গতবারও তো শেষবার বলেছিলে? সত্যিকার শেষবার তোমার কোনওদিন হবে না। হবে।
সে আগেও বলেছিলে। আসলে কি জানো, এ তোমার স্বভাব। স্বভাব বদলানো এত সহজে সম্ভব নয়।
ঠিক আছে আমাকে আরও সময় দাও। আমি স্বভাব বদলাবো।
কেন বদলাবে? তুমি কি সত্যিই চাও বদলাতে? চাইলে তুমি সেই শুরু থেকেই পারতে বদলাতে। আর বদলানোর প্রয়োজনটাই বা কি? তুমি তো মনে করো না তোমার স্বভাবে কোনও ত্রুটি আছে।
রুদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে যায় ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলতে বলতে, তোমাকে তো কতবার বলেছি,আমার সঙ্গে থাকো সবসময়। বিয়ের পর থেকে কতদিন আমার সঙ্গে থেকেছো বল! তোমার দ্বিধা ভাঙতেই লেগেছে তিন বছর। এভাবে একজন পুরুষ পারে নাকি একা থাকতে?
আমি তো পেরেছি একা থাকতে।
মেয়েদের জন্য যা সম্ভব, পুরুষের জন্য তা সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয়?
যে কারণই হোক, আমি পারিনি। ঢাকা ফিরে তোমাকে বাড়িতে না দেখে আমার খুব রাগ হয়েছিল। তাই বেরিয়ে গিয়ে মদ খেয়েছি। আর মদ খাওয়ার কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
মনে হচ্ছে রাগ হলেই তুমি মদ খাও! আর যেন খাও না? তুমি না রাগ হলে মদ খাও না? তুমি কি সুখে থাকলে মদ খাও না?
মদের কথা বাদ দাও। সম্পর্কের শুরু থেকে যে আমার সঙ্গে থাকোনি সেটার কি বলবে?
ভাল করেই জানো ময়মনসিংহে থাকতে হয়েছে মেডিকেলে লেখাপড়া করার জন্য। এখন তো ঢাকায় পাকাপাকি থাকার আমার কোনও অসুবিধে নেই। দৌড়োচ্ছে! তো তুমিই।
আমার সঙ্গে শুরু থেকেই থাকা উচিত ছিল তোমার।
তার মানে তুমি কি বলতে চাও আমার ডাক্তারি পড়া ছেড়ে তোমার সঙ্গে থাকা উচিত ছিল? তোমার সুবিধের জন্য। তাই তো? যেন তোমার কোনও স্খলন না হয়! আচ্ছা, আমার যখন চাকরি হবে, সে যে মোংলা বা মিঠেখালিতে হবে, তার তো কোনও কথা নেই। আমাকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে, তুমি চিংড়ির ঘের দেখতে যাবে বা ধান বিক্রি করতে যাবে, তোমার সঙ্গে মোংলা মিঠেখালি যেতে হবে কারণ যদি তোমার শরীর উত্তেজিত হয় সেই উত্তেজনা মেটাতে যেন একটি মেয়েমানুষের শরীর তুমি হাতের কাছে পাও?
রুদ্র চপু করে থাকে। আমি বলি,যখন তোমাকে ছাড়া থাকি, আমার শরীরের তৃষ্ণা মেটাতে আমি তো অন্য কোনও পুরুষের কাছে যাই না। অন্য কোনও পুরুষের কোনও ভাবনাই তো আমার মাথায় উঁকি দেয় না। আমি তো পারি না, তুমি পারো কি করে! এর কারণ কি জানো? এর কারণ হল, আমি তোমাকে ভালবাসি বলেই অন্য পুরুষের কাছে যেতে পারি না। আর তুমি আমাকে ভালবাসো না বলেই পারো। খুব সহজ উত্তর।
সহজ উত্তরটি রুদ্র মানবে না জানি। সে বলবে সে আমাকে ভালবাসে। সে যে অন্য মেয়েদের সঙ্গে শুয়েছে, সে ভালবেসে নয়। রুদ্রর উত্তরও খুব সহজ। কিন্তু সহজ উত্তরটি না দিয়ে রুদ্র গম্ভীর গলায় বলে, আমি মুক্ত দাম্পত্যে বিশ্বাস করি। তোমাকে আগেই বলেছি। যে দাম্পত্যে কোনও বন্ধন নেই। যে দাম্পত্য আর সব দাম্পত্য জীবনের মত নয়। যে দাম্পত্য জীবনে আমার কোনও শ্বাসকষ্ট হবে না। আমার মনে হবে না আমি আটকা পড়েছি। যে দাম্পত্য কোনও খাঁচা হয়, বরং মুক্ত আকাশ।
রুদ্র তার লেখার টেবিলের চেয়ারে বসে বিছানায় পা তুলে দিয়ে বলে,—হ্যাঁ। তাই তো তোমাকে বলেছি। বলেছি যে কোনও আঁটসাঁট জামা আমাকে পরাতে চেও না।
তার মানে কি এই যে তুমি যে কোনও মেয়ের সঙ্গে শোয়ার স্বাধীনতা চাও!
তুমি সঙ্গে থাকলে আমি তো সে চাই না।
আমি সঙ্গে না থাকলে তুমি চাও?
চাই না। হয়ে যায়।
হয়ে যায় মানে?
হয়ে যায় মানে হয়ে যায়।
ধর আমারও যদি হয়ে যায়!
তার মানে? চকিতে ভুরু কুঁচকে ওঠে রুদ্রর। পা নেমে যায় বিছানা থেকে। বিছানায় তার মুখোমুখি বসে, কুঁচকে থাকা ভুরুর তলে তার সঙ্কুচিত হয়ে আসা চোখের মণিতে চেয়ে বলি, মানে হল, তুমি যখন আমার সঙ্গে না থাকো, তখন আমার যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে শোয়া হয়ে যায়!
কি বললে?
বললাম, আমারও যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে শোয়া হয়ে যায়, যখন তুমি আমার সঙ্গে না থাকো!
বাজে কথা বলো না। দাঁত চিবিয়ে ধমকে ওঠে রুদ্র, ধমকে দলা দলা ঘেন্না।
বাজে কথা তো নয়। তোমার যেটি করার অধিকার আছে, তা আমার থাকবে না কেন? নরম স্বর আমার।
অধিকারের কথা হচ্ছে না, কাল মাতাল ছিলাম। রুদ্রর স্বরও নরম।
এটা কোনও অজুহাত নয়। মদ খাওয়া তোমার নেশা। তুমি প্রতিরাতেই মাতাল হও।
না, হই না। প্রতিরাতে আমি মদ খাই না।
তবে কি বলতে চাও, যে, যে রাতে তুমি মদ খাবে, মাতাল হবে, সে রাতগুলোয় তোমার মেয়েমানুষ চাই যেমন করে হোক, আমি হলে আমি, না হলে অন্য কেউ!
রুদ্র একটি বই হাতে নিয়ে চোখ ফেলে রাখে বইয়ের পাতায়। যেন এ মুহূর্তে আমার সঙ্গে কথা বলার চেয়ে বইটি পড়া তার জরুরি। বইটি হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলি— আমার সঙ্গে কথা বল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল। বল তোমার কেমন লাগবে আমিও যদি অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটিয়ে ঘরে ফিরি? ধর আজ রাতে আমি ঘরে ফিরব না। অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে রাত কাটিয়ে কাল দুপুরে ফিরব।
রুদ্র চোখ ছোট করে তাকায় আমার দিকে, বইটি টেনে নিয়ে বলে—প্রতিশোধ নিতে চাও?
প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি না, জানতে চাইছি এর নাম কি মুক্ত দাম্পত্য নয? নাকি মুক্ত দাম্পত্য কেবল নিজের বেলায় চাচ্ছ, আমার বেলায় নয়!
আমি তো বলেছি যে ভুলটি কাল হয়েছে আমার, আর হবে না এমন।
কেন হবে না ভুলটি আর? কারণ আমি পছন্দ করি না বলে?