তুমি বলছিলে, আঠারোশো সালের আগে পৃথিবীর কেউই জানত না, পরমাণুর চেয়েও ছোট বস্তুর অস্তিত্ব থাকতে পারে, রাইট?
হ্যাঁ।
কিন্তু, আমি তোমাকে এমন একটি তথ্য শোনাতে পারি, যা শুনলে তুমি নিজেই অবাক হয়ে যাবে।
যেমন?
হাসল সাজিদ। আমরা সবাই হাঁ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সে বলল, পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে পরমাণুর চেয়েও ছোট বস্তুর অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেওয়া আছে।
সাজিদের কথা শুনে চোখ কপালে উঠে গেল সৌমিত্র দার। ভীষণ অবাক হলো মিলন, নবীন, সবুজ আর পঙ্কজও। আমিও অবাক হয়েছি, তবে সাজিদ যখনই কিছু একটি বলতে চেয়েছে, তখনই বুঝতে পেরেছি যে, সামথিং ইজ দেয়ার!
সৌমিত্র দা বলল, রিয়েলি?
হ্যাঁ, বলল সাজিদ। আমি কি ব্যাখ্যা করব?
অবশ্যই করবে, খুব উত্তেজনাপূর্ণ গলা সৌমিত্র দার।
সাজিদ বলতে লাগল, কুরআনে সূরা সাবার তিন নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, [Allah is) the knower of the unseen. Not absent from him is an atoms weight within the heavens or within the earth or (what is] smaller than that or greater, except that it is in a clear register.
অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহ) অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমণ্ডল আর ভূমণ্ডলের অণু-পরিমাণ জিনিসও তার অগোচরে নেই। এমনকি এরচেয়েও (অণুর চেয়েও) ছোট কিংবা বৃহৎ সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।
এই আয়াতে অণু-পরিমাণ বোঝাতে আরবী যাররা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেটি এসেছে যাররাতুন থেকে। সকল আরবী ডিকশনারিতে এই যাররাতুন শব্দের অর্থ হলো, Atom, Smallest Piece, ক্ষুদ্রতম কণা ইত্যাদি।[১]
অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই আয়াতে স্পষ্ট শব্দেই অ্যাটম তথা পরমাণুর কথা উল্লেখ করেছেন এবং এর ঠিক পর পরই তিনি বলেছেন, এটার চেয়ে, অর্থাৎ এই পরমাণুর চেয়েও ছোট কিংবা বড় যা কিছুই আছে, তার সবটাই তিনি লিখে রেখেছেন সুস্পষ্ট কিতাবে। পরমাণুর চেয়েও যে ছোট বস্তু থাকতে পারে, সেটি আঠারোশো সালের অনেক আগেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যে-ভাষাটি ব্যবহার করেছেন, সেটাই সবচেয়ে চমকপ্রদ। তিনি বলেছেন অণুর চেয়ে ছোট জিনিস। তিনি কিন্তু যাররা তথা অণুর নাম নেওয়ার পরে বলে দেননি যে অণুর চেয়েও ছোট বস্তু ইলেক্ট্রন সম্পর্কেও আল্লাহ জানেন। তিনি অণুর পরে আর কোনোকিছুর নাম নির্দিষ্ট করে বলেননি। তার মানে হলো, অণুর পরে ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ কেয়ামত পর্যন্ত যা-ই আসতে থাকবে, তার সবটাই ওই ছোট জিনিস এর আওতায় পড়ে যাবে। এমন চমকপ্রদ ভাষাজ্ঞান আর আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কৃত বিষয়াদি কি কোনো নিরক্ষর মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব সৌমিত্র দা? আমরা যেটাকে আঠারোশো সালের জ্ঞান ভাবছি, সেই জ্ঞানের ঝলক তো আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশো বছর আগে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপরে এসেছিল।
একটানা এতক্ষণ কথা বলার পরে থামল সাজিদ। আমাদের বিস্ময়ের রেশ যেন কাটছেই না কোনোভাবে। সৌমিত্র দা বললেন, ঘটনা সত্যি হলে এটি আসলেই ভাববার বিষয়।
হেসে ফেলল সাজিদ। বলল, হ্যাঁ। কুরআন কিন্তু ভাবতেও বলেছে। কুরআন বলেছে, তারা কি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?
সাজিদের কথা শুনে আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আসরের আযান হচ্ছে মসজিদে। সেন্ট্রাল মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযানটি আজ অন্যরকম ভালো লাগছে। এক অপূর্ব সুরের দ্যোতনা যেন মুয়াজ্জিনের গলায়।
———–
১ A word for word meaning of the Quran, by Mohammad Mohar Ali