হ্যাঁ।
কিন্তু তুমি তো পছন্দ কর। তোমার তো কোনও অসুবিধে নেই একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে করতে!
শরীরের সম্পর্কটিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছ কেন? এতে তো মনের কোনও সম্পর্কে হচ্ছে না।
ঠিক আছে, আমারও মনের কোনও সম্পর্কে হবে না কারও সঙ্গে। কেবল শরীরের। মানবে?
অনেকক্ষণ ভাবে রুদ্র। এরপর মাথা নাড়ে। তা সে মেনে নেবে না।
আমি হেসে বলি, আসলে অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। এ আমার রুচিতে বাঁধে। তুমি চাইলেও এ জিনিস আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তুমি যে বলতে, তুমি নাকি নারী পুরুষের সমতায় বিশ্বাস কর। তা-ই দেখলাম। দেখলাম কেমন বিশ্বাস কর। তুমি আসলে সমতার কথা বলো, বলা একধরণের ফ্যাশন কি না। শিল্পের মানুষ হলে তাই বলতে হয় কি না। অথবা খুব প্র−গ্রসিভ সাজতে হলে এসব না বললে চলে না কি না। তুমি সমতায় বিশ্বাস করো ভাবো, কারণ বউ নিয়ে শহর ঘুরে বেড়াও, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দাও, বউকে ঘরবন্দি করোনি, বউকে ঘরের কাজকর্ম করার জন্য রাখোনি। তাই বোধহয় একধরনের পুলক অনুভব কর ভেবে যে তুমি খুব প্রগতির পক্ষের মানুষ। অবশ্য প্রগতির পক্ষের মানুষ হওয়া খুব সহজ কথা, সমতার কথা বলাও খুব সহজ। কিন্তু নিজের জীবনে চর্চা করতে গেলেই কঠিন। ঠিক না?
যৌথ সিদ্ধান্তে তালাক ঘটানোর কথা বলি, রুদ্র রাজি হয় না। সাফ সাফ বলে দেয় তালাকের জন্য উকিলের কাছে সে যাবে না। বারবারই সে বলে প্রথম তার অসুখ ধরা পড়ার পর যে প্রতিজ্ঞা করেছিল আর কোনওদিন সে অন্য মেয়েমানুষের কাছে যাবে না, তা সে রেখেছে, কেবল সেদিনই টানবাজারে হঠাৎ করে দুর্ঘটনাটি ঘটে গেছে। আমি যেন এবারের মত, এবং এটিই শেষবার, তাকে ক্ষমা করে দিই। আমি যেন তালাকের মত ভয়ঙ্কর বিষয়টির কথা একটওু না ভাবি আর। রুদ্রর কোনও বাক্যই আমাকে স্বস্তি দেয় না। আমার মনে হয় না রুদ্র কেবল সেদিনই গিয়েছে নতুন করে পতিতালয়ে। আমার মন বলে, রুদ্র সেই যে তার কিশোর বয়সে যাওয়া শুরু করেছিল, সে যাওয়া কখনো বন্ধ করেনি। আমাকে সংক্রামিত করার পর অনুতপ্ত অন্ধকার নামে কবিতাই লিখেছে শুধু সত্যিকার অনুতপ্ত হয়নি। শব্দ রচনা করা আর শব্দকে বিশ্বাস করা এক জিনিস নয়। অস্থিরতা আমাকে কামড়ে খেতে থাকে। এমন কোনও উকিলকে আমি চিনি না যাকে তালাকের কাগজ তৈরি করতে বলব। আমার অবশ্য যাওয়া হয় সেই উকিলের কাছে, যে উকিল আমাদের বিয়ের কাগজ তৈরি করেছিলেন, রুদ্রকে নিয়েই যাওয়া হয়, সে আরও দুদিন পর। বলেছিলাম তুমি যদি না যাও, তবে একাই যাবো আমি। যে করেই হোক যাবো। যদিও আমি কাগজের কোনও সম্পর্কে বিশ্বাস করি না, ভালবাসি বলেই তোমার কাছে এসেছিলাম, বিয়ের কাগজের কারণে নয়। তালাকের কাগজটিও একটি কাগজ যদিও, কিন্তু এ কাগজটি আমার শরীরকে তোমার দাবি থেকে মুক্ত করবে। অন্তত আইনত। উকিল অবাক দেখে যে আমরা এসেছি তালাকনামায় সই করতে। ঠা ঠা করে হেসে বললেন বাড়ি যান, ঝগড়াঝাটি মীমাংসা করে ফেলেন। আপনাদের মত চমৎকার জুটি আর আছে নাকি? হুইল চেয়ারে বসে থাকা পঙ্গু উকিল তাঁর স্ত্রীকে ডাকলেন, অপবূর্ সুন্দরী স্ত্রীটি এসে রুদ্রকে দেখে ট্রেতে করে চা বিস্কুট সেমাই সাজিয়ে নিয়ে এসে দিব্যি সাহিত্যের গল্পে বসে গেলেন। স্ত্রীটি সাহিত্যরস কেবল আস্বাদন করেন না, রীতিমত সাহিত্য রচনা করেন। নিজে একটি বই লিখছেন। রুদ্র আর আমি ঘন হয়ে পাশাপাশি বসে স্ত্রীটির প্রথম বই লেখার উত্তেজনা এবং আনন্দ দুটোই উপভোগ করি। কে বলবে যে আমি আর রুদ্র পরস্পরকে তালাক দিতে এসেছি! চা বিস্কুট খেয়ে, সাহিত্যের গল্প শেষ করে উঠে আসার আগে উকিলকে বলি, ঝগড়াঝাটি হয়নি আমাদের। মীমাংসা করার কিছু নেই। কিন্তু সম্পর্কটি চুকিয়ে ফেলা ভাল।
আরও কিছুদিন সময় নেন। ভাবেন। হুমজিক্যালি কিছু করবেন না।
আমার আর ভাবার কিছু নেই, ভেবেই এসেছি।
উকিল গম্ভীর হয়ে মাস গেলে পর আমাকে আবার যেতে বলেন, কি কারণে আমি তালাক দিতে চাই, তাঁকে সব জানাতে হবে, তিনি যদি মনে করেন, কারণগুলো তালাক ঘটানোর জন্য উপযোগী, তবেই তালাক হবে, নচেৎ নয়। মোটা অংকের একটি টাকার কথাও বললেন নিয়ে যেতে।
যদিও রুদ্র প্রায়ই বলে শরীর মেলাই চল, শরীরে বসত করে মন রূপ পাখি কিন্তু এবার জলজ্যান্ত আমাকে হাতের কাছে পেয়েও শরীর সম্পণূর্ মেলায় না সে। যদিও চুমু খায়, স্তনজোড়া দলে পিষে উতল নদীর −স্রাত নামায় শরীরে, আর আমি তীব্র তৃষ্ণায় খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মত তাকে আঁকড়ে ধরি, তাকে আশ্রয় করি, যেন নিয়ে তীরে ভেড়ায় আমাকে, যেন বাঁচায়, সে নিষ্ঠুরের মত কেড়ে নেয় খড়কুটো, পাশ ফিরে শোয়। তার অঙ্গ শীতল নয়, অথচ পাশ ফিরে শোয়। তার প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে আমার প্রতি অঙ্গ, তবু পাশ ফিরে শোয়। কেন? আমার জেগে থাকা শরীরের পাশে সে নিশ্চল পড়ে থাকে। সে কি ঘুমিয়ে থাকে? না সে ঘুমোয় না। বিচ্ছিত হব বলে এ কি তার অভিমান? না তাও নয়। তবে কি? এর পরের রাতে অন্য ঘরে ঘুমোতে যায় রুদ্র। আমি এপাশ ওপাশ করি, হাত পা ছুঁড়ি, শরীর জেগে ওঠে শুভ্র বিছানায়, শরীর ভিজতে থাকে কামে, ঘামে। রুদ্রর স্পর্শ গন্ধ আমার শরীরে বিষম জোয়ার আনে, আমি পারি না নিজেকে অবদমনের ডালাপালায় আবৃত করতে।