়। শাহরিয়ারের মাধ্যমে পরিচয় হলেও একসময় শাহরিয়ারের চেয়েই বেশি দেখা হতে থাকে নাইমের সঙ্গে। নাইমের অতি উৎসাহের কারণেই ঘটে সব। শাহরিয়ারের সঙ্গে দেখা কম হওয়ার কারণ শাহরিয়ার নিজেই। একদিন সে আমাকে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করল। গিয়ে দেখি বাড়ি খালি, তার বউ ঢাকায় নেই। খালি বাড়িতে প্রথম ভাল গল্প হল, কিন্তু এরপর শাহরিয়ারকে দেখে আমি অবাক, সে আমার রূপের প্রশংসা করতে করতে আমার গা ঘেঁসে বসে আমাকে জোর করে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছে। ঠেলে তাকে সরিয়ে দিয়েছি বারবার। নিরাপদ দূরত্বে যতবারই বসতে চেয়েছি, ততবারই সে দূরত্ব ঘোঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার ওই নিরন্তর চেষ্টা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে আমার সামান্যতমও আগ্রহ নেই তার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট পেতে দেওয়ার এবং তাকে অনুরোধ করেছি আমাদের সুন্দর বন্ধুত্বটি যেন সে এভাবে নষ্ট না করে ফেলে কিন্তু তারপরও যখন সে হাত বাড়ানো বন্ধ করেনি, অতিষ্ট হয়ে আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে তার বাড়ি থেকে। আমাকে চুমু খেয়ে শাহরিয়ার হয়ত তার বউ মুনিরার কালো ঠোঁটে হযরে আসওয়াদ হযরে আসওয়াদ বলে চুমু খেয়ে পূর্ণ করত পাপী ও সন্তপ্ত প্রেমিকের হজ্ব। নাইমের সঙ্গে এই সমস্যা হয় না। নাইম কখনও কোনও সুযোগ নিতে চেষ্টা করে না, আমরা কোনও খালি ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিলেও না। নাইম আমার একজন ভাল বন্ধু হয়ে ওঠে, ভাল বন্ধু মানেই তো এই যাকে বিশ্বাস করা যায়, যে সুখ দুঃখে পাশে দাঁড়ায়। নাইমের সঙ্গে পুরোনো দিনের গল্প করতে করতে একদিন চন্দনার কথা বলি, চন্দনা কুমিল্লায় থাকে বলতেই নাইম আমাকে তার গাড়িতে তোলে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য। ইমদাদুল হক মিলন ভিড়েছিল, মিলনকেও নেওয়া হল। নাইম, মিলন আর আমি ঢাকা ছেড়ে সোজা কুমিল্লা। মিলনকে নিয়ে নাইম একদিন অবকাশে হাজির হয়ে আমাকে চমকে দিয়েছিল। নাইমের স্বভাবে এই চমকে দেওয়া ব্যাপারটি খুব আছে। সেদিন নাইমের এই এক তুড়িতে কুমিল্লা যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সত্যিই ভীষণ ভাল লেগেছে। আমিও এরকম, যা মনে হয় করতে, সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলি, কালের জন্য আমার কিছু ফেলে রাখতে ইচ্ছে করে না। কিছু করার আগে ভাবনা চিন্তা করা আমার একদম ভাল লাগে না। কুমিল্লায় চন্দনার শ্বশুর বাড়ি খুঁজে বের করে ঢুকে দেখি একটি ছোট বাচ্চার মা সে, বাড়ির ঘোমটা পরা পূত্রবধূ সে। সেই চন্দনা, আমার চন্দনা, এত কাছের সে, তারপরও কত দূরের। আমি স্পর্শ করি চন্দনাকে, আমার সেই আগের চন্দনাকে, গৃহবধু চন্দনা সে স্পর্শ কতটৃকু অনুভব করে আমি ঠিক বুঝি না। বলি, ‘রাঙামাটি গিয়েছিলাম, ওখানে কেবল তোর কথাই মনে হয়েছে, আমাদের যে কথা ছিল দুজনে রাঙামাটি যাবো, তুই আমাকে সব দেখাবি, সব চেনাবি, কত আনন্দ করব আমরা, মনে আছে!’ বুঝি না সেই কথার কথা চন্দনার আজও মনে আছে কি না। যখন হাতে চাঁদ পাওয়া উচ্ছঅ!সে বলি চল বেরোই, চল কোথাও ঘুরে আসি, চল ময়মনসিংহ যাই, চল ঢাকা যাই। চন্দনা হাসে আমার পাগলামি দেখে। চন্দনা খুব জোরে হাসে না, খুব জোরে কথা বলে না। অসম্ভব এক পরিমিতি বোধ তার এখন। সন্তর্পণে হাঁটে, সন্তর্পণে কথা বলে, চিলেকোঠার গোলাপ বাগানে নিয়ে গোলাপের কথাই বেশি বলে। মিলনের গল্প চন্দনা অনেক পড়েছে, এমনকি ওর ও সজনী গল্পটি পড়ে নিজের নামেই সজনী জুড়েছে, কিন্তু মিলনও চন্দনার জন্য এখন আর কোনও আকর্ষণ নয়। মিলনকে দেখে চন্দনা, খুব শান্ত চোখে দেখে, যেমন করে যে কোনও রহিম করিমকে দেখে। মিলনের সঙ্গে এর পরেও আমার মাঝে মাঝে দেখা হতে থাকে। বন্ধুত্ব মিলনের সঙ্গেও গড়ায়, আপনি থেকে তুমিতে সম্বোধন জলের মত গড়িয়ে যায়।